![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"সত্য যে কঠিন; কঠিনেরে ভালবাসিলাম, সে কভু করেনা বঞ্চনা" ফেবুঃ https://www.facebook.com/humayundmc
লাশটা রাখা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মূল প্রবেশপথটার একদম সামনে। সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে বডিটা। চারদিকে অসংখ্য মানুষ গিজগিজ করছে। এরা নাকি দেখতে এসেছে লাশটাকে।
মেজাজ খারাপ করে তাকিয়ে আছি আগাগোড়া সাদা কাপড়ে পেঁচানো লাশটার দিকে। এটাকে এখানে রাখা হয়েছে কেন? আর এত মানুষই বা আসার কি দরকার? মৃত মানুষকে দেখার কি আছে? মরছে তো আপদ সাফ হয়েছে।
অল্পতেই মেজাজ বিশ্রী রকমের খারাপ হয়ে যাওয়ার রেকর্ড আমার বহুদিনের। আজ সবচেয়ে বেশি মেজাজ খারাপ আমার। কে মরবে না মরবে তার জন্য এত বড় একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল গেট বন্ধ করে রাখতে হবে কেন?
সারা দিনে একটা সিগারেটও খাইনি। সিগারেট না খেলে এমনিতেই মেজাজ খারাপ থাকে আমার। সিগারেট কেনার মত টাকা আমার হাতে নেই আপাতত। চারপাশে বার বার তাকাচ্ছি। সিগারেটখোর কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। নাকি লাশ দেখতে এসে সবাই হাজি হয়ে গেছে তাও বোঝা যাচ্ছে না।
সিগারেট খুঁজতে গিয়ে একটা জিনিস আবিস্কার করলাম। যারা এখানে এসেছে তাদের মোটামুটি সবাইকেই আমি চিনি। কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারণে ওরা কেউ আমাকে চিনছে না। এরা সবাই আমার ব্যাচমেট। আজ থেকে দশ বছর আগে আমরা সবাই একসাথে ভর্তি হয়েছিলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজে।
এরা সবাই এখন দেশে অথবা দেশের বাইরে মোটামুটি ভাবে প্রতিষ্ঠিত। আমিই শুধু এখানে পড়ে আছি।
আমার ক্লাশ রোল ছিল ১৩৮। বিন্দু নামের মেয়েটার রোল ছিল ১৩৯। পাশাপাশি রোল হিসেবে একধরণের ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল আমাদের মাঝে। প্রথমে বন্ধুত্বতেই সীমাবদ্ধ ছিল ব্যাপারটা। এরপর কিভাবে কিভাবে যেন প্রেম হয়ে যায় আমাদের মাঝে।
বিকেলে একসাথে ঘুরতাম, রাতের খাবারটা প্রতিদিন একসাথে বাইরে খেতাম..................
ও কখনও আমাকে নিজের হাতে খেতে দিত না। তুলে খাওয়াত আমাকে। একদম ছোট বাচ্চাদের মত।
সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময় ওর কোন এক বান্ধবীর বিয়েতে গিয়ে ওর সাথে ভরা পূর্ণিমা রাতে নদীর ধারে সারারাত বসে ছিলাম। ও আমার কাঁধে মাথা ফিসফিস করে বলছিল আমি যেন ওকে কখনও ভুলে না যাই। আমার কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েছিল ও।
আমি আজও বিন্দুকে ভুলিনি। সত্যিই ভুলিনি। কিন্তু বিন্দু আমাকে ভুলে গেছে। বেমালুম ভুলে গেছে। থার্ড ইয়ারে উঠে হঠাৎ করেই একদিন শুনি ওর বিয়ে হয়ে গেছে। আমি কিছুই জানতে পারিনি।
পরে বিন্দু আমাকে বলেছিল ওর বাবার ইচ্ছেতেই নাকি ইঞ্জিনিয়ার এক ছেলের সাথে ওর বিয়ে হয়ে গেছে। আর ও ওর বাবার কথার উপর আর কোন কথা বলতে পারেনি। আমি যেন ওকে ক্ষমা করে দেই।
এরপর থেকে কেন যেন পড়ালেখাটা আর আমার দ্বারা হয়ে ওঠেনি। আমার বন্ধুরা সবাই পাশ করল, বড় বড় ডাক্তার হল আর আমি এখনও পড়ে আছি থার্ড ইয়ারেই।
অনেকেই অনেক ভাবে বোঝাতে চেয়েছে আমাকে। এমনকি একদিন বিন্দু নিজে এসে আমার হাত ধরে কেঁদে কেঁদে বলেছিল আমি যেন আমার ভবিষ্যতটা এভাবে শেষ করে না দেই।
কিন্তু তারপরও কেন জানি এক সেকেন্ডের জন্যও পড়ালেখাতে মন বসাতে পারিনি আমি। এখন প্রতিদিন বিকেলে ক্যান্টিনে বসি। চা-সিগারেট খাই আর তাকিয়ে থাকি জুনিয়রগুলোর মুখের দিকে। ওদের মুখে নিজের শৈশবটাকে খোঁজার চেষ্টা করি।
ঢাকা মেডিকেলের কোন ছাত্র মারা গেলে তার লাশটা কিছু সময়ের জন্য কলেজ গেইটে রাখা হয় ব্যাচমেট এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের শেষবারের মত দেখাবার জন্য।
কার লাশ এটা এখনও জানতে পারিনি। এখন নাকি লাশের মুখ থেকে কাপড় সারানো হবে।
কে যেন লাশের মুখ থেকে কাপড়টা সরাচ্ছে। আমার চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে। জোর করে তাকিয়ে থাকার চেষ্টা করছি। আর পারছি না। মনে হচ্ছে আমি যেন শুন্যে মিলিয়ে যাচ্ছি, বাতাসে ভেসে যাচ্ছি, চলে যাচ্ছি পৃথিবীর বাইরে অনেক অনেক দূরে কোথাও।
শেষ বিকেলের আলো এসে পড়েছে লাশটার মুখে। সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে লাশটাকে দেখার জন্য। কারও মুখে কোন কথা নেই।
শুধু বিন্দু নামের একটা মেয়ে লাশটাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে। কারণ ওদের ক্লাশ রোল ছিল পাশাপাশি। ১৩৮ এবং ১৩৯।
ফেসবুকেঃ https://www.facebook.com/humayundmc
২| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৫৮
রুদ্র হুমায়ূন বলেছেন: ধন্যবাদ বোঝার জন্যও
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৫৩
রাজীব বলেছেন: ভালো লিখেছেন, কিন্তু আমি কয়েক লাইন পড়েই বুঝে গিয়েছিলাম যে, ঘটনা কি।