নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসার গল্প

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২৬

সম্পর্ক
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
ভার্সিটির গেটে ঢুকতেই দেখি একটা ছেলেকে কয়েকজন মিলে মারার জন্য উদ্যত হচ্ছে। ওরা ক্রমেই ছেলেটির দিকে এগিয়ে আসছে। আর ছেলেটি ধীরে ধীরে পিছিয়ে আসছে। ঘটনাটা দেখে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম সেখানে। ছেলেটা পিছিয়ে আসতে আসতে আমার সাথে বেধে গেলো। তখন ঐ কয়েকজন ছেলে এই ছেলেটির শার্টের কলার ধরতেই আমি একটা ঘুসি লাগিয়ে দিলাম একজনকে। সাথে সাথে তার নাক দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো। ঘুসি খেয়ে সে মাটিতে পরে যেতেই এই ছেলেটি আমার হাত ধরে টান দিয়ে কলেজের বাইরে নিয়ে গেলো।
- পালাও এখান থেকে। (ছেলেটি)
- কেন?
- আরে পালাতে বলছি পালাও, এতো কথা বলো কেন?
- কি জন্যে পালাবো?
- তুমি যার নাক ফাটিয়ে দিয়েছো, তার ভাই এই এলাকার টপ মাস্তান।
সামনে দিয়ে একটা সিএনজি যেতে দেখে ছেলেটি সিএনজি থামিয়ে আমাকে বললো "উঠে পড়ো"।
আমিও আর কোন প্রশ্ন না করে উঠে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর সিএনজিটা থামলে ছেলেটি আমাকে নামতে বলে সিএনজিওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে আমাকে একটা বড় বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলো।
.
আমি আর ছেলেটি বসে আছি মুখোমুখি। বাড়িটা তাদেরই। বেশ উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে সে।
আমি ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলাম
- আপনার নাম কি?
সে জবাব দিলো
- সিহাব।
- কলেজের ঐ ছেলেদের সাথে কি হয়েছে আপনার? তারা আপনাকে মারতে চাইছিলো কেন?
- সে অনেক কথা। তোমাকে পরে বলবো।
ছেলেটি অর্থ্যাৎ সিহাব এবার তার বোনকে দুইটা চা দিতে বললো।
চা না আসা পর্যন্ত আমি বসে বসে তার সাথে কুশল বিনিময় করলাম। তার পরিবারের সম্পর্কে জানলাম। তার বাবা মা আর একটি বোনকে নিয়েই তাদের পরিবার। বেশ সুখি পরিবার তাদের।
কিছুক্ষণ পর তার বোন চা নিয়ে এলো। আমি তার বোনের দিকে তাকিয়ে পুরো হা হয়ে গেলাম। এতো সুন্দর সেই মেয়েটি, যা বলে বোঝানো যাবেনা। চা এর সাথে একটা মুচকি হাসি দিয়ে মেয়েটি ভিতরে চলে গেলো।
- এ হলো আমার বোন সোমা। (সিহাব)
- ও।
- এবার ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে উঠলো।
এরকম বেশ খানিক সময় টুকটাক কথা বার্তা বলে চলে আসলাম সেখান থেকে।
আজকে আর কলেজে যাওয়া হলোনা। তাই বাসায় এসে জমপেস একটা ঘুম দিলাম।
.
রাতে বেলকনিতে দাড়িয়ে দক্ষিণা হিমেল হাওয়া উপভোগ করছি। গরমের সময়ে এমন হাওয়া শরীরে শিহরণ জাগিয়ে তোলে। হঠাৎ করে সেই মেয়েটির কথা মনে পড়ে গেলো।
আহা কি অপূর্ব তার মুখখানা, তার সেই মুচকি হাসি! একেবারে পাগল করার মতো। এমন স্নিগ্ধ পরিবেশে তার কথা মনে পড়তেই নিজের মধ্যে একটা কবি কবি ভাব চলে এলো। তাকে নিয়ে একটা দু'লাইনের কবিতাও বানিয়ে ফেললাম।
"ওগো মেয়ে তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে চাই অপলক।
তোমার ঐ মুচকি হাসি আমাকে উদাসীন করে তুলেছে, আমি হতে চাই তোমার স্বপ্নের কল্পলোক।"
.
ধুর এসব কি আবোল তাবোল ভাবছি আমি? মেয়েটিকে ঠিকভাবে চিনিনা জানিনা, আর তাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে দিয়েছি! তবে তাকে নিয়ে ভাবতে মন্দ লাগছেনা।
.
পরদিন ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে আছি। সাথে রয়েছে ঐ সিহাব নামের ছেলেটি। আজকে একটু ঝামেলা হতে পারে তাই সে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।
- আচ্ছা সিহাব তোমার সাথে ওদের ঝামেলা কিসের?
সিহাব কিছুক্ষণ আকাশপানে চেয়ে থেকে আমাকে বলতে শুরু করলো
- তুমি যেই ছেলেটিকে গতকাল রক্তাক্ত করেছো, তার বোনকে আমি ভালোবাসি। "তার বোন যে আমাকে ভালোবাসেনা" সেটা কিন্তু নয়। আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি। কিন্তু তার বোনকে ভালোবাসাটাই হলো আমার অপরাধ।
- আচ্ছা! তা, কতদিন ধরে তোমাদের সম্পর্ক?
- এই এক বছর হবে।
কথা বলতে বলতেই কোথায় থেকে যেন একটি ছেলে এসে আমার কলার ধরে আমাকে দাঁড় করালো। আমি তার দিকে তাকাতেই..
- দোস্ত তুই?
- হ্যাঁ, কিন্তু তুই আমার কলার ধরলি কেন হঠাৎ করে।
- তুই কি আমার ভাইকে মেরেছিস?
- ঐটা তোর ভাই? ধুর হ্লা আগে বলবিনা।
আমাদের কথোপকথন দেখে সিহাব পুরো অবাক হয়ে গেছে। ও বুঝতেই পারছেনা এই এলাকার টপ মাস্তান আমার বন্ধু।
.
.
ধীরে ধীরে আমার আর সিহাবের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্ব শুরু হতে থাকে। কলেজের যত বন্ধু বান্ধব জুটি আছে, সবার থেকে সেরা বন্ধুত্ব এখন আমার আর সিহাবের মধ্যে লক্ষ করা যায়।
আমাদের দুজনের মধ্যে এমন সম্পর্ক দেখে অনেকেই আমাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু ছেলে আমাদের মধ্যে যোগ দিলো।
.
বন্ধুত্বের সুবাদে সিহাবের বাড়িতে আমার চলাচল বাড়তে থাকলো। সিহাব যেকোন কিছুর আয়োজন করলে আমাকে তাদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানায়।
সেদিন তার বোনের জন্মদিন ছিলো। আমাকে সিহাব ফোন করে বললো
- দোস্ত একটু আমাদের এখানে আয় তো।
- কেন, কি হয়েছে?
- ধুর বেডা খালি প্রশ্ন করিস। আসতে বলছি আসবি। বেশি কথা বলবিনা।
- এখন রাত কয়টা বাজে সেটা তোর খেয়াল আছে?
- যা বাজে বাজুক, তুই আসবি এটাই কনফার্ম। আমি অপেক্ষা করছি তোর জন্য। বিশ মিনিটের মধ্যে চলে আসবি।
আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনই সে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিলো।
আমি পড়ে গেলাম বিপদে। এতো রাতে কি হলো তার? এতো দ্রুত তলব!
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১১:২৭ বাজে। বেড়িয়ে পড়লাম বাসা থেকে। ঢাকা শহরে থাকার একটা বড় সুবিধা হলো যেকোন সময়ে এখানে রিক্সা পাওয়া যায়। আর রাত এগারোটা, বারোটা কোন রাতই না এই শহরে।
একটা রিক্সা নিয়ে সিহাবের বাসার নিচে গিয়ে তাকে ফোন দিলাম।
- দোস্ত চলে আসছি।
- ভালো করছোস, একেবারে ছাদে চলে আয়।
- ওকে।
.
ছাাদে গিয়ে দেখি চারিদিকে মোমবাতির আলোতে পুরো ছাদটা আলোকিত হয়ে আছে। অনেকেই এসেছে দেখলাম সেখানে।
- কিরে আজ এতো আয়োজন কিসের?
- আমার বোনের জন্মদিন আজ।
- ধুর বেডা আগে বলবিনা, গিফটই তো আনি নাই।
- ব্যপার না।
আমি সোমার অর্থ্যাৎ তার বোনের দিকে একটু তাকালাম। দেখলাম সে তার বান্ধবীদের সাথে কথা বলছে। আর আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। তার ঐ হাসি দেখে আমার তো প্রায় পাগল হওয়ার উপক্রম হয়ে গিয়েছিলো। নীল শাড়ি পড়েছে সে। মোমবাতির আলোতে তাকে একেবারে নীল পরীর মতো লাগছে। যদিও আমি পরী দেখিনি। তবুও আমার বিশ্বাস তার এই মায়া মাখা, পাগল করা চেহারাটা পরীকেও হার মানাবে। আমি চেয়ে আছি তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে। তাকে আজ এতোটাই সুন্দর লাগছে যে, তার দিক থেকে চোখ ফেরানো দায় হয়ে গিয়েছে।
.
সোমার জন্মদিন পালন শেষে সিহাব আমাকে বললো
- দোস্ত আজকের রাতটা আমাদের এখানেই থেকে যা।
আমি হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত তিনটে বাজে। তাই আমিও সিহাবের কথাতে রাতটা তাদের বাসাতেই থেকে গেলাম।
সকাল হতে না হতেই সোমা এসে চা দিয়ে গেলো। আহা! চায়ের সাথে সেদিনের মতো একটা মুচকি হাসি। দেখলেই মনে প্রেমের স্বাদ জাগে।
.
ক্রমেই দিন যাচ্ছে, আগের থেকে আমার যাতায়াত বাড়ছে সিহাবের বাড়িতে। কিছুদিন ধরে আমি লক্ষ করছি সিহাবের বাড়িতে গেলে সোমা আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকে। তার চোখ বলে সে কিছু বলতে চায় আমাকে।
একদিন সোমা আমাকে তাদের বাসার ছাদে ডাকলো।
- ভাইয়া আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।
- বলো।
- কিছু মনে করবেন না তো?
- না, তুমি নির্ভয়ে বলো।
- ভাইয়া আমি আপনাকে ভালোবাসি।
বলেই সে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। আমার দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছেনা সে।
- কি?
- হ্যাঁ ভাইয়া, ঐ প্রথমদিন আপনাকে দেখেই আমার পছন্দ হয়েছে আপনাকে।
- মাথা ঠিক আছে তোমার? তুমি জানো তুমি কি বলছো এসব?
- জানি।
- কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসিনা।
ছাদ থেকে নেমে সোজা বাসায় চলে আসলাম। আমি চাইনা সোমার জন্য আমার আর সিহাবের মধ্যে বন্ধুত্ব নষ্ট হোক। আমি যে সোমাকে ভালোবাসিনা, তা কিন্ত নয়। আমিও ওকে ভালোবাসি। কিন্তু এই ভালোবাসার কারণে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা নষ্ট হোক এটা আমি চাইনা।
আমি ধীরে ধীরে সিহাবের বাড়িতে আমার আসা যাওয়াটা কমিয়ে দিলাম।
.
গত পাঁচদিন আমি সিহাবের বাড়িতে যাইনি। এর মাঝে সিহাব অনেকবার ফোন দিয়েছে আমাকে।
আমি ফোন রিসিভ করে তার সাথে কথা বলি ঠিকই, কিন্তু সে আমাকে তার বাড়িতে ডাকলে আমি আর তাদের ওখানে যাইনা।
সাম্প্রতিক আমি লক্ষ করছি একটা আননোন নাম্বার থেকে প্রায় আমার ফোনে কল আসে। প্রথম প্রথম আমি বিষয়টা তেমন গুরুত্ব দেইনি।
কিন্ত রাত নেই, দিন নেই সবসময় কল আসে।
.
বিকেলবেলা করিম চাচার দোকানে বসে চা খাচ্চি। তখন সিহাব ফোন দিলো আমাকে।
- দোস্ত কোথায় তুই?
- আমার বাসার নিচে। কেন?
- দোস্ত শ্রুতির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
- মানে?
- হ্যাঁ দোস্ত। ও আমাকে এইমাত্র ফোন করে জানালো। তুই কিছু একটা কর প্লিজ।
- আচ্ছা, তুই টেনশন নিস না। আমি দেখছি বিষয়টা।
- দোস্ত আমি শ্রুতিকে ছাড়া বাঁচবোনা।
- তোর এই মিচকা কান্না বাদ দে। বললাম তো আমি দেখতাছি বিষয়টা।
.
আমি সাব্বিরকে অর্থ্যাৎ শ্রুতির ভাই অর্থ্যাৎ আমার বন্ধুকে ফোন দিলাম।
- কিরে এতোদিন পর হঠাৎ কি মনে করে ফোন দিলি?
- কি মনে করে আবার, অনেকদিন তোর খোজখবর নেওয়া হয়না তাই ফোন দিলাম। দেখলাম তুইও ফোন দিস না।
- আরে কাজের মধ্যে থাকি তো, তাই সময় হয়ে ওঠেনা। যাই হোক, কেমন অাছিস বল?
- আছি কোনমতো। তুই?
- এইতো চলে যাচ্ছে।
এই সেই কথা বলতে বলতে আমি সাব্বিরের থেকে শ্রুতিকে দেখতে আসার বিষয়টাও জেনে নিলাম। আসলে শ্রুতিকে কেউই দেখতে আসেনি। শ্রুতি শুধু শুধু সিহাবকে মিথ্যে কথা বলেছে।
.
পরদিন আমি সিহাবকে ফোন দিয়ে আমার মেসে আসতে বললাম। সে সময়মতো চলে এলো। তারপর দুজন সাব্বিরের বাসার উদ্দেশ্যে বের হলাম।
- দোস্ত আমরা কোথায় যাচ্ছি?
- শ্রুতিদের বাড়িতে।
- কেন?
- তোকে পরিচয় করিয়ে দিতে।
- ও।
শ্রুতিদের বাড়িতে পৌছানোর পর আমি সাব্বিরকে ডেকে সিহাব আর শ্রুতির সম্পর্কের বিষয়ে তাকে বললাম। প্রথম প্রথম সাব্বির আমতা আমতা করলো। কিন্ত পরে আমার চাপে সে রাজি হলো। আমি সাব্বিরকে বলে আসলাম "কিছুদিনের মধ্যেই সিহাবের বাবা মা তোদের বাড়িতে আসবে"।
.
আমি আর সিহাব এখন রাস্তায় হাটছি।
- দোস্ত কি থেকে কি হলো কিছুই বুঝলাম না।
- তোর আগে বোঝার বয়স হোক, তখন বুঝবি।
- শ্রুতির না বিয়ে ঠিক হয়েছে?
- ধুর বেডা, ও তোকে মিথ্যে কথা বলেছে। যাতে তুই অতি দ্রুত ওকে বিয়ে করিস।
- কি সাংঘাতিক!
- যত দ্রুত পারিস তোর বাবা মাকে ওদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে বলিস।
- কিন্তু বাবা মাকে বিয়ের কথা বলতে যে আমার শরম লাগে।
- তাইলে বেডা বসে বসে মুড়ি খা। শ্রুতিকে আর তোর পেতে হবেনা।
- তুই একটু আমায় সাহস দে।
- ফু... যা দিয়ে দিলাম এক বুক সাহস।
- এটা কেমন সাহস?
- উড়ন্ত সাহস, উড়ে উড়ে লাফিয়ে তোর বাবা মাকে বলবি বিয়ের কথা।
- তুই যদি আমার সাথে থাকিস তাহলে আমি একটু সাহস পাবো।
- যাহ হ্লা, তোর আর শ্রুতিকে বিয়ে করতে হবেনা।
- চল না দোস্ত আমার সাথে একটু।
- কোথায়?
- আমার বাসাতে।
- না না তোর বাসাতে আমি যেতে পারবোনা।
- কেন?
- কাজ আছে আমার।
- তুই বন্ধুর জন্যে এটুকু করতে পারবিনা?
করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে সিহাব বললো কথাটি। তার এমন চাহনি দেখে মায়া লাগলো খুব। ভাবছি ওর বাসাতে যাবো কি যাবোনা! গেলেতো সোমার পাল্লায় পড়তে হবে। আবার না গেলেও বন্ধু অভিমান করবে। ভাবতে ভাবতেই আমার মুখ থেকে বেরিয়ে গেলো "আচ্ছা চল।"
.
সিহাবদের বাসায় ঢুকতেই প্রথমে সোমার সাথে দেখা। সে চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। যেন সে আমাকে আস্ত গিলে ফেলবে। তার চেহারাই রাগি রাগি ভাব থাকলে তো বেশ ভালোই লাগে তাকে। আমি মাথা নিচু সিহাবের পিছে পিছে ভেতরে গেলাম। সোমা আমাকে কিছু বলবে হয়তো। সেটা তার হাবভাব দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু আমি তার সে কথা শুনবোনা। আমি তার হরিণ কালো চোখের মায়ায় পরবোনা।
.
আমি আর সিহাব তার বাবা মায়ের সামনে দাড়িয়ে আছি। সিহাব বলতে ভয় পাচ্ছে তার বাবা মাকে বিয়ের ব্যপারে। সে বারবার আমার থেকে সাহায্য চাচ্ছে চোখের ইশারাতে।
ওর এমন অবস্থা দেখে আমার হাসি পাচ্ছে খুব। হ্লা বিয়ের কথা বাসায় কইতে পারেনা আবার যায় প্রেম করতে।
- আংকেল, আন্টি সিহাব কি যেন বলবে আপনাদের?
- সেটা তো বুঝতেই পারছি।
- সিহাব বলে ফেল দোস্ত।
- শরম লাগে যে আমার।
সিহাবের মুখে শরমের কথা শুনে আংকেল বললো
- কি আকাম ঘটাইছোস যে কইতে শরম পাস। বল কি বলবি।
- আব্বা আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি। তাকে বিয়ে করতে চাই। তোমরা চাইলে কালকেই মেয়ের বাড়িতে সম্বন্ধ নিয়ে যেতে পারো।
এটুকু বলেই সিহাব মাথা নিচু করে লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে দাড়িয়ে রইলো।
- আরে বলিস কি? আমরাও চাচ্ছিলাম তোর বিয়েটা দিতে। ভাবছি তোকে বলবো। কিন্তু বলবো বলবো করেও বলা হয়ে ওঠেনা। মেয়ের বাসার ঠিকানা দে।
.
সিহাবের বাসা থেকে বের হতে যাবো ঠিক সে মুহূর্তে কে যেন পেছন থেকে আমার শার্ট টা টেনে ধরলো। আমি পেছনে ঘুরতেই দেখি সোমা। তার চোখে এখনো রাগ জলজল করছে।
- ঐ আপনি আমার ফোন রিসিভ করেন না কেন?
- ও ঐটা তাহলে তোমার নাম্বার?
- হুহ। আপনাকে একটা কথা বলবো।
- বলো।
- আচ্ছা আমাকে কি দেখতে এতোটাই খারাপ লাগে যে, আপনি আমাকে পছন্দ করেন না?
সোমার এ কথা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম। নাহ, সোমার চেহারা খারাপ হতে যাবে কেন? সে তো অনেক সুন্দরী। কিন্তু তাকে কি করে বোঝায়, আমাদের প্রেমের জন্য আমার আর সিহাবের মধ্যে মনমালিণ্য তৈরি হবে। আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা ভেঙে যাবে।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে সোমা আবার বললো
- আমি দেখতে খারাপ তাইনা?
- না না, তুমি অনেক সুন্দরী।
- তাহলে আপনি আমাকে ইগনোর করে চলেন কেন?
- এমনিই। আচ্ছা আমি এখন আসি।
বলেই চলে আসলাম সেখান থেকে। আসার সময় সে পেছন থেকে আমায় বলেছিলো, ফোন দিলে রিসিভ করবেন। না হলে অনেক খারাপ কিছু ঘটে যাবে কিন্তু।
.
"আমি বুঝিনা সোমা আমার মধ্যে কি এমন দেখলো! সে দেখতে সুন্দর, তার পেছনে আমার থেকে ভালো ভালো ছেলেদের ভীড় জমবে। কিন্তু সোমা আমার পিছে পড়ে আছে কেন?"
বসে বসে এসব ভাবছি। ঠিক তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখি সেই অপরিচিত নাম্বার অর্থ্যাৎ সোমার নাম্বার ভেসে উঠেছে।
ভাবছি কল ধরবোনা। কিন্তু সোমার ঐ শেষ কথাটা মনে পড়তেই মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করতে শুরু করলো। আমি কলটা রিসিভ করে চুপ করে রইলাম।
- কি ব্যপার ভয় পেয়েছেন?
আমিও এবার তার সাথে কথা বলতে থাকলাম।
- ভয় পাবো কেন?
- আচ্ছা বাদ দিন। কি করেন এখন?
- বসে আছি।
- ও।
- হুম।
- ভালোবাসি আপনাকে।
- আমিও।
মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো কথাটা।
- কি? তাহলে এতোদিন কষ্ট দিলেন কেন?
- না, না আমি ভালোবাসিনা।
- সেটা জানি আর বলতে হবেনা। কালকে দেখা করবেন আমার সাথে আমাদের কলেজে।
বলেই সোমা ফোন রেখে দিলো। আমি তো পড়ে গেলাম বিপদে। ধুর কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেললাম! এখন যদি কালকে তার সাথে দেখা না করি তবে আবার খারাপ কিছু করে ফেলতে পারে। আমিও যে ওকে ভালোবাসি। কিন্তু আমার এই ভালোবাসার চেয়ে আমার আর সিহাবের বন্ধুত্বটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাকে শক্ত হতে হবে। আমি ওর সাথে দেখা করবোনা। ও কালকে ফোন দিলেও রিসিভ করবোনা।
.
পরদিন সকালে আমি সোমার সাথে দেখা করতে যাইনি। সে আমাকে অনেকবার ফোন দিয়েছে। আমি রিসিভ করিনি। পরে দেখলাম একটা মেসেজ আসলো আমার ফোনে। মেসেজটা সিন করে দেখি "বলেছিলাম না ফোন দিলে রিসিভ করবেন, না হলে অনেক খারাপ কিছু ঘটে যাবে!" এটা লেখা।
আমার মনের মধ্যে ভয় কাজ করতে থাকলো। আমি সোজা ওর কলেজে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি ও মাত্রই কলেজ থেকে বের হচ্ছে।
হাসি হাসি মুখটা আজ মলিন তার, যেন নেমেছে সেখানে আষাঢ়ের অন্ধকার।
আমাকে দেখতে পাওয়া মাত্রই সে ছুটে এলো আমার কাছে। এসে বললো
- আমাকে কষ্ট দিতে আপনার ভালো লাগে?
- না তো, কেন?
- তাহলে ফোন ধরেন না কেন?
- বাথরুমে ছিলাম তখন।
- আপনি এখন না আসলে আমি কি করতাম জানেন?
- কি করতে?
- বিকেলে আমাকে দেখতে আপনাকে হাসপাতালে যেতে হতো।
- সোমা দেখো, তোমাকে আমি কিছু কথা বলবো। যদি তোমার জ্ঞানশক্তি ভালো হয়, তাহলে তুমি নিশ্চয়ই আমার কথাগুলো বুঝবে।
- কি?
- তুমি জানো সিহাব আমার বন্ধু, আর তুমি তার একমাত্র বোন। আমি চাইনা আমাদের ভালোবাসার সম্পর্কের কারণে আমার আর সিহাবের মধ্যেকার বন্ধুত্বটা নষ্ট হোক। আশা করি তুমি আমার কথাটা বুঝতে পেরেছো।
- কিন্তু আমি যে আপনাকে ছাড়া বাঁচবোনা।
- দেখো এমন বাচ্চাদের মতো কথা বলোনা।
- আপনি আমাকে ভালোবাসেন কিনা সেটা বলেন?
- হুম বাসি।
- তাহলে ভাইয়াকে ম্যানেজ করার দায়িত্বটা আমার উপর ছেড়ে দিন।
- কিন্তু.......
- কোন কিন্তু নয়।
.
সোমার সাথে কথা বলে সোজা বাসায় চলে আসলাম। কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারছিনা। আমি ওকে ইগনোর না করে ভালোবাসি কথাটা কেন বলতে গেলাম। যখন সিহাব জানতে পারবে, আমার আর সোমার সম্পর্কের কথা। তখন কি জবাব দিবো আমি সিহাবকে?
আমারই বা কি করার ছিলো! সোমার ঐ মায়াবী মুখটার দিকে তাকালে যে নিজেকে হারিয়ে ফেলি তার মাঝে। তাকে যে বারবার ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছে করেনা।
.
বিকেলে সিহাব ফোন দিয়ে বললো, দোস্ত বাবা মায়ের সাথে শ্রুতিদের বাসায় যাচ্ছি। তুই আসলে একটু ভালো হতো। প্লিজ দোস্ত চলে আয়।
আমি কখনো সিহাবের কথা ফেলতে পারিনা। তাই চলে গেলাম তার সাথে শ্রুতিদের বাসায়।
বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে চলে আসলাম সেখান থেকে। আসার সময় সিহাব আমাকে বললো, দোস্ত আজকে একটা পার্টি দিবো। চলে আসিস রাতে আমাদের বাসাতে।
আমি ভাবছি, ওদের বাসাতে গেলে আমি নির্ঘাত সোমার প্রেমে যাবে। সোমার ঐ নজর ফেরানো চাহনিই আমাকে বাধ্য করবে তার প্রেমে পড়তে। আমার মনটাও যে চায় সোমাকে কাছে পেতে, তার প্রেমে পড়তে, তার সবটুকু ভালোবাসা পেতে।
.
রাতে সিহাবের বাসায় গেলাম। দেখলাম সে আয়োজন খুব করেছে। মনে হচ্ছে যেন আজকেই তার বিয়ে। তার সকল বন্ধু বান্ধব এসেছে।
খুব তৃপ্তি সহকারে উপভোগ করছি পার্টি টা। গান বাজনা, ড্যান্স, সবকিছুই চলছে। হঠাৎ কে যেন আমার হাত ধরে টান দিয়ে ছাদ থেকে ছাদের উঠার সিড়ির কাছে নিয়ে গেলো। আমি হাত ছাড়াতেই দেখি সোমা দাড়িয়ে আছে আমার সামনে।
- কি ব্যপার, এভাবে হঠাৎ হাত ধরে টেনে এখানে নিয়ে আসলে কেন?
- ভালোবাসি তাই।
- দেখো সোমা এটা ভালোবাসার সময় না। তুমি কি চাও যে, আমার আর সিহাবের মধ্যেকার বন্ধুত্বটা নষ্ট হোক?
- না।
- তাহলে?
- আমি চাই, আপনার আর ভাইয়ার মধ্যে বন্ধুত্বও থাকবে। আবার আমাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি ভালোবাসাও থাকবে।
- সোমা তুমি পিচ্চি একটা মেয়ে, তোমার সবকিছু বোঝার বয়স এখনো হয়নি।
- না হলে না হোক, আপনিও তো আমাকে ভালোবাসেন। তো, আপনার সমস্যা কোথায়? ভাইয়াকে নিয়ে যদি আপনার এতই সমস্যা হয়। তাহলে আমি গিয়ে ভাইয়াকে আমাদের ব্যপারে জানাচ্ছি।
বলেই সোমা ছাদের দিকে পা বাড়ালো। আর আমি ঠিক তখনই পেছন থেকে তার হাতটা ধরলাম। হাত ধরা মাত্রই সে আমার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকালো।
- কি, বলবোনা ভাইয়াকে?
- থাক বলার দরকার নেই।
- তাহলে ভালোবাসবেন তো?
- হুম।
.
ধীরে ধীরে সিহাবের বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো। আগামী পরশু তার বিয়ে। সে আমাকে আজ থেকেই তাদের বাড়িতে থাকতে বললো। প্রথমে না না করেও পরে তার জোড়াজুড়িতে তাদের ওখানে থাকতে বাধ্য হলাম।
আমি আর সিহাব বসে আছি তার রুমে। সে হঠাৎই আমাকে বসা থেকে উঠে এসে জড়িয়ে ধরলো।
- কিরে কি হলো হঠাৎ তোর? এভাবে জড়িয়ে ধরলি কেন?
- দোস্ত তোকে আমি ধন্যবাদ জানাবো কিভাবে, তার ভাষা আমার জানা নেই। তুই আমার জন্য যা করলি, তা কখনো কেউ করতো কিনা আমার সন্দেহ।
আমি সিহাবের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার চোখে প্রচুর আশা, খুশি জমে একাকার।
- আরে কি আর এমন করলাম। বন্ধুর জন্য যদি এটুকু করতে না পারি, তাহলে বন্ধু হয়েছি কি করতে?
আমাদের কথা বলার মাঝখানে হঠাৎ সোমা এলো।
- ভাইয়া খেতে এসো। আর আপনিও আসেন।
একটা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেলো সোমা।
.
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আড্ডা দিতে থাকলাম দুজনে। আড্ডা দেওয়ার এক পর্যায়ে আমি লক্ষ করলাম সোমা আড়ালে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক। আমি তার দিকে দৃষ্টিগোচর করতেই সে আড়াল হয়ে গেলো।
.
পরদিন সকাল থেকে শুরু করে রাত অব্দি সোমা আমার আশেপাশেই ছিলো। সে সবমসময় আমার পিছে ছায়ার মতো লেগে থাকে। মনে হয় আমি একটু আড়াল হলেই সে আমাকে হারিয়ে ফেলবে। তার জীবন থেকে আমি আড়াল হয়ে যাবো।
.
.
আজ সিহাবের বিয়ে। পুরো বাড়িতে আজ ব্যস্ততা খুব। এটা সেটা করতে করতে আমি খুব ক্লান্ত।
সিহাবের আর সব বন্ধুরাও এসেছে। তারাও কাজে ব্যস্ত। আমাকে ক্লান্ত দেখে কোথথেকে যেন সোমা ছুটে এসে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো। চারপাশে এত মানুষজন থাকা স্বত্তেও সে কোন সংকোচ বোধ করছেনা।
টানতে টানতে সে আমাকে তার রুমে নিয়ে গেলো। আমি তার এমন অদ্ভুত আচরণে অবাক না হয়ে পারলাম না।
- কি ব্যপার, এভাবে টেনে আনলে কেন? (আমি)
- খুব ব্যস্ত তাইনা?
- হুম, দেখছোই তো।
- আমাকে একটু সময় দিলে, কি এমন ক্ষতি হয়ে যায়?
- এতো কাজের মধ্যে কিভাবে সময় দিবো বলো?
- ভালোবাসি তোমাকে।
- আমিও, তবে এখন আসি। কাজ পরে আছে অনেক।
আমি সামনের দিকে পা বাড়াতেই সোমা আমার হাতটা ধরে ফেললো। আমি তার দিকে ঘুরতেই সে জড়িয়ে ধরলো আমায়।
আহা! তার শরীরের স্পর্শে আমি আজ হারিয়ে গেছি তার ভেতরে। জীবনে কোন মেয়ে এর আগে কখনো এভাবে আমায় জড়িয়ে ধরেনি। আমার মধ্যে এক অন্যরকম অনুভতি কাজ করতে থাকলো।
হঠাৎ করে এভাবে জড়িয়ে ধরার জন্য হলেও যে সোমাকে আমার জীবনে প্রয়োজন।
কতক্ষণ এভাবে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম সেটা আমার জানা নেই।
.
যথারীতি সিহাবের বিয়েটা সম্পন্ন হলো। বউকে পেয়ে সিহাব যেন খুশিতে আত্মহারা। রাতে সিহাবকে বাসরঘরের দিকে ঠেলে দিয়ে চলে আসলাম বাসায়।
আহা, কবে যে আমি সিহাবের মতো আমার মনের মানুষটাকে কাছে পাবো? আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম কিছুদিন পার হলেই আমি সিহাবকে আমার আর সোমার ব্যপারে জানাবো।
.
আমি এখন প্রতিদিন সিহাবদের বাসায় যাই। হয়তো সোমার আমার প্রতি ভালোবাসার টানে নয়তো সিহাবের সাথে বন্ধুত্বের জন্য। তবে আগের থেকে এখন ওদের বাড়িতে আমার যাওয়া আসা বেড়েছে।
ধীরে ধীরে আমি সিহাবের বউ অর্থ্যাৎ শ্রুতির সাথে একেবারে ফ্রি হয়ে গেলাম। শ্রুতি আমার বন্ধুর বোন হওয়া স্বত্তেও কখনো তার সাথে তেমন কথা বলা হয়ে ওঠেনি।
আমি আমার আর সোমার ব্যপারটা শ্রতিকে জানালাম। এখন যখনই আমি সোমাদের ওখানে যাই। শ্রুতি বুঝে ফেলে আমি কিসের জন্য এসেছি। সে আমাকে আর সোমাকে একাকী কথা বলার, একটু ভালোবাসা বিনিময় করার সুযোগ করে দেয়। প্রতিদিন সোমা আমাকে কিছু না কিছু একটা দিবেই।
.
সেদিন আমি আর সোমা তাদের বাসার ছাদে দাড়িয়ে কথা কথা বলছি। অবশ্য শ্রতিই আমাদের একটু সুযোগ করে দিয়েছে।
পরিবেশটা বেশ ছিমছিমে। আকাশটা মেঘলা। চারিদিকে আঁধার হয়ে আসছে। হয়তো কিছুক্ষণ বাদেই বৃষ্টি নামবে। আমিও মনে মনে চাচ্ছি বৃষ্টি আসুক। তাহলে সোমার সাথে একটু ভেজা যাবে।
ভাবতে ভাবতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। আমি আর সোমা বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। তার অবাধ্য চুলগুলো বার বার বৃষ্টির পানিতে তার মুখের সাথে লেপ্টে যাচ্ছে। আমি হাত দিয়ে তার চুল গুলো সরিয়ে দিতে তাকে স্পর্শ করতেই সে কেঁপে উঠলো। তার নেশা ধরানো চাহনি আমাকে বারবার তার কাছে টানছে। আমি এক পা এক পা তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যখন আমি একেবারে তার কাছাকাছি চলে গেলাম, তখন সে বেশ লজ্জা পেয়ে গেলো।
তার ঠোঁট দুটো কাঁপছে। আমি ক্রমেই তার আরো কাছে যেতে থাকলাম। এখন আমার নাকটা তার নাক বরাবর। তার গরম নিশ্বাস আমি অনূভব করছি।
.
কিছুক্ষণ এভাবে অতিবাহিত হওয়ার পর আমি আমার কাধে কারো স্পর্শ অনুভব করলাম। পিছনে ঘুরতেই কষে একটা থাপ্পড় খেয়ে গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রইলাম।
হ্যাঁ, থাপ্পড়টা সিহাব মেরেছে আমায়। সিহাব কখন আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে সেটা আমি খেয়ালই করিনি। দেখলাম শ্রুতি একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
- শালা তোরে আমার বন্ধু ভেবে বড় ভুল করেছি আমি। আমি যদি আগে জানতাম তুই আমার বোনের সাথে এমন করবি, তাহলে তোরে কখনোই বন্ধু বানাইতাম না। বের হয়ে যা এখান থেকে। আর কখনো যেন আমাদের বাড়িতে তোকে না দেখি। তোর সাথে আমার বন্ধুত্ব এখানেই শেষ। শালা লুচ্চা তুই আমার বন্ধু হয়ে আমার বোনের সাথেই প্রেম করিস! বের হয়ে যা এখান থেকে। (সিহাব)
আমি তখন কোন কথা না বলে চুপচাপ মাথা নিচু করে চলে এলাম সেখান থেকে। আসার সময় একবার সোমার দিকে তাকালাম, দেখলাম তার মুখটা বেশ মলিন। হয়তো চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়েছে। যা বৃষ্টির জলের সাথে মিশে বোঝা যাচ্ছেনা।
.
আমি জানতাম এমন কিছু একটা হবে। কিন্তু কিছু একটা হবার আগেই আমি সিহাবকে এ ব্যপারে জানাতে চেয়েছিলাম। আহা, সে সময়টাও যে আমি পেলাম না।
.
এখন আর কেউ ফোন দিয়ে বলেনা আমায়, দোস্ত চল অমুক জায়গাতে যাই। দোস্ত আজকে একটা পার্টি দিবো তুই থাকবি কিন্তু। কেউ আর বলেনা, দোস্ত আমি একা একা ওখানে যেতে পারবোনা, তুই চল আমার সাথে।
আসলে বন্ধুত্বে যখন একবার খাদ পড়ে যায়, তখন সে বন্ধুত্ব আর টিকেনা। এখানে দোষটা আমারই। আমারই উচিত হয়নি ওর বোনের সাথে প্রেম করা।
একটা সম্পর্ক গড়তে যতোটা সময় লাগে, ঠিক ততটাই কম সময় লাগে সম্পর্কটা ভাঙতে। এখন আর আমি সিহাবদের ওখানে যাইনা। সেও আর আমাকে ফোন দেয়না।
সোমাও এখন আর আমাকে ফোন দেয়না। হয়তো সিহাব তাকে ফোন ব্যবহার করতে দেয়না। আমি সিহাবের দোষ দিবোনা। সব ভাই-ই তার বোনের ভালো চায়, তার বোনকে একটা ভালো ছেলের হাতে তুলে দিতে চায়।
আমি হয়তো ভালো ছেলেনা।
.
কয়েকটা দিন কেটে গেছে। আমি আর আগের মতো কলেজে যাইনা। যে বন্ধুর সাথে আড্ডা না দিলে পড়ায় মন বসতো না।
সেই বন্ধুই যখন নেই, তবে কার জন্য কলেজে যাবো? আমার মন খারাপ হলে আমি একাকি রাস্তার ফুটপাত ধরে অজানা গন্তব্যে হেঁটে চলি। আজও হাঁটছি। হঠাৎ আমার পকেটে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো। অন্যমনস্ক হয়ে ফোনটা হাতে নিতেই আমি চমকে যাই। সিহাব ফোন দিয়েছে আমাকে। তার ফোন দেখে আমার হৃদয়ের এককোণে আশার প্রদীপ জলে উঠলো। মনে হলো, আমি হারিয়ে ফেলা কোন মূল্যবান বস্তু ফিরে পেয়েছি।
ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ ভেসে এলো। শ্রুতি কাঁদছে। সে কান্না জড়িত কন্ঠে আমাকে বললো, ভাইয়া আপনি দ্রুত হাসপাতালে চলে আসুন। সোমার অবস্থা ভালোনা।
"কি হয়েছে সোমার" জিজ্ঞেস করতেই ফোনটা কেটে গেলো।
আমি দ্রুত হাসপাতালের দিকে ছুটলাম। কি হয়েছে আমার সোমার? সে হাসপাতালে কেন? নানান ভাবনা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সে কোন খারাপ কিছু করে ফেলেনি তো?
.
হাসপাতালে পৌছতেই শ্রুতি আমাকে টেনে নিয়ে গেলো সোমার কাছে। সোমা যেই রুমে রয়েছে, আমি সেখানে যেতেই সিহাব রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
সেখানে গিয়ে দেখি সোমার মুখে মাস্ক পড়ানো। আমি শ্রুতিকে জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে সোমার। সে উত্তর দিলো "ঐ সেদিনের পর থেকে সোমা কারো সাথে কোন কথা বলেনা। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করেনা। রাতে ঘুমাইনা। যার কারণে তার আজ এই অবস্থা। সকালে আমি সোমাকে ডাকতে গেলে দেখি সে মেঝেতে পড়ে আছে। আর তারপর পরই তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি আমরা। ডাক্তার বলেছে, নিয়মিত ঘুম আর না খাওয়ার কারণে তার শরীর দূর্বল হয়ে গেছে। আর সে নাকি বেশ মানসিক ভোগান্তিতে ভুগছে।
কিছুক্ষণ পর শ্রুতিও বের হয়ে গেলো রুম থেকে। আমি সোমার পাশে গিয়ে বসলাম। তার মায়াবী, হাসিখুশি মুখটা আজ কালো অন্ধকারে ভরে গেছে। অনেক শুকিয়ে গিয়েছে সে। আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলাম। আমাকে তার মাথায় হাত বুলাতে দেখে সে চোখ মেলে তাকালো আমার দিকে। মুখে এক চিলতে হাসি আনার চেষ্টা করে কিছু বলতে চাইলো আমাকে। কিন্ত বলতে পারলোনা। আমি ইশারায় ওকে চুপ থাকতে বললাম। সে বাধ্য মেয়ের মতো চুপ হয়ে রইলো। আমি আলতো করে তার কপালে একটু চুমু একে দিলাম।
কিছুক্ষণ পর সিহাব রুমে আসলো। এসে ছোট্ট করে বললো, সরি। আমি কিছু বললাম না।
.
.
.
.
আজ আমার বিয়ে, হ্যাঁ বিয়েটা সোমার সাথেই। সেদিন সিহাব তার বাবা মাকে আমার আর সোমার ব্যপারে বলে। তারপর উনারা আমার আর সোমার বিয়ের ব্যবস্থা করেন।
.
বাসর ঘরে ঢুকতেই সোমা উঠে এসে আমাকে সালাম করে আবার বিছানায় গিয়ে বসলো। আমি তার কাছে গিয়ে ঘোমটা টা সরালাম। আহা! এ কাকে দেখছি আমি?
যেন সাক্ষাত পরী আমার সামনে বসে আছে। এ যেন লাল টুকটুকে পরী। আমি আমার পরীটার মুখটা তুলতেই সে লজ্জা পেয়ে মুখ লুকালো আমার বুকে।
আমি পরীটাকে অতি যত্নে আমার বুকে জড়িয়ে ভাবছি, কি থেকে কি হয়ে গেলো? আচ্ছা সম্পর্ক কি অল্পতেই হয়ে যায় আবার অল্পতেই কি ভেঙে যায়?
আমি সোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেই বললাম, সোমা। সে মাথা নেড়ে 'হু' বললো।
- ভালোবাসি তোমাকে। (আমি)
- আমিও।
- আমার থেকে মনে হয় না।
- কেন?
- যদি ভালোই বাসতে তাহলে আরো জোড়ে জড়িয়ে ধরতে।
বলতেই সোমা তার সবটুকু শক্তি দিয়ে আমায় জড়িয়ে ধরলো। আমিও পরম আবেশে তাকে আমার মাঝে জড়িয়ে নিলাম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.