![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বার্থপর
পর্ব- ২ (শেষ পর্ব)
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
কিছুক্ষণ পর নাবিল এসে শ্রাবণকে নিয়ে যায়। শ্রাবণের শরীরের অবস্থা বেশ খারাপ। ডাক্তার দেখানোর কথা বললেও কোনো কাজ হয় না। সে ডাক্তার দেখাতে চায় না। বলে, মনের অসুখ দূর হলে শরীরের অসুখ আপনাআপনিই চলে যাবে। আর মনের অসুখের একমাত্র ঔষুধ মেঘা।
.
শ্রাবণ একটা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের একাউন্টসে কাজ করে। শারিরীক অবস্থার অবনতির জন্য প্রতিষ্ঠান তাকে লম্বা ছুটি দিয়েছে। অবশ্য লম্বা ছুটির পেছনে শ্রাবণের সততা এবং পরিশ্রম করার মনোবল ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটা কর্মচারী তার আচার ব্যবহারে মুগ্ধ। কেউ কোনো বিপদে পড়লে সবার আগে সে'ই সহযোগিতার হাত বাড়ায়। সবার সাথে সুমিষ্ট ভাষায় কথা বলে।
রাতে শ্রাবণের ভীষণ জ্বর আসে। শরীর কাঁপুনি দেওয়া জ্বর। অবস্থা এতটাই বেগতিক যে, হাসপাতালে না নিলে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে। নাবিল তড়িঘড়ি করে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে। রাত বেশি হওয়ায় রাস্তায় কোনো গাড়িও নেই। একদম শুনশান নিরবতা বিরাজ করছে চারিদিকে। দূর থেকে দু'একটা কুকুরের ডাক ভেসে আসছে। নাবিলের মাথা কাজ করছে না। সে এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছে। কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে দেখে একটা ফার্মেসি আধো খোলা অবস্থায় রয়েছে। সে তাড়াতাড়ি করে সেখানে যায়। সৌভাগ্যক্রমে সেই মুহূর্তে সেখানে একজন ডাক্তারও ছিলেন। নাবিল ডাক্তারকে জ্বরের ব্যাপারটা জানালে ডাক্তার প্রয়োজনীয় ঔষুধ সামগ্রী নিয়ে রওনা হয়।
ভোর রাতে শ্রাবণের জ্ঞান ফেরে। নাবিল তখনও জেগে রয়েছে। কিছুতেই ঘুম আসছে না তার। ফ্রিজ থেকে কিছু ফল বের করে সে শ্রাবণকে খেতে বলে। ডাক্তার ঔষুধ দিয়ে গিয়েছেন। আর যাওয়ার সময় বলে গিয়েছেন, ঔষুধগুলো খাওয়ালে তিন চার দিনের মাথায় জ্বর সেরে যাবে। তবে রোগীর শরীর অনেক দূর্বল। ঠিকমতো খাবার খেতে হবে। খাবারে অনিয়মিত করলে সুস্থ হতে অনেক সময় লেগে যাবে।
.
এর মাঝে মেঘা অনেকবার কল করেছে শ্রাবণকে৷ কিন্তু কোনো রেসপন্স পায়নি। নাবিল বিষয়টা লক্ষ্য করেছে। সে শ্রাবণকে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। শ্রাবণ এখনও বেড রেস্টে রয়েছে। দুপুর গড়ালে শ্রাবণের ফোনে আবারও কল আসে। স্ক্রিনে মেঘার ছবি ভাসছে। নাবিল কল রিসিভ করলে অপর পাশ থেকে মেঘা বলে ওঠে, শ্রাবণ তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল। একটু দেখা করতে পারবে?
নাবিল উত্তর দেয়, ভাবি আমি নাবিল বলছিলাম। ভাইয়ার অনেক জ্বর। উনি বিছানায় শুয়ে আছেন।
- জ্বর কবে থেকে?
- আজ দু'দিন হলো।
- ডাক্তার দেখিয়েছেন?
- হ্যাঁ ভাবি। ঔষুধ চলছে৷ কিন্তু ভাইয়ের শরীর অনেক দূর্বল। ঠিকমতো খাবার না খেতে খেতে শরীরের অবস্থা অনেক খারাপ।
- আপনার বাসার অ্যাড্রেসটা আমাকে দিন।
- আমরা আগের বাসাতেই আছি ভাবি।
- ও, আচ্ছা। তবু আমাকে একটু টেক্সট করে দিন।
নাবিল কিছুটা অবাক হয়। মেঘা তার কাছে বাসার ঠিকানা চায়ছে কেন? সে তো বাসা চিনেই। নাবিল কথা না বাড়িয়ে বাসার অ্যাড্রেসটা টেক্সট করে দেয়।
সন্ধ্যার কিছু সময় আগে মেঘা শ্রাবণের বাসার নিচে গিয়ে শ্রাবণকে কল করে। এবারও কলটা নাবিলই ধরে। নাবিল কল ধরলে মেঘা বলে, আমি আপনাদের বাসার নিচে আছি। আপনি একটু নিচে নামতে পারবেন?
নাবিল 'জি' বলে কল রেখে দিয়ে নিচে নামে। নিচে গিয়ে দেখে মেঘা দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তাকে বেশ বিষণ্ন লাগছে। নাবিল জিজ্ঞেস করে, ভাবি কেমন আছেন আপনি? আপনাকে কেমন বিষণ্ন দেখাচ্ছে।
- না, তেমন কিছু না। আপনার ভাই কেমন আছে এখন?
- এখন আগের থেকে কিছুটা ভালো। তবে এখনও বিছানাতেই আছেন। আপনি উপরে আসুন।
মেঘা উপরে যায়৷ শ্রাবণ মেঘাকে দেখে উঠে বসতে চেষ্টা করে। কিন্তু তার শরীরে কুলাচ্ছে না। ঠিকমতো কথাও বলতে পারছে না। মেঘা তার একদম কাছে গিয়ে বসে। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তার হাত দু'টো নিজের হাতে রাখে। মেঘার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। এত হাসিখুশি একটা ছেলে আজ কেমন অসহায় হয়ে পড়েছে!
.
মেঘা যাওয়ার সময় নাবিলকে ডাক দেয়। নাবিল এলে মেঘা তাকে নিয়ে নিচে নামে। কিছু ফল, জুস, আর পানি কিনে দেয়। সেই সাথে রাতের খাবারের জন্য ফুড কোর্ট থেকে কিছু খাবারও কিনে দেয়। আর নাবিলকে বলে, আমি রোজ এসে আপনার ভাইকে দেখে যাবো। আর আপনার কষ্ট করে রান্না করতে হবে না। আমি প্রতিদিন আপনাদের জন্য রান্না করে আনবো।
এর পর থেকে রোজ মেঘা শ্রাবণকে দেখতে আসে। নিজের হাতে মুখরোচক খাবার রান্না করে আনে। যেন শ্রাবণ দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। শ্রাবণের এই অবস্থা মেঘাকে বেশ কষ্ট দেয়। যেই মেঘা শ্রাবণের সাথে মাস খানেক দেখা করেনি, ঠিক মতো কথা বলেনি। সেই মেঘা এখন শ্রাবণকে রোজ দেখতে আসে, তার সাথে কথা বলে, তাকে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়।
.
ধীরে ধীরে শ্রাবণ সুস্থ হয়ে ওঠে। মেঘার আসা যাওয়াও কমতে থাকে। যেন সে শ্রাবণের থেকে কিছু লুকাতে চায়ছে। বিষয়টা নাবিল খুব ভালোভাবেই লক্ষ্য করে। সে বেশ কয়েকবার মেঘাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেসও করতে চেয়েছিল। কিন্তু পরে আর করেনি।
শ্রাবণ এখন পুরোপুরি সুস্থ। মেঘার সাথে রোজ ফোনকলে কথা হয় শ্রাবণের। কিন্তু দেখা হয় না। এদিকে শ্রাবণ অফিসে যাওয়াও শুরু করেছে। তার শরীর মন সবকিছুই এখন একদম আগের মতো। শ্রাবণ তো এতটুকুই চায় যে, তার মেঘা তার সাথে নিয়ম করে প্রতিদিন কথা বলুক। জিজ্ঞেস করুক, তার শরীর কেমন, দুপুরে খেয়েছে কিনা ইত্যাদি।
.
"ভাইয়া আপনি কি একটা বিষয় লক্ষ্য করেছেন?"
নাবিলের কথায় শ্রাবণ অন্যমনস্কভাবেই বলে, কোন বিষয় নাবিল?
- ভাবি কিন্তু আর আগের মতো নেই?
- কেন? তোর হঠাৎ এমন মনে হলো কেন?
- আপনি যখন অসুস্থ ছিলেন, তখন ভাবির সাথে আমার ফোনকলে কথা হয়েছিল। উনি কেমন যেন উল্টাপাল্টা সব কথা বলছিলেন!
- কেমন উল্টাপাল্টা?
- এইতো উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনাদের বাসার অ্যাড্রেসটা দিন।
- এতে ভুলের কি আছে? বাসার ঠিকানা চাইতেই পারে।
- পারে না ভাইয়া। আপনি আমার কথা মনোযোগ সহকারে শুনছেন না। হাতের কাজটা রেখে এদিকে মনোযোগী হন।
- বল।
- প্রথমত ভাবি আমাকে "আপনি" করে বলছিলেন। সাথে উনার কথা বলার ধরণ কিছুটা চেঞ্জ। আর উনি তো আমাদের বাসা আগে থেকেই চিনতেন। উনি আগেও এসেছেন আমাদের বাসায়। তাহলে উনি আমাদের বাসার অ্যাড্রেস চাইবে কেন?
- কি বলিস?
- হ্যাঁ ভাইয়া। বিশ্বাস না হলে আপনার ফোনের কল রেকর্ড চেক করুন। আপনার ফোনে অটো রেকর্ড হয়।
- তুই তো আমাকে চিন্তায় ফেলে দিলি।
- ভাইয়া আপনি একটু ভাবির সাথে সরাসরি দেখা করে কথা বলুন।
- একটা সমস্যা তো আছেই। প্রায় মাস দুয়েক হলো তোর ভাবির সাথে আমার দেখা হয় না। সেই প্রথম অসুস্থ হওয়ার দিন দেখা হয়েছিল। তাও সে অন্যপাশ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। কথাও তেমন একটা বলেনি। অবশ্য সে কিছু একটা বলতে চেয়েছিল। আমিই তাকে সুযোগ দেইনি। আবার আমি সুস্থ হওয়ার পর তার সাথে রোজ ফোনকলে কথা হয়। কিন্তু দেখা করতে বললে কেমন এড়িয়ে চলে!
- হ্যাঁ, আমিও এটাই বলছি।
- কিন্তু কথা বলার সময় তো কোনো চেঞ্জ দেখি না।
- আপনি আজই দেখা করুন।
সন্ধ্যা পেরিয়েছে। শ্রাবণ কল দেয় মেঘাকে। একবার রিং হতেই কলটা রিসিভ হয়ে যায়। যেন সে শ্রাবণের কলেরই অপেক্ষা করছিল।
- মেঘা একটু বাইরে আসবে? একটা সারপ্রইজ আছে। আমি ফুডকোর্টের সামনে আছি। জলদি আসো।
- শ্রাবণ তুমি একটু আমাদের বাসায় আসতে পারবে?
মেঘার কণ্ঠে বেদনার ছাপ।
- কোনো প্রবলেম?
- না। বাবা তোমাকে একটু দেখা করতে বলেছেন৷ আসতে পারবে?
- হ্যাঁ, আমি এখনই আসছি।
শ্রাবণের ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। হঠাৎ মেঘার বাবা ডেকে পাঠালো কেন? সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো? কোনো সমস্যা হয়নি তো?
.
কলিংবেলে চাপ দিতেই দরজা খুলে গেল। মেঘার মা দরজা খুলে দিয়েছেন।
- আসো বাবা।
- মা কোনো সমস্যা? বাবা ঠিক আছেন?
সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছেন। মেঘা একপাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘ তার বোনের হাত ধরে টানাটানি করছে।
"বাবা বসো।" মেঘার বাবা শ্রাবণকে বসতে বললেন।
- বাবা আমাদেরকে ক্ষমা করে দিও।
- কেন? কী হয়েছে?
- আমরা তোমার থেকে অনেক বড় একটা ঘটনা লুকিয়েছি। আমরা চেয়েছিলাম তোমাকে বিষয়টা জানাতে। কিন্তু মেঘার জন্য জানাতে পারিনি। সে তোমাকে জানাতে নিষেধ করেছিল।
- কী ঘটনা বাবা? মেঘা, কী ঘটনা? যা তুমি আমাকে জানাতে নিষেধ করেছিলে।
- বৃষ্টি মা, তুই শ্রাবণ বাবাকে সবকিছু খুলে বল। আমরা ভেতরে যাই।
মেঘার বাবা মা আর ছোটো ভাই মেঘ সবাই ড্রয়িং রুম থেকে চলে গেল। বৃষ্টি কাছে এগিয়ে এলো।
- ভাইয়া, আপনি আমাকেও ক্ষমা করে দিয়েন। আমি মেঘা না। আমি বৃষ্টি।
- বৃষ্টি?
- হ্যাঁ ভাইয়া। আমার আর আপুর চেহারা একই রকম। কণ্ঠস্বরও সেইম। আমরা টুইন ছিলাম। বাইরের কেউ দেখে বুঝতে পারবে না কে আমি। আর কে আমার আপু! আপু হয়তো আপনাকে আমার কথা বলেছিল। আমি পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে থাকতাম। দুই মাস আগে আমি দেশে আসি। আমার পাহাড় পছন্দ। আপুকে বললাম, চলো পাহাড় দেখতে যাই। আপুও আর না করেনি। আপনাকে কল করে বলতে চেয়েছিল, যেন আপনিও আমাদের সাথে যান। কিন্তু আপনি তখন অফিসের কি একটা কাজে যেন ঢাকার বাইরে ছিলেন। সেজন্য আর আপনাকে কিছু জানানো হয়নি। আপু ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরার অভিজ্ঞতা ছিল তার। সেজন্য সে আর কাউকে না জানিয়ে আমাকে নিয়ে আলীকদমের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আমরা দুই তিন দিনের জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু কে জানতো এই ভ্রমণই হবে আমার আপুর জীবনের শেষ ভ্রমণ! আমরা খুব ভালোভাবেই ঘুরলাম সেখানে। কত আনন্দ ফুর্তি করলাম। কতশত ছবি তুললাম। কিন্তু....
কিন্তু বলে বৃষ্টি থেমে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার বলতে থাকে, আমরা রাতের বাসে করে ঢাকায় ফিরছিলাম। গভীর রাত। বাসের সবাই অঘোরে ঘুমাচ্ছিল। হঠাৎ বাস সজোড়ে গিয়ে রোডের পাশে থাকা একটা বড় গাছের সাথে থাক্কা খায়। আমাদের সিট ছিল সামনের দিকে। বাসের সামনের সাইড একদম দুমড়ে মুচড়ে যায়। ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে গেলেও আপু অনেক খারাপভাবে আহত হয়। আপুকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। আপনাকে কল করে জানাতে চাইলে আপু নিষেধ করে। যতটুকু সময় আপু বেঁচে ছিল, ততটুকু সময় শুধু আপনার কথায় বলছিল। বলছিল, শ্রাবণকে কিছু জানাইস না। ও অনেক ইমোশনাল। ওর মন অনেক নরম। আমার এই অবস্থার কথা জানলে ও অসুস্থ হয়ে যাবে। দেখিস আমি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবো। আর সুস্থ হলে আমি নিজে গিয়ে শ্রাবণকে সবকিছু বলবো।
কিন্তু আমার আপু আর সুস্থ হয়নি। আপু আমাদেরকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে ঐ আকাশে চলে গেছে ভাইয়া।
শ্রাবণ ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। একদম মূর্তির মতো হয়ে গেছে সে। অঝোরে তার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। কথা বলার শক্তি নেই তার। এই বুঝি সে জ্ঞান হারাবে।
- আপু মারা যাবার আগে এই ডায়েরিটা আপনাকে দিতে বলেছিল। এখানে আপু আপনাকে নিয়ে তার মনের মাঝে লুকানো সমস্ত কথা লিখে রাখতো। কতশত না বলা কথা, আপনার পাগলামী, আপনার যত ইচ্ছের কথা, সব লিখে রাখতো। আপু মারা যাওয়ার ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে একটা পত্র লিখেছিল আপনার জন্য। আমাদের কাউকে পত্রটি পড়ার অধিকার দেয়নি।
বৃষ্টি শ্রাবণের দিকে ডায়েরি আর পত্রটি এগিয়ে দেয়। শ্রাবণ আর্দ্র চোখে কাঁপা কাঁপা হাতে সেগুলো নেয়। তার ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে। কেমন শূন্য শূন্য অনুভূত হয় তার! ভেতরটা বেদনার তাপে ফেঁটে চৌঁচির হয়ে যায়। চৈত্রের ভর দুপুরের দারুণ খড়ায় যেমন ফসলি মাঠ ফেঁটে চৌঁচির হয়, ঠিক তেমন।
.
ভেজা চোখে শ্রাবণ চিঠিটা খোলে।
"প্রিয় শ্রাবণ, তোমাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে। ভেবেছিলাম অতি শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠবো। কিন্তু ভাগ্য আমার সহায় হলো নারে। আমি বোধ হয় আর কিছু সময় আছি গো শ্রাবণ৷ আমার সময় ফুরিয়ে আসছে গো। ছোটোকালে কোনো কিছু হলে আমি ঘুমিয়ে যেতাম। ঘুম থেকে উঠলে আবার সবকিছু আগের মতো হয়ে যেত। কিন্তু এবার আর তা হলো না গো। আমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ঘুম আর আসেনি। হয়তো ঘুম এলে সবকিছু ঠিক হয়ে যেত। চিরনিদ্রা আমাকে আলিঙ্গন করবে বলেই হয়তো ক্ষণিকের নিদ্রা আমার চোখ স্পর্শ করলো নারে৷ তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। কাছে থেকে দেখতে ইচ্ছে করছে। খুব করে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে গো। শেষ সময়টাতে যদি তোমাকে কাছে পেতাম, তাহলে আমার মৃত্যুযন্ত্রণা হয়তো কিছুটা লাঘব হতোরে শ্রাবণ। তুমিও আমাকে শেষ দেখাটা দেখতে পারলে না গো। তুমি জানতেও পারলে না, তোমার মেঘা তোমাকে কতখানি ভালোবাসে গো, কতখানি ভালোবাসে! তুমি জানতেও পারলে না, তোমার মেঘা তোমাকে কোনো কিছু না বলেই চলে যাচ্ছে। অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। যেখান থেকে আর ফিরে আসা সম্ভব না। তুমি যখন এই পত্রটি পাবে, তখন আমি দূর আকাশে চলে গেছি। তোমাকে একা করে চিরদিনের জন্য চলে গেছি। আমাকে ক্ষমা করে দিও গো। আমি তোমাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে পারলাম না। তোমাকে নিয়ে আমি ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলাম। তোমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম। আজ দেখো কত স্বপ্ন বুকে নিয়ে আমি স্বার্থপরের মতো তোমাকে একা করে চলে যাচ্ছি। আমি কি ক্ষমার যোগ্য শ্রাবণ? আমাকে কি ক্ষমা করা যায়? অনেক ভালোবাসিরে শ্রাবণ। অনেক ভালোবাসি তোমায়।
তোমাকে তো জীবনে কোনোদিন কোনোকিছুর জন্য অনুরোধ করিনি। তুমি অনুরোধ করার আগেই সবকিছু পূরণ করে দিতে। আজ একটা অনুরোধ করবো। প্লিজ 'না' করো না। তুমি 'না' করলে আমি ওপারে গিয়ে শান্তি পাবো নারে। আমার ছোটো বোন বৃষ্টি। অনেক ভালো একটা মেয়ে। আমার মতোই দেখতে। খুব লক্ষ্মী। তুমি আমার জায়গাটা তাকে দিও। তুমি ওকে বিয়ে কইরো শ্রাবণ। আমার মতোই ও তোমাকে আগলে রাখবে, তোমার যত্ন নেবে, তোমাকে ভালোবাসবে। প্লিজ শ্রাবণ।
আমার হাত অবশ হয়ে আসছে। আমি আর কিছু লিখতে পারছি না গো। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
ইতি
তোমার মেঘা"
.
শ্রাবণ কান্না করছে। ভীষণভাবে কান্না করছে৷ চিৎকার করে কান্না করছে। তার চোখের জলে চিঠিটা পুরোপুরি ভিজে গেছে৷ চোখ দু'টো ঝাপসা হয়ে গেছে৷ তার মেঘা তাকে ছেড়ে চলে গেছে। অনেক দূরে চলে গেছে। শ্রাবণের আর এই দুনিয়ায় কেউ রইলো না। অমাবস্যার ঘনকালো অন্ধকার খুব যত্ন করে ঘিরে ধরেছে তাকে। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। মেঘা স্বার্থপরের মতো চলে গেছে। ভীষণ স্বার্থপর সে৷ শ্রাবণই শুধু স্বার্থপর হতে পারলো না৷ সেও স্বার্থপর হতে চায়৷ ভীষণ স্বার্থপর। মেঘার চেয়েও স্বার্থপর।
১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৯:৪৮
শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: অনেক ইমোশনাল যে!
২| ১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৯:৪২
বিজন রয় বলেছেন: পৃথিবীতে অনেকেই স্বার্থপর কিন্তু সকলেই না।
শেষ দিকে অনেক আবেগের।
১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৯:৪৮
শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: হ্যাঁ ভাই।
৩| ১৬ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:৫৭
রাজীব নুর বলেছেন: ওকে। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৯:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: চিঠি পড়ার আগেই শ্রাবনের চোখ ভিজে গেছে।