নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গতকাল প্রথম আলোতে "অনলাইন রেডিও: অপার সম্ভাবনা" শীর্ষক একটি আর্টিকেল পরলাম। পড়ে অনেক কিছু জানলাম। আর্টিকেলে স্যার কাজী আলিম-উজ-জামান অনলাইন রেডিও এর অপার সম্ভনার কথা বলেছে।
তবে আমাদের দেশে এর সম্বাবনা কততুকু তা নিয়ে আমি প্রশ্নবিদ্ধ।
░ অনলাইন রেডিও এর প্রসারের সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে ইন্টারনেটের অত্যধিক দাম। এই দাম যেমন প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্প্রচার-ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে, তেমনি শ্রোতা পর্যায়েও আগ্রহকে অনুৎসাহিত করছে। বাংলাদেশে এখন ১জিবি ডাটা কিনতে ৩২০-৩৫০ টাকা খরচ করতে হয়। আর ১ জিবি ডাটা দিয়ে সর্বচ্চো ২-৫দিন ভালো ভাবে অনলাইন রেডিও শুনতে পারা যাবে।
░ আমাদের মোট ইন্টারনেট ব্যবহার কারির ৬০% মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। তাদের পক্ষে ব্যয়বহুল ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনে অনলাইন রেডিও এর প্রোগ্রাম উপভোগ করা সহজ নয়। তাও যদি সব অনলাইন রেডিও এর মোবাইল থেকে প্রোগ্রাম উপভোগ করার ব্যবস্থা(অ্যাপ) থাকত। মোবাইল ৩জি ইন্টারনেটের কথা বাদই দিলাম।
░ আমাদের দেশে ১৪ টি এফএম রেডিও এবং ২০+ কমোনিটি রেডিও রয়েছে। প্রত্যেকের অনলাইন স্ত্রিম্মিং ব্যবস্থা রয়েছে। এখন কথা হচ্ছে যেদেশে এতগুলো এফএম ও কমোনিটি রেডিও রয়েছে, তাও আবার স্ত্রিম্মিং সাপোর্টেড, সেদেশে অনলাইন রেডিও কিভাবে জনপ্রিয় হবে টা আপনারাই একটু ভেবে দেখুন।
লাইভ অনলাইন রেডিও ডট নেট সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে চালু থাকা এ ধরনের রেডিও এর সংখ্যা ১০০-এর কম নয়। এদের প্রচারপদ্ধতি ভিন্ন। কিছু আছে শুধু গান প্রচার করে, আবার কয়েকটিতে গানের পাশাপাশি খবর প্রচার করা হয়। ইন্টারনেট রেডিওর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি আছে, যারা ২৪ ঘণ্টা সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। এরই মধ্যে অনেকগুলো স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া হুটহাট সম্প্রচারে নামাই বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ। হাতেগনা ৫/৬ টি রেডিও চ্যানেল লাইভ প্রোগ্রাম প্রচার করছে।
তুলনামূলক কম খরচে, কম জনবল নিয়ে একটি ইন্টারনেট রেডিওর যাত্রা শুরু করা যায়। মোটামোটি ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ করলে অনলাইন রেডিও এর হস্টিং, ডোমেইন, ও স্ত্রিম্মিং সার্ভার এর ব্যবস্থা করা যায়। আমি রেডিও ড্রিম এর খরচ টা বললাম। তবে ক্ষেত্র বিশেষে টা কম বেশি হতে পারে।
তবে রেডিও মেইন খরচ নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানটি দিনে কতটি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে, তার ওপর। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই মাধ্যমের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে, খরচের খাত আছে, আয়ের ব্যবস্থা নেই।
যেহেতু অনলাইন ভিত্তিক রেডিও তাই বিজ্ঞাপনই আয়ের একমাত্র উপায়। কিন্তু কয়েকটি ইন্টারনেট রেডিওর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেল, বিজ্ঞাপনদাতারা এ মাধ্যমের বিষয়ে আগ্রহী নন। তাদের ভাষায়, এ মাধ্যম গণমানুষের কাছে পৌঁছায় না। কিন্তু এটাও সঠিক, ইন্টারনেট রেডিওতে বিজ্ঞাপন খরচ অনেক কম। এবং তা পণ্যের দামের ওপর বাড়তি কোনো প্রভাব ফেলে না।
রেডিও পাবনার সিইও খালেদ হোসেন পরাগ ভাই বলেন শুরুতে নিজের টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম। মাঝপথে নামে মাত্র কয়েকটি স্পন্সর পেয়েছিলাম। কিন্তু স্পন্সররা যে পরিমান পেমেন্ট করে টা দিয়ে সার্ভার এর বিল দেওয়াও সম্বব না। মুলত পাবনাকে ভালবাসি, তাই নিজ উদ্যোগে চালাচ্ছি রেডিও।
বিশ্বে অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠান কিন্তু ইন্টারনেট রেডিওতে বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের পণ্যের প্রচার-প্রসার ঘটিয়ে নিচ্ছে। আমাদের দেশে এই সংস্কৃতির যাত্রা শুরু হতে অনেক সময় বাকি।
আরেকটি কথা, প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় এক কোটির কাছাকাছি। যাঁরা কয়েক দশক ধরে আছেন, তাঁরা বলতে গেলে বাঙালি সংস্কৃতি ভুলতে বসেছেন। তাঁদের কাছে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, ভাষা-সংস্কৃতি নতুনভাবে পৌঁছার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখতে পারে এই রেডিও। প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য সরকারের যদি কোনো বিশেষ বার্তা থাকে, তাও পৌঁছানো যেতে পারে ইন্টারনেট রেডিওর মাধ্যমে।
পরিশেষ, কাজী আলিম-উজ-জামান স্যারের সাথে একমত হয়ে বলতে চাই, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। কেবল শহরে নয়, মফস্বলে, গ্রামেও মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। আর এটি নতুন গণমাধ্যম, শ্রোতারা তরুণ, তাই এই মাধ্যমকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। ভালো কাজে, দেশের কল্যাণে এই রেডিওর সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।
আশার কথা হলো, অতি সম্প্রতি চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালায় ইন্টারনেট রেডিওকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে আশা করি, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ইন্টারনেট রেডিওসহ অন্যান্য সম্প্রচারমাধ্যমে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করবে।
ফয়সাল আমিন অরন্য
সিইও , রেডিও গানশিড়ি
রায়হান শেখ
www.RadioGanshiri.com
https://www.facebook.com/radioganshiri2015
©somewhere in net ltd.