![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"'তিন তালাকের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছেন যে ৫ সাহসী কন্যা"'
তিন বার তালাক বললেই ছিন্ন হয়ে যাবে বৈবাহিক সম্পর্ক। এই প্রক্রিয়াই প্রথা হিসেবে চলে আসছে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে। তবে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন পাঁচ মহিলা। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায় আজ হাসি ফুটিয়েছে পিটিশনার শায়রা বানো-আফরিন রেহমানদের মুখে।
১) শায়রা বানো
বয়স: ৩৫
সন্তান: ২
নিবাস: উধমসিং নগর জেলার কাশীপুর, উত্তরাখণ্ড
কেন লড়াই: বিয়ের ১৫ বছর পর ২০১৫ সালের অক্টোবরে তাঁকে তিন তালাক দেন তাঁর স্বামী।
২) আফরিন রেহমান
বয়স: ২৬
নিবাস: জয়পুর, রাজস্থান
কেন লড়াই: ম্যাট্রিমোনিয়াল পোর্টাল থেকে দেখাশোনা করে ২০১৪ সালে বিয়ে হয় আফরিনের। তাঁর অভিযোগ, ২-৩ মাস পর থেকেই পণের দাবিতে তাঁর উপর মানসিক অত্যাচার শুরু করেন তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সহ্য করতে না-পেরে বাপের বাড়ি ফিরে আসেন আফরিন। গত বছর মে মাসে তাঁর কাছে স্পিড পোস্টে একটি চিঠি আসে। তাতে লেখা ছিল তিন তালাক।
৩) গুলশন পরভিন
বয়স: ৩১
সন্তান: ১
নিবাস: রামপুর, উত্তরপ্রদেশ
কেন লড়াই: ২০১৩ সালে বিয়ে হয় পরভিনের। তারপর থেকে টানা দু বছর পণের দাবিতে তিনি গার্হস্থ হিংসার শিকার হন। ২০১৫ সালে তিনি বাড়ি ফিরে এলে তাঁর স্বামী ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে তাঁকে তালাকনামা পাঠিয়ে দেন।
৪) ইশরত জাহান
বয়স: ৩১
সন্তান: ৪
নিবাস: হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ
কেন লড়াই: বিয়ের ১৫ বছর পর তাঁকে ফোন করে তিন তালাক দেন তাঁর স্বামী। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে দুবাই থেকে ফোন করে তাঁকে তিন তালাক দেওয়া হয়।
৫) আতিয়া সাবরি
বয়স: ৩০
সন্তান: ২
নিবাস: সাহারানপুর, উত্তরপ্রদেশ
কেন লড়াই: বিয়ে হয় ২০১২ সালে। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর সাহারানপুরের মহিলা থানায় তিনি অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, তাঁর বাবা-মায়ের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা পণ দাবি করেন তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। টাকা দিতে না-পারায় তাঁর উপর অত্যাচার চালানো হয়। এরপর এক টুকরো কাগজে তাঁকে তিন তালাক লিখে দেন তাঁর স্বামী।
এই পাঁচ মহিলা ছাডা়ও পিটিশনারের তালিকায় ছিল মুসলিম উওমেনস কোয়েস্ট ফর ইক্যুয়ালিটি (MWQE) ও খুরান সুন্নথ সোসাইটি (KSS)। MWQE-র দাবি ছিল অধিকাংশ মুসলিম মহিলাই এই প্রথার বিরুদ্ধে। এবং KSS চেয়েছিল কোরানের বিশ্বাসযোগ্য ও সঠিক বাস্তবায়ন।
"'সুপ্রিম' রায়ের ১০ দিক একনজরে"'
৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের ৩-২ সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্তে তিন তালাক প্রক্রিয়াকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিল সুপ্রিম কোর্ট।
শীর্ষ আদালতের রায়দানের মূল বিষয়গুলির দিকে নজর ফেরালে দেখা যাবে,
১) প্রত্যেকের রায় শোনার পর সুপ্রিম কোর্টের ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ ৩:২ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় রায় দেয় তিন তালাক অবৈধ ও বেআইনি।
২) প্রধান বিচারপতি জেএস খেহর ও বিচারপতি নাজির তিন তালাককে মৌলিক অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করলেও, অন্য তিন বিচারপতি কুরিয়ান জোসেফ, আরএফ নরিম্যান ও ইউইউ ললিত বলেছেন, এটা মোটেই মৌলিক অধিকার নয়।
৩) তিন তালাকের বিরোধী তিন বিচারপতি বলেছেন, এই প্রথা অসাংবিধানিক।
৪) আগামী ৬ মাস মুসলিম ব্যক্তিদের তিন তালাকের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ জারি করেছে শীর্ষ আদালত।
৫) আগামী তিন মাসের মধ্যে সংসদকে তিন তালাক নিয়ে নতুন আইন তৈরি করেত বলেছে সুপ্রিম কোর্ট।
৬) আগামী ৬ মাসের মধ্যে আইন তৈরি না-হলে তিন তালাকের উপর সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ চলতে থাকবে বলে জানিয়েছে আদালত।
৭) বিভিন্ন ইসলামিক রাষ্ট্রে তিন তালাক প্রথা বাতিলের কথা উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বলে, কেন স্বাধীন ভারতও এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না?
৮) বেঞ্চের মতে, মুসলিম মহিলাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে তিন তালাক প্রক্রিয়া।
৯) বিচারপতি জোসেফ বলেন, কোনও ধর্মতত্ত্ব আইন দ্বারা স্বীকৃত হবে এটা হতে পারে না।
১০) বিচারপতি নরিম্যান ও ললিত বলেছেন, তিন তালাকের মাধ্যমে তত্ক্ষণাত্ বিবাহবিচ্ছেদ পেয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া অসাংবিধানিক।
""যে কারণে মুসলিমরা তালাক দেন""
মঙ্গলবার তিন তালাক নিয়ে রায় ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্ট। জানিয়ে দিল আগামী ৬ মাস বিবাহবিচ্ছেদের জন্য তিন তালাক প্রক্রিয়া ব্যবহার করা যাবে না। সেই সঙ্গে কেন্দ্রকে ৬ মাসের মধ্যে নতুন আইন তৈরির নির্দেশও দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। কিন্তু জানেন কি ঠিক কী কী কারণে তালাক দেন মুসলিমরা? জেনে নিন এক ঝলকে...
পরিবার এবং মা-বাবার উসকানিতে সব চেয়ে বেশি সংখ্যক বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে থাকে বলেই জানা গিয়েছে একটি সমীক্ষায়। ২০১৭ সালের মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে ২০৬৭১ জনের উপর করা একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই তথ্য। তালাক সম্পর্কে জেনে নিন কয়েকটি বিশেষ তথ্য...
১. ১৩.২৭ শতাংশ ক্ষেত্রে পরিবারের উসকানিতে তালাক পর্যন্ত এগোয় বৈবাহিক সম্পর্ক। ২. ৮.৪১ শতাংশ ক্ষেত্রে পণের দাবি না মেটানোর জন্যে তালাক দেওয়া হয় মেয়েদের।
৩. ৭.৯৬ শতাংশ ক্ষেত্রে স্বামীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জন্যে তালাক হয়।
৪. ৭.০৮ শতাংশ ক্ষেত্রে সন্তান না হওয়ার কারণে তালাক দেওয়া হয় বিবাহিত স্ত্রীকে।
৫. ৬.১৯ শতাংশ ক্ষেত্রে ভালো স্ত্রী না হওয়ার ‘অপরাধ’-এ তালাক দেওয়া হয় মেয়েদের।
৬. ৪.৮৭ শতাংশ ক্ষেত্রে স্বামীর কোনও চাকরি না থাকার কারণে তালাক হয়।
৭. ৪.৪২ শতাংশ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর যৌন চাহিদায় মিল না থাকার কারণে তালাক হয়।
৮. ৩.৫৪ শতাংশ ক্ষেত্রে স্ত্রীকে অপছন্দ হওয়ার জন্যে স্বামীরা তালাক দেন।
৯. ২.৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রে কন্যা সন্তান হওয়ার অপরাধে তালাক দেওয়া হয়।
১০. ২.৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রে স্ত্রীর শরীর ভালো না থাকার কারণে তালাক দেওয়া হয়।
১১. ০.৪৪ শতাংশ ক্ষেত্রে তাত্ক্ষ ণিক রাগের বহির্প্রকাশ হিসেবে তালাক দেওয়া হয়।
১২. ৩৭.৬১ শতাংশ ক্ষেত্রে আরও নানাবিধ কারণে তালাক দেওয়া হয়।
তবে সব ক্ষেত্রেই কি তিন তালাক দেওয়া হয়? এই প্রশ্ন উঠতেই পারে... এর উত্তর ‘না’।
বরং ৩৬.২% ক্ষেত্রে তিন মাস ধরে প্রতি মাসে গুরুজনদের উপস্থিতিতে একবার করে তালাক দেওয়া হয়। ২৪.৭% ক্ষেত্রে কাজি বা দার-উল-কাজা বিবাহবিচ্ছেদ করিয়ে থাকেন, ২১.১% ক্ষেত্রে কোর্টের নোটিশ দিয়ে তালাক হয়ে থাকে, ১৬.৯ শতাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ, এনজিও অথবা গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যস্থতায় তালাক হয়। এবং মাত্র ০.৩ শতাংশ ক্ষেত্রে তিন বার ‘তালাক, তালাক, তালাক’ বলে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে থাকে।
©somewhere in net ltd.