নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো।

তুমি যদি প্রতিটি দিন এটা ভেবে পার কর যে আজই তোমার জীবনের শেষ দিন, তাহলে একদিন তুমি সত্যি সঠিক হবে।

স্টিভ জবস জুনিয়র

স্টিভ জবস জুনিয়র › বিস্তারিত পোস্টঃ

এখনও তোমায় খুঁজে বেড়াই, তুমি কোথায়?

২৭ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:১৫

কোন এক অজানা কারণে আমার দাদি আপু আমাকে অনেক ভালবাসতো। অনেক ভালবাসতো বললে কম হয়ে যাবে। অনেক শব্দটা কতবার ব্যবহার করলে তার ভালবাসা পরিমাপ করা যাবে তা আমার জানা নেই। আমার দাদি আপুর অনেক নাতি-নাতনি ছিল অনেক বলতে অনেক। তাদের সবার মধ্য থেকে আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে না অনেকটা প্রকাশ্যেই অনেক বেশি ভালবাসতো। আর সবাই ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবেই দেখত। আমার বয়স যখন ১৩ তখন আমার দাদি মারা যায়। ছোট বেলা থেকেই আমার দাদি আপু গ্রামে থাকতো আর আমি ঢাকায়। আমার গ্রামে আসার খবর পেলেই দিন গুনা শুরু করত। আর মাত্র ১৫ দিন আর মাত্র ১৪ দিন.......আর মাত্র ২ দিন। আর আমি আসার আগের রাতে তো বেচারির ঘুম হারাম। আমি তখন লঞ্চে গ্রামে যেতাম সে লঞ্চ র্টামিনালে এসে আমার জন্য অপেক্ষা করত। লঞ্চ থেকে নামার পর প্রায় ঘন্টা খানেক আমাকে বুকে জড়িয়ে কান্না করত। তার কান্নায় আমার টি-শার্ট ভিজে চুপু চুপু হয়ে যেতো আর আমিও সমানে কান্না শুরু করতাম। আমাদের দুজনের কান্না কাটিতে আশেপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে যেত। সবাই আমাদের ভালবাসা দেখে কিছুটা অবাক হত। তারপর একসাথে আমরা সবাই মিলে বাড়ির দিকে রওনা হতাম। বাড়ির দিকে যেতে যেত এইবার আমাদের (আমার ও আমার দাদি আপুর) কি কি প্লান তা শেয়ার করতো। আমারা দুইজন হাত ধরে কথা বলতে বলতে হেটে হেটে বাড়ির দিকে রওনা হতাম। বাড়িতে ফেরার পর একে একে আমাদের সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করতাম। আমরা মূলত বড়সি/ছাবি দিয়ে মাছ ধরা, কাঠ বাদাম সংগ্রহ করে তা খাওয়া, জঙ্গল থেকে বিভিন্ন ধরনের ফল সংগ্রহ করে তার খাওয়া ও সবার মাঝে বিলানো, আশে-পাশের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরতে যাওয়া এবং সবার বাড়িতে গিয়ে মজার মজার খাবার খাওয়া। আমার দাদি আপু জমিদারের কন্যা ছিলেন এবং তার সবচাইতে পছন্দের মানুষ ছিলাম আমি তাই আমার কদরও অনেক বেশি ছিল। আর সারাক্ষণ গল্প করা আমাদের গল্প তার মারা যাবার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত চলমান ছিল। তার মৃত্যুর পরও আমি একা একা তাকে কল্পনা করে অনেক গল্প করতাম। এখন ব্যাপার একবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। আমি যখন একা থাকি প্রায়ই তার কথা মনে পরে। মাঝে মাঝে তাকে আমার খুব কাছে আশে পাশে ফিল করি। আমি যখন গ্রামে যেতাম আমাকে এক সেকেন্ডর জন্যও চোখের আড়াল হতে দিত। আমি অন্য কারও সাথে বা কাজিনদের সাথে খেলছি তাও দূর থেকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকত। আমি ব্যাপারটা খেয়াল করতাম। আমার যখন ঢাকাতে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হত বেচারি খুব মনমরা হয়ে যেত। সবাই বলত রাজু তুমি যতদিন তোমার দাদি আপুর সাথে থাকো আমাদের মনে হয় সে জীবিত থাকে। তুমি যাবার পর সে আবার আগের মত মনমরা হয়ে যাবে। আমারও খুব কষ্ট হত এই কথাগুলো শুনে। আমি তাকে আমাদের সাথে মাঝে মাঝে নিয়ে আসতাম ঢাকায়। কিন্তু তাকে কোনভাবেই ঢাকায় রাখা যেত না। তাই সে আবার গ্রামে ফিরে আসতো কিন্তু তার মনটা পরে থাকতো আমার কাছে। তার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার ব্যাপারটা আমি কোনভাবেই বর্ণনা করতে পারবো না। একদিন হঠাৎ করে আব্বু বললো দাদি আপু অসুস্থ গ্রামে যেতে হবে। আমরা সবাই সাথে সাথে গ্রামেও উদ্দেশ্যে রওনা হলমা। আমি লঞ্চ র্টামিনাল থেকে নেমে দাদি আপুকে খোঁজা শুরু করলাম কোথাও পেলাম না। এই প্রথম আমাকে সে রিসিভ করতে আসলো না। আমি এই প্রথম একা একা লঞ্চ র্টামিনাল থেকে বাসার দিকে রওনা হলাম। সে টানা ২ দিন অসুস্থ থাকার পর আমরা গ্রামে তার কাছে যাই। আমি যাবার পর আমার দাদি আপুর রুম থেকে সবাই চলে গেল। আমি আস্তে আস্তে গিয়ে তার কাছে গিয়ে বসে তার হাতটা ধরলাম। আমি যাবার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সে কোন প্রকার মুভমেন্ট করতে পারছিল না এবং কোন কথাও বলতে পারছিল না। শুধু একবার বলেছিল "রাজু রাজু"। আমি গিয়ে তার হাতটা ধরার পর সে অস্পষ্ট স্বরে একবার বলল, "রাজু"। আমি বললাম, "হ্যাঁ" আমি রাজু। তারপর সে আবারও স্পষ্ট স্বরে বলল, "রাজু রাজু"। আমি আর কিছু বললাম না শুধু তার হতটা ধরে বসে রইলাম। তার কিছুক্ষন পর আমার দাদি আপু মারা যায়। কিছুক্ষন পর তার রুমে অনেক মানুষ আসে। আমাকে সেখান থেকে বের করে বাইরে নিয়ে আসা হয়। আমি বাইরে এসে পুকুর পারে বেঞ্চে একা একা বসে ছিলাম। এর পর আমার আর তেমন কোন কথা মনে নেই। শুধু এতটুকু মনে আছে ওইবার ঢাকার ফেরার সময় কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরে কেউ কান্না করে নি, পিছন দিকে থেকে কান্না জড়িত চেহারায় আমার দিকে তাকিয়ে ছিল না। আমাকে কেউ এমন বিদায় দিতে আসে নি যাকে দেখে আমার মনটা ভারী হয়ে উঠে। আমি আমার দাদি আপুকে খুব মিস করি। কি হত যদি সে আর কিছু দিন বেচে থাকতো। আমার এখন খুব আফসোস আমার দাদি আপুর যদি কাছে যদি একটা স্মার্টফোন, একটা ল্যাপটপ, একটা ফেসবুক একাউন্ট থাকতে আমি একটা মুহুর্তও তার কাছ থেকে আলাদা থাকতে পারতাম না। আমি জোর গলায় বলতে পারি আমার দাদি আপু আমার যতটা কেয়ার করতো এই পৃথিবীতে আর কারও পক্ষে আমার প্রতি এতটা কেয়ার কার সম্ভব নয়। কই তার কাছে তো কমমিউনিকেশনের কিছুই ছিল না। যদি থাকতো কি করতো একমাত্র আল্লাহ্ ই জানে। আমি জানি আমার দাদি আপু অনেক ভাল আছেন। কারণ উনি অত্যন্ত ভালো একটা মানুষ ছিলেন। আমিও চাই তিনি যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন। উনিও হয়তো আমাকে অনেক মিস করেন। আমাদের ভালোবাসাটা না হয় এভাবেই থেকে যাক। কিছু কিছু জিনিস এভাবেই থেকে যাওয়া ভালো।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১০:৫৯

সুফিয়া বলেছেন: আমিও খুঁজে বেড়াই মা-বাবার সাথে আমার শৈশবের দিনগুলো।

Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.