![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইসলামের যে বিষয়টা সবচেয়ে বৈপ্লবিক এবং যে বিষয়টা বরাবরি আমাকে আকর্ষন করেছে তা হইলো যে এই ধর্মে প্রকৃতপক্ষে পুরোততন্ত্রের স্থান নাই। শাহবাগ আন্দোলন শুরু হওয়ার মাসখানেক আগে সামহোয়ারইনব্লগে এবিষয়ে একটি লেখা লিখেছিলাম। ইসলামের নবী হজরত মোহাম্মদ কোন পুরোততন্ত্র তৈরি করে দিয়ে যান নাই যার মাধ্যমে একজন মুসলমান আল্লাহর সাথে নিজের সংযোগ স্থাপন করতে পারে, এইখানে তিনি কোন পাদ্রি অথবা ব্রাহ্মন চান নাই আল্লাহ এবং মানুষের মাঝখানে।
কিন্তু পুরোততন্ত্র এখন ইসলামের অন্যতম বাস্তবতা। এইটা কিভাবে গড়ে উঠেছে তা বুঝতে হলে ইসলামের বিস্তার ও বিকাশের হাজার বছরের ইতিহাস বুঝতে হবে। ইসলামের পুরোততন্ত্রের উত্থান আর ইসলামের স্বর্ণযুগের পরিসমাপ্তি হয়েছে সমান্তরালভাবে। এরি বিরুদ্ধে আল্লাহর সাথে মানুষের ডাইরেক্ট প্রেমের কথা বলে ইসলামে সুফিবাদের যে উত্থান ও বিকাশ তার সাথে বাঙলার ইসলামের ইতিহাস অত্যন্ত ঘনিষ্ট। বাঙলার মানুষ মুসলমান হয়েছে ব্রাহ্মন্যবাদের মোকাবিলা করে। এই মোকাবিলা তাকে শুধু মুসলমান বানায়নাই, মানুষ বানাইছে। মুসলমান হওয়ার আগে সে হয়তো অচ্ছুত ছিলো। মুসলমান হওয়ার পরে সে ডাইরেক্ট আল্লাহর বান্দা মানুষ হইছে। আল্লাহর বান্দা হইতে তার মোল্লা মওলানার মধ্যস্ততার দরকার পরেনাই। আবার ধর্ম বর্ণ শ্রেণী নিরপেক্ষে মানব প্রেমেই তার আল্লাহ প্রেম।
আধুনিক যুগে বাঙলার ইসলামে পুরোতশ্রেণীর উত্থান যতোনা প্রার্থনালয়কেন্দ্রীক তারচেয়ে অনেকবেশি পার্টি রাজনীতিকেন্দ্রীক। এদেশের মূল ধারার সকল রাজনৈতিকদলই নিজেদের ইসলামের রক্ষক অথবা ধ্বজাধারী বলে দাবি করে। এখানে গোলাম আজম, নিজামীর পথ ধরেই খালেদা, হাসিনা এনারা নিজেদের বিভিন্ন সময় প্রকৃত ইসলামিক বলে দাবি করেন, জনগণকে মুসলমান হইতে হলে এদেরকে মাঝখানে রেখেই আল্লাহর সাথে তার সম্পর্কের বৈধতা অর্জন করতে হবে এই হইলো তাদের পুরোতগিরী। এই পুরোতগিরীতে সকলের গুরু জামাতের ইসলামী। এরা এই পুরোতগিরী করেই একাত্ত্বরে বাংলাদেশের জন্মের বিরোধীতা করেছে, খুন করেছে, ধর্ষন করেছে। এখনো এই পুরোতগিরীর দাবি নিয়েই এরা সারা দেশে সহিংসতা ও হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকেও আমরা দেখছি এই মুহুর্তে সেই পুরোততন্ত্রের ভাগের জন্যে জামাতের পেছনে ছোটার স্বিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
শাহবাগে জনতা একজোট হয়ে দাবি জানিয়েছিলো - ফাঁসি চাই। জনতা এইখানে জীবন মরনের মালিক হিসাবে হাজির হয়েছিলো। জনতা এখানে আল্লাহর মুখ হয়েই আওয়াজ তুলেছিল - ফাঁসি চাই। এই দাবি তুলতে তাদের কোন রাজনৈতিক দলের মধ্যস্ততা লাগেনাই, কোন পুরোততন্ত্রের পুরোতগিরি লাগেনাই। সেই দাবির তিব্রতা ছড়িয়ে গিয়েছিলো সারা দেশে, সেই দাবি ছিলো ইনসাফের দাবি। যেই ইনসাফের নিশ্চয়তা দিয়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছিলো, যেই ইনসাফের পুরোত হিসাবে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার নিজেদের দাবি করে। সেই ইনসাফ নিশ্চিত হয়নাই বলেই জনগণ পুরো বিচারপ্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে গিয়ে আওয়াজ তুলেছিলো - ফাঁসি চাই। এই ফাঁসি চাই হইলো শাহবাগে মানুষের মুখে হাজির হওয়া খোদার প্রথম স্বিদ্ধান্ত 'কাদের মোল্লার ফাঁসি', যা না হইলে ইনসাফ হয়না। এই ফাঁসি চাই হইলো শাহবাগের আলিফ লাম মিম।
কিন্তু তার পরে কি? তারপরে নাজিল হইতে পারতো বাঙলার মানুষের অলিখিত সংবিধান, তৈরি হইতো পারতো ইনসাফের বাংলাদেশ। শাহবাগ হইতে পারতো এমন এক হাশরের ময়দান, যেইখানে চুলচেরা ইনসাফ নিশ্চিত করে একটা বেহেশতি বাংলাদেশ নির্মান করা যাইতো যেইখানে অতীত ও বর্তমানের কোন রাজাকারের স্থান হইতোনা।
কিন্তু অদ্যোবধি তা হয়নাই বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পুরোতন্ত্র আওয়ামীলীগের কারনে। আওয়ামীলীগে একিসাথে আল্লাহ, ব্রহ্মা এবং সেকুলার বস্তুবাদের পুরোততন্ত্রের মালিকানার দাবিদার। শাহবাগ আন্দোলনে খুব স্বাভাবিকভাবেই তারা সাপোর্ট দিয়েছে। এতে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু শাহবাগ আন্দোলনে যখন আওয়ামীলীগ সরকার হাজির হইলো ইনসাফ নিশ্চিত করার পুরোতশ্রেনী হিসাবে তখন থেকেই এই আন্দোলনে জনতার সাথে আল্লাহর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আলিফ লাম মিমএর পরে তাই আর কিছু আসেনাই। ফাঁসি চাই থেকে শুরু করে এখন শেষ হচ্ছে দেশব্যাপী বিভিন্ন পুরোতশ্রেনীর মধ্যকার ক্ষমতার সহিংস দ্বন্দে। যেই দ্বন্দে মানুষের লাশ তৈরি করবে আরো নানান রকম ইনসাফের দাবি, কিন্তু ইনসাফ নিশ্চিত হবেনা। জনগণের হক আদায় দূরে থাকুক। কারন এখন আর আমরা কলবের ভেতর থেকে ইনসাফের দাবি তুলছিনা, এখন আর আমরা এই মুলকের মুক্তির জন্যে লড়াই করছিনা। আমরা আবারো দেশ, জাতি, ধর্ম, হক, ইনসাফ ইত্যাদির ভবিষ্যত তুলে দিয়েছি বিভিন্ন পুরোতশ্রণীর হাতে। আল্লাহ তাই আর আমাদের সাথে নাই।
শাহবাগে আল্লাহ ইনসাফ নিয়ে হাজির হবেন। জনতার মুখ দিয়ে তিনি আবারো ইনসাফের দাবি তুলবেন, জনতার হাত দিয়েই তিনি আদায় করে নেবেন জনতার হক। তার আগে আমাদের সকল পুরোতশ্রেণীকে অস্বিকার করতে হবে, প্রতিহত করতে হবে। সেই জেহাদে জিতলেই আমরা গাজি হতে পারবো, সেই জেহাদে মরলেই শহীদ। তখন আর কেউ আস্তিক নাস্তিকের প্রশ্ন তুলে আমাদের শাহদাতের বৈধতা নিয়া কথা বলবেনা।
০৩ রা মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:২৯
পারভেজ আলম বলেছেন: ব্যাখ্যা করুন।
২| ১১ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:১৫
মনে নাই বলেছেন: পারভেজ ভাই, আপনার সাথে একমত, এই পুরোতশ্রেনীর হাত থেকে আমাদের নিষ্কৃতি দরকার।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:১৯
ওই চোরা বলেছেন: ভন্ডামী যে কত রকমের হতে পারে, তা সামুতে না আসলে জানাই হতোনা