নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

সুফিয়া

পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।

সুফিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

সময়ের চলমান অগ্নিকুন্ড থেকে চলুন নিজকে একটু স্বস্তি দেই, ঘুরে আসি শৈশব খেরোখাতা থেকে।

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:১৫





তুমি তো সেই কবি, যে আমাকে আমার একাকী মুহূর্তের বেড়াজাল থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে নিয়ে যাও জীবনের খেরোখাতার স্বর্ণালী দিনগুলোতে। তুমি তো সেই কবি, যে আমার মন কেমন করা মুহূর্তগুলোকে নিমিষেই রাঙিয়ে তোল রঙিন জ্যোৎস্নার অরণ্য থেকে ধার করে আনা রং-তুলির টানে। সেই রঙিন জ্যোৎস্নার সাথে জড়িয়ে আছে প্রজাপতির পাখা মেলার দৃশ্যপট, ঘাস ফড়িং এর পিছু ছুটে চলা কয়েক জোড়া চঞ্চল পা, নুপুর পায়ে পদ্মপুকুরে সাঁতারকাটা বালিকা, বৈশাখী ঝড়ে আম কুড়ানো দামাল হাওয়া, বর্ষায় কদম তলার গান আর ঘন ঝোপের আড়ালে পাখির ছানা খোঁজায় ব্যস্ত ক্ষুদে অভিযাত্রী দল। এসব কিছুই আমার শৈশবের সোনালী বন্ধন। আমার অকিঞ্চিৎ ভালোবাসায় এরা সবাই বেঁচে আছে আমার মনে। আমার একাকী মুহূর্তকে সব সময় মুখর করে তোলে এরা। আমার যে কোন মন খারাপ করা মুহূর্তকে উচ্ছল আর প্রাণবন্ত করে তুলতে এরা সদাই ব্যস্ত। কবি যেমন শব্দের কারিগর, ভাবের আয়োজক। তেমনি এরা আমার প্রাণ জাগানিয়া ভাবুক মনের বন্ধন, সুরেলা গুঞ্জন। তাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় কবি হচ্ছে আমার স্বর্ণালী শৈশব।





আমাকে বাঁচতে হলে বার বার ফিরে যেতে হবে এদের কাছে। কারণ, আমার ভিতর যে আমি বাসা বেঁধে আছে, সে এখনও চায় বর্ষাভেজা পিচ্ছিল পথ মাড়িয়ে পাশের বাড়ির আম বাগানে পৌঁছে যেতে। সে এখনও ভালোবাসে পুতুল বিয়ের দিনে মিছিমিছি রান্নার আয়োজনে ব্যস্ত হতে। সে এখনও চায় ঘুঙুর পায়ে সুর তোলে বউচি খেলার ছলে চারপাশ মুখর করে তুলতে।



আমার মনে বাস করা এই খেয়ালী আমিটাকে কে কি বলবে, কে কিভাবে দেখবে আমি জানি না। হয়তো বলবে আমি নষ্টালজিয়ায় ভুগছি। তাই ভালোবাসি স্মৃতি জাগানিয়া শৈশবকে ঘিরে কল্পনার ফানুস উড়াতে। কিন্তু আমি বলব, না। আমার শৈশব আমার কল্পনার ফানুস নয়। যারা গাছের পাতায় জমে থাকা বৃষ্টির ফোটায় নিজকে দেখতে পায় না, যারা মেঘের আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ দেখেও ঘুমে কাতর হয়ে পড়ে, যারা প্রকৃতির বুকে ষড়ঋতুর আগমনে নিজের ভিতর কোন পরিবর্তন বুঝতে পারে না, তারাই কেবল এমনটা ভাবতে পারে। তারা মেঘের দিকে হাত বাড়িয়েও সেই হাত গুটিয়ে আনে ভিজে যাবার ভয়ে। আর আমি নাগালের বাইরের বৃষ্টিকণাকেও হাতের মুঠোয় পেতে চাই। কারণ, তখন আমার ভিতর কাজ করে শৈশবকে খোঁজে পাবার অদম্য নেশা। তাই মেঘের আড়ালে হারিয়ে যাওয়া চাঁদও আমার দৃষ্টির অন্তরালে চলে যেতে পারে না। কারণ একটাই। আমি সেই মুহূর্তে ফিরে যাই চাঁদনী রাতে উঠোনে বসে নানীর মুখে রূপকথার গল্প শুনার দিনগুলোতে। গাছের পাতায় জমে থাকা বৃষ্টির ফোটায় আমার শৈশবকে আমি দেখতে পাই স্বচ্ছ আয়নার মতো।





এমনিভাবে আমার চারপাশে যা আছে, যা নিয়ে আমার বেঁচে থাকার আয়োজন, সে সবকে জড়িয়ে আছে আমার শৈশব। আমার প্রথম প্রেম আমার শৈশব। আমার প্রথম ভালোলাগা-ভালোবাসা আমার শৈশব। আমার স্বপ্নচারী মনের সবটুকু জুড়ে এমনিভাবে আমার শৈশব জড়িয়ে আছে মায়াবী বন্ধনে। এ বন্ধন কখনও কোন কারণে সামান্যতম আলগা হোক এ আমি চাই না। আমি চাই না সময়ের গভীর নোনাজলে আমার স্মৃতির পানসিখানি ডুবে যাক অনন্তকালের জন্য। তাই তো আমার সর্বক্ষণের আরাধনা আমার শৈশবকে নিয়ে। বর্তমান সময়ের পুঞ্জীভূত বাস্পরাশি থেকে আমাকে নিরেট সুন্দরের পানে টেনে নিতে পারে যে সে আর কেউ নয়। সে আমার স্মৃতি জাগানিয়া শৈশব।



আমি গভীরভাবে চিন্তা করে দেখেছি আমার মনের মুকুরে লালিত সমস্ত স্বপ্নের ভিত্তিভূমি হচ্ছে আমার শৈশব। ভালোবাসার সাতকাহনে জড়িয়ে নিজকে প্রশান্ত সূর্যালোকে মেলে ধরতে পারার যে ক্ষমতা তার শেকড় পোতা রয়েছে আমার শৈশবের স্বর্ণালী দিনগুলোতে। বন্ধুত্ব নামক সম্পর্কের শত পত্র-পুষ্প বেয়ে অবশেষে আমি জেনেছি যে, আমার পরম বন্ধুত্বের আশ্রয় হচ্ছে আমার সেই স্বর্ণালি খেলাঘর। যে ঘরে আজও জীবন্ত হয়ে আছে গোধূলী বেলার সেই ক্ষণ, ঘন বাঁশ ঝাড়ের আড়ালে হুতোম পেঁচার ডাকে সেই গোধূলী ক্ষণটা কেমন যেন রহস্যময় মনে হতো আমার কাছে। পুকুর ঘাট থেকে কিষাণ বৌএর কলসী কাখে পানি নিয়ে ঘরে ফেরার সেই দৃশ্য আমার শৈশবের উচ্ছল মুহূর্তগুলোকে অন্য মাত্রায় ভরিয়ে তুলত। গ্রামের মেঠোপথ, কাকডাকা ভোর, গোধূলীর ঘোমটা টানা মায়াবী সন্ধ্যা, পড়ন্ত বিকেলে ক্ষেতের আইলে লম্বা হয়ে পড়া ছায়া, নিস্তব্ধ রাতে ঝি ঝি পোকার একটানা ডাক, রাতের জমাট নৈঃশব্দবে ভেঙে খান খান করে দেয়া শেয়ালের হুক্কা হুয়া ডাক - এসব কিছুই আমার পিছুটানা শৈশব। বর্তমান সময়ের নিরন্তর টানাপোড়েন থেকে প্রশান্তিময় মুক্তি। এমন শৈশবকে ভুলি কেমন করে !

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৯:১৪

ভবঘুের পথিক বলেছেন: 'আমার প্রথম প্রেম আমার শৈশব। আমার প্রথম ভালোলাগা-ভালোবাসা আমার শৈশব।' একদম ঠিক বলসেন।

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৯:২৩

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ। আমার মনে হয় সব মানুষের বেলায় এই কথাটা প্রযোজ্য।

২| ০৫ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৯:১৫

ভবঘুের পথিক বলেছেন: শৈশবটা খুব মিস করি। শৈশব শৈশবই। আর কিছুর সাথে তুলনা হয়না।

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৯:২৫

সুফিয়া বলেছেন: একদম ঠিক বলেছেন। আজও একাকী মুহূর্তে ফিরে যাই সেই দিনগুলোতে। গাঁয়ের মেঠোপথে ঘাস ফড়িং এর পিছু পিছু ছুটার দিনগুলোতে।

৩| ০৫ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৯:২৯

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: তাইতো কবিতা লিখলাম সাইবার প্রেমপত্র।
সুপ্রিয় ব্লগার আমার ব্লগে দাওয়াত করলাম্

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:০২

সুফিয়া বলেছেন: আপনার দাওয়াত রক্ষা করে এলাম। ভালো লেগেছে কবিতাটি।

ধন্যবাদ।

৪| ০৫ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৯:৩১

ভবঘুের পথিক বলেছেন: ছোটবেলায় childhood memories লিখতে দিত। পারতাম না। কারন তখন নিজেই ছোট। অনেক কষ্টে ১ লাইন মুখস্ত করে ১০ লাইন বানাইতাম। যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচা! আর এখন লিখতে দিলে হয়তো অনন্তকাল ধরে চলতে থাকবে! কলমের কালি ফুরোবে, কিন্তু মনের কথা না।

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:০৪

সুফিয়া বলেছেন: মনের কথা না কেন বুঝলাম না। আপনি আপনার শৈশবকে সামনে রেখে খাতা-কলম নিয়ে বসে দেখুন না। ঐ যে বললেন না অনন্তকাল ধরে চলবে। আমার মনে হয় সেখানে মনের কথাগুলোই উঠে আসবে। ইচ্ছে করলেও এখন আর শৈশব নিয়ে বানিয়ে কিছু লিখতে পারবেন না।

৫| ০৫ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:০৯

ভুল উচ্ছাস বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে মনে হলো আপনি ফ্রাস্ট্রেশনে ভুগছেন অথবা কোন কিছু নিয়ে খুব ডিপ্রেসনে আছেন যে কারনে যখনি সেগুলো চেপে বসে তখন নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন শৈশবে, আমি নিজেও এরকম করেছি কিছু দিন আগে। এটা কোন ভালো লক্ষন নয় যে যখন তখন বর্তমান ভুলে ভাবনার জগতে হারিয়ে যাওয়া। মুখোমুখি হন সমস্যার।


আর এই ভাবনা গুলো তুলে রাখুন বর্ষণ মুখর কোন এক আলসে সন্ধ্যের জন্যে।

০৬ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:২৭

সুফিয়া বলেছেন: আপনার উপদেশের জন্য ধন্যবাদ। তবে আপনার ধারণা মোটেও ঠিক নয়। আপনি হয়তো জানেন না, আমি লেখালেখির সাথে জড়িত। যারা লেখালেখির সাথে জড়িত থাকেন তাদের প্রত্যেকের একটা নিজস্ব ক্ষেত্র থাকে স্বাচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াবার। তেমনি আমি আমার দেশ, গ্রাম, শৈশব নিয়ে লিখতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। বিশেষ করে আমার শৈশব আমার ভালো লাগার একটি বিশেষ পটভূমি। এটাকে অন্যভাবে দেখার বা ব্যাখ্যা করার কোন অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি না।

৬| ০৫ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:১৫

ইখতামিন বলেছেন:
১ম ভালো লাগা.
শৈশব এখন শুধুই স্মৃতি

আমন্ত্রণ করবো না. :P

০৬ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:৩০

সুফিয়া বলেছেন: শুধু স্মৃতি বললে ভুল হবে। শৈশব হচ্ছে সুখের স্মৃতি।

ধন্যবাদ।

৭| ০৫ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:২৭

shfikul বলেছেন: ভীষণ মন খারাপ করা লেখা।নষ্টালিজয়া তো বটেই তার চেয়েও বেশি কিছু যেনো।মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করে ঝিম ধরি,হারিয়ে যাই শৈশবে,আবার ফিরে আসি নাগরীক ব্যস্ততায়।+++

০৬ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:২৯

সুফিয়া বলেছেন: এমনটা বোধহয় সবার হয়। নগর জীবনে যত ব্যস্ততার মাঝেই থাকি না কেন শৈশবের পিছু টান কিছুতেই ভুলতে পারি না।

ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।

৮| ০৫ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৩১

শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: সত্যি নষ্টালজিক হয়ে গেলাম! :| এই ব্যাস্ত জীবনে,বিষাক্ত সময়ে শৈশব যেনো একটুখানি শান্তির পরশ...

০৬ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:৩০

সুফিয়া বলেছেন: এই ব্যাস্ত জীবনে,বিষাক্ত সময়ে শৈশব যেনো একটুখানি শান্তির পরশ... । আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত।

ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.