![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।
গত ৪ জুলাই, ২০১২ তারিখে হোটেল শেরাটনের উইনটার গার্ডেনে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইনফোলেডি (Infolady) বা তথ্যকল্যাণী ঋণকর্মসূচীর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ন্যাশনাল ব্যাংক ও ডি-নেটের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশে এই কার্যক্রমটি নতুন হলেও এর প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয়েছে আরও আগে, ২০৪৪ সালে ডি-নেটের হাত ধরে। ডি-নেট ২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশে তথ্যকল্যাণী কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করে। শুরুতে এর নাম ছিল মোবাইল লেডি। ২০০৮ সালে মোবাইল লেডির সাথে বিভিন্নমুখী আধুনিক সেবা যোগ করে এর নামকরণ করা হয় তথ্যকল্যাণী। ইংরেজীতে যাকে বলা হয় ইনফোলেডি।
তথ্যকল্যাণী কি ?
তথ্যকল্যাণী হচ্ছে গ্রামের শিক্ষিত নারীদের একটি আধুনিক স্বনির্ভর পেশা। নারীরাই এ পেশার মূল উদ্যোক্তা। তার সাথে পরিবারের সদস্যরা সহযোগী হিসেবে কাজ করে থাকেন। নিজ বাড়িতে থেকেই এটি করা যায়। সাইকেল চালিয়ে নিজ এলাকার প্রতিটি বাড়ি ঘুরে ঘুরে মানুষতে তথ্য ও পরার্মর্শমূলক বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে এই কর্মসূচীর মাধ্যমে।
তথ্যকল্যাণী কারা ?
আমাদের অনেকের কাছে তথ্যকল্যাণী ধারণাটা একদম নতুন। তাই এ সম্পর্কে একটু জেনে নেয়া ভালো। তথ্যকল্যাণীরা গ্রামের প্রশিক্ষিত নারী যারা প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ১০ মাইল সাইকেল চালিয়ে তার নিজ এলাকায় বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক সেবাসহ অন্যান্য সেবা জনসাধারণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়ে থাকে। তথ্যকল্যাণীরা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বেশ কিছু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সরঞ্জামাদি বহন করে থাকে। এগুলো হচ্ছে ওয়েবক্যাম সুবিধা সম্বলিত সনটবুক, ডিজিটাল ক্যামেরা, ইন্টারনেট সংযোগসহ মোবাইল ফোন, হেডফোন, ওজন পরিমাপক যন্ত্র, রক্তচাপ পরিমাপক যন্ত্র, রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার কিট, গর্ভ নির্ণায়ক কিট, রক্তের সুগারের মাত্রা নির্ণায়ক কিট প্রভৃতি। তথ্যকল্যাণীরা ইতোমধ্যে গ্রামের মহিলাদের প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়মিত সেবা দেয়ার দাধ্যমে তাদের নিকট অত্যন্ত আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এরা বিশেষ জনগোষ্ঠীকে বিশেষ করে গর্ভবতী নারী, কৃষক, শিশু, কিশোরী, বয়স্ক ব্যক্তির জন্য সেবা প্রদানের কাজ করে থাকে। তারা তাদের তথ্য ভান্ডার থেকে বিশেষ ধরনের তথ্য ও যোগাযোগ সম্পর্কিত সেবাও প্রদান করে থাকে, যা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খামার ব্যবস্থাপনা, চাকুরী অনুসন্ধান, বিশেষ ধরনের কৃষি উপকরণ, আইনগত সহায়তাসহ আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যকর। তথ্যকল্যাণীরা অবরুদ্ধ গ্রামীণ মহিলাদেরকে জন্ম নিরোধক, স্বাস্থ্যসম্মত ন্যাপকিন এবং বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যও সরবরাহ করে থাকে।
তথ্যকল্যাণী হবার যোগ্যতা
তথ্যকল্যাণী হিসেবে কাজ করতে ইচ্ছুক যে কোন গ্রামীণ মহিলাকে নিম্নোক্ত শর্তাবলী পূরণ করতে হয়।
১) ন্যূনতম এইচএসসি পাশ হতে হবে
২) সাইকেল চালানোয় পারদর্শী হতে হবে
৩) নিজ থেকে প্রাথমিক বিনিয়োগ করার আগ্রহ ও যোগ্যতা থাকতে হবে
৪) নতুন বিষয়ে দ্রুত শিখার ক্ষমতা থাকতে হবে
৫) নিজ ইউনিয়ন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে
৬) গুছিয়ে কথা বলতে জানতে হবে
৭)পরিশ্রম করার মানসিকতা ও সক্ষমতা থাকতে হবে
৮) পরিবারের সম্মতি থাকতে হবে
কিভাবে কাজ শুরু করবে ?
তথ্যকল্যণীকে সহায়তা করার জন্য প্রতিটি থানায় একটি করে পল্লী তথ্য কেন্দ্র বা হাব থাকবে। তারা নির্দিষ্ট থানা থেকে যোগ্য তথ্যকল্যাণী খুঁবজ বের করবে। তাদেরকে প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় উপকরণাদি কেনার জন্য ব্যাংকঋণ এর ব্যবস্থা করে দিবে। বাংলাদেশে ন্যাশনাল ব্যাংকই প্রথম এ কর্মসূচীতে অর্থায়নে এগিয়ে এসেছে। গ্রামাঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে যোগ্য তথ্যকল্যাণীকে বাছাই করার জন্য ন্যাশনাল ব্যাংক যৌথভাবে ডি-নেট ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর সাথে কাজ করবে। ২০১৫ সালে মধ্যে ১৫ হাজার তথ্যকল্যাণী তৈরীর লক্ষ্যে এই তিনটি প্রতিষ্ঠান একত্রে কাজ করার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে গতকাল। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাথমিক পর্যায়ে ইনফোলেডির জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে।
আমরা আশা করছি এই কর্মসূচীর মাধ্যমে গ্রামীণ সমাজের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ব হবে অনেকাংশে। আমরা আজকাল নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলছি, নারীর সম অধিকারের কথা বলছি। এই কর্মসূচীর বাস্তবায়নের মাধ্যমে এক্ষেত্রে আমাদের অগ্রযাত্রা হতে পারে নজিরবিহীন। এর মাধ্যমে এক সময় গ্রামীণ নারী সমাজের ব্যক্তিত্বের বোধ পাল্টে যাবে, একথা নিশ্চিত করে বলা যায়। তার নিজকে চিনতে শিখবে একজন মানুষ হিসেবে।
©somewhere in net ltd.