![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।
মাগো ক্ষমা করো। সেই কবে! তোমার গর্ভে আমার অস্তিত্ব সৃষ্টি হবার পর থেকে তোমাকে ব্যস্ত রেখেছি আমাকে নিয়ে ভাবতে। তোমার সেই ভাবনা কখনও সুখের হয়েছে, কখনও বা দুঃখ-বেদনা-হতাশায় ভরে গেছে। তবুও আমার জন্য, শুধু আমার জন্য তুমি তোমার জীবনের সমস্ত সুখ-আহলাদকে জলাঞ্জলী দিয়েছো। আজ আমার মনে হয় জন্মাবার পর থেকে তোমাকে কেবল কষ্টই দিয়ে এসেছি আমি। কিন্তু কি অদ্ভূত দেখো মা! সেই কষ্টকে তুমি মাতৃত্বের গর্বে পরাজিত করেছো অবলীলায়। সময়ের হিসেবে তোমার সেই কষ্টের পরিমাপ করা সম্ভব নয় মা। শুধু বলতে পারি কষ্টের এশরাশ নীল যন্ত্রণার মধ্যে তোমাকে ডুবিয়ে দিয়ে আমি যখন তোমার কোলে এলাম তখন তুমি সব ভুলে গিয়েছিলে। মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি ফুটিয়ে আমাকে কোলে তুলে নিয়েছিলে। মায়েদের বিশ্ব জয় বুঝি এভাবেই হয় মা! প্রসব যন্ত্রণার সমস্ত কষ্টকে থোড়াই কেয়ার করে মাতৃত্বের গর্বে পৃথিবীতে নিজকে বড় করে তোলা!
তারপর পাড়া-পড়শী যখন তোমার কোলে আমাকে দেখে খুশী হলো তখন তুমি সবার কাছে দোয়া চাইলে। তারা যেন প্রাণভরে দোয়া করে যাতে করে তোমার সন্তান পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। মা, আজ তুমি নেই। তোমার সন্তান পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে চলছে। কিন্তু সেটা পাড়া-পড়শীদের দোয়ার বরকতে নয় মা। সেটা তোমার কারণে, তোমার ত্যাগে। রাতের পর রাত তোমাকে ঘুমাতে দেইনি মা। বিছানা ভিজিয়েছি। তুমি বদলিয়ে দিয়েছো। ক্ষুধায় কেঁদে উঠার আগেই মুখে খাবার তুলে দিয়েছো। শীতের রাতে বুকের ওমে জড়িয়ে রেখে ঠান্ডার হতে থেকে বাঁচিয়েছো, আঁচলের ছায়া দিয়ে রৌদ্র-তাপ থেকে রক্ষা করেছো। আর কত বলবো মা! একটু একটু করে বড় হচ্ছি, চঞ্চলতা বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে তোমার তটস্থতা। হাঁটতে গিয়ে কখন পড়ে গেলাম, কখন ব্যথা পেলাম, শরীরের কোথাও পিপড়ে কামড়ে দিলো কিনা। কষ্টটা যেন আমার চেয়ে তোমারই বেশী হতো মা।
আর একটু বড় হলাম। আমার দুরন্তপনা বাড়লো। সেই সাথে বাড়লো তোমার দুশ্চিন্তা আর খবরদারি। সাথে সতর্কতাও। তোমার সন্তান বড় হচ্ছে। বাড়ন্ত শরীরের জন্য বাড়তি পুষ্টি দিতে হবে। আচ্ছা বলতো মা? এসবের ফাঁকে তোমাকে কি এক মুহূর্তের জন্যও স্বস্তি দিয়েছি। সামান্য একটু অসুখ হলে তো কথাই নেই। নিজের নাওয়া-খাওয়া ভুলে আমাকে নিয়ে পড়ে থাকা। আমি সুস্থ হয়ে না উঠা পর্যন্ত নিজের দিকে তাকাবার ফুরসত নেই তোমার। তারপর তোমার সন্তান আর একটু বড় হলো। স্কুলে ভর্তি করাতে হবে তাকে। রাজ্যের চিন্তা এসে ভর করলো তোমার উপর। কোন স্কুলে ভর্তি হবো আমি? সেই স্কুল কতদূর? প্রতিদিন কিভাবে যাবো আমি? আচ্ছা মা, আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিবে? সন্তানের জন্য যত দুশ্চিন্তা সব কি অবলীলায় মায়েদের কাঁধে চেপে বসে?
যাই হোক। স্কুলে ভর্তি হলাম আমি। তোমার রাশি রাশি দুশ্চিন্তা আর উদ্বেগের সাথে আরও কিছু নতুন মাত্রা যোগ হলো। আমি স্কুলে গিয়ে দুষ্টুমি করছি কিনা, কেউ আমাকে মারছে কিনা, হাবিজাবি কিছু খেয়ে ফেললাম কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। শেষে থাকতে না পেরে আমার স্কুলে আসা-যাওয়ার সংগী হলে তুমি। এভাবে যেতে যেতে উপরের ক্লাসে উঠলাম। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে তোমার হাত ছেড়ে দিয়ে বন্ধুদের হাত ধরলাম। কিন্তু আমাকে নিয়ে তোমার দুশ্চিন্তার প্রশমন যেন কিছুতেই হয়না। বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত তোমার উৎকন্ঠিত চেহারায় হাসি ফুটতো না। বাড়ি ফিরে তোমার চেহারায় হাসি ফুটেছে দেখে আমারও যে আনন্দে মন ভরে যেত মা! অথচ মাঝে মাঝেই আমার উপর তোমার খবরদারিকে অহেতুক বাড়াবড়ি মনে হতো।
জানো মা? আমি আজও একটা কথা ভাবি। স্কুল শেষ করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও আমার জন্য তোমার দুশ্চিন্তা আর উদ্বেগের এতটুকু হেরফের হতে দেখিনি। তোমার কোল ছেড়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করে বিশ্ববিদ্যালয় অবধি পৌঁছুতে বয়স তো আর কম হয়নি। এরপরও আমাকে নিয়ে তোমার উদ্বেগ-উৎকন্ঠা এতটুকু কমাতে পারিনি। বলো মা, সেটা কি আমার ব্যর্থতা? নাকি মাতৃত্বের চিরায়ত রূপ? সন্তান হয়েও যেটাকে আমরা চিনতে ভুল করি, ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এর অমর্যাদা করি। যাই হোক না কেন, যে যাই বলুক না কেন? একটা ব্যাপারে আমি কিন্তু নিশ্চিত। আমার জন্য যত দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা তুমি ভোগ করেছো তার কানা কড়ির হিসেবও আমি চুকাতে পারিনি। মৃত্যুর আগে দীর্ঘ চারটি বছর তুমি বিছানায় পড়ে ছিলে। অসহায়ের মতো চেয়ে থেকে তোমার শরীরের ক্রমশ ক্ষয়ে যাওয়া দেখেছি আমি। তোমার সেরে উঠার আকুলতা বিদ্ধ করেছে আমায়। কিন্তু চাকুরীর দোহাই দিয়ে, সংসারের দোহাই দিয়ে সর্বক্ষণ তোমার কাছে থাকতে পারিনি আমি। অথচ তুমি তা চাইতে। আমি সব বুঝতাম মা। টাকা দিয়ে পোষা যে মানুষগুলোর উপর তুমি ভর করে চলতে, তুমি চাইতে সেই মানুষগুলোর বদলে সেখানে থাকুক তোমার সন্তান। মা, আমার শরীরের সমস্ত রক্ত দেয় ধুলেও এই ব্যর্থতার সমান্যতম মুছবার নয়। কি মুখে তোমার কাছে ক্ষমা চাইবো মা।
মাগো, বিধাতার কাছে বার বার মাথা কুটেছি। তবুও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিছানার সাথে প্রায় মিশে যাওয়া তোমার কড়িকাঠের শরীরটা চেয়ে দেখতে হয়েছে আমাকে। এ যে আমার জন্য কত কষ্টের ছিল তা আমি কাকে বুঝাবো? কি করে বুঝাবো? তোমার বুকের কাছে শুয়ে কত বিছানা ভিজিয়েছি! দুশ্চিন্তায় রাতে তোমার ঘুম হতোনা। ভিজে বিছানায় শুয়ে থাকলে তোমার সন্তানের ঠান্ডা লেগে অসুখ করবে ভেবে। শাড়ির আঁচলে মুছে তাড়াতাড়ি বুকে তুলে নিতে। তুমিও তো অসুস্থ শরীরে বিছানা ভিজিয়েছিলে মা। কিন্তু কই? তোমার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে-এই ভাবনায় আমার একটা রাতের সুখনিদ্রায় সামান্যতম ব্যাঘাতও তো ঘটেনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যতক্ষণ জ্ঞান ছিল তুমি তোমার সন্তানের কথা ভেবেছো। কিন্তু আমার কর্মব্যস্ত সময়ের ফাঁকে তোমার অসুস্থতা নিয়ে কতটা সময় ভেবেছি তার হিসেব করলে লজ্জায় আমার মাথাটা নুয়ে আসে মা।
আমি জানিনা মা কেন এমন হয়? তোমারই তো সন্তান আমি! তাহলে এতটা স্বার্থপর হলাম কি করে? আজও মনে পড়ে মা। এক রাতে তোমার পাশের বিছানায় মশারি ছাড়া শুয়ে ছিলাম। তোমার মনে পড়ে গেলো আমাকে মশায় কামড়াচ্ছে। বুয়াকে বললে আমাকে মশারি টানিয়ে দিতে। অথচ অন্ধকার ঘরে তুমিও তখন মশারি ছাড়া শুয়েছিলে। তোমার অবশ হয়ে যাওয়া শরীরে মশার কামড়ের অনূভূতিও ঠিকমতো ছিলনা। থাকলেও হাত নেড়ে মশা তাড়াবার মতো অবস্থা তোমার ছিলনা। নিজের শরীরটাকে মশাদের দখলে ছেড়ে দিয়ে আমাকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করার জন্য দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলে তুমি। মা এই কি তাহলে নাড়ির টান? বলতে পারো মা পৃথিবীতে কি দিয়ে মায়ের এই অনুভূতির মূল্যায়ন করা যায়?
উঃ আর ভাবতে পারিনা মা! আগে বুঝিনি মা, তুমি চলে যাবার পর এগুলো এত জীবন্ত হয়ে উঠবে আমার কাছে। যখন ভাবি তখন নিজকে বড় স্বার্থপর মনে হয়। কিছুতেই ক্ষমা করতে পারিনা নিজকে। তাই বলে তোমার কাছ থেকে পাবার লোভও আমার নেই একথা ভেবোনা মা। তাই তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি মা। পারো তো তোমার এই স্বার্থপর সন্তানকে ক্ষমা করে দিও।
২| ১২ ই মে, ২০১৩ সকাল ৯:৪৯
সুফিয়া বলেছেন: মা মানেই আমাদের আবেগের সবটুকু জুড়ে থাকা
মা মানেই আমাদের সমস্ত চেতনা জুড়ে থাকা অনির্বাণ।
মা মানেই প্রেম-প্রীতি-স্নেহ-ভালবাসার সহাবস্থান।
ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:৪৫
জহুরুল ইসলাম স্ট্রীম বলেছেন: আবেগাপ্লুত হয়ে গেলাম।