![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।
চুন্নু শেখ ও তার দুই ছেলে
চুন্নু শেখ যেদিন বিছানায় পড়লো এবং মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেলো যে আর উঠে দাঁড়াবার সম্ভাবনা নেই সেদিন গাঁয়ের লোকজন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। কারণ, চুন্নু শেখ যেমনি নাটা (দুষ্ট প্রকৃতির) ধরনের মানুষ তেমনি গোলমেলে তার কাজকর্ম। একজনের কথা আর এক জনের কাছে ফুলিয়ে-ফাপিয়ে রং চং মাখিয়ে লাগানো ভাঙানোর ব্যাপারে তার পারদর্শিতার ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে গ্রামে। তার এই অঘটনঘটনপটিয়সী স্বভাবের কারণে কথার ডালপালা গজিয়ে এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে দু’পক্ষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ না লেগে উপায় থাকেনা।
চুন্নু শেখ এভাবে গাঁয়ের এক জনের সাথে আর একজনের ঝগড়া বাঁধিয়ে দিয়ে দূর থেকে মজা দেখে আর স্বভাবসুলভ ভঙিতে দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে থোবড়ানো গাল নিয়ে খ্যাক খ্যাক করে হাসে। গাঁয়ের লোকদের কাছে তার এই দুরভিসন্ধির কথা চাপা থাকেনি বেশীদিন। সবাই তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে থাকে সেই থেকে।
তাই চুন্নু শেখের বিছানা বন্দির খবর গ্রাম জুড়ে স্বস্তির বাতাস বইয়ে দেয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পরও উঠে দাঁড়াতে পারেনি চুন্নু শেখ। ডাক্তার এক সময় হাল ছেড়ে দেয়। চুন্নু শেখের দুই ছেলে পল্টু ও নান্টুকে ডেকে ডাক্তার তাদের বাবার শেষ অবস্থার কথা জানিয়ে দেয়।
কথাটা কানে যায় চুন্নু শেখের। মনে মনে ফন্দি আঁটে সে। মরতেই যখন হবে তখন শেষবারের মতো গাঁয়ের লোকদের একটু নাড়িয়ে-চাড়িয়ে যাই না কেন!
যেই ভাবা সেই কাজ। ছেলে দুটোকে কাছে ডেকে চুন্নু শেখ তার শেষ ইচ্ছের কথা জানায়। দুই ভাই যদি তার শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করে তবেই সে শান্তিতে মরতে পারবে। বাপের কথায় এক বাক্যে রাজী হয়ে যায় দুই ভাই। বলে
বাবা, তোমার শেষ ইচ্ছে কি আমাদেরকে বলো। আমরা অবশ্যই তোমার শেষ ইচ্ছে পূরণ করবো।
ক্লান্ত স্বরে চুন্নু শেখ বলে
বাবারা, আমার কারণে তোরা দুই ভাই বহু কষ্ট সহ্য করেছিস। তাই আমি ঠিক করেছি তোদেরকে আর কোন কষ্ট দিব না। এমনকি মরার পরও না।
দুই ভাই এ-ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে
মরার পর কেউ কাকে কষ্ট দিতে পারে নাকি কখনও। বরং তোমার যাতে মরতে কোন কষ্ট না হয় সেটাই আমরা দেখব।
কুখ্ কুখ্ করে কাশতে কাশতে চুন্নু শেখ বলে
জানি বাবা, আমার মরাটাই এখন তোদের অপেক্ষার ব্যাপার। তাই মরার পর আমাকে নিয়ে যাতে তোদের কোন হোজ্জত পোহাতে না হয় সে ব্যবস্থাই আমি মনে মনে ঠিক করেছি। আর সেটা বলার জন্যই তোদেরকে ডেকেছি।
বাপের কথায় উদগ্রীব হয়ে উঠে পল্টু ও নান্টু। তাড়াতাড়ি বলে
বলো বাবা, তুমি যা বলবে আমরা তাই করবো।
ভিতর থেকে দমকে উঠা কাশীর বেগকে কোনমতে চেপে রেখে চুন্নু শেখ বলে
বাবারা, আমি তোদের জন্য সহায়-সম্পদ তেমন কিছু রেখে যেতে পারিনি। একটা লাশ কবর দেয়া শুধু হোজ্জতের ব্যাপারই না, খরচের ব্যাপারও আছে। তাই আমার ইচ্ছে তোরা আমার লাশটাকে কবর না দিয়ে একটা বস্তায় ভরে গ্রামের মাঝখানে যে বড় বটগাছটা আছে তাতে ঝুলিয়ে রাখবি।
পরদিনই চুন্নু শেখ মারা যায়। ছেলেরা তাদের বাবার কথামতো কাজ করে। কিন্তু গাঁয়ের মাঝখানে বস্তাবন্দী একটা লাশ ঝুলার খবর পুলিশের কানে পৌঁছে যায় সেদিনই। পুলিশ এসে ঐ বাড়ির সমস্ত লোককে থানায় ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোন তথ্য উদ্ধার করতে না পেরে গোটা গ্রামে হানা দেয় পুলিশ। গ্রামের সব পুরুষ লোক ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে গোটা গ্রামটা। মহিলাদের বিলাপ আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে গ্রামের বাতাস। কারও বুঝতে বাকী থাকেনা যে এটা মৃত চুন্নু শেখেরই কাজ। মরার আগেও একটা বড় ধরনের খেল খেলে গেছে সে। ফাঁসিয়ে দিয়ে গেছে গ্রামবাসীদের। তাদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী একটা দুর্ভোগের ব্যবস্থা করে গেছে।
মৃত চুন্নু শেখ যে জীবিত চুন্নু শেখের চেয়ে এতটা ভয়ংকর হবে তা আগে বুঝতে পারেনি গ্রামবাসীদের কেউ, এমনকি তার ছেলেরাও না।
১১ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৮:৫০
সুফিয়া বলেছেন: বুঝলাম না কি বলতে চাইছেন। তবু ধন্যবাদ।
২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:২৭
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ইন্টারেস্টিং গল্প।
১১ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৮:৪৯
সুফিয়া বলেছেন: গল্পটা ছোটকালে বড়দের মুখে কিসসার ছলে শুনতাম। আমার কাছেও ইন্টারেষ্টিং মনে হওয়ায় নিজের মতো করে সাজিয়ে লিখলাম।
ধন্যবাদ আপনাকে।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:২৩
গরম কফি বলেছেন:
চুন্নু শেখ বা চুন্নু রহমান যাই হোক না কেন নামে কিবা আসে যায় !