![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।
আমরা হয়তো অনেকেই জানি যে, পৃথিবীতে ৩টি মুসলিম তীর্থস্থান রয়েছে যেগুলো ব্যতীত অন্য কোথাও এবাদতের উদ্দেশ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকদের ভ্রমণ বৈধ নয়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এই ৩টি স্থান সম্পর্কে বলে গেছেন। প্রথমটি মসজিদুল হারাম, যা মক্কায় অবস্থিত। দ্বিতীয়টি হচ্ছে মসজিদুল আকসা, যা জেরুজালেমে অবস্থিত । আর তৃতীয়টি হচ্ছে আমার মসজিদ, মসজিদে নববী (সাঃ), যেটি মদিনায় অবস্থিত। উল্লেখ্য যে, মসজিদে নববীকে নবীজী (সাঃ) নিজের মসজিদ বলে উল্লেখ করেছেন। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে রেওয়াত আছে যে রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যদি আমার এই মসজিদ সাফা নামক স্থান পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয় তবুও তা আমারই মসজিদ থাকবে।
পবিত্র মসজিদুল হারামের পর ইসলামে সবচেয়ে পবিত্র ও বরকতময় স্থান হচ্ছে মসজিদে নববী (সাঃ)। মহানবী (সাঃ) তার নবুওয়াতী জীবনের শেষ দশ বছর এই মসজিদের নিবিড় সান্নিধ্যে কাটিয়েছেন এবং মৃত্যুর পর এখানেই শায়িত আছেন। অর্থাৎ উনার কবর মোবারক এই মসজিদেই অবস্থিত। ইতিহাসের সর্বপ্রথম ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান মহানবী (সাঃ) এর প্রধান কার্যালয়ও ছিল এই মসজিদে নববীতে।
কিছু সাধারণ তথ্য -
নাম - মসজিদে নববী (সাঃ)।
অবস্থান - মদিনা আল মুনাওয়ারা, সৌদি আরব।
নির্মাণকাল - ১ম হিজরী, ৬২২ খ্রীষ্টাব্দ।
পরিচালনায় - সৌদি আরব সরকার।
প্রতিষ্ঠাতা - মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ), খোলাফায়ে রাশেদীন (রাঃ) ও তৎকালে মদিনায় বসবাসরত সকল সাহাবায়ে কেরামগণ।
ধারণ ক্ষমতা - সাধারণভাবে ৬ লাখ মুসুল্লী এখানে একসাথে নামাজ পড়তে পারে। তবে হজ্ব মওসুমে ১০ লাখ লোকের নামাজের সংস্থান হয়।
মিনার - ১০টি। প্রতিটি মিনার ১০৫ মিটার বা ৩৪৪ ফুট উঁচু।
স্থাপত্য বিষয়ক তথ্য -
মসজিদে নববী (সাঃ) স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য যার হয়েছে একমাত্র তিনিই বুঝতে পারবেন এর চোখ ধাঁধানো স্থাপত্য কলার বিষয়টি। প্রথম নির্মাণকাল থেকে শুরু করে সময়ের ধারাবাহিকতায় একাধিকবার সংস্কার ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রায় সকল প্রকার ইসলামী স্থাপত্য শৈলীর সমন্বয় ঘটানো হয়েছে এই মসজিদে। অর্থাৎ ইসলামিয়া, মামলুক রিভাইডাল, বাইজানটাইন ও আরবীয় স্থাপত্যকলার সমন্বয় এমনভাবে ঘটানো হয়েছে যা মসজিদের ভিতরে প্রবেশকারী প্রত্যেকের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। ২০১২ সালে হজ্বে যাবার আগে হজ্ব সম্পর্কিত অনেক লেখায় আমি একটি সাবধানবাণী আমি বার বার পড়েছিলাম। সেটা হলো, মদিনায় মসজিদে নববী (সাঃ) এর ভেতরে প্রবেশ করে ইবাদত বন্দেগীর কথা ভুলে গিয়ে হাজীগণ যেন এর কারুকার্যময় সৌন্দর্য দেখায় ব্যস্ত হয়ে না পড়েন। কথাটি তখন অত্যন্ত মামুলী মনে হলেও মসজিদে নববী (সাঃ) ভেতরে প্রবেশ করামাত্রই আমি এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছিলাম। সত্যি চোখ ধাঁধিয়ে যায় মসজিদের ভিতরকার স্থাপত্যশৈলী আর আলোক সজ্জার দিকে তাকালে। ইচ্ছে করলেই কি এগুলোকে উপেক্ষা করে থাকা যায়? নামাজ কিংবা কুরআন তেলাওয়াতের পর তসবীহ পড়ার ফাঁকে ফাঁকে আমার দৃষ্টি বার বার ঘুরপাক খেয়েছে এই নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলীর উপর।
আদি ইতিহাসঃ-
কাঁচা ইট, মাটি, কাঠ আর খেজুর পাতার ছাউনী দিয়ে তৈরী অতি সাধারণ এই মসজিদ থেকেই একদিন বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল। মুসলিম জাহানের সর্বোচ্চ আবেগ ও ভালবাসায় ধন্য এই মসজিদ থেকেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পর খোলাফায়ে রাশেদীন (রাঃ) সমগ্র বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ শাসন করেছেন। বিগত দেড় হাজার বছরের ইসলামের ইতিহাসে এই মসজিদের চেয়ে বেশী ঘটনাবহুল আর কোন স্থান পৃথিবীতে নেই। মহানবী (সাঃ) ছিলেন এই মসজিদের ইমাম ও খতিব। আর মোক্তাদি ছিলেন উনার সাহাবায়ে কেরামগণ।
নির্মাণ ইতিহাসঃ-
হিজরতের পর মদিনায় ফিরে নবীজী (সাঃ) সর্বপ্রথম ইসলামের কর্মকেন্দ্র হিসেবে একটি মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। হযরত আবু আনসারির বাড়ির সামনে একটি পতিত জমি ছিল। এটার এক অংশে খেজুর শুকানোর একটি খলা ছিল এবং অন্য অংশে উট, ছাগল, ভেড়া চড়ানো হত। জমিটির মালিক ছিল নাজ্জাল গোত্রের দুই এতিম সহোদও সাহল ও সুহাইল। তারা প্রতিপালিত হচ্ছিল হযরত আসআদ ইবনে যুবায়ের এর কাছে। নবীজী (সাঃ) এ জায়গাটিকেই মসজিদের জন্য পছন্দ করলেন। বালকদেরকে ডেকে জমিটুকু তার নিকট বিক্রি করতে বললেন। বালক দু’জন সাথে সাথে জবাব দিল, ইয়া রসুলুল্লাহ (সাঃ), এ জমি আমরা আপনার খেদমতে উৎসর্গ করে দিলাম। নবীজী (সাঃ) বললেন, না, তা হয়না। তোমরা এতিম বালক। বিনামূল্যে তোমাদের এ জমি নেয়া যায়না।
এরপর নবীজী (সাঃ) অন্যান্যদের নিয়ে জমির দাম নির্ধারণ করলেন ১০ দিনার। তার নির্দেশে হযরত আবু বকর (রাঃ) জমির দাম পরিশোধ করলেন। অতঃপর খেজুর গাছগুলো কেটে জমি সমান করা হলো। একপাশে মুশরিকদের কয়েকটি পুরাতন কবর ছিল। সেগুলো থেকে হাড়গোড় তুলে নিয়ে অন্যত্র দাফন করা হলো।
এটা ১ম হিজরী রবিউল আওয়াল মাসের কথা। জমি নির্ধারিত হবার পর মহানবী (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামদের সাথে পরামর্শ করে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। প্রথমে তিন হাত মাটি খনন করে পাথর ও চুন দিয়ে ভিত্তি গাঁথা হলো। সেই ভিত্তির উপর কাঁচা ইটের দেয়াল তৈরী করা হলো, খেজুর গাছের খুঁটি লাগানো হলো। তারপর খেজুর গাছের শাখা বিছিয়ে তার উপর কাঁদা মাটির প্রলেপ দিয়ে ছাদ তৈরী করা হলো। নবীজী (সাঃ) স্বয়ং এই নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছেন। তার সাথে যেসব সাহাবায়ে কেরামগণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে অংশ নিয়েছিলেন তাদের জন্য নবীজী (সাঃ) এই বলে আল্লাহর নিকট দোয়া করেন, হে আল্লাহ, পরকালের কল্যাণই প্রকৃত কল্যাণ। অতএব তুমি আমার আনসার ও মুজাহিদগণকে চূড়ান্ত সফলতা দান কর (বুখারীও মুসলিম শরীফ)।
মসজিদটির সর্ব প্রথম ভিত্তি স্থাপন করেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) স্বয়ং। তারপর তিনি হযরত আবু বকর (রাঃ) কে ডেকে তার উপর পাথর স্থাপন করতে বলেন। এরপর নবীজী (সাঃ) ক্রমান্বয়ে হযরত ওমর (রাঃ) ও হযরত উসমান (রাঃ) কে একইভাবে পাথর স্থাপন করতে বলেন। কাজ শেষ হয়ে গেলে তিনি বলেন, আমার পর এরা পর্যায়ক্রমে খেলাফতের দায়িত্ব পালন করবে।
মুসলিম বিশ্বের মিলনকেন্দ্র মসজিদে নববী (সাঃ) এর নির্মাণকালীন আয়তন ছিল দৈর্ঘে ৩৫ মিটার ও প্রস্থে ৩১ মিটার এবং দরজা ছিল ৩টি। বর্তমানে মসজিদটি যে চোখ ধাঁধানো রূপ ও অদ্বিতীয় স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন ধারণ করে আছে তখন তা ছিল একেবারেই কল্পনাতীত। বলা যায় তখন মসজিদটি ছিল ইসলামের সহজ ও সরলতার জীবন্ত প্রতীক। প্রথমে মসজিদটির কেবলা নির্ধারণ করা হয়েছিল বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে। পরে যখন কাবা ঘরের দিকে কেবলা নির্ধারণ করা হয়। যেহেতু কাঁচা ইট ও বালি দিয়ে মসজিদটির ভিত তৈরী করা হয়েছিল, সেহেতু একটু বৃষ্টি হলেই মেঝেটি কাঁদা হয়ে যেত। তাই দেখে একদিন সাহাবীগণ নামাজ পড়তে আসার সময় কয়েকটি প্রস্তরখন্ড হাতে করে নিয়ে এসে মেঝেতে বিছিয়ে দেয়। এই ব্যবস্থা নবীজী (সাঃ) এর খুব পছন্দ হওয়ায় তিনি পুরো মেঝেটা প্রস্তরখন্ড বিছিয়ে উঁচু করে দেন।
মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হলে নবীজী (সাঃ) এর পাশেই খেজুর পাতার ছাউনি দিয়ে একটি কুটির নির্মাণ করেন। কুটিরটির নাম দেন তিনি, সুফফা। এতে ছিন্নমূল মুহাজের, নবীজী (সাঃ) এর সার্বক্ষণিক সংগী, সেবক ও কর্মীগণ থাকতেন। এরপর নবীজী তার দুই সহধর্মিনী হযরত সওদা (রাঃ) ও হযরত আয়েশা (রাঃ) এর বসবাসের জন্য পৃথক দুটি ঘর তৈরী করেন। পরবর্তীতে উনার বিবির সংখ্যা চার জন হলে আরও ঘর নির্মাণ করা হয়। কাঁচা ইটের মেঝের উপর খেজুর পাতা দিয়ে এই ঘরগুলো তৈরী করা হয়। ঘরগুলো তেমন বড় ছিল না। দৈর্ঘে ১০ হাত ও প্রস্থে ৬/৭ হাতের বেশী ছিলনা। উচ্চতা এমন ছিল যে, একজন মানুষ দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে ছাদ ষ্পর্শ করতে পারত। ঘরগুলোর দরজায় সব সময় পর্দা ঝুলানো থাকত।
মহানবী (সাঃ) এর প্রতিবেশীদের মধ্যে অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি বাস করতেন। তারা নবীজী (সাঃ) ও তার পরিবারবর্গের জন্য নিয়মিত খাবার পাঠাতেন। ওগুলোই ছিল নবীজী (সাঃ) ও তার পরিবারবর্গের প্রধান খাদ্য। তাদের মধ্যে হযরত সাদ ইবনে ওবাদা (রাঃ) প্রতিদিন তার বাড়ি থেকে একটি বড় পাত্রে নবীজী (সাঃ) ও তার পরিবারবর্গের জন্য খাবার পাঠাতেন। খাবারের মধ্যে কখনও রুটি-তরকারী, কখনওবা দুধ থাকত। হযরত আনাস (রাঃ) এর মাতা হযরত উম্মে আনাস (রাঃ) তার সমস্ত সম্পত্তি মহানবী (সাঃ) এর খেদমতে পেশ করলে তিনি তা গ্রহণ করেন এবং সংগে সংগে তার ধাত্রীমাতা হযরত উম্মে আইমান (রাঃ) কে দিয়ে দেন।
মসজিদে নববীর ভিতরের দৃশ্য
মসজিদে নববীর কেবলা নির্ধারণ -
নাফে ইবনে যুবায়ের ইবনে মুতায়িম থেকে বর্ণিত আছে যে রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, বায়তুল্লাহকে আমার সম্মুখে না আনা পর্যন্ত আমি আমার মসজিদের কেবলা নির্ধারণ করিনি। যুবায়ের ইবনে বাক্কার দাউদ ইবনে কায়েস থেকে রেওয়াত করেন যে, নবী করিম (সাঃ) যখন মসজিদে নববীর ভিত্তি স্থাপন করছিলেন তখন জিবরাইল (আঃ) সেখানে দাঁড়িয়ে বায়তুল্লাহর দিক দেখছিলেন। অতপর মসজিদে নববী ও বায়তুল্লাহ শরীফের মধ্যবর্তী অন্তরায়সমূহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এ প্রসংগে নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, আমার ও বায়তুল্লাহর মধ্যবর্তী অন্তরায় অপসারণ করার পরই আমি আমার মসজিদের কেবলা নির্ধারণ করেছি। যুবায়ের ইবনে বাক্কার খলিল ইবনে আব্দুল্লাহ ও জনৈক সাহাবী থেকে রেওয়াত করেন, নবী করিম (সাঃ) কয়েকজন সাহাবীকে কেবলা নিশ্চিত করার জন্য মসজিদের কোণে দাঁড় করালেন। জিবরাইল (আঃ) তখন নবীজী (সাঃ) এর কাছে এসে বললেন, আপনি বায়তুল্লাহর দিক দেখে দেখে কেবলা নির্ধারণ করুন। অতঃপর জিবরাইল (আঃ) হাত ইশারা করতেই নবী করিম (সাঃ) ও বায়তুল্লাহ শরীফের মধ্যকার সকল পাহাড় সরে গেল। নবীজী (সাঃ) বায়তুল্লাহ শরীফের দিক দেখে দেখে মসজিদের কোণসমূহ এবং কেবলার দিক নির্দিষ্ট করলেন। এ সময় সম্মুখে কোন কিছুর অন্তরাল ছিলনা। কাজ শেষ হবার পর জিবরাইল (আঃ) আবার হাত ইশারা করলেন। সাথে সাথে পাহাড়-বৃক্ষসহ সকল কিছু আগের অবস্থানে চলে আসে।
মসজিদে নববী (সাঃ) এর সংস্কার ও সম্প্রসারণ -
১ম বার - মসজিদে নববী (সাঃ) এর প্রথমবার সম্প্রসারণ করেন নবী করিম (সাঃ) ৭ম হিজরীতে খায়বার যুদ্ধ জয়ের পর। এর আগে মদিনায় নবী করিম (সাঃ) এর হিজরত ও অবস্থানের ফলে মুসলমানদের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে শুরু করে এবং মসজিদে নববীতে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশী মুসুল্লীর সমাগম হতে থাকে। তাই নবীজী (সাঃ) এই মসজিদ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেন। কেবলার দিকের দেয়াল ঠিক রেখে বাকী তিন দিকের দেয়াল ভেঙে দৈর্ঘে ৩০ মিটার ও প্রস্থে ৩৫ মিটার বাড়ানো হয়। এতে মসজিদে নববীর আয়তন দাঁড়ায় ৪,২২৫ বর্গ মিটার। অর্থাৎ মসজিদটি দৈর্ঘে-প্রস্থে সমান আকার ধারণ করে। উল্লেখ্য যে, সম্প্রসারণের জন্য যে বাড়তি জমির প্রয়োজন ছিল তা হযরত ওসমান ইবনে আফফান (রাঃ) উপযুক্ত মূল্যে কিনে মসজিদের নামে ওয়াকফ করে দেন।
২য় বারঃ মসজিদে নববীকে ২য় বার সংস্কার ও সম্প্রসারণ করেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) ১৭ হিজরীতে। এ সময় বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেলে এবং সেই সাথে মসজিদে নববীতে জিয়ারতকারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে এর সম্প্রসারণ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এর আগে নবীজী (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) মসজিদে নববী (সাঃ) এর ছোটখাট সংস্কার সাধন করলেও সম্প্রসারণে হাত দেননি। সেই হিসাবে রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পর হযরত উমর (রাঃ) ই সর্বপ্রথম মসজিদে নববীর সম্প্রসারণ করেন। এ সময় খেজুর গাছের খুঁটিগুলো পুণঃস্থাপন করা হয়। কেবলার দিকে ১০ হাত ও বিপরীতে দিকে ২০ হাত এবং উত্তর দিকে ৩০ হাত স¤প্রসারণ করা হয়। ৯ হাত উচ্চতাবিশিষ্ট ছাদ ২ হাত বাড়িয়ে ১১ হাত করা হয়। প্রথমবারের মতো এই সম্প্রসারণ কাজেও কাঁচা ইট ও খেজুর গাছ ব্যবহার করা হয়।
৩য় বার - ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান ইবনে আফফান (রাঃ) ২৯ হিজরীতে তৃতীয় বারের মত মসজিদে নববী (সাঃ) এর সংস্কার ও সম্প্রসারণ করেন। পুরো এক বছর সময় নিয়ে মসজিদটির সংস্কার কাজ চলে। এই সময় প্রথমবারের মত খেজুর গাছের খুঁটির স্থলে পাথর ও লোহার খুঁটি বসানো হয়। পূর্বের ছাদ ভেঙে উন্নত মানের কাঠ ও পাথরের ঢালাই দেয়া হয় ছাদে। মসজিদের আয়তন পূবদিক ছাড়া বাকী তিন দিকেই বাড়ানো হয়। উত্তরদিকে ২০ হাত এবং পম্চিম ও দক্ষিণ দিকে ১০ হাত করে বাড়ানো হয়। পূবদিকের দেয়াল ঘেঁষে উম্মুল মুমেনীনগণের বাসস্থান থাকায় সেদিকটা বাড়ানো সম্ভব হয়নি।
৪র্থ বার - হযরত ওসমান (রাঃ) কর্তৃক সংস্কার ও সম্প্রসারণের পর দীর্ঘকাল মসজিদে নববী (সাঃ) এর কোন সংস্কারের প্রয়োজন পড়েনি। তবে এই সময়ে জিয়ারতকারীদের সংখ্যা অত্যধিক বৃদ্ধি পাবার ফলে ৫০ বছর পর ৮৮ হিজরীতে উমাইয়াগণ মসজিদে নববী (সাঃ) এর সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে। উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল মালিকের নির্দেশে মদিনার প্রশাসক হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ মসজিদটিকে চারপাশে স¤প্রসারণের উদ্যোগ নেন। এ সময় পুরাতন কাঠামো সম্পুর্ণরূপে ভেঙে ফেলে পূর্বের আয়তনের প্রায় দ্বিগুণ আয়তনে মসজিদটিকে সম্প্রসারণ করা হয়। উম্মুল মুমেনীনগণের হুজরা বা বাসস্থান এবং নবীজী (সাঃ) এর রওজা মোবারক মসজিদের ভিতরে নিয়ে আসা হয়। মসজিদটির সংস্কারে উন্নত মানের পাথর ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। মহানবী (সাঃ), হযরত আবু বকর (রাঃ) ও হযরত ওমর (রাঃ) এর কবরও অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সংস্কার করা হয়।
৫ম বারঃ- আব্বাসীয় খলিফাগণও মসজিদে নববী (সাঃ) এর সংস্কার, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্য বর্ধনে আন্তরিকতা ও বদান্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ১৬১ হিজরীতে আব্বাসীয় খলিফা আল মাহদী মদিনা শরীফ জিয়ারতকালে মসজিদে নববী (সাঃ) এর সংস্কার ও স¤প্রসারণের প্রযোজনীয়তা অনুভব করেন এবং উদ্যোগ নেন। তার উদ্যোগে উত্তরদিকে মসজিদের আয়তন প্রায় এক তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি করা হয়। একইসাথে দামী টাইলস দ্বারা কেবলার দেয়াল ও রওজা মোবারকের বাইরের দেয়াল বাঁধানো হয়।
৬ষ্ঠ বারঃ- ৬৫৪ হিজরীতে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে মসজিদে নববী (সাঃ) এর ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। শুধু নবীজী (সাঃ) এর রওজা মোবারক ব্যতীত মসজিদের সম্পূর্ণ অংশ তখন ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছিল। এরপর আব্বাসীয় খলিফা মুনতাসির বিল্লাহ ৬৫৫ হিজরীতে মসজিদে নববী (সাঃ) কে নতুনভাবে নির্মাণ করেন। এই কাজ কিছুদূর এগোবার পর তাতার সম্প্রদায় কর্তৃক বাগদাদ আক্রান্ত হয় এবং খলিফা শাহাদাৎ বরণ করেন। ফলে মসজিদে নববী (সাঃ) এর নির্মাণকাজ থেমে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মিশর ও ইয়েমেনের সুলতানদ্বয় মসজিদে নববী (সাঃ) এর অসমাপ্ত নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন। এক্ষেত্রে মিশরের সুলতান মামলুকের অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয়। তার উদ্যোগেই পূর্বের চেয়ে উন্নত মানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে মসজিদের ছাদসহ সকল অংশ পুণঃস্থাপন করা হয়।
৭ম বার - এর ২০০ বছর পর ৮৮৬ হিজরীতে মসজিদে নববীতে পুণরায় অগ্নিকান্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তখন ঐ অঞ্চলের শাসক ছিলেন আশরাফ বাঈ। তিনি মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এর আগে মসজিদে নববীর ছাদ বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত ছিল। কিন্তু এবারকার সংস্কারে পুরো মসজিদে নববীকে একটি ছাদের তলায় নিয়ে আসা হয়। দীর্ঘ চার বছর এই সংস্কার ও পুণঃনির্মাণ কাজ চলার পর ৮৯০ হিজরীতে মসজিদে নববী (সাঃ) এর কার্যক্রম পূর্ণ উদ্যমে শুরু হয়।
৮ম বার - ৯৪০ থেকে ৯৪৭ হিজরী পর্যন্ত চার বছর সময়কালে মসজিদে নববী (সাঃ) এর ব্যাপক সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ করেন উসমানিয়া খলিফা সুলতান সুলাইমান আল কানুনী, যা ছিল মসজিদে নববীর ইতিহাসে ঐ সময় পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও সর্ববৃহৎ সংস্কার কাজ। মসজিদে নববী (সাঃ) এর মূল ভবনটি উসমানিয়া খিলাফতের সবচেয়ে বড় স্বাক্ষর। ১২৬৫ হিজরীতে উসমানিয়া সুলতান আব্দুল মজিদ এই মূল ভবনটি নির্মাণ করেন। নবীজী (সাঃ) এর মিম্বর শরীফ, রওজা মোবারকের পশ্চিম পাশের দেয়াল, মেহরাবে নববী (সাঃ), উসমানিয়া মেহরাব, সোলায়মানী মেহরাব, গম্বুজে খাযরা(রওজা মোবারকের উপরে নির্মিত সবুজ গম্বুজ) এবং তৎসংলগ্ন মূল মিনার- এসবই সেই সময়ের নিদর্শন। এগুলোর কারুকার্যময় নির্মাণশৈলী দেখে বিমোহিত হন কোটি কোটি নবী প্রেমিক।
৯ম বার- সৌদি সরকার কর্তৃক সংস্কার ও সম্প্রসারণ - মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম ও মদিনায় অবিস্থিত মসজিদে নববী (সাঃ) এর সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সুযোগ-সুবিধা সংযোজন করেছে বর্তমান সৌদি রাজ পরিবার। সৌদি রাজ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ বাদশা আব্দুল আজিজ বিন আব্দুর রহমান আল সউদ ক্ষমতায় এসে মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববী (সাঃ) এর সংস্কার ও সম্প্রসারণে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শুধু তিনি একা নন। এরপর থেকে প্রত্যেক রাষ্ট্রপ্রধানই মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববী (সাঃ) এর উন্নয়নে অসাধারণ অবদান রেখে চলেছেন। বাদশা আব্দুল আজিজ তার আমলে মসজিদে নববী (সাঃ) এর যে সম্প্রসারণ করেন তার আয়তন ৬০২৪ বর্গ মিটার। এর আগে তুর্কী সুলতান আব্দুল হামিদ কর্তৃক সম্প্রসারিত মসজিদে নববী (সাঃ) এর আয়তন ছিল ৬২৪৭ বর্গ মিটার। তার সাথে বাদশা আব্দুল আজিজ কর্তৃক তিন দিকে সম্প্রসারিত অংশ ৬০২৪ বর্গ মিটার যোগ হয়ে মোট আয়তন দাঁড়ায় ১২,২৭১ বর্গ মিটার। বাদশা আব্দুল আজিজ কাজ শুরু করেন ৫ই শাওয়ার ১৩৭০ হিজরীতে। তার মৃত্যুর পর তার সুযোগ্য পুত্র সউদ বিন আব্দুল আজিজ ১৩৭৫ হিজরীতে তা সমাপ্ত করেন। তিনি নিজ উদ্যোগে আরও কিছু অংশ বর্ধিত করেন। ফলে কাজ সম্পন্ন হবার পর মসজিদে নববী (সাঃ) এর আয়তন দাঁড়ায় ১৬,৩২৭ বর্গ মিটার। তাছাড়া তিনি উত্তর দিকে প্রতিটি ৭০ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন দু’টি মিনার নির্মাণ করেন।
কিন্তু মসজিদে নববীতে জিয়ারতকারীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় এর দুই দশক পর শহীদ বাদশা ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজ এর আয়তন বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী ১৩৯৩ হিজরীতে মসজিদটির উত্তর-পশ্চিম দিকের বসতি সরিয়ে সেখানে বিশাল চত্বর তৈরী করা হয়। এই সম্প্রসারণের ফলে মসজিদে নববী (সাঃ) এর আয়তন দাঁড়ায় ৩০,৪০৬ বর্গ মিটার। শুধু সম্প্রসারণই নয়। চত্বরটিকে দামী সাদা মার্বেল পাথরে মোড়ানো হয় এবং মসজিদের ন্যায় ব্যবহারের সুবিধার্থে হাইড্রোলিক ছাতা স্থাপন করা হয়। এগুলো রোদ-বৃষ্টি থেকে মুসুল্লীদেরকে রক্ষা করে থাকে।
হাইড্রোলিক ছাতা
এরপর ১৩৯৮ হিজরীতে সৌদি বাদশা খালিদ বিন আব্দুল আজিজ মসজিদ চত্বরের আয়তন পশ্চিমদিকে ৩২,৪০১ বর্গ মিটার বৃদ্ধি করেন। ফলে মসজিদের বাইরে ছাতা আচ্ছাদিত চত্বরের আয়তন দাঁড়ায় ৬২,৮০৭ বর্গ মিটার। ১৪০৫ হিজরীতে সৌদি আরবের আর এক প্রয়াত বাদশা ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ আল সউদ মসজিদে নববীর ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ১৪০৬ সালে এই বৃহৎ কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। মসজিদ সংলগ্ন এক লক্ষ বর্গ মিটার জায়গা স্থাপনাসহ কিনে নেয়া হয় এবং তিন দিকে ৮২,০০০ বর্গ মিটার সমানভাবে সম্প্রসারণ করা হয়। ফলে মসজিদে নববী (সাঃ) এর গ্রাউন্ড ফ্লোরের মোট আয়তন দাঁড়ায় ৯৮,০০০ বর্গ মিটার। পনের শত বছরের মসজিদে নববীর ইতিহাসে এটাই ছিল সর্ববৃহৎ সম্প্রসারণ।
বিশেষ বৈশিষ্টসমূহ -
এক- নবীজী (সাঃ) এর মিম্বর শরীফ - মসজিদে নববী (সাঃ) এর একদম প্রথমদিকে রসুলুল্লাহ (সাঃ) একটি মরা খেজুর কান্ডের উপর দাঁড়িয়ে জুমুয়ার দিন খুৎবা দিতেন। পরবর্তীতে সাহাবীগণ উনার জন্য একটি কাঠের মিম্বর তৈরী করে দেন। বুখারী শরীফের একটি হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী নবীজী (সাঃ) প্রথম যেদিন কাঠের মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতে শুরু করলেন তখন মৃত খেজুর কান্ডটি শিশুর মত কাঁদতে শুরু করে। নবীজী (সাঃ) তখন মিম্বর থেকে নেমে এসে খেজুর কান্ডটিকে বুকে জড়িয়ে ধরলে সেটির কান্না থেমে যায়।
দুই-রওজাতুম মিন রিয়াযুল জান্নাহ - সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র এই স্থানটি আমাদের নবীজী (সাঃ) কর্তৃক জান্নাতের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। বুখারী শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী রসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, আমার বাসস্থান ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানটুকু জান্নাতের উদ্যান এবং আমার মিম্বর হাউজে কাওসারের উপর প্রতিষ্ঠিত। নবীজী (সাঃ) কর্তৃক বর্ণিত এই স্থানের আয়তন হচ্ছে ৫৩ হাত বা ২৬.৫ মিটার। মসজিদে নববীতে লাল রং এর কার্পেট ব্যবহৃত হলেও আলাদাভাবে চিহ্নিত করার জন্য এই স্থানটুকু হালকা সবুজ রং এর কার্পেট দ্বারা আবৃত। কখনও কখনও এখানে সাদা রং এর কার্পেটও ব্যবহার করা হয়।
তিন- আসহাবে সুফফা - মহানবী (সাঃ) এর পবিত্র সান্নিধ্য লাভ ও দ্বীন শিক্ষার জন্য মদিনার বাইরে থেকে আগত সহায়-সম্বলহীন লোকদের থাকার জন্য নবীজী (সাঃ) মসজিদে নববীর উত্তরদিকের দেয়াল সংলগ্ন যে আশ্রয় স্থলটি নির্মাণ করেছিলেন সেটি সুফফা নামে পরিচিত।
চার- রওজা মোবারক - উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) এর ঘরই হচ্ছে নবীজী (সাঃ) এর পবিত্র রওজা মোবারক। এই ঘরেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং চিরশায়িত হন। তার পাশেই শায়িত আছেন তার আজীবনের কাছের মানুষ হযরত আবু বকর (রাঃ)। হযরত আবু বকর (রাঃ) এর পাশে আছেন নবীজী (সাঃ) এর আর এক সহচর হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)।
নবীজী (সাঃ) এর রওজা মোবারক বাইরে থেকে
রওজা মোবারক মসজিদর ভিতর থেকে
বামদিকে গোল জানালাটি নবীজী (সাঃ) কবর বরাবর এবং ডান দিকে গোল ছিদ্র দুটি হযরত আবু বকর (রাঃ) ও হযরত ওমর (রাঃ) এর কবর বরাবর
পাঁচ- কুব্বাতুল খাযরা বা সবুজ গম্বুজ - বাদশা কালাউন ৬৭৮ হিজরীতে সর্ব প্রথম নবী করিম (সাঃ) এর রওজা মোবারকের উপর এটি নির্মাণ করেন। এটি দামী কাঠের উপর শিশার পাত দিয়ে মোড়ানো। এটি তৈরীর ৭০ বছর পর মসজিদে নববীতে সংঘটিত অগ্নিকান্ডে গম্বুজটির ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। তখন সুলতান হাসান বিন মুহাম্মদ বিন কালাউন এটির পুণঃসংস্কার করেন। ৭৬৫ হিজরীতে মসজিদে নববীতে পুণরায় অগ্নিকান্ড সংঘটিত হলে কুব্বাতুল খাযরা আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন সুলতান শাবান বিন হাসান বিন মুহাম্মদ এর সংস্কার করেন। ৮৮৬ সালে মসজিদে পুণরায় অগ্নিকান্ডে কুব্বাতুল খাযরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন সুলতান কায়েত বাঈ মসজিদে নববীসহ কুব্বাতুল খাযরার সংস্কার করেন। এই সময় কুব্বাতুল খাযরা বা সবুজ গম্বুজটিকে কাঠের পরিবর্তে মিশর থেকে আমদানিকৃত কাল মজবুত পাথর দ্বারা নির্মাণ করা হয়। এ সময় গম্বুজটির উচ্চতা দাঁড়ায় ৮.৮৮ মিটার।
এরপর উসমানিয়া খেলাফতকালে সুলতান গাজী মাহমুদের শাসনামলে গম্বুজে খাযরায় ফাটল দেখা দিলে অত্যন্ত সাবধানতার সাথে পরিপূর্ণ আদব বজায় রেখে সেটার সংস্কার করা হয়। সাধারণত বাইরে থেকে সবুজ গম্বুজের কেবল উপরের অংশটুকু দেখা যায়। এর নিচের অংশে জানালা বা খিড়কি রয়েছে যা বাইরে থেকে দেখা যায়না। অনাবৃষ্টির সময় সালাতুল ইসতেসকা বা বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় করার সময় এই জানালা খুলে দেয়া হয় এবং নামাজ শেষ হবার পূর্বেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়।
ছয়-বৈশিষ্টপূর্ণ স্তম্ভসমূহ বা আল উসতুওয়ানোত -
রওজা মোবারক ও মিম্বর শরীফের মাঝখানে রিয়াযুল জান্নাতে এমন ৮টি স্তম্ভ রয়েছে। এগুলোর প্রত্যেকটি আলাদা বৈশিষ্টপূর্ণ এবং আলাদা আলাদা নামে পরিচিত। যেমন --
তীর চিহ্নিত বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ স্থানসমূহ
১) উসতুওয়ানা হান্নানাহ - এখানেই সেই খেজুর কান্ডটি আছে যেখানে দাঁড়িয়ে নবীজী (সাঃ) জুমুয়ার খুৎবা দিতেন। স্তম্ভটি জালি মোবারকের একদম কাছটিতে রয়েছে।
২) উসতুওয়ানা ছারীর - এখানে মহানবী (সাঃ) এতেকাফ করতেন এবং রাতে বিশ্রামের জন্য এখানে উনার বিছানা পাতা হতো।
৩) উসতুওয়ানা উফুদ - বাইরে থেকে আগত প্রতিনিধি দল এখানে বসে হুজুর (সাঃ) এর নিকট ইসলাম গ্রহণ করতেন। এটিও জালি মোবারকের সাথে লাগোয়া।
৪) উসতুওয়ানা হারছঃ- নবীজী (সাঃ) যখন হুজরা শরীফে তশরীফ নিয়ে আসতেন তখন সাহাবীদের কেউ না কেউ এখানে পাহাড়ায় থাকতেন। এটিও জালি মোবারক ঘেঁষে অবস্থিত।
৫) উসতুওয়ানা আয়েশা (রাঃ) - হুজুর (সাঃ) বলেছেন যে, আমার মসজিদে এমন একটি জায়গা আছে, লোকজন যদি সেখানে নামাজ পড়ার ফযিলত সম্পর্কে জানতে পারত তাহলে সেখানে নামাজ পড়ার জন্য লটারীর প্রয়োজন হত। নবীজী (সাঃ) এর মৃত্যুর পর হযরত আয়েশা (রাঃ) তার ভাগ্নে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) কে সেই জায়গাটি চিনিয়ে দেন। এটিই সেই স্তম্ভ Ñ উসতুওয়ানা উফুদের পশ্চিম পাশে রিয়াযুল জান্নাতে অবস্থিত।
৬) উসতুওয়ানা আবু লুবাবা - এটি সেই স্তম্ভ যেখানে আবু লুবাবা নামের এক সাহাবী একটি ভুল করে নিজকে শক্ত করে বেঁধে রাখে আল্লাহর নিকট থেকে ক্ষমা না পাওয়া পর্যন্ত। তখন রসুলুল্লাহ (সাঃ) ঐ সাহাবীর জন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করার পর ওহীর মাধ্যমে তাকে ক্ষমার ঘোষণা আসে। এটি শুনার পর ঐ সাহাবা নিজকে বন্দী দশা থেকে মুক্ত করেন।
৭) উসতুওয়ানা জিবরাইল (আঃ) - হযরত জিবরাইল (আঃ) যখন সাহাবী হযরত কাবলী (রাঃ) এর রূপ ধারণ করে ওহী নিয়ে আসতেন, তখন অধিকাংশ সময় তিনি এই স্তম্ভের পাশে বসতেন।
সাত - মসজিদে নববীর লাইব্রেরী - মসজিদে নববীতে দুটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরী আছে। এই দুটো লাইব্রেরীতে বিভিন্ন যুগের হাদীস বিষয়ক প্রাচীন পান্ডুলিপি, হাদীস ও সিরাতের বিশাল সংগ্রহশালা রয়েছে।
সবশেষে যা না বললেই নয় তা হলো, ইসলামী স্থাপত্য কীর্তির চরম উৎকর্ষতা ও চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য নিয়ে যে মসজিদে নববী (সাঃ) আজ বিশ্ব মুসলিমের তীর্থস্থান হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, সেটি এক সময় ছিল আড়ম্বরহীন অতি সাধারণ কাঁদামাটির তৈরী। এটিই ছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট রাষ্ট্রনায়ক আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর রাজ প্রাসাদ। যে প্রাসাদের সৌন্দর্য ছিল ঈমান, খোদা ভীতি ও ইনসাফ। মন্ত্রিপরিষদ এর সদস্য ছিলেন হযরত আবু বকর, হযরত ওমর, হযরত ওসমান ও হযরত আলী (রাঃ)। আর সেই রাষ্ট্র নায়কের সিপাহী শাস্ত্রী ছিলেন সাহাবায়ে কেরামগণ। এই প্রাসাদের নিঃশর্ত আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছিল রোম, পারস্য, মিশর, হাবসাসহ তৎকালীন দুনিয়ার বড় বড় সব সাম্রাজ্যের রাজাধিরাজগণ।
ছবিগুলো ইন্টারনেট থেকে নেয়া।
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:০৮
সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
২| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫২
খেয়া ঘাট বলেছেন: মুগ্ধ হয়ে পাঠ করলাম। বারবার পড়তে ইচ্ছে করছে। সুন্দর পোস্টটির জন্য আল্লাহ আপনার হায়াতে তায়্যিবা দান করুন।
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:০৯
সুফিয়া বলেছেন: আপনার দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করুন।
ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকবেন।
৩| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩০
মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: দারুণ পোস্ট আপু, আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন, আমিন।
৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫০
সুফিয়া বলেছেন: আজ আমার জন্মদিনে আপনি আমার জন্য সর্বোত্তম দোয়াটি করলেন। আল্লাহ যেন আপনাকেও এর প্রতিদান দান করেন।
ধন্যবাদ আপনাকে।
৪| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:১৫
বেলা শেষে বলেছেন: ....not all but most of your writing i had studied, they are very beautiful, "মুসলিম জাহানের সর্বোচ্চ আবেগ ও ভালবাসায় ধন্য মসজিদে নববী (সাঃ)" super good selection, editing is very suitable.
...highly salam & respect to you!
...up to next time...
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:১৮
সুফিয়া বলেছেন: I am feeling very proud to get so much appreciation from you about this article and also my writing. Hope to see you in my blog in future.
Thank you once again.
৫| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:২৫
বেলা শেষে বলেছেন: ....it will take to much time but i am studing your whole writing, i will write you again & again.....
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:২৯
সুফিয়া বলেছেন: O.K. Thank you.
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৮
মুহাম্মদ তৌহিদ বলেছেন: অসাধারণ বর্ণনা!