নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

সুফিয়া

পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।

সুফিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেশের এমন সংকটময় অগ্নিগর্ভ সময়ে উদ্বেগহীন, নির্মোহ ও প্রশান্তিময় সময় কাটানো যায়, সত্যিই আগে ভাবিনি।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৮



দেশের এমন সংকটময় অগ্নিগর্ভ সময়ে উদ্বেগহীন, নির্মোহ ও প্রশান্তিময় সময় কাটানো যায়, সত্যিই আগে ভাবিনি।





লেখাটা সম্পূর্ণরূপে আমার চলমান সময়ের কিছুটা ব্যক্তিগত উপলব্ধির পোস্টমর্টেম বলা যায়। গত ০২-১১-২০১৩ তারিখ সকাল থেকে আমার ব্যক্তিগত দিনলিপিতে হঠাৎ করে অপ্রত্যাশিতভাবে একটা পরিবর্তন ঘটে গেল। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত দেখলাম আমার মনের ভিতর কোন উদ্বেগ-আশংকা, রাগ-বিরাগ বা কোন প্রকার আক্রোশ নেই চরম সংকটময় চলমান সময়টাকে নিয়ে। এক অদ্ভূত প্রশান্তিময় আমেজে কাটছে আমার বাসার পারিবারিক সময়টা। মনে হচ্ছে দেশের কোথাও কোন মিটিং-মিছিল, রাজনৈতিক কাঁদা ছুঁড়াছুড়ি বা অস্থিরতা নেই। গাড়িতে অগ্নি-সংযোগ বা ভাঙচুর, হত্যা-রগ কাটা ইত্যাকার কোন ঘটনা কোথাও ঘটছে না। যেন বাংলাদেশের কোন এক অচেনা স্বর্গরাজ্যে বাস করছি আমি !



অথচ এই আমি প্রতিদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে প্রথমে যে কাজটি করি সেটা হলো সেটা হলো টিভি রিমোটের পাওয়ার বাটন চাপা। তারপর এক চ্যানেল থেকে আর এক চ্যানেলে ঘুরে ঘুরে দেখি দেশ নিয়ে, আমার মতো আমজনতাকে নিয়ে কি ভাবছেন, কি করছেন আমাদের রাজনৈতিক হর্তাকর্তারা বা কে কার বিরুদ্ধে কথার শেল কতটা সফলভাবে মারতে পারছেন ? আমি ব্যক্তিগতভাবে কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের অন্ধ সমর্থক নই। তাই রাজনৈতিক নেতা- কর্মীদের বাগাড়ম্বড়তা আমি খুব মনযোগ দিয়ে শুনি, বলা যায় উপভোগও করি অনেক সময়। তাদের কথার সারবস্তু বুঝার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে মনে হয় তাদের কথায় সারবস্তুর চেয়ে অসারতার পরিমাণ অনেক বেশী। এসব দেখে মেজাজ ঠিক রাখতে পারিনা অনেক সময়। তার উপর প্রতিটি চ্যানেলে রয়েছে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধি বিতরণের মাহফিল, যাকে বলা হয় টক শো। প্রতিটি চ্যানেলে এই টক শো এখন রীতিমতো ঝাঁকিয়ে বসেছে। তাদের কথার ফুলঝুরিতে কখনও মনের মধ্যে আশার আলো জেগে প্রশান্তিতে ভরে দেয় মন। কখনও বা শান্ত মেজাজ অশান্তির দাবানলে পড়ে সহ্যের সীমা অতিক্রম করে যায়।



এরকম যখন সময়ের সাথে আমাদের দুঃসহবাস, তখন এমন উদ্বেগহীন, প্রশান্তিময় সময় কাটানোটা কত বড় পাওয়া তা কি ভাবা যায় ? আমি কিন্তু এখন সেরকম একটা সময় অতিক্রম করছি। কিভাবে ? সেটা বলার জন্যই তো এত কথার অবতারণা।



সংলাপ নিয়ে দেশের প্রধান দুই দলের মধ্যকার দৌড়-ঝাঁপের তাল সামলাতে না পেরে হোক, কিংবা আমার মেজাজের আর কোন চরম পরীক্ষা না নেয়ার জন্যই হোক, গত ০২-১১-২০১৩ তারিখ সকাল বেলা আমার টিভি মহোদয় চলতে চলতে থেমে গেলেন। থেমে গেলেন তো গেলেনই ! অনেক চেষ্টা-তদবির করেও উনাকে আর সচল করা গেলনা, পাঠাতে হলো সার্ভিস সেন্টারে। জানা গেল ৪/৫ দিনের আগে পাওয়া যাবে না তাকে। আমি তো প্রথমে ভড়কে গেলাম এই ভেবে যে, টিভি ছাড়া এই কয়দিন সময় কাটবে কি করে ? তার উপর দেশের যখন এমন নাজুক পরিস্থিতি এবং আমি সব সময় খবরের পেছন ছুটি সর্বশেষ কি হয় জানার জন্য। তাছাড়া সিরিয়ালের গ্রন্থিছেঁড়া টান তো আছেই। এই অবস্থায় মেজাজ বিগড়ে যাবার কথা চরমভাবে। কিন্তু অফিসে যাবার ব্যস্ততার কারণে সেটা আর হয়ে উঠার সুযোগ পায়নি। সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় মনে হলো টিভি নেই সময় কাটবে কি করে ? কিন্তু বাসায় গিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম লেখালেখি ও বই পড়া নিয়ে। রাতে শোবার আগে একবার ল্যাপটপটা চালু করে বিভিন্ন পত্রিকার পাতায় চোখ বুলিয়ে নিলাম সর্বশেষ খবর জানার জন্য। তারপর সময়মতো ঘুমিয়ে পড়লাম।



সেই থেকে প্রতিদিন এভাবেই চলে যাচ্ছে আমার দিনগুলো। সময়মতো অফিসে যাচ্ছি এবং অফিস থেকে বাসায় ফিরছি। রাতে বাসার কাজের পাশাপাশি মোবাইলে রাখা আমার প্রিয় গুনগুলো শুনছি। এরমধ্যে ৪-১১-১৩ তারিখ থেকে ৬০ ঘন্টার হরতাল হয়ে গেল দেশে। অথচ আমার মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া নেই। কারণ, আমি হরতালপূর্ব কিংবা হরতাল চলাকালীন কোন সংঘর্ষ বা গাড়ি পোড়ানোর কোন খবর টিভিতে দেখতে পারছি না।



এই অবস্থা চলছে এখনও এবং চলবে আরও ২/৩ দিন সার্ভিস সেন্টারের ভাষ্য অনুযায়ী। কারণ, আজ তারা সর্বশেষ খবর জানিয়েছেন যে আমার টিভিটা আগামী ১০ তারিখে দেয়া সম্ভব হবে। টিভিটা নষ্ট হবার দ্বিতীয় দিন থেকে আমার মনে হচ্ছিল এর চেয়ে শান্তিময় সময় আমি আগে কখনও কাটিয়েছি বলে মনে পড়েনা। এখন মনে হচ্ছে আরও প্রলম্বিত হলো আমার এই শান্তিময় সময়টা। কেউ বিশ্বাস করবেন কি-না জানিনা, আমি সত্যিই মন থেকে বলছি যে সিরিয়ালগুলো মিস হচ্ছে বলে আমার একটুও আফসোস হচ্ছেনা। বরং ভালো লাগছে এই ভেবে যে, প্রতি সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে দেশের রাজনৈতিক রনরাজ্য আর হতাশার যে চিত্র দেখতে হতো তা এখন দেখতে হচ্ছে না। বরং বাসায় ফিরলে মনে হয় যেন বাংলাদেশের সর্বত্র সুনসান শান্ত একটা পরিবেশ বিরাজ করছে।



অথচ ঘটছে ঠিক উল্টোটা। আশংকায়-উদ্বেগে সাধারণ মানুষের রাতের ঘুম পর্যন্ত নির্বাসনে যেতে বসেছে। অথচ আমি অফিস থেকে বাসায় ফিরে আমি চলে যাই এসব থেকে যোজন যোজন দূরত্বে। তার কারণ একটাই। আমার টিভিটা নষ্ট। কাজেই বলতেই হয় কি অদ্ভুত ক্ষমতা এই যন্ত্রটার !

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.