![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।
আমি এখন বরইচোর ! কি মধুর ভালোলাগার ছোঁয়ায় ভরপুর একটি সম্ভাষণ।
আমাকে বরইচোর বলা হয়েছে। আমি এটাকে মধুর সম্ভাষণ হিসেবে গ্রহণ করেছি এবং সেই থেকে স্মৃতির জাবরকাটা যেন আর কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না।
গত ১৯-১১-২০১৩ তারিখের ঘটনা এটি। কম করে হলেও বার বছর পর গিয়েছি আমার শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত গ্রামে। বার বছর পর গিয়েছি কারণ এটা আমার নিজের গ্রাম নয় । আমার নিজের গ্রামে আমি প্রতি ২/৩ মাস অন্তর অন্তর না যেতে পারলে যেন হাঁফিয়ে উঠি। আর এবার যেখানে গেলাম সেটা ঈশ্বরগঞ্জে, আমার সবচেয়ে বড় বোনের শ্বশুরবাড়ি। আমার সেই বোনটি আজ আর জীবিত নেই। আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায় আমার সেই বোনটি। তার একটি ছেলে আছে সেখানে, যে এখন দুই সন্তানের পিতা।
যাই হোক, আমার সেই বোনটি আমাকে ভালোবাসত পাগলের মতো। যতবার আমাদের বাড়িতে নায়র আসতো ততবার যাওয়ার সময় আমাকে সাথে নিয়ে যেত। আর না নিয়ে গেলে আপা চলে যাবার পর আমি কয়েকদিন কেঁদেকেটে বুক ভাসাতাম। একদম ছোটকাল থেকে গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে ক্লাস টু কিংবা থ্রিতে পড়া পর্যন্ত এভাবেই বারবার আমি চলে যেতাম আপার সাথে ওর শ্বশুর বাড়িতে। আর একবার গেলে ১/২ মাস না থেকে আসার নামটিও করতাম না। আপাও আসতে দিতে চাইত না।
আগেই বলেছি আপা আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসত। তাই আমার সমস্ত সম্ভব-অসম্ভব আবদার হাসিমুখে মেনে নিত। আর পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে যত ধরনের দুষ্টুমি আছে কোনটাই বাদ দিতাম না। আমার এসব কাজে সার্বক্ষণিক সংগী ছিল আপার দেবরের মেয়ে, নাম তার ফাতেমা। আমাদের নানা দস্যিপনার মধ্যে একটি ছিল জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে মানুষের গাছের ফল-পাকর চুরি করা। কত যে দাবরানি খেয়েছি এজন্যে ! আমার দুলাভাই এর কাছে নালিশের পাহাড় জমত। আর এগুলো সব সামলে নিত আপা।
গত ১৯-১১-২০১৩ তারিখে আমি ও আমার বোন বেড়াতে যাই ঈশ্বরগঞ্জে আমার সেই আপার বাড়িতে। আমার ভাগ্নে আমার জন্যে আয়োজনও করেছিল বিস্তর। মোটামুটি আগের দিন থেকেই আশেপাশের কয়েক বাড়িতে খবর হয়ে গিয়েছিল যে নুরুল হকের(আমার ভাগ্নের নাম) খালা আসবে আগামীকাল। তারপর দেখলাম আমি গাড়ি নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে সমস্ত পাড়ায় খবর ছড়িয়ে পড়ল যে নুরুল হকের ছোটখালা এসেছে। অথচ আমার সাথে আমার আর একটি বড় বোন আছে। কিন্তু তার নামটি ওভাবে কেউ বলছে না। কারণ একটাই। আমার সেই দস্যিবৃত্তি। এক বৃদ্ধলোক নুরুল হকের বাড়ির সামনে দিয়ে যাবার সময় গাড়ি দেখে জানতে চাইল কে এসেছে ? নুরুল হক জানাল, আমার খালাম্মা এসেছে। অমনি তিনি বলে উঠলেন, আমাদের বাড়িতে বরই চুরি করত যে তোর সেই খালাম্মা এসেছে। নুরুল হক হ্যাঁ বলতেই উনি আমার সাথে দেখা করতে এলেন।
তারপর নুরুল হকের মুখে আমার সম্পর্কে উনার সেই মধুর বাক্যটি শুনে সবার সেই কি হাসাহাসি ! আর আমি টের পেলাম মুহূর্তেই আমার স্মৃতির পাখি উড়াল দিয়ে চলে গেল বহু পেছনে ফেলে আসা দিনগুলোতে। আহা ! কি মধুর ছিল সেইসব দিনগুলো। উসকোখুসকো মাথার চুল, ফ্রক আর হাঁটু অবধি হাফপ্যান্ট পড়া যে মেয়েটি এ জঙ্গল-ও জঙ্গল করে বেড়াত কাঠফাটা রোদ মাথায় নিয়ে, ফড়িং এর পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে পায়ের নখ উল্টিয়ে রক্ত জড়াত সেই মেয়েটি এই আমি ভাবতে গেলে বারবার কি যেন এক ভালোলাগার উন্মাদনায় শিহরিত হই। বারবার শুনতে ইচ্ছে করে সেই বরই চোর সম্বোধনটি।
আহা ! আবার যদি একটিবারের জন্য বরইচোর হতে পারতাম !
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১৪
সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ বানানটি ঠিক করে দেয়ার জন্য।
২| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৭
শুঁটকি মাছ বলেছেন: সুন্দর স্মৃতিচারণা আপু!!!!!শৈশবটা যদি আর একটাবার ফিরে পেতাম!
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১৫
সুফিয়া বলেছেন: আপনার মতো আফসোস আমারও।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪১
মদন বলেছেন: বরই