![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।
সুখমন
(গল্পটি সম্পূর্ণরূপে ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা।)
বাজান তোমারে ডাকতাছে।
কেলা ডাহে ?
জেডায়।
ডাহে কেরে ?
আমি কইতাম পারতাম না।
তুই গিয়া ক আমি অহন যাইতারতাম না, কাম আছে।
আমি পারতাম না।
পারতিনা কেরে ?
আমি জেডারে ডরাই।
দু’হাতে মাথা চুলকাতে চুলকাতে উত্তর দেয় মবিন। জয়নাল হাতের কাজ রেখে উঠে দাঁড়িয়ে ছেলের কাছে এসে বলে
যেডা কইছি হেইডা করগা।
আমি পারতাম না।
আবারও একই কথা বলে মবিন। ছেলের কথায় এবার রাগ চড়ে যায় জয়নালের মাথায়। সে জোড়ে একটা চড় বসিয়ে দেয় মবিনের গালে। তারপর বলে
বেশী তেড়ামী করবিনা কইলাম মবিন। তাইলে কিন্তুক গাট্টা খাইবি।
মবিন তেমনি জবাব দেয়
তোমার হগল বেডাগিরী ত আমার লগে। জেডার কাছে গিয়া ত খালি কু কু কর। জেডা তোমারে কামে-অকামে বকাবাদ্য করে তহন ত কিচ্চু কইতে পারনা।
হেইডা আমি বুঝবাম। তুই অহন মিয়া ভাইরে গিয়া ক আমি আতের কামডা সাইরা একটু পরে আইতাছি।
এরপর আর কোন কথা বলেনা মবিন। দুপদাপ পা ফেলে সেখান থেকে চলে যায়। জয়নাল আবার ক্ষেতে গিয়ে চেনি হাতে বসে পড়ে।
আইজ যেমনেই অউক বাছ বাছার কামডা শেষ করন লাগব। এইনি মাত্র জাগা। হেইডাও যদি ঠিকমত চাষবাস করতে না পারি তাইলে খামু কি কইরা। কামে আত দিলেই খালি বাগড়া আর বাগড়া।
সারি সারি মরিচ গাছের ফাঁকে চেনি চালাতে চালাতে নিজের মনে গজরাতে থাকে জয়নাল। এমন সময় মবিন আবার সেখানে আসে। বলে
বাজান, জেডায় তোমারে অহনই যাইতে কইছে।
ধ্যাত ছাতা ! বলে উঠে দাঁড়ায় জয়নাল। হাতের চেনিটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে হন হন করে হাঁটতে থাকে বাড়ির দিকে। মবিন ওর বাবার গমন পথের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তারপর ক্ষেতে গিয়ে জয়নালের ছুঁড়ে ফেলা চেনিটা খুঁজে বের করে অপক্ক হাতে নিড়ানি দিতে শুরু করে।
জয়নাল দ্রুত বাড়ির ভিতর এসে উঠোন পেরিয়ে বেলালের ঘরের বারান্দায় গিয়ে বলে
মিয়া ভাই, কি কইবা কও। আমার আতে মেলা কাম। তোমার পেঁচাল হুনার অত সময় নাই।
বেলাল একটু অবাক হয় জয়নালকে এভাবে কথা বলতে দেখে। মনে মনে বলে, কি অইল আজ ছেড়াডার ? অমন কইরা কতা কইতাছে কেরে ?
এই ফাঁকে জয়নাল আবার তাড়া দেয়।
মিয়া ভাই, কওনা কি কইবা ? আমি মরিচ ক্ষেতে চেনি ফালাইয়া আইছি। আইজ মরিচ ক্ষেতের বাছনডা শেষ করতে না পারলে অইব না। মরিচ ক্ষেতডা আমার নষ্ট অইয়া যাইতাছে।
হেইডা আমিও বুঝিরে জয়নাল। তর এক নিমিষ জিরানের যোগাড় নাই। আয়, আমার বারাত একটু ব। পরে কইতাছি। তুই উশারায় খাড়াইয়া থাকলে কতা কই কেমনে ?
তোমার কি অমন লুকাইনা কতা যে বারাত আইয়া হুনন লাগব ?
বলতে বলতে বারান্দা ছেড়ে ঘরে গিয়ে বেলালের পাশে চৌকির উপর পা ঝুলিয়ে বসে জয়নাল। বেলাল শুয়া থেকে কনুই এ ভর করে উঠে বসে কুখ কুখ করে দুই/তিনবার কাশে। তারপর ফিসফিস করে বলে,
তর ভাবি কইতাছিল -----।
বেলাল এটুকু বলতেই জয়নাল প্রায় গর্জে উঠে। কারণ, বেলালের বউ রহিমার প্রসংগটি তার কাছে বড়ই বিরক্তিকর। এবাড়ি-ওবাড়ির কথা কুটচাল না করলে রহিমার যেন পেটের ভাত হজম হয়না। আর বেলালও হয়েছে তেমনি। সারাক্ষণ বিছানায় পড়ে থেকে থেকে কেমন যেন বোধ-বুদ্ধি সব হারিয়ে ফেলেছে। বউ এর কথা নিয়ে জাবর কাটে সারাক্ষণ। জয়নালের এটা একদম পছন্দ নয়। তাই বেলালকে কথা শেষ করতে না দিয়ে সে বলে
হে আবার কি কয় ? হের ত কাম একটাই। এক ঘরের কতা আর এক ঘরে লাগাইয়া ফিরা।
বেলাল গলার স্বরটা একটু নীচু করে বলে
না রে ভাই। ঐরহম কিছু না। একটা কামের কতা কইছে তর ভাবি। হের লাইগাই ত তর লগে পরামর্শ করতাম চাই।
আচ্ছা, কইয়া ফালাও কি কামের কতা ভাবি কইছে।
তর ভাবি কইছিল দক্ষিণ পাড়ার বড় বাড়ির ছেড়া রাজুর লগে আমার হাসির খুব ভাব অইছে। আমি ত অচল মানুষ, বিছানায় পইরা আছি। আমার সংসারের সব ভার ত তুই-ই মাথায় কইরা নিছস। হের লাইগাই কইছিলাম দেখনা ঐ ছেড়াডার লগে আমার হাসির বিয়াডা দেওন যায় নাহি।
মিয়াভাই, বিছানায় হুইতা থাকতে থাকতে তোমার মাথাডা দেহি এক্কেবারে গেছেগা। না অইলে তোমার মনে অয় কেমনে যে বড় বাড়ির ছেড়া আমরার বাড়ির ছেড়িরে বিয়া করব ?
অমন কইরা কইতাছস কেরে ভাই ? আমি অইলাম ছেড়ির বাপ। আমার ছেড়ির বালা ঘরে বিয়া অইব এইডা ভাবলে দোষডা কি ? হগল বাপেরই ত অমন আশা থাহে। আমার হাসির মতন এমন রূপে-গুণে মাইয়া আশেপাশের গেরামে কয়ডা আছে তুই ক ত ?
মিয়াভাই, হেই হিসাব কইরা লাভ নাই। গরীবের ঘরে রূপের জৌলসের কোন দাম নাই। এই সমাজে রূপে-গুণের চাইতে জাত আর ট্যাহা-পইসার দাম অনেক বেশী। আর আমরা অইলাম হেদের বাড়িত কামলা কাইটা খাওয়ুইনা মানুষ। আমরার জাগা হেরার পাওয়ের তলে। হের চাইতে আমি কি কই হুন। আমার হউর বাড়িত তে যে করমিডা আইছে হেইডা দেহ।
কিন্তুক ঐহানেও ত এই সংসারের মতনই অবস্থা। খাইয়া না খাইয়া আধাপেট খাইয়া বাইচা থাকতে অইব ছেড়িডারে। বড় লোভ অয়রে ভাই। ছেড়িডা এই পোড়া সংসার তে বাইর অইয়া একটু সুহের মুখ দেহুক। আইজ পর্যন্ত ত একটা বেলাও ওরে পেট ভইরা খাওন দিতাম পারি নাই।
এর উত্তরে জয়নাল কিছু বলতে যাচ্ছিল। এমন সময় বেলালের বউ রহিমার গলা শুনা যায়।
হুনছুইন।
বেলাল সাথে সাথে বিরক্ত হয়ে জবাব দেয়, হুনছি। কি কইবি ক। দুই ভাইয়ে নিরিবিলিতে দুইডা কতা কইতাছি হেইডা তর সহ্য অইতাছে না।
স্বামীর এ কথার সরাসরি কোন জবাব না দিয়ে রহিমা তার আগের কথার সূত্র ধরে বলে
আইজ কিন্তুক চুলা জ্বলবনা এইডা কইয়া রাখলাম।
না জ্বললে না জ্বলব। না খাইয়া থাহুম।
গলার স্বর চড়া করে জবাব দেয় বেলাল। তারপর ছোটভাইকে উদ্দেশ্য করে তেমনি চড়া গলায় বলে
দেখলি ? দেখলি তর ভাবীর কামডা ? খালি হগল সময় কানের কাছে নাই আর নাই প্যাঁচাল। হের ছেড়ির বালার লাইগা দুই ভাইয়ে নিরিবিলিতে একটু পরামর্শ করতাছি এইডা হের সহ্য অইতাছে না। ফের ফেরানি শুরু কইরা দিছে।
করতাছে কি আর সাধে ? তুমিই ত খাওনের লাইগা বেহের আগে তুফান চালাইবা। যাওক গা। আমি অহন ক্ষেতে যাই। তোমরার ছোড বউরে কইয়া যাইতাছি ঘরে যা আছে হেই দিয়া এই বেলাডা যেন ভাগাভাগি কইরা চালাইয়া নেয়। পরে দেহুমনে কি করন যায়।
কথা শেষ করে আর সেখানে দেরী করেনা জয়নাল। দ্রুত পা চালায় ক্ষেতের দিকে। ওর গমন পথের দিকে তাকিয়ে বেলাল ভাবে, এহন ত তাও আধপেটা খাওন প্রত্যেক বেলা জুটতাছে। জয়নাল যদি হাল না ধরত তাইলে ত তাও জুটতনা। কি রোগে যে ধরল ! আমার কামলা খাডা শরীলডারে একেবারে বিছানায় ফালাইয়া দিল আজীবনের লাইগা। অহন আমার বউ-পোলাপানের খাওনের ভারডাও গিয়া পড়ছে জয়নালের ঘাড়ে। দুনিয়াতে কয়ডা ভাই তার ভাইয়ের সংসারের লাইগা অত করে ?
বেলালের ভাবনার মাঝখানে হাসি এসে সেখানে উপস্থিত হয়। একহাতে গ্লাসভর্তি পানি আর এক হাতে ঔষধ। চৌকির উপর বেলালের পাশে বসতে বসতে হাসি বলে
বাজান, আইজ বেইন্যা বেলার অষুদ খাও নাই তুমি। এই লও।
বেলাল হাত বাড়িয়ে মেয়ের হাত থেকে ঔষুধ নিতে নিতে বলে, অষুদ খাইয়া আর কি অইব রে মা ? শরীলডা কি আর উইঠা খাড়াইব ?
হেইডা তোমার চিন্তা করন লাগবনা। অহন তাড়াতাড়ি খাইয়া লও। আমার বইয়া থাহনের সময় নাই।
সময় নাই কেরে রে মা ? অত তাড়াতাড়ি করতাছস কেরে ? এই অসুইখা বাপডার কাছে একটু না অয় বইয়া থাকলি।
বেলালের কথায় হাসি সাথে সাথে জবাব দেয়
বাজান, বুঝতাছ না কেন ? আমার আতে অহন মেলা কাম। বইয়া থাহনের সময় নাই।
মেয়ের কথায় বড় করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বেলাল বলে
হ, হেইডাও ত ঠিক। আমি অইলাম তর অকর্মা বাপ। বিয়ার লায়েক মাইয়ারে বিয়া না দিয়া মাইনষের বাড়িত কামে পাডাই।
বাবার কথায় হাসির বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে। সে সাথে সাথে বলে
বাজান, তোমারে না কতদিন কইছি এইসব কথা ভাইবা মন খারাপ করবানা। আমি মেয়ে অইছি ত কি অইছে ? আল্লায় আমারেও চাইরডা হাত-পাও দিছে, চোখ-কান দিছে। তাইলে আমি তোমারে কাম কইরা খাওয়াইলে দোষটা কোনহানে ?
না রে মা, দোষ আমরার কেউর না। দোষ আমার কপালের।
এ কথায় দু’জনই কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর বেলাল জিজ্ঞেস করে
আউজগা কোন বাড়িত যাইতাছস কামে ?
হাসি উত্তর দেয়, উত্তর বাড়ির বড় জেডি কয়ডা খড়ি ছিইরা দিতে কইছে। দেহি গিয়া। যদি কয়ডা চাইল-ডাইল দেয় তাইলে এই বেলা চইলা যাইব। চাচা আর কত করব আমরার লাইগা কও ত বাজান ? হেইলারও ত একটা সংসার আছে।
হাসির এই প্রশ্নের উত্তর বেলালের কাছে নেই। সে চুপ করে থাকে। উঠে চলে যায় হাসি। বেলাল সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলে
বিয়ার লায়েক ছেড়ি ! আতে মেনদি-চুড়ি পইরা বিয়ার স্বপন দেহনের কতা। হেইডা না কইরা হেরে করতে অইতাছে খড়ি ছিরনের কাম। আর আমি ঘরে বইয়া থাইকা এই কামাই খাইতাছি। হায়রে আমার কপাল ! এমন অধম বাপেরে দুনিয়াতে বাঁচাইয়া রাহনের কি কাম তুমিই জানো আল্লা।
নিজের অসহায়ত্ব নিয়ে মনের ভিতর হতাশার ঘূর্ণিপাক বেলালের নতুন নয়। দিনের পর দিন এই হতাশা বেলালকে কুরে কুরে খাচ্ছে। তার সাথে আজকাল যোগ হয়েছে হাসির বিয়ের চিন্তা। হাসিকে চোখের সামনে দেখলেই যেন এই চিন্তাটা বেলালের মাথার ভিতর দাবানলের মতো উত্তাপ ছড়াতে থাকে। কিন্তু আজ একটু আগে হাসি তার সামনে থেকে উঠে যাবার পর মনের ভিতর উঁকি মারে আর একটি চিন্তা। সাথে সাথে বেলালের মনের ভিতরের পূঞ্জীভূত হতাশা রূপ নেয় একগুচ্ছ সুখের আমেজে। বেলাল ভাবে, রাজুর লগে বিয়াডা অইয়া গেলেই হাসির সব কষ্ট দূর অইয়া যাইব। আমার হাসির ভাত-কাপড়ের আর কোন অভাব অইবনা। সুখে থাকব আমার হাসি। ইয়া আল্লা, আমার কাছ তে যা নেওনের তুমি কাইরা নিছ। এর বিনিময়ে আমার হাসির দিহে একটু মুখ তুইলা চাও আল্লা।
অদৃশ্য শক্তির প্রতি মেয়ের ভাগ্য পরিবর্তনের আরজি পেশ করার সাথে সাথে মনের ভিতর একটু প্রশান্তি অনুভব করে বেলাল। কিন্তু বেলালের এই সুখের আমেজ বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়না। জয়নালের ছেলে মবিন দৌড়ে এসে খবর দেয়
জেডা, দক্ষিণ পাড়ার বড় মিয়া আমরার গোয়াইদ্বরে খাড়াইয়া রইছে।
কছ কি ? যা যা, তর বাপেরে গিয়া অহনই ডাইকা আন। আর হুন, যাওনের আগে একটা বওন দিয়া যা বড় মিয়ারে।
মবিন দৌড়ে বেরিয়ে যায় তার বাবাকে ডাকতে। বেলাল তার চলৎশক্তিহীন শরীরটা নিয়ে কি করবে ভেবে পায়না। তার শরীর-মনজুড়ে সুখের বান ডাকতে শুরু করেছে। কিন্তু ৬ হাত বাই ৮ হাত চৌকির ফ্রেমে বন্দী থেকে এই সুখকে কিভাবে উপভোগ করবে ভেবে পায়না বেলাল। মা-মেয়ে কেউই বাড়ি নেই যে তাদের সাথে দুটো কথা বলবে। তাই বিধাতার উদ্দেশ্যে তার মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বেলাল।
ইয়া আল্লা, তুমি আছ। তুমি আছ। এই অথর্ব লোকটার ডাক তুমি হুনছ। না অইলে বড় মিয়া আমার বাড়িত আইব কেন ?
মনে মনে আরও কিছু হয়তো বলত বেলাল। কিন্তু তার চিন্তার স্রোত সেখানেই থেমে যায় বাইরে থেকে ভেসে আসা প্রচন্ড হুংকারের শব্দে। বড় মিয়ার গলা চিনতে ভুল হয়না বেলালের।
তরার অত বাইর বাড়ছে। আমার রাজুর লগে তর ভাইস্তি ভাব লাগাইছে। তরার পেডের ভিতর আমার বাড়ির ভাত কথা কয়। আর তরার ছেড়ি কি-না স্বপন দেহে আমার বাড়ির বউ অওনের ?
এই ফাঁকে জয়নালের মিনমিনে গলা একটু শুনা গেলেও মুহূর্তেই তা চাপা পড়ে যায় বড় মিয়ার চড়া গলার নীচে। বড় মিয়া আবার বলে
হুন জয়নাল। তরে কইয়া যাইতাছি। তর ভাইস্তিরে সামলা। নাইলে কিন্তুক খুব খারাপ অইব। তরা অইছস কামলার কামলা। তর চৌদ্দ পুরুষ আমার বাড়িত কামলা কাইটা খাইছে। আর তরা অহন আমার ইজ্জতের জাগায় হাত দিছস। তর ভাইরে কইয়া দিছ জয়নাল। হাসি যদি এরপর আমার রাজুর লগে ভাব রাহনের চেষ্টা করে তাইলে কিন্তু ফল খুব খারাপ অইব। আমি এই গেরাম তে তরার বাস উডাইয়া দিবাম কইলাম।
আর দাঁড়ায়না বড় মিয়া সেখানে। যে পথে এসেছিল সে পথ ধরে হন হন করে হেঁটে চলে যায়। জযনাল বড় মিয়ার মাড়িয়ে যাওয়া পথের দিকে কিছুক্ষণ নির্বাক দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকে। তারপর রাগে কাঁপতে কাঁপতে গিয়ে ঢুকে বেলালের ঘরে। এতক্ষণের অবরুদ্ধ ক্রোধ এবার প্রচন্ড এক ধাক্কায় বেরিয়ে আসে। গজরাতে গজরাতে জয়নাল বলে
কইছিলাম না ? বামন অইয়া চান্দে আত দিওনা। আমরা অইলাম কামলার কামলা। অত বড় স্বপন দেহনের আমরার কাম কি ?
বলতে বলতে হু হু করে কেঁদে ফেলে জয়নাল। ছোট ভাইয়ের কান্না দেখে বেলালের বুকের ভিতরটাও হু হু করে উঠে। বলে, আয় ভাই। আমার কাছে আইয়া একটু ব।
জয়নাল কোন কথা না বলে বেলালের পাশে চৌকির উপর এসে বসে পড়ে। বেলাল ওর মাথায় স্নেহের হাত বুলাতে বুলাতে বলে
যে অপমানডা আমার পাওনের কতা আছিল হেইডা তরে ভোগ করতে অইতাছে। তুই ঠিকই কইছিলি রে জয়নাল। আমরার মতন হতভাগা মানুষের সুখের স্বপন দেহা পাপ। আমি হাসিরে বুঝাইয়া কইবাম। তর হউর বাড়ির দেশ থাইকা যে করমিডা আইছে হেইডা দেখ। আমি ঐহানেই আমার হাসিরে বিয়া দিবাম। ঐহানে ভাত-কাপড়ের সুখ না পাওক, নিজের বাপ-চাচার মান রাইখা মাথা উঁচু কইরা বাঁচব আমার হাসি। এইডাই আমার সুখ। অহন আমি বুঝতাছি খাওন-পরনের সুখের থাইকা মানের সুখ অনেক বড়।
০৯-০৩-১৪
১৩ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:০৫
সুফিয়া বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
২| ১৩ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:১৯
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: আপনি নিয়মিতই ভাল পোস্ট দিয়ে যাচ্ছেন।
আপনার প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ।
ভাল থাকবেন সবসময় আনন্দময় ব্লগিং এর জন্য।
শূভকামনা রইল।
১৩ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:২০
সুফিয়া বলেছেন: আমাকে এভাবে উৎসাহিত করার জন্য আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
৩| ১৩ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৬
এম মশিউর বলেছেন: অহন আমি বুঝতাছি খাওন-পরনের সুখের থাইকা মানের সুখ অনেক বড়।
পড়লাম। বেশ ভালো লাগলো।
এক দরিদ্র পরিবারের প্রতিচ্ছবি।
১৪ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৫৯
সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ ধৈর্য ধরে গল্পটি পড়ার জন্য।
৪| ১৩ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৪
বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: অভাবের সংসারের এক টুকরো ছবি গল্পে চিত্রায়িত হয়েছে আঞ্চলিক ভাষার মাধুর্যে। এর মাঝেই ফুটে উঠেছে ধনী গরীবের বৈষম্য আর তাদের মন মানসিকতা। আজকাল মানুষ মানুষকে বিচার করে টাকা দিয়ে, ধর্ম, গোত্র আর বর্ণ দিয়ে। মনুষ্যত্বের কোন স্থান নাই, মানবতার কোন ঠাই নাই। তাই তো আপনি যথার্থই বলেছেন, " গরীবের ঘরে রূপের জৌলসের কোন দাম নাই। এই সমাজে রূপে-গুণের চাইতে জাত আর ট্যাহা-পইসার দাম অনেক বেশী।'
টাকার চেয়ে সম্মান অনেক বড় এটা বেলালের মতো গরীব মানুষগুলো বুঝলেও বড় মিয়াঁর মতো পয়সাওয়ালা মানুষগুলো সেটা বুঝে না, বুঝতে চায় না। মনের সুখই আসল সুখ।
এখন কেউ কারো জন্য কিছু করতে চায় না। অভাব দেখলে নাকি ভালোবাসাই জানালা দিয়ে পালায়। অথচ জয়নাল তার অসুস্থ ভাইকে ছুঁড়ে ফেলে না দিয়ে যৌথ পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়েই দিনাতিপাত করছে।
ভালোবাসা কখনো কোন স্থান কাল পাত্র দেখে হয় না। তাই হয়তো বড় মিয়াঁর ছেলে রাজুর সাথে হাসির একটা সম্পর্ক হয়েছে। কিন্তু আমাদের নিষ্ঠুর সমাজ সেটা মেনে নিতে পারে না শ্রেণী বৈষম্যের কারণে।
অনেক ভালো লাগলো গল্প এবং গল্পের বার্তা। আপনি নামকরণের পর ব্রাকেটে লিখে দিয়েছেন, 'গল্পটি সম্পূর্ণরূপে ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা'। এটা না লিখলেই ভালো হত। কারণ পুরো লেখাটিই আঞ্চলিক ভাষায় লেখা নয়। মাঝে মাঝে লেখকের বয়ানগুলো প্রমিত রীতিতে লেখা। অনেক ধন্যবাদ সুফিয়া।
১৪ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৩৪
সুফিয়া বলেছেন: আমি দারুণভাবে উৎফুল্ল আমার গল্পটা নিয়ে আপনার প্রচন্ড আগ্রহ দেখে। যেভাবে আমার গল্পটার ব্যবচ্ছেদ করেছেন আপনি তাতে এটা অত্যন্ত পরিস্কার যে সময় দিয়ে অত্যন্ত মনযোগ সহকারে আপনি গল্পটা পড়েছেন। সত্যি আমি কৃতার্থ আপনার এই প্রচেষ্টায়। একজন লেখকের জন্য এই ফিডব্যাকটা খুব প্রয়োজন। আপনাকে সেজন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আপনি বলেছেন ব্রাকেটে ঐ অংশটুকু না লিখলেই পারতাম। হয়তো পারতাম। কিন্তু আমার মনে হয়েছে যে গল্পের যে মূল থিমটা সেটা উঠে এসেছে গল্পের পাত্র-পাত্রীর জবানীতে। লেখকের বয়ানে নয়। লেখকের বয়ানটুকু এখানে পাত্র-পাত্রীর মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে।
৫| ১৩ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৩
মোহিত সোহাগ বলেছেন: ভালো হয়েছে গল্পটা। একেবারে শেষ দুইটা বাক্য না থাকলে আরো ভালো হয়। ঐটুকু পাঠকের জন্য রেখে দিন।
১৪ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৩৮
সুফিয়া বলেছেন: আপনি আপনার উপলব্ধি থেকে কথাটা বলেছেন। ঠিকই আছে। ঐ দুটো লাইন না থাকলে পাঠকের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়ার একটা জায়গা থাকত। কিন্তু সাধারণ মানুষ বেলালের উপলব্ধিটা প্রকাশ পেতনা পাঠকের কাছে। আপনি আমাকে এ নিয়ে ভাববার খোড়াক যুগিয়েছেন। আমি এখন ভাবছি কোনটা বেশী গ্রহণযোগ্য হতো। পাঠকের জন্য রেখে দিলে না-কি আমি যেভাবে শেষ করেছি-সেটা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
৬| ১৩ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৩৫
শুঁটকি মাছ বলেছেন: গল্পটা ভাল হইছে। তার উপর ময়মনসিং-এর ভাষাটা আমার বেশ মিষ্টি লাগে।
১৪ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৪২
সুফিয়া বলেছেন: আপনার বাড়ি ময়মনসিংহ কি-না জানিনা। ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষা কিন্তু আমারও বেশ ভালো লাগে। হতে পারে সেটা আমার আঞ্চলিক ভাষা বলে।
আমার শৈশবকালটা কেটেছে ময়মনসিংহের এক অজপাড়াগাঁয়ে। আজও সেখানে আমার নিয়মিত যাতায়াত আছে। আমার গ্রামের মানুষগুলোর মুখের ভাষা আজও আমাকে ভীষণভাবে তাড়িত করে। স্মৃতিকাতর করে তোলে আমাকে প্রচন্ডভাবে।
৭| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৩৬
আকাশদেখি বলেছেন: আন্নের বাড়ি কি মইসিং?
ভালো লাগলো গল্পটা
১৪ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৪৪
সুফিয়া বলেছেন: জ্বি, আমার বাড়ি মমিনসিং। আপনি বোধহয় আমার দেশী। ধন্যবাদ আমার গল্পটা পড়ার জন্য।
৮| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১:২২
উদাস কিশোর বলেছেন: আঞ্চলিক ভাষায় গল্পটি চমৎকার হয়েছে।
"তর হউর বাড়ির দেশ. . . . . "
"হউর" এর অর্থটা বুঝিনি ।
১৪ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৪৯
সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। বিদ্রোহ ভাই ত অর্থটা বলে দিয়েছেন।
৯| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১:২৬
বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: @ উদাস কিশোর
'হউর' মানে শ্বশুর
১৪ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৫০
সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ বিদ্রোহী ভাই। ভালো থাকবেন।
১০| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১:৩৫
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: প্রথমবারের মত আপনার বাড়ীতে এসে জীবনের বাস্তবতার অভিজ্ঞতাটা আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল সেই ৮০র দশকে। বড়ই তিক্ত,করুন আর বেদনার। একজনতো এর সাথে শুধু ভালবাসাটুকু নিয়েই তারার মাঝে হাড়িয়ে গেল।রেখে গেলো শুধুই স্মৃতি। ধন্যবাদ মনছোয়া গল্পের জন্য।
১৪ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৫২
সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। আমার বাড়িতে প্রথমবার এসে আপনার অভিজ্ঞতা খারাপ হয়নি জেনে আমারও খুব ভালো লাগছে। ভালো থাকবেন।
১১| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১:৪৮
প্রফেসরস্ বলেছেন: Yes, i like it very much.
১৪ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৫৩
সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার পছন্দের মাত্রার কাছাকাছি পৌঁছুতে পেরেছি সেজন্যে আমারও ভালো লাগছে।
১২| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১:৫৯
বেলা শেষে বলেছেন: Very good writing, good description, heart touchable....
১৪ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৫৬
সুফিয়া বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি বরাবরই আমার লেখার প্রশংসা করে থাকেন।
১৩| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:৩৭
ভিটামিন সি বলেছেন: আফা, এক্কেরে ফাডায়ালচুইন। খাডি মমিশিংগা ভাষা তো ভুইল্লা গেছি, ছয় বছর ধইরা বাইরে থাকতে থাকতে। আমহের লেহা পইড়া আবার আমি মায়ের ভাষা মনে পইরা গেল।
১৪ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৫
সুফিয়া বলেছেন: নিশ্চয়ই আপনার ভালো লাগছে মায়ের ভাষায় এই লেখাটি দেখে। আমারও খুব দুর্বলতা রয়েছে আমার গ্রামীণ জীবনের এই ভাষার প্রতি। এই ভাষার সাথে যেন আমার শৈশবের স্মৃতিগুলো জেগে আছে। তাই চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতে আমার গ্রামীণ ভাষা নিয়ে আরও কিছু লেখা পাঠকদেরকে উপহার দেয়ার ইচ্ছে আছে। বাকীটা উপরওয়ালার মর্জি।
ধন্যবাদ আপনাকে।
১৪| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৫
মোঃ ইসহাক খান বলেছেন: সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। সাধুবাদ।
১৪ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৪
সুফিয়া বলেছেন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আমার ব্লগে সময় দেয়ার জন্য।
১৫| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৩৫
উড়োজাহাজ বলেছেন: এখনো তারা বেচে আছে গ্রামীণ জীবনের পরতে পরতে। তারাই কিন্তু সংখ্যাগুরু। আর আমরা হচ্ছি প্রগতির ভারধারী ভারিক্কি শহুরে। আমরাই কিন্তু সংখ্যালঘু। তবু্ও তাদের উপর আমাদের রাজত্ব। খুব প্রশংসনীয় একটি কাজ করেছেন। ধন্যবাদ।
১৬ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৪৭
সুফিয়া বলেছেন: আপনার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। সত্যি কথা বলতে কি আমাদের যে প্রগতির বড়াই তা কিন্তু পুরোটাই মেকি। আমাদের আসল শিকড় কিন্তু ওখানেই।
ধন্যবাদ আপনাকে।
১৬| ১৫ ই মার্চ, ২০১৪ ভোর ৫:৩৭
রাসেলহাসান বলেছেন: চমৎকার গল্প লিখেছেন।
গল্পে ভালো লাগা রইলো।
১৬ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৪৭
সুফিয়া বলেছেন: আমারও অনেক ভালো লাগছে আপনাদের ভালো লাগা দেখে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
১৭| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:৫২
মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: চমৎকার!
শুভেচ্ছা অগ্রিম
পোস্টটা যাচ্ছে মাসের সেরা মেগা সংকলনে
ভালো থাকবেন
০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:২৩
সুফিয়া বলেছেন: সকালবেলা এটা আমার জন্য একটা বড় সুখবর। ধন্যবাদ আপনাকে। কামনা করি আপনার এই প্রচেষ্টা সার্থক হোক এবং অব্যাহত থাকুক।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৫
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন:
আঞ্চলিক ভাষায় গল্পটি চমৎকার হয়েছে।
ধন্যবাদ। ভালো থাকুন নিরন্তর।