নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

সুফিয়া

পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।

সুফিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবিতা নিয়ে কবিতার বাইরে খেলা করি যেভাবে।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৩৬

ভাবের জগতে শব্দের সুচারু বিন্যাসে কবিতারা পাখা মেলে কবির খেয়ালী মনের আয়োজনে। কেন, কিসের জন্য, কিভাবে একটি কবিতার অবয়ব গড়ে উঠে ? এই প্রশ্নের উত্তরে আমি এভাবেই নিজকে প্রকাশ করতে ভালোবাসি। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে কবিতা একজন কবির খেয়ালী মনের আয়োজন। তার এই খেয়ালী মনের আঙিনায় মূর্ত হয়ে উঠে জীবন-প্রকৃতি-প্রেম-ভালোবাসা-আরাধনা ইত্যাদি সবকিছু। কখনওবা মানুষে মানুষে সম্পর্কের বাতাবরণ। একজন কবির কাছে কবিতা হয়ে উঠে হতাশা-ব্যর্থতা-হৃদয়ের মর্মপীড়নের স্বচ্ছ আয়না। মনের না বলতে পারা কথাগুলো কবিতায় অতি সহজেই বলা যায়। তখন মনে হয় কবিতার চেয়ে বড় আপন আর কেউ হয় না। একজন কবি কাগজের খাতায় কলমের কালি ঝরিয়ে অক্ষরের পর অক্ষরের বিন্যাস ঘটিয়ে যে মূর্তিটি তৈরী করেন সেটাই তার প্রকৃত বন্ধু। অর্থাৎ কবিতা হচ্ছে একজন কবির শ্রেষ্ট বন্ধু। তেমনি কবিতাপ্রেমী একজন পাঠকেরও সে বন্ধু।



বলা হয়ে থাকে যে, কবিতা মানুষকে ভাবের জগতে নিয়ে যায়। সেটা কবিতার লেখক হোক, কিংবা বিমুগ্ধ পাঠকই হোক, সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমি বলব এটাই কবিতার সম্মোহনী কবিত্বশক্তি। বাস্তব জগতের সাথে ভাবের জগতের যে একটা সুষ্পষ্ট দূরত্ব আছে এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। বাস্তব জগতের হিংসা-দ্বেষ-দুঃখ-যাতনা-পাওয়া-না পাওয়ার দ্বন্ধ, ইত্যাকার সমস্ত দুর্বিপাক থেকে মানুষকে মুক্তি দেয় কবিতা অর্থাৎ ভাবের জগত। তাই কবিতার জগতে অবগাহন মাত্রই যে কেউ খোঁজে পায় বাস্তব জগত বিবর্জিত নির্মোহ ভাবালুতা। এখানে প্রকৃতি তার ভালোবাসার বন্ধু হয়ে যায়। আর জগত সংসারের সমস্ত প্রেম-ভালোবাসা-বিরহ-বেদনা-না পাওয়ার কষ্ট, সবকিছু তার কাছে শব্দের ক্রীড়নকে পরিণত হয়ে যায়। বাস্তব জগতের যে উপাত্তগুলো একজন কবিকে প্রতিনিয়ত ক্ষত-বিক্ষত করে, কবিতায় এগুলোই তার খেলার সামগ্রী। একের পর এক শব্দের বিন্যাসে ভাবের সুতোয় গেঁথে এগুলোকে নিয়ে খেলা করেন একজন কবি। দুঃখ-বেদনা-কষ্ঠবোধ তখন একজন কবি বা কবিতার পাঠককে কাঁদাতে পারে না। বরং তাদের ভাবের জগতের ক্রীড়নকে পরিণত হয়ে এই উপাত্তগুলো বার বার দোলায়িত হয়। এখানে কবিই সর্বেসর্বা। তাই কবিতা হচ্ছে বাস্তব জগতের টানাপোড়েন থেকে ভাবের জগতের দিকে মানুষের মুক্তি।



কেউ যদি প্রশ্ন করে কবিতার ব্যপ্তি কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত ? এর উত্তর একদম সহজ। কবিতার ব্যাপ্তিকে কোন নির্দিষ্ট সীমারেখায় আবদ্ধ করা যায় না। এক্ষেত্রে কবিতার আকার কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। যেমন, জল পড়ে/পাতা নড়ে। কবিতার এই দুটি লাইনের ব্যাখ্যা যদি কেউ দাঁড় করায় তাহলে সেটা এর দৃশ্যমান পরিধিকে ছাড়িয়ে যাবে বহুদূর। তাই আমি বলি কবিতা যতটুকু না পড়ার, তার চেয়ে বেশী এর অর্ন্তনিহিত গভীরতাকে খোঁজে বের করার। এখানেই ফুটে উঠে একজন কবির কবিত্বশক্তি আর শব্দ বিন্যাসের করিশমা। এই যেমন, আমি যখন আমার মায়ের কথা ভাবতে ভাবতে লিখলাম ‘মাটিরে, তোর কাছে আমার ঋণের বোঝা ভুলি কেমন করে/আমার মা যে আশ্রয় নিয়েছে তোর শান্তির নীড়ে’। কবিতাটি এইটুকু লিখে আমি আর লেখার প্রয়োজন বোধ করিনি। কেউ এটাকে কবিতা বলবেন কে না জানিনা। কিন্তু আমার মনের যে ভাবালুতা অর্থাৎ আমি যা বলতে চেয়েছি, তা বলতে পেরেছি এই দু’টি লাইনে। তাই আমি তৃপ্ত। কাজেই আকারের ব্যাপকতার চেয়ে অর্ন্তনিহিত ব্যাপকতা একটা কবিতার মুল শক্তি বলে আমি মনে করি।



এর অন্য চিত্রও আছে যেখানে কবিতার অর্ন্তনিহিত ব্যাপকতা আর বাইরের ব্যাপকতা মিলেমিশে একাকার। বাইরের ব্যাপকতার চেয়ে অর্ন্তনিহিত ব্যাপকতা কম- এমন কবিতা কমই দেখা যায়। সেক্ষেত্রে এগুলোকে কবিতা বলতে অনেকে নারাজ। আরও একটা দিক আছে এবং গুরুত্বপূর্ণও বটে। সেটা হলো কবিতায় স্বদেশপ্রেম। আমরা চাই যে, কবিতার বাহ্যিকতার আকার কখনও এর অর্ন্তনিহিত ব্যাপকতাকে ছাড়িয়ে যাবে না। সেই কবিতা আকারে যত বড়ই হোক না কেন। যেমন আমরা ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি’ কবিতাটির কথা বলতে পারি। কবিতাটি পড়লে মনে হয় কবি যা বলতে চেয়েছেন বা যা বলেছেন, এরপরও আরও অনেক কিছু বলার বাকী রয়ে গেছে। আমাদের দেশাত্ববোধক গান বা কবিতাগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় লেখক কিংবা গায়ক বা পাঠক সবাই অতৃপ্ত রয়ে গেছেন। যেন দেশের প্রতি অন্তরের ভালোবাসার পুরোটা প্রকাশ হয়নি কবিতায়। আসলে স্বদেশ প্রেমের ব্যাপকতা বা গভীরতা, যা ই বলি না কেন, একটি কবিতা বা একটি গানে এর সবটুকু প্রকাশ করা যাবে এমন নয়। সে যত বড় কবিই হোন না কেন।



সব মিলিয়ে আমি বলব কবিতা সাহিত্যের সেই অনুষংগ বা দিক, যা বলে কম, বুঝায় বেশী। অথবা যতটুকু বলে ততটুকু বুঝায়। কিন্তু কোনভাবেই বেশী বলে কম বুঝায় এমনটি নয়। এই করতে গিয়ে কবিতা কখনও হয় ছন্দমিলের, কখনও বা গদ্য কবিতা। তবে সব কবিতার মধ্যে একটি অভিন্ন সুর থাকে। সেটা হলো বলে বুঝানোর ক্ষমতা। ছোটকালে যখন সুর করে ছন্দমিলের কবিতা পড়তাম তখন মনে হতো কবিতা এরকমটাই হয়। কিন্তু পরে যখন আধুনিক গদ্য কবিতার সাথে পরিচিত হলাম, তখন দেখলাম মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করার শক্তি এরও কম নয়। তবে সেটা নির্ভর করে কবিতা পড়ার ঢং এর উপর। সঠিক তালে শব্দ বুননের অর্থ না বুঝে পড়লে আধুনিক কবিতা তার অর্ন্তনিহিত শক্তি ও সৌন্দর্য হারাতে বাধ্য। এমনটা হবার নয় বলেই কবিতা পাঠ বা আবৃত্তি যথার্থ অর্থেই একটি অনুশীলন বা চর্চার বিষয়। আমার সুযোগ হয়েছিল আমারই লেখা কয়েকটি কবিতা অন্যের মুখে আবৃত্তি শুনার। শুনে বার বার নিজকে মনে করিয়ে দিতে হয়েছে যে কবিতাটি আমার লেখা। বলাই বাহুল্য, কবিতা আবৃত্তির নিজস্ব ঢং বা রীতি না জানার কারণেই এমনটা হয়েছে। তাই বলতে দ্বিধা নেই যে, আমি কবিতার স্রষ্টা হতে পারি, কিন্তু আবৃত্তিকার নই। একজন আবৃত্তিকারই পারে কবিতার মূল সুরটা যথার্থভাবে অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে। যারা নিজেই কবি, নিজেই আবৃত্তিকার, তাদের তো তুলনাই হয় না। নিজের সৃষ্টিকে সম্পূর্ণভাবে গুছিয়ে পরিস্ফুটন করে পাঠকের সামনে তুলে ধরার মজাই আলাদা। বাহ্যত কবিতা সৃষ্টির আনন্দ আর পাঠক সমাজের কাছে সেটা তুলে ধরার আনন্দ দুটোই তারা ভোগ করতে পারছেন। যেমনটা আমার মতো অনেকেই পারছেন না। পারলে ভালো হতো। মনের যে ভাবালুতা ও সুর নিয়ে একটি কবিতা লেখা হয়, সেটাকে হুবহু পাঠকের সামনে তুলে ধরা যায়। অন্যের মাধ্যম হয়ে গেলে সেই কবিতা কিছুটা হলেও তার স্বকীয়তা হারায় এবং প্রকারান্তরে তা যিনি কবিতার লেখক তার চিন্তা-ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এমনটা আমরা চাই না। তাই আমরা চাই যিনি কবিতার স্রষ্টা তিনি কবিতা পড়ার ঢং বা রীতিকে আয়ত্ত করে নিবেন।







মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:০৭

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: ভাল লাগল

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৫১

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৩৭

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
কবি ও কবিতা নিয়ে আপনার লিখাটি বেশ হলো।
ভালো লেগেছে কাব্যকথা।

শুভ কামনা, সুফিয়া।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৫১

সুফিয়া বলেছেন: আপনার ভালো লেগেছে দেখে আমারও ভালো লাগল।

ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.