![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।
শেষ রাতের আদুরে ঘুমের রাজ্যে যখন ডুবে আছি আমি তখন আম্মার ডাক শুনা যায়, এই খুকি উঠ। এখনও উঠছিস না তাইলে যাবি কেমনে ? কোনহানে না যাইবি কইছিলি ? রাইত পোয়াইয়া গেল যে !
ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষা আর কিছু শুদ্ধ ভাষার মিশ্রণে কথা বলতেন আমার আম্মা।
আম্মার ডাকে উঠব কি ? আমার ঘুমঘোর চোখের সামনে তখন রং বেরং এর স্বপ্নদের আনাগোণা। লাল পরি-নীল পরিরা রূপ ছড়িয়ে হাসছে খেলছে।
আম্মা আবার ডাকেন।
কি রে উঠলি না ? পরে আমার সামনে মুখ ফুলাইয়া রাখতে পারবিনা কইলাম। ঘুমানির আগে ত কত রং মাখাইয়া কইলি রাইত পোহাইবার আগেই আন্ধার থাকতে যেন ডাইকা দেই। না অইলে গাছতলায় গিয়া কোন ফুল পাইবি না। আইজ নাহি ফুল তর খুব দরকার ? তাইলে অত ডাকতাছি উঠতাছস না কেন ? আমি কিন্তু আর ডাকতারতাম না। উঠলে উঠবি না উঠলে নাই।
বলে আম্মা আমার শরীরে আস্তে করে ধাক্কা দেন। আমি ঘুমজড়ানো চোখে উঠে বসে দু’হাতে চোখ কচলাতে কচলাতে বলি, আম্মা, রাত পোহায়া গেছে ?
আম্মা বলেন, পোহাইতে আর বাকী কই ? তর আব্বা মসজিদ থাইকা আইল বলে।
অমনি আঁৎকে উঠি আমি। তার মানে সকাল হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি খাট থেকে নেমে বলি, আজ মনে হয় রত্নারা আমার আগেই এল এসেছে। আল্লাহই জানে ফুল পাব কি-না।
আম্মা পেছন থেকে ত্বড়িত বেগে হাত বাড়িয়ে আমাকে ধরে ফেলেন। বলেন,
খাড়া, ঘুমের চোখ দুইডা মুইছা দেই। নাইলে উসটা খাইয়া পড়বি ত।
হাতের কাছে রাখা গ্লাসের পানি দিয়ে শাড়ির আঁচল ভিজিয়ে আমার দুই চোখ মুছে দিলেন আম্মা। আমি পড়ি-মরি ছুটতে থাকি চেয়ারম্যান বাড়ির বকুল তলার দিকে। তারপর কুচ ভরে ফুল নিয়ে পা টিপে টিপে ঘরে ঢুকতাম আমি যাতে আব্বার সামনে পড়ে না যাই। কারণ, আব্বার কড়া হুকুম ছিল আমরা ভাই-বোন সবাই, সে যত ছোটই হই না কেন, খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়তে হবে। তারপর আব্বা মসজিদ থেকে ফিরে এলে উনার সামনে পড়তে বসতে হবে। প্রথমে আরবী পড়া ও পরে বাংলা। ছোটরা যারা এখনও আরবী-বাংলা কিছুই পড়তে শিখিনি তাদেরকে আব্বা যে কোন একটি দোয়া শিখিয়ে দিতেন। আঙুলের গেরা গুণে গুণে সেই দোয়া পড়তাম আমরা।
ততক্ষণে রান্নাঘরে আম্মার নাস্তা বানানো শেষ। আম্মা এসে নাস্তা খাওয়ার জন্য ডাকলেই আমাদের ছুটি। তাই আঙুলের গিরা গুণে গুণে আব্বার শিখানো দোয়া পড়লেও আমাদের মনযোগ থাকত আম্মার দিকে। বারবার ফিরে তাকাতাম দরজার দিকে। কখন আম্মা এসে দাঁড়াবে আমাদের সামনে।
আব্বার এমনি কড়া নিয়মে বাধা ছিল আমার শৈশবের প্রতিটি সকালবেলা। কিন্তু আমার ফুল কুড়ানোর নেশা ছিল দুর্দান্ত। আমাদের তিনটা বাড়ির পরে চেয়ারম্যান বাড়িতে যেতে হতো ফুল কুড়াতে। খুব সকালে না গেলে ফুল পাওয়া যেতনা। তাই নানা কায়দা করে আম্মাকে রাজী করিয়ে ফুল কুড়াতে যেতাম। খুব ভোরে আব্বা যখন মসজিদে চলে যেতেন তখন আম্মা আমাকে ডেকে তুলতেন। আব্বা মসজিদ থেকে ফিরে আসার আগেই কুচ ভরে বকুল ফুল নিয়ে ফিরে আসতাম আমি। হাতমুখ ধুয়ে তৈরী হয়ে সবার সাথে বসে যেতাম আব্বার বিছানায়। আব্বা মসজিদ থেকে ফিরে এসে এই দৃশ্য দেখে খুব খুশী হতেন। কোন প্রশ্ন তো করতেনই না।
কিন্তু যেদিন আমার ফিরতে দেরী হয়ে যেত বকুলতলা থেকে, আব্বা ফিরে আসতেন আমার আগে সেদিন আম্মা আগ থেকে সাবধান হয়ে যেতেন। বাড়িতে ঢুকার মুখে দাঁড়িয়ে থাকতেন। আব্বা আমাকে কোন প্রশ্ন করলে আম্মাই তড়িগড়ি সেটার জবাব দিয়ে দিতেন। আমার তখন মনে হতো আমি আর আম্মা মিলে আব্বার সাথে বেশ একটা চালাকী করে ফেলেছি, আব্বা কিছুই বুঝতে পারেননি। কিন্তু নাস্তা খাওয়ার পর আব্বা যখন বলতেন, কই ? আনতো দেখি কি ফুল কুড়ালি ? তখন বেশ অবাক হতাম আমি।
আজ আমার আব্বা-আম্মা কেউ বেঁচে নেই। কিন্তু তাদের কথা বেশ মনে পড়ে গেল ভোর হতে না হতেই। কারণ, আজ সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই ফুলের ঘ্রাণে আমার মনটা ভরে যায় আমার। চেয়ে দেখি আমার টবের গাছে পাঁচটি বেলী ফুল ফুটেছে। সকালবেলা এমন দৃশ্য কার না ভালো লাগবে বলুন ? আমি টবের পাশে বসে আলতো করে একটা ফুলের গায়ে হাত রাখতেই মনে পড়ে গেল শৈশবের ফুল কুড়ানো ভোরের কথা। আমার সেই ভোরের সাথে জড়িয়ে আছেন আমার আব্বা-আম্মা। তাই মনে মনে বললাম, তোমরা যদি আজ বেঁচে থাকতে তাহলে দেখতে তোমাদের খুকী এখন আর ঘুম থেকে উঠে ফুল কুড়ানোর জন্য বায়না ধরেনা। তার নিজের বারান্দায় নিজের হাতে লাগানো গাছে আজ ফুল ফুটেছে। সকালের মৃদুমন্দ বাতাসে ফুলগুলো দুলছে আর সৌরভ ছড়াচ্ছে। মাগো, আজ যদি এই সৌরভের একটুখানি তোমাকে দিতে পারতাম তাহলে মনটা আমার অনাবিল প্রশান্তিতে ভরে যেত।
১৭ ই মে, ২০১৪ সকাল ১০:০৫
সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। আমার বারান্দার টবে এই সুহূর্তে ৯টি বেলী সৌরভ ছড়াচ্ছে। ভালো লাগত যদি একটি ফুল আপনাকে দিতে পারতাম।
২| ১৫ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:২৭
প্রকৌশলী আতিক বলেছেন: দারুন। প্লাস দিলাম
১৭ ই মে, ২০১৪ সকাল ১০:০৬
সুফিয়া বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। সাথে আমার টবের বেলী ফুলের শুভেচ্ছা। ভালো থাকবেন।
৩| ১৫ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৪
মোঃ মোশাররফ হোসাইন বলেছেন: আমার মা বলতেন কোথাকার মানুষ কোথায় চলে গেলো, আর তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস? তখন মানে বুঝতাম না, শুধু মনে করতাম বিরাট অন্যায় হয়ে যাচ্ছে!!!!!
আপনার মা বাবা যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন।
১৭ ই মে, ২০১৪ সকাল ১০:০৭
সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। দোয়া করি পৃথিবীর সব মায়েরা যেন ভালো থাকে।
৪| ১৫ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৪৪
স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
খুব সকালে না গেলে ফুল পাওয়া যেতনা। তাই নানা কায়দা করে আম্মাকে রাজী করিয়ে ফুল কুড়াতে যেতাম। খুব ভোরে আব্বা যখন মসজিদে চলে যেতেন তখন আম্মা আমাকে ডেকে তুলতেন। আব্বা মসজিদ থেকে ফিরে আসার আগেই কুচ ভরে বকুল ফুল নিয়ে ফিরে আসতাম আমি।
আপনার লেখাটা মন ছুঁয়ে গেল !
ছবিটা দেখে দ্বিগুণ ভালোলাগা ।
আপনার আব্বা-আম্মার জন্য দোয়া রইল ।
১৭ ই মে, ২০১৪ সকাল ১০:১০
সুফিয়া বলেছেন: আমারও খুব ভালো লাগছে লেখাটা আপনাকে ছুতে পেরেছে দেখে। আমাদের সকলের বাবা-মায়ের জন্য আমাদের দোয়া যেন সতত বহমান থাকে।
৫| ১৭ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:০৮
is not available বলেছেন: অসাধারণ লেখার হাত আপনার! এত গুছিয়ে কিভাবে লিখেন একটু বলবেন কী?
১৭ ই মে, ২০১৪ সকাল ১০:১৫
সুফিয়া বলেছেন: আপনার কমপ্লিমেন্ট এর জন্য ধন্যবাদ।
কিভাবে গুছিয়ে লিখলাম ? আপনার এমন প্রশ্নের উত্তর গুছিয়ে লেখাটা বোধহয় কঠিন। তবে এটুকু বলতে পারি যে লেখার একটুখানি ক্ষমতা বিধাতা আমায় দিয়েছেন।
কারও অন্তরের নির্যাস থেকে উঠে আসা কথার সাথে যদি এই ক্ষমতার সন্নিবেশ করা যায় তাহলে একটি সুপাঠ্য লেখা তৈরী করা বোধহয় খুব কঠিন হয়না। আমি বোধহয় তেমন একটা চেষ্টা করেছি। অন্তত আপনার কমপ্লিমেন্ট দেখে তাই মনে হচ্ছে।
আবারও ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।
৬| ১৭ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:৪৫
সাবরিন কল্পনা বলেছেন: নিজের হাতে লাগানো গাছে ফুল ফোটার আনন্দ ভাষাহীন।
সন্তানের মত মনে হয় যেন।
ভাল থাকুন।
আল্লাহ হাফেজ।
১৭ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:২৯
সুফিয়া বলেছেন: আপনি ঠিকই বলেছেন সাবরিনা। এ আনন্দের তুলনা মেলেনা কোন কিছুর সাথে। । আজও আমার বারান্দায় ৯টি বেলী ফুল ফুটেছে। বাতাসে হেলেদুলে ফুলগুলো অনবরত শোভা ছড়াচ্ছে। আমি বারবার বারান্দায় গিয়ে সে দৃশ্য দেখছি। আমার বারবার মনে পড়ছে বন্ধুদের কাউকে ডেকে দেখাই ফুলগুলো।
আপনার জন্য রইল আমার নিজের গাছে ফোটা বেলী ফুলের একরাশ শুভেচ্ছা। ধন্যবাদ আপনাকে।
৭| ১৯ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৭
নীল জোসনা বলেছেন: ছোট বেলার দিন গুলির কথা ভাবতেই মন খুশিতে ভরে যায় ।
দুদিন আগেই ভোর বেলায় বকুল ফুল কুড়ালাম গ্রামের বাড়িতে । তখন আমিও এভাবেই আবেগে ভেসেছিলাম ।
২০ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:৩৪
সুফিয়া বলেছেন: আমি জানি এই আবেগ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি এখনু সুযোগ পেলেই ফুল কুড়াই। যেমন আজ সকালবেলা আমার হাজব্যান্ড মর্নিং ওয়াক করে আসার পর জিজ্ঞাসা করছিলাম সংসদ ভবনের সামনের ঐ রাস্তায় বকুল ফুটছে কি-না। আমার হাজব্যান্ড জানাল রাস্তায় কিছু বকুল পড়ে থাকতে দেখেছে সে। আমি সাথে সাথে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আমার জন্য বকুল কুড়িয়ে আননা কেন ?
সকালবেলা বাসার কাজ সেরে অফিসে যাবার তাড়ায় মর্নিং ওয়াকে যাওয়ার সুযোগ হয়না। তাই বকুল কুড়াতে যেতে পারছি না। খাব আফসোস হচ্ছে জানেন ? ভাবছি এখন থেকে ছুটির দিন সংসদ ভবন চত্বরে হাঁটতে যাব। তাহলে বকুল ফুল কুড়াতে পারব।
আমি মনে কড়ি প্রত্যেকটি মানুষের ছোটবেলাটা হচ্ছে তার জীবনের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও আনন্দমুখর সময়। এর হাতছানি বাকীটা জীবন ধরে তাকে সুখের আনন্দে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে। জীবনে এর চেয়ে নির্মল আনন্দ আর কখনও পাওয়া যায় কি-না আমি জানিনা।
ধন্যবাদ আপনাকে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:১৫
সাফফানা রুহি বলেছেন: ভালো লেগেছে আপু। আমিও খুব বেলি পছন্দ করি।