![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।
তাজউদ্দিন আহমেদ-রাজনীতিতে যিনি নিজেই ছিলেন নিজের শিক্ষক।
(তাজউদ্দিনের ডায়েরী প্রসংগে)
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতির যে ধারা তাকে এক কথায় বলা যায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বিবর্জিত রাজনীতি। আর ছাত্র রাজনীতি যে কলুষিত ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে সে সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার অবকাশ নেই। তাই বলে একথা বলা যাবে না যে, বাংলাদেশের রাজনীতি তার সূচনালগ্ন থেকে এই ধারায় চলে এসেছে। আমাদের অতীতের রাজনীতি ছিল স্বচ্ছ ও নিস্কলুষ। কারণ তখনকার রাজনীতির পুরোধা ব্যক্তিরা ছিলেন মেধা ও প্রজ্ঞার এক একটি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। তারা রাজনীতি করতেন সত্যিকার দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে।
আমাদের গর্ব করার মতো এমনি অনেক এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে একজন হলেন শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ-রাজনীতিতে যিনি নিজেই ছিলেন নিজের শিক্ষক। ১৯৪৬-৫৬ সাল পর্যন্ত সময়ে লেখা তার ডায়েরী কালের সাক্ষী হিসেবে তার এই পরিচয় বহন করছে। তখন তিনি ছিলেন ২২ বছরের যুবক। একনিষ্ট ছাত্র রাজনীতিবিদ হলেও কোন রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কথা ভেবে তিনি ডায়েরী লিখেননি। তথাপি তার এই ডায়েরীকে বলা যায় তৎকালীন রাজনীতির আয়না। আজকের ছাত্র রাজনীতিবিদদের জন্য মহামূল্যবান শিক্ষার খনি। কারণ তাজউদ্দিন আহমেদ এবং তার সম-সাময়িকরা যে শুদ্ধ ও স্বচ্ছ রাজনীতির চর্চা করে গেছেন এই ডায়েরী তার একটা জলজ্যান্ত দলিল।
আমরা জানি, সমাজের জন্য-দেশের জন্য কিছু করতে হলে মানুষকে আত্ম-প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে এগোতে হয় অর্থাৎ নিজের কাছে আগে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হয়। তাজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন এর মূর্ত প্রতীক। দেশের জন্য কিছু করার লক্ষ্যে তিনি প্রতিশ্রুতিবব্ধ ছিলেন নিজের কাছে। অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে তিনি এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেন। এর প্রমাণ মিলে তার ডায়েরী থেকে। তার ডায়েরী ছিল তার বিচারের কাঠগড়ার মতো। প্রতি দিনশেষে একবার এর মুখোমুখি হতেন তিনি তার দিনলিপি নিয়ে।
তিনি ছিলেন দূরদর্শী রাজনীতিবিদ। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তার প্রজ্ঞা, মেধা ও সাহসিকতার পরিচয় রেখে গেছেন তিনি অনেক ক্ষেত্রে। ঐতিহাসিক ছয় দফার অন্যতম রূপকার ছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ-যা বাঙালী জাতির মুক্তি আন্দোলনের মূলমন্ত্র হিসেবে কাজ করেছিল। স্বাধীনতার পর দেশের পূর্ণগঠনে তার সাহসী সিদ্ধান্ত সদ্য স্বাধীন বাঙালী জাতির আত্ম-মর্যাদাকে তখন বিশ্ব দরবারে এক ধাপ উচুঁতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যত কষ্টই হোক আমাদের স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী কোন রাষ্ট্রের সাহায্য আমরা নিব না। পরবর্তীতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রির উপদেষ্টা ডি. পি. ধর তাজউদ্দিনের এই সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছিলেন।
জাতির আপদকালীন সময়ে দেশকে এমন দূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্ব দানের জন্য তাজউদ্দিন আহমেদ নিজকে নিজেই গড়ে তুলেছিলেন আপোসহীন রাজনীতিক হিসেবে। তার রাজনৈতিক দর্শনে শ্লোগানবাজির কোন স্থান ছিল না। ছিল দৃঢ় প্রত্যয়, বুদ্ধিবৃত্তিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার স্বাক্ষর। এ দিয়েই তিনি বাঙালী জাতিকে তার আত্ম-অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, মুজিব নগরের সরকারের প্রধানমন্ত্রি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সেই উদ্বুদ্ধ জাতিকে যথাযথভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন।
আসলে তার নেতৃত্বের গুণাবলী ছিল প্রশ্নাতীত। বাঙালী জাতির পরম সৌভাগ্য যে তাজউদ্দিন আহমেদ এর মতো নেতার জন্ম হয়েছিল এদেশে। একই সাথে আমাদের দুর্ভাগ্য এই যে, এমন মহান নেতার রাজনৈতিক আদর্শকে আমরা আমাদের রাজনৈতিক চর্চার ক্ষেত্রে ধারণ করতে পারিনি। আজকে আমরা যে আলোকিত বিশ্বের স্বপ্ন দেখি, যে স্বচ্ছ ও নির্লোভ রাজনীতির কথা বলি, তাজউদ্দিন আহমেদের মতো লোকেরা বেঁচে থাকলে তার বাস্তবায়ন হতো অনেক আগেই।
২৩ জুলাই এই মহান নেতার জন্মদিন। ১৯২৫ সালের এই দিনে তিনি কাপাসিয়া থানার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের মক্তবে। এরপর ভুলেশ্বর প্রাইমারী স্কুল। চতুর্থ শ্রেণীতে উঠে স্কুল পরিবর্তন করে ভর্তি হন বাড়ি থেকে ৫ মাইল দূরে অবস্থিত কাপাসিয়া মাইনর ইংরেজী স্কুলে। এরপর একে একে কালিগঞ্জ সেন্ট নিকোলাস ইনষ্টিটিউশান, ঢাকার মুসলিম বয়েজ হাইস্কুল। সবশেষ সেন্ট গ্রেগরীজ হাইস্কুল থেকে থেকে মেট্রিকুলেশান পাশ করেন। ছোটকাল থেকে তাজউদ্দিন ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। বরাবর তিনি ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করতেন। প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় তার শিক্ষাজীবনে বার বার বাধা এসেছে। তা সত্ত্বেও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন এবং জেলে বন্দী অবস্থায় আইনশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। আমরা অনেকেই জানি না যে জনাব তাজউদ্দিন কুরআনে হাফেজ ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ধর্মের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল ছিলেন।
যাই হোক, পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠায় তিনি উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৩-৫৭ সাল পর্যন্ত সময়ে তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট তাকে গৃহবন্দী করা হয় এবং পরে জেলখানায় স্থানান্তর করা হয়। ৩ নভেম্বর বিশ্ব ইতিহাসে কলংকজনক অধ্যায় রচনার মধ্য দিয়ে জেলখানায় বন্দী অবস্থায় তাকে রাতের অন্ধকারে অন্য তিন নেতাসহ তাকে হত্যা হয়।
মৃত্যুর তিনঘন্টা আগে তার লেখা আরও একটি ডায়েরীর কথা তিনি তার স্ত্রীর কাছে বলেছিলেন। ঐ রাতেই শেষ হওয়ার কথা ছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত ঐ ডায়েরী। কিন্তু এর কোন সন্ধান আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ঐ ডায়েরীর সন্ধান পাওয়া গেলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী রাজনীতি সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য সম্পর্কে জানা যেত।
০৯ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৪১
সুফিয়া বলেছেন: সত্যি বলেছেন আমি রাজনীতি বুঝিনা। কিন্তু এটাও বুঝলামনা যে কারও সম্পর্কে আমার নিজের মতামত প্রকাশ করার সাথে রাজনীতির কি সম্পর্ক ? যতই উনি রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত হোন না কেন। কারও সম্পর্কেূ ব্লগে আমার নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারবনা এমন বাধা নিষেধ এর কথা কিন্তু আমার জানা নেই। তাজউদ্দিনের ডায়েরী পড়ে আমার যা মনে হয়েছে আমি তাই লিখেছি। এটা আপনার পছন্দ হতেই হবে এমন তো নয়।
যে কোন মানুষ,তিনি যত আদর্শিক পন্থাই মেনে চলুন না কেন, একেবারে সমালোচনার উপরে উঠে যাবেন এমনটা কিন্তু আমি বলছি না। তাজউদ্দিনের মতো নেতারাও সমালোচিত হয়েছেন। তাই বলে উনার আদর্শকে আমরা অস্বীকার করব কিসের বলে ?
তাজউদ্দিনের মতো রাজনীতিবিদরা বর্তমান কলুষিত রাজনীতির চেয়ে যে অনেক উর্ধ্বে অবস্থান করেন একথা অস্বীকার করার মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। এজন্য রাজনীতি খুব একটা বুঝার প্রয়োজন হয়না। আশা করি কথাটা ভেবে দেখবেন।
২| ০৮ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৫
ডার্ক ম্যান বলেছেন: উনার মত নেতা পৃথিবীতে খুব কম জন্মে। উনার অবদান কখনো ভোলার নয়।
দুনিয়াতে কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা কখনো কিছু অর্জন করতে পারে না কিন্তু অপরের সমালোচনা করতে চরম পারদর্শী।
০৯ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৪২
সুফিয়া বলেছেন: আপনার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। দুনিয়াতে কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা কখনো কিছু অর্জন করতে পারে না কিন্তু অপরের সমালোচনা করতে চরম পারদর্শী।
ধন্যবাদ আপনাকে।
৩| ০৯ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৭:৪৪
রাজিব বলেছেন: তার কপাল খারাপ আর আমাদের কপাল ভাল যে তিনি বাংলাদেশে জন্মেছিলেন এবং এদেশের জন্য রাজনীতি করে গেছেন। কখনো আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি এবং পাকিস্তানি নেতারা ও সামরিক জেনারেলরা তাকে মন প্রাণ দিয়ে ঘৃণা করতেন এবং ভয় পেতেন।
৪| ০৯ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৮:০৪
সুফিয়া বলেছেন: আপনার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। তবে আমি বলব একদিক দিয়ে তারও কপাল ভাল। শুধু তার নয়, তার সময়কালের রাজনীতিবিদদেরও। কারণ, বর্তমান সময়ের নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত, স্বার্থান্ধ রাজনীতি তাদের দেখে যেতে হয়নি। তাহলে তারা কষ্ট পেতেন। দেশের জন্য নিজেদের ত্যাগকে নিয়ে নিজেরাই প্রশ্নবিদ্ধ হতেন।
ধন্যবাদ আপনাকে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:১৪
পংবাড়ী বলেছেন: " তাজউদ্দিন আহমেদ-রাজনীতিতে যিনি নিজেই ছিলেন নিজের শিক্ষক। "
-নিজের শিক্ষক নিজে হওয়াতে, নিজের ভুলের জন্য তিনি জাতিকে কোন পথ দেখাতে পারেননি; নিজেই অন্যের জন্য অকারণে প্রাণ দিয়েছেন।
তিনি অসফল রাজনীতিবিদ; নিজের শিক্ষক নিজে না হয়ে, শেরে বাংলা ফজলুল হক, লেনিন, মাও, লি-কুয়ান ও লুলার ছাত্র হলে, উনি আমাদের সাহায্য করতে পারতেন।
আপনি রাজনীতি বুঝেন না।