![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।
গল্প ----- শেষহীন অপেক্ষা !
রাতে ভারী বর্ষণের পর সকাল বেলার নির্মেঘ আকাশ। ঝলমলে আলো ছড়িয়ে সূর্য উঠেছে তার আপন গরিমায়। সামনের আঙিনায় গাছ-গাছালির জড়াজড়ি অবস্থান। গাছের পাতার দিকে তাকালে মনে হয় গত রাতের বৃষ্টি প্রেমিকের ভালোবাসার ষ্পর্শ বুলিয়ে দিয়ে গেছে ওদের গায়ে। তাই পাতাগুলো এখন যৌবনের থরো থরো কাঁপুনিতে বিভোর। সকালের আলো এদের কাছে দ্বিতীয় প্রেমিকের আগমনের মতো। ভীতু লজ্জায় সেই সূর্যকে কাছে টেনে নিয়ে আবারও জেগে উঠতে চায় ওরা।
ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রকৃতির এমন খেয়ালী আয়োজনে নিজকে হারিয়ে ফেলে রোজী। রোজী বরাবরই প্রকৃতি প্রেমিক। গাছ-পালা, সাগর-পাহাড়-মেঘ-প্রকৃতি সবাই ওর বন্ধু। রোজী ওদের সাথে মন খোলে কথা বলে, হাসে, খেলা করে। নিজের নয়তলা ফ্ল্যাটের সামনের বারান্দাটা ওর খুব প্রিয়। ঢাকা শহরের অনেকগুলো প্রিয় জায়গার মধ্যে একটি। কারণ একটাই। বারান্দায় দাঁড়ালেই দৃষ্টি আটকে যায় রাস্তার অপর পাড়ে কলেজ চত্বরের সবুজ অরণ্যে। যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে। সবুজের মাথার উপর রয়েছে উন্মুক্ত আকাশ। রোজীর ফ্ল্যাটটা উত্তর-পূবদিকে খোলা। তাই সকাল বেলা সূর্য উঠার সাথে সাথে ওর ঘর ভেসে যায় আলোর বন্যায়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রতিদিন সূর্য উঠা দেখা রোজীর রুটিন কাজের একটি। সেই সময়ে বাম দিকের ঘন সবুজের অরণ্যে নিজকে হারিয়ে ফেলে সে।
প্রতিদিনের মতো আজও সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় রোজী। পূব আকাশ তখন সূর্য উঠার আগ মুহূর্তের সাজে সজ্জিত। ঝরঝরে স্বচ্ছ আলো ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। রোজী ফিরে তাকায় কলেজের সবুজ অরণ্যের দিকে। গাছের ভেজা পাতার বুকে সকালের আলো হুটোপুটি খাওয়ায় ব্যস্ত। এর মন মাতানো রূপ লাবণ্য প্রকৃতি প্রেমিক যে কাউকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে অনাবিল আনন্দের দেশে। সেখানে থাকবে না কোন পিছুটান, থাকবে না দিনান্তের হিসেব মিটাবার টানাপোড়েন। থাকবে শুধু ভেসে যাওয়া আর ভেসে যাওয়ার আনন্দদোলা। রোজী দুচোখ বন্ধ করে জোড়ে একটা দম নিয়ে সেই আনন্দ সরোবরের সুখের ষ্পর্শ নিতে চেষ্টা করে। এমন সময় নিজের শরীরে একটা ঝাকুনি খেয়ে বাস্তবে ফিরে আসে রোজী। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে নীল ওর কাঁধে একটা হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে হাসি হাসি মুখ করে। রোজীও তেমনি মুখে এক ঝলক হাসি ফুটিয়ে বলে,
ও----তুমি উঠে গেছ ?
আজ সকাল সকাল বেরোব তোমাকে বলেছিলাম না ?
ও, তাই তো ? একদম ভুলে গিয়েছিলাম। চলো, ঘরে চলো। তোমাকে নাস্তা দেই।
বলে ঘরের দিকে পা বাড়ায় রোজী। নীল এর একটি হাত তখনও রোজীর কাঁধে। আর এক হাতে রোজীর মুখটি নিজের দিকে ঘুরিয়ে নীল বলে,
থাক্। এত সকালে তোমাকে আর কষ্ট করতে হবেনা। আমি বাইরে কিছু খেয়ে নিব। তুমি বরং আমার জামা কাপড়গুলো বের করে দাও।
রোজী এবার নীল এর দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে নীল এর গোসল হয়ে গেছে। তার মানে সে অনেকক্ষণ ধরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। তার জন্য নাস্তা না করে বেরোতে হবে নীলকে। এটা কি করে সম্ভব ? আলমারী থেকে নীল এর শার্ট-প্যান্ট বের করে বিছানায় রেখে রোজী বলে,
আমার অন্যমনস্কতার জন্য এমনটি হলো। তোমাকে না খেয়ে বেরোতে হবে। আমার কিন্তু মনে ছিল জানো। তুমি সকাল সকাল বের হবে। কিন্তু বারান্দায় দাঁড়িয়ে সব ভুলে গেলাম।
রোজী আত্মগ্লানি থেকে কথাগুলো বলছে বুঝতে পারে নীল। তাই রোজীকে স্বাভাবিক করার জন্য বলে,
এটা আর এমন কি ? এত সকালে তো নাস্তা খাওয়ার অভ্যাসও নেই আমার। তুমি বরং দেখো, তোমার যেন অফিসে যেতে দেরী না হয়ে যায়। আর বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাজ নেই তোমার। বরং ওদিকট দেখো।
ততক্ষণে নীল এর তৈরী হওয়া শেষ। দরজার দিকে এগিয়ে যায় সে। রোজী নীল এর পিছু পিছু যেতে যেতে বলে,
আর দাঁড়াব না। সেই সকাল আর নেই। সূর্যের তেজ বেড়ে যাচ্ছে। আচ্ছা, সুন্দর সকালটা বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়না কেন বলতে পার ?
দরজার ছিটকিনি খুলছিল নীল। রোজীর প্রশ্নে ওর দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে,
সেটা তোমার কাজ। তুমিই খোঁজে বের করো। আমি চললাম।
বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় নীল। রোজী দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে রান্নাঘরের দিকে যায়। জমিলা ততক্ষণে রান্না প্রায় শেষ করে এনেছে। রোজীকে দেখে জিজ্ঞেস করে,
খালাম্মা, আপনাকে দুপুরের খাবার কি দিব ? রুটি না ভাত ?
দুটোই করেছিস ? তাহলে নীলকে একটু রুটি-সবজি দিলি না কেন ? খেয়ে যেতে পারত ?
কাকে রুটি-সবজি দিব ? খালুকে আমি কোথায় পাব ?
আতংকিত হয়ে প্রশ্ন করে জমিলা।
রোজী তেমনি নির্বিকারভাবে উত্তর দেয়।
কেন ? তুই দেখিসনি ? এইমাত্র না খেয়ে বের হয়ে গেল নীল। আমি নাস্তা দিতে চাইলাম। বলল আমার কষ্ট হবে। তাই না খেয়ে চলে গেল।
রোজীর এই কথায় জমিলার বিস্ময়ের ভাব কেটে যায়। ওর বুঝতে বাকী থাকেনা যে আবারও সেই ঘোরের মধ্যে ডুবে গেছে রোজী। নীল এর মৃত্যুর পর থেকে এমনটাই হচ্ছে। বিয়ের এক বছরের মাথায় গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা গেছে নীল। তাও প্রায় আট মাস হয়ে গেল। কিন্তু এখনও এই সত্যটাকে যেন পুরোপুরি মেনে নিতে পারছে না রোজী। মাঝে-মধ্যেই সে নীল এর সাথে কথা বলে, হাসি-তামাশা করে। এর পাশাপাশি অন্যসব স্বাভাবিক কাজ ঠিকমতই করছে রোজী। সময়মতো অফিসে যাওয়া, বাসায় ফেরা, জমিলাকে বাসার কাজ বুঝিয়ে দেয়া ইত্যাদি সব ঠিক আছে। শুধু মেনে নিতে পারছে না নীল এর মৃত্যুকে। নিজের একাকিত্বের সময়টাতে কল্পনায় নীলকে নিয়ে ভরিয়ে তোলে চারপাশের শূণ্যতা। ডাক্তারেরও একই মত। একা থাকলে রোজী চারপাশে তার স্বামীর অস্তিত্ব খোঁজে পায়। কল্পনায় নীল এর সাথে সময় কাটায় রোজী। স্বামীকে প্রচন্ড ভালোবাসার কারণে এমনটা হচ্ছে।
কিন্তু এই অবস্থা থেকে তো ওকে বের করে আনতে হবে। এর উপায় কি ?
উদ্বিগ্ন রোজীর বাবা জানতে চেয়েছিল ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার বলেছিল
এ নিয়ে আপনদের দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। উনি তো বাস্তবেই আছেন। দেখছেন না নিয়মিত অফিসে যাচ্ছেন। সেখানে তো কোন অনিয়ম হচ্ছে না। শুধু একাকিত্বের সময়টায় স্বামীকে খোঁজে পান চারপাশে। আস্তে আস্তে সেই জগত থেকে উনি নিজেই বেরিয়ে আসবেন। আপনারা শুধু সময় ও সুযোগে বাস্তবটা উনার সামনে তুলে ধরবেন। কিন্তু জোড় করবেন না যেন।
ডাক্তারের কথা মনে রেখে কাজের মেয়ে জমিলাকে ওভাবেই নির্দেশ দিয়ে রেখেছে রোজীর বাবা-মা। এমনিতেই নীল এর মৃত্যুর পর থেকে রোজীর বাবার বাড়ির কেউ না কেউ এই বাসায় থাকে। কিন্তু আজ বাসায় কেবল ওরা দুজন। সেই সুযোগে একাকিত্ব পেয়ে বসেছে রোজীকে। এই পরিস্থিতিতে নিজের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠে জমিলা। তাই রোজীর কথার পিঠে কোন কথা না বাড়িয়ে রোজীকে হাত ধরে টেনে ওর শোবার ঘরে নিয়ে যায় সে। যেতে যেতে রোজী বলে,
তুই এমন করছিস কেন ? আমাকে ছাড়। অফিসের জন্য তৈরী হবো আমি। আর আমার বিছানায় নীল এর ছেড়ে যাওয়া কাপড়গুলো রয়েছে। ওগুলো গুছিয়ে রাখ। ফিরে এসে গুছানো না দেখলে আবার হৈ চৈ করবে।
ঠিক আছে। আমি গুছিয়ে রাখছি। তার আগে আপনি আসুন আমার সাথে। কোথায় খালুর ছেড়ে যাওয়া কাপড় দেখিয়ে দিবেন।
তা ও দেখিয়ে দিতে হবে তোকে। এতদিন যাবৎ এই বাসায় আছিস। এখন বলছিস তোর খালুর জামা-কাপড় তোকে চিনিয়ে দিতে হবে। আচ্ছা, ঠিক আছে। চল।
বলে শোবার ঘরে এসে বিছানার উপর আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে
এই তো !
সাথে সাথে নিজেই থেমে যায় রোজী। বিছানা থেকে নীল এর শার্ট-প্যান্ট হাতে তুলে নিয়ে বলে,
এগুলো তো ওর বাইরে যাবার কাপড়। আমি আলমারী থেকে বের করে দিয়েছিলাম পরে যাবার জন্য। চেঞ্জ না করেই চলে গেল !
টেনে টেনে কথাগুলো বলে রোজী তাকায় জমিলার মুখের দিকে। জমিলা দুহাতে ধরে রোজীকে খাটের উপর বসিয়ে দিয়ে বলে,
খালাম্মা, আপনি ভুল করছেন। খালু আসেনি। আসবেও না কোনদিন।
তাহলে আমার কাছে যে কাপড় চাইল বাইরে পড়ে যাবার জন্য ?
সেটাও আপনার মনের ভুল। আপনি ভুল শুনেছেন। এবার গোসল করতে যান। নইলে কিন্তু আপনার অফিসে পৌঁছুতে দেরী হয়ে যাব।
বলে কাপড়গুলো বিছানা থেকে আলমারীতে তুলে রাখে জমিলা। রোজী বাথরুমের দিকে যেতে যেতে বলে,
তাহলে যে নীল আমাকে এতগুলো কথা বলল ? ওগুলো কি সব মিথ্যে ? নীল এর অস্তিত্ব সেও কি ----
আর বেশীদূর ভাবতে পারে না রোজী। বিছানার উপর পরে থাকা মোবাইলটা বেজে উঠার সাথে সাথে দৌড়ে গিয়ে সেটা হাতে তুলে নেয় সে। হ্যালো বলতেই ওপাড় থেকে ওর মায়ের গলা।
রোজী, তুই কি আজ অফিস থেকে ফেরার পথে একবার বাসায় আসতে পারবি ? তোর বাবার শরীরটা বিশেষ ভালো না, বার বার তোর কথা বলছিল, তাই বলছিলাম। রাতে না হয় পলল গিয়ে তোকে আবার রেখে আসবে।
কিন্তু মা, আমার যদি ফিরে আসতে দেরী হয় আর নীল যদি ততক্ষণে অফিস থেকে ফিরে আসে আর আমাকে বাসায় না দেখে তাহলে মন খারাপ করবে। তুমি তো জানো ওর যাতে এতটুকু কষ্ট না হয় সেজন্য আমি প্রতিদিন নীল অফিস থেকে ফেরার আগে বাসায় চলে আসি।
মিরানা বেগম বুঝতে পারেন বাসায় একাকিত্বের সুযোগে রোজী আবার ডুবে গেছে নীলের জগতে। হয়তো গত সারারাত নীলকে নিয়ে ভেবে জেগে কাটিয়েছে। এই একাকিত্বের সুযোগ রোজীকে দেয়া মোটেও ঠিক হয়নি। তাড়াতাড়ি বলেন,
আচ্ছা, ঠিক আছে তুই অফিসে যা। তবে একটি কথা।
কি কথা ?
জিজ্ঞেস করে রোজী। মিরানা বেগম বলেন,
কিন্তু মা। নীল তো আর ফিরে আসবে না।
মা, তোমরা ভুল করছো। নীল একদিন না একদিন ফিরে আসবে। আমিও সেজন্য অপেক্ষা করে থাকি। যে কোন দিন নীল ফিরে এসে আমাকে সাথে করে নিয়ে যাবে। সেদিনই আমার অপেক্ষা শেষ হবে মা।
মেয়ের কথায় বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠে মিরানা বেগমের। ততক্ষণে টেলিফোন রেখে দিয়েছে রোজী। মিরানা বেগমও ফোনটা রাখতে রাখতে মনে মনে বলেন,
মা রে আমাদের মাঝে থেকে তুই এভাবেই অপেক্ষা করে থাক নীলের জন্য। দরকার নেই তোর এই অপেক্ষার পরিসমাপ্তির।
১৮ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৮:৩৩
সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার ভালো লাগছে দেখে আমারও ভালো লাগছে।
২| ১৮ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:২১
রেজা এম বলেছেন: ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ।
২০ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৭:৩৩
সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে সময় দিয়ে আমার লেখাটা পড়ার জন্য।
৩| ১৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৩২
দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: গল্পে ভাল লাগা রইল । ওহ ভাল কথা আমি কিন্তু আপনার বাবা দিবসের কবিতাটা প্রিয়তে রাখলাম ।ভাল থাকুন সব সময় ।
২০ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৭:৩৫
সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। আমার একটি লেখা আপনার প্রিয়তে স্থান পেয়েছে এ
তো আমার জন্য অনেক বড় একটা খবর।
ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:১২
হিমেল হাসান কাগজের খেয়া বলেছেন: খুব সুন্দর লাগল।