নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

সুফিয়া

পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।

সুফিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

খবরে প্রকাশ। প্রসংগ - - পাখি ড্রেস

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:২০

খবরে প্রকাশ। প্রসংগ - - পাখি ড্রেস



কোন চ্যানেলে খবরটা দেখেছিলাম সেটা সঠিকভাবে বলতে পারবনা। দিন-তারিখও মনে নেই। তবে ঈদের তৃতীয় দিন সন্ধ্যার খবর হবে। আমি মনযোগ দিয়ে খবর দেখছিলাম। ঈদকে ঘিরে কোথায় কি হচ্ছে বা ঘটছে সেটাই আমার মনযোগের মূল আকর্ষণ। হঠাৎ সেই আকর্ষণকে ছাপিয়ে বড় আর একটা খবরে চমকে উঠলাম আমি। ঈদে পাখি ড্রেস না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে দুই কিশোরী। ডিভোর্স হয়ে গেছে এক দম্পতির।



এটাকে কি বলব আমরা ? আকাশ সংস্কৃতির কুফল না সুফল ? সুফল বলার মতো মস্তিস্ক বিকৃতি এখনও আমার ঘটেনি। কুফল বললে এমন অনেকেই আছেন গোস্বা করবেন। বলে বসবেন যে আমরা আকাশ সংস্কুতিকে উদাত্তচিত্তে গ্রহণ করতে জানিনা বা পারিনা। তাই এমনটা হচ্ছে। আমরা ব্যাকডেটেড। আরও কত কি ! আমি তাই পূর্বের ঘটনা তিনটিকে ধরে নিলাম আকাশ সংস্কৃতির ফল হিসেবে। পাঠকরা অবশ্যই বুঝবেন সেই ফল কু-ফল, না সু-ফল।



বরাবর যা হয়ে থাকে, বোম্বের কোন ক্রেজ নায়ক বা নায়িকা বা তাদের হিট করা কোন ছবি অনুসারে পোশাকের নামকরণ করা হয়। আমাদের মতো হুজুগে মানুষের ঘাড় মটকিয়ে টাকা বের করে নেয়ার এটা একটা বড় মওকা কি-না ? সুযোগটা আমরাই দিয়ে থাকি। ঐসব নামধারী পোশাকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ি আমরা গুণাগুণ বিচার না করেই। যেন বোম্বের নায়ক-নায়িকা বা সিনেমার নামধারী পোশাক না হলে আমাদের উৎসবের আনন্দই পানসে হয়ে যাবে।



এবারও তেমনটাই হয়েছে। রমজান মাস শুরু হবার সাথে সাথে একটা পোশাকের নাম খুব কানে আসছিল। সেটা পাখি ড্রেস। টিভিতে ঈদের বাজারের দৃশ্য দেখতে গিয়ে দেখেছি শিশু-কিশোরী-তরণী সবাই দোকানে পাখি ড্রেস খুঁজছে। পাতলা জর্জেট কাপড়ের উপর জম্পেস কাজ করা পোশাকটি। কিন্তু কি এমন বিশেষত্ব আছে এই পোশাকের যে মুখে মুখে এত ছড়িয়ে গেল ? ভাবলাম বরাবর যা হয়েছে এবারও তাই হচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়িরা বাণিজ্য করার একটা বড় মওকা হাতে পেয়ে গেছে, কিশোরী-তরুণীদের মস্তিস্কের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পাখি ড্রেসকে ঢুকিয়ে দিতে পেরেছে। আর চিন্তা নেই তাদের। ব্যবসা এবার হবেই।



ঈদের আগের দিন আমার টিকা কাজের মেয়ে এসে জানাল যে ঈদের দিন খুব সকালে ওরা বাবা-মায়ের সাথে ঈদ করতে বাড়ি যাবে। সব ঠিকঠাক। কিন্তু ওর ছোট বোনটা, যার বয়স তের থেকে পনের এর মধ্যে, সে যাবেনা, রাাগ করেছে। কারণ একটাই। সেই পাখি ড্রেস। গতকাল দুই বোন মিলে বাজারে গিয়েছিল। ছোটটা আগেই বায়না ধরেছিল পাখি ড্রেস কিনবে। বাজারে গিয়ে সে যে পাখি ড্রেসটা পছন্দ করেছে সেটার দাম আট হাজার টাকা। কিন্তু ওদের হাতে আছে মাত্র চার হাজার টাকা। তাই আমার কাজের মেয়েটি নিজের জন্য কিছু না কিনে ছোটবোনকে বলেছিল চার হাজার টাকায় যে কোন একটা ড্রেস কিনতে। কিন্তু ওর এক কথা। ও আট হাজার টাকা দামের ঐ পাখি ড্রেসই কিনবে। অগত্যা রাগারাগি করে কেনাকাটা না করে ফিরে এসেছে দুই বোন। এর জের চলছে পরের দিন পর্যন্ত। বড়টা ছোটটাকে শাসন করতে গিয়ে গায়ে হাত তুলেছে। ফলশ্র“তিতে ছোটটা গোঁ ধরেছে এবার ঈদে বাড়ি যাবেনা। বড়টা দেশে তার বাবাকে ফোনে একথা জানালে ওদের বাবা বলে দিয়েছে ছোটটাকে ফেলে রেখে যেন বড়টা বাড়ি চলে যায়। ছোটটা যা ইচ্ছে হয় করুক।



আমি এখন যে অবস্থানে আছি তাতে পাখি ড্রেস পরার বয়স এবং রুটি কোনটাই নেই। তবু যে পাখি ড্রেস নিয়ে এতকিছু, খুব ইচ্ছে হলো সেই পাখি ড্রেসকে কাছ থেকে দেখার। ঈদের দিন বিকেলে বেড়াতে বের হলাম আমার বোনের মেয়ে ও একমাত্র নাতনীকে নিয়ে সংসদ ভবন এলাকায়। তখন লোকে লোকারণ্য সংসদ ভবন এলাকা। নানা রং ও ঢং এর নতুন পোশাকে শিশু. কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমার মনে পড়ে গেল পাখি ড্রেসের কথা। বোনের মেয়েকে বললাম, আমাকে একটু দেখাও তো কোনটা পাখি ড্রেস ? ও যা দেখাল তাতে আমার আক্কেল গুড়–ম অবস্থা ! এই সেই পোশাক !



ভারতে আমি প্রচুর গিয়েছি এবং এখন যাচ্ছি। ওখানকার মার্কেটে কেনাকাটার অভিজ্ঞতা আমার নেহায়েতই কম নয়। পাখি ড্রেস নামের যে ড্রেসগুলো আমাদের বাজারে তিন থেকে আট/দশ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো ভারতের বাজারে পাঁচশ রূপী থেকে শুরু করে হাজার/বারশ রূপী হবে। আমাদের টাকার হিসাবে আটশ থেকে বারশ কিংবা পনেরশ টাকা হবে। আমি শুধু ভাবলাম আমাদের কিশোরী-তরুনীদের আবেগকে পুঁজি করে কিভাবে বাজার দখল করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অন্য একটি দেশ।



যেদিনের খবরের প্রসংগ দিয়ে শুরু করেছিলাম এই লেখা। এর দুই/তিন দিন পরই দেখি চ্যানেল একাত্তরে টকশো হচ্ছে পাখি ড্রেস নিয়ে। ঈদের সময় যে বিপুল অংকের টাকার পোশাক বাণিজ্য হয় আমাদের দেশে সেটা নিয়েই মূলত কথা বলছিলেন বক্তারা। স্বাভাবিকভাবে এই সময়ের ক্রেজ এবং একাধিক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী পাখি ড্রেসের প্রসংগ উঠে এসেছে তাদের আলোচনায়। একটা বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেছেন যে, ঈদকে ঘিরে আমাদের দেশে এই যে বিপুল অংকের পোশাক বিক্রয় হয় সেই অর্থের সিংহভাগই চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। অর্থাৎ পোশাকগুলো আসছে দেশের বাইরে থেকে এবং আমাদের বাজারে স্থানীয় পোশাকের চেয়ে ঐ পোশাকগুলোর দৌরাত্ম বেশী। এর কারণ কি ? বক্তারা খুব সহজভাবে বললেন, ক্রেতার রুচি ও চাহিদা বুঝতে না পারা এবং পোশাকে বৈচিত্র আনতে না পারা।



আমরা তো প্রতিবারই দেখছি ঈদকে কেন্দ্র করে এরকম কোন না কোন নামে বিদেশী পোশাকের একটি ক্রেজ চালু হয়ে যায় আমাদের দেশে, যার দিকে দুর্নিবার আকর্ষণে ছুটে যায় আমাদের কিশোরী-তরুণীরা। অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে আমাদের ঈদকে সামনে রেখে আগ থেকে এই কাজটা করা হয় অর্থাৎ এরকম একটা ক্রেজ তৈরী করা হয়। তাহলে ? আমরা কেন পারিনা ? বারবার দেখেও কেন শিখতে পারিনা আমরা ? পাখি ড্রেসের মতো যে কোন নামে একটা ড্রেসের ক্রেজ তৈরী করতে আমাদের বাধাটা কোথায় ? একটু চেষ্টা করে দেখি না কেন আমরা ?





মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:৩০

দূর আকাশের নীল তারা বলেছেন: ভারতীয় চ্যানেল গুলো যদি বন্ধ করে দেয়া যেত, তাহলেই কিন্তু সবকিছুর সমাধান হয়ে গেল। আমাদের ভাবতে হবে, ভারতীয় চ্যানেলগুলো কি সাংষ্কৃতিকভাবে আসলেই আমাদের কিছু দিচ্ছে?

০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:৫০

সুফিয়া বলেছেন: আপনার সাথে আমি একমত। ভারতীয় কিছু কিছু চ্যানেলের সম্প্রচার আমাদের দেশে বন্ধ হলে ভাল বৈ খারাপ হবেনা।

ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:২৪

রেজা এম বলেছেন: কথায় আছে , হুজুগে বাঙ্গাল B-) B-) B-) B-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.