![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।
যাক গে। যে কথা বলছিলাম। এই গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারত কিংবা আমি শেষ করে দিতে পারতাম। কিন্তু সেটা করলে অবিচার করা হবে সুচির প্রতি এবং অন্য আর একজন মহান ব্যক্তির প্রতি। পাঠকদের নিকট অজানা থেকে যাবে ভাগ্যের কাছে হার না মেনে শূন্য থেকে মাথা তুলে দাঁড়ানো একটি মেয়ের গল্প। সেই গল্পই এখন বলব।
সেই সুচি এখন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা, একজন সুগৃহিনীও বটে। তার চেয়েও বড় খবর হলো সুচি এখন তার মুক্তাসহ দুই সন্তানের জননী এবং তৃতীয়বার মা হবার জন্য আসন্ন প্রসবা।
মানুষকে নিয়ে বিধাতার ভাগ্য-খেলার এ হলো এক অনন্য উদাহরণ। তা নাহলে কি করে সুচির জীবনের এমন পট পরিবর্তন ঘটতে পারে ? সুচি তার ছোট্ট মুক্তাকে নিয়ে সেই যে বাপের বাড়িতে চলে এসেছিল তার আর ফিরে যাওয়া হয়নি সেখানে। মানে যেতে দেয়া হয়নি তাকে। বাবা-মা, ভাই-বোনসহ পরবিারের সবাই সুচিকে মানসিকভাবে উঠে দাঁড়াবার শক্তি যুগাতে লাগল। আবার স্কুলে ভর্তি হলো সুচি। এসএসসি পরীক্ষা দিল। আগের প্রত্যাশিত ফলাফল না হলেও ভাল ফল করল সুচি। তারপর একইভাবে অতিক্রম করল এইচ এস সি। এরপর প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে সফলতা পেল। শিক্ষকতার জীবন শুরু করল সুচি। পাশপাশি মুক্তা গুটি গুটি পাডে স্কুলে যেতে শুরু করেছে। মামারা ওকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। স্কুলটি মুক্তার বাবার বাড়ির কাছে।
এর আগে এতদিন ধরে মুক্তার দাদা-দাদু কিংবা একমাত্র চাচা একদিনের জন্যও মুক্তা কিংবা তার মায়ের খবর নেয়নি। কিন্তু এবার মুক্তাকে স্কুলে দেখতে আসে তার দাদু। প্রতিমার মতো গড়ন নাতনীর মুখটি দেখে বুঝি বা তার মায়া হয়। সুচির বাবার বাড়ি এসে সে বায়না ধরে, মুক্তা তার নাতনী, তার বংশধর। তাই মুক্তাকে সে নিজের কাছে নিয়ে রাখবে। কিন্তু তার এমন প্রস্তাবে রাজী হবার মতো পাগল তো কেউ হয়ে যায়নি সুচির পরিবারে। তাই সুচির শ্বাশুড়ির এই প্রস্তাব কোন সাড়া পেলনা কারও কাছ থেকে।
এরপর নতুন কৌশল অবলম্বন করে সুচির শ্বাশুড়ি। ছেলে রোমেল মারা গেছে তো কি হয়েছে ? সুচি তার ছেলের বউ আর মুক্তা তার বংশধর। কাজেই ছেলের বউকে সে বাড়ি নিয়ে গিয়ে রাখবে। কিন্তু শ্বাশুড়ির বিভীষিকাময় আচরণের কথা ভুলেনি সুচি। তাই সে কিছুতেই যাবেনা ওবাড়ি। সুচির অভিভাবকরাও কেউ রাজী নয় সুচিকে পুণরায় ঐ নরকে পাঠাতে। এরইমধ্যে সুচির জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসে। সুচির অভিভাবকরাও চেষ্টা চালায় যদি ভাল ঘর-বর দেখে মেয়েটার একটা বিয়ে দেয়া যায় ! এই খবরও পৌঁছে যায় সুচির শ্বাশুড়ির কানে। উদ্ভট এক প্রস্তাব নিয়ে আসে সে। তার ছোট ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে সুচিকে সে ছোট বৌ করে নিয়ে যেতে চায়। অথচ তার এই ছেলেটি বয়সে সুচির ছোট। এই প্রস্তাবে সবাই অবাক হলেও সুচির শ্বাশুড়ির আসল কুটচালটা বুঝতে বাকী থাকেনা কারও। সুচির সন্তান তার বংশধর হিসেবে সম্পত্তির অংশীদার। এখন সুচির যদি অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায় এবং মুক্তাকেও সাথে করে নিয়ে যায় তাহলে মুক্তার অংশের সম্পত্তি হাতছাড়া হয়ে যাবে।
কিন্তু সুচির পরিবারের দৃঢ়তার কাছে তার শ্বাশুড়ির কোন কুট-কৌশলই টিকেনি। এদিকে মেয়ের কথা ভেবে সুচিও বিয়েতে রাজী হয়না। এমন সময় এক বিপতœীক সেনা কর্মকর্তা সুচিকে বিয়ে করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন সুচির সবকিছু মেনে নিয়ে। এমনকি সুচির মেয়ে মুক্তাকেও সে মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করতে রাজী। তার শুধু নিজের জন্য বউ চাইনা, মা-হারা তার সাত বছরের একমাত্র ছেলে অনির মা হবে সুচি। সবদিক বিবেচনা করে সবাই রাজী হয় এই বিয়েতে। সুচিও মত দেয়। দ্বিতীয় বারের মতো বিয়ে হয়ে যায় সুচির। মেয়ে মুক্তাকে সাথে নিয়ে সুচি শ্বশুর বাড়ি যায়। এই বিয়েটাকে শুধু বিয়ে বললে পুরো আনুষ্ঠানিকতাটিকে সীমিত করে ফেলা হবে। তার কারণ, এই বিয়ের ফলে বাপহারা মুক্তা পেয়েছে বাবার আদর-স্নেহ আর মা-হারা অনি পেয়েছে মায়ের ¯েœহ ভালবাসা। মা-বাবা-ভাই-বোন আর স্বামী-স্ত্রীর হৃদয়ের গভীর বন্ধনে একটি সত্যিকার সুখী পরিবার গড়ে তুলেছে ওরা এখন।
সর্বশেষ গত এপ্রিল মাসে এক অনুষ্ঠানে সুচির সাথে আমার দেখা হয়। দুই-সন্তান মুক্তা আর অনিসহ তার স্বামীও এসেছিল ঐ অনুষ্ঠানে। মুক্তাকে আমি এর আগে কখনও দেখিনি। কিন্তু সেদিন দেখার পর মনে হয়েছে অমন সুন্দর শান্তশিষ্ট মেয়েটিকে বিধাতা কোন কষ্ট দিতে পারেন না। মুক্তার এই বাবার সাথে কথা বলার সুযোগ আমার হয়নি। তবে মনে মনে তার প্রতি অসম্ভব এক শ্রদ্ধাবোধ আমার মনে জেগে রয়েছে। তার ¯েœহের ছায়ায়, হৃদয়ের মায়ায় যেন পুপোপুরি ঢাকা পড়ে যায় মুক্তার শিশুকালের দুর্বিসহ জীবনের ছবি। তেমনি তার বিশাল হৃদয়ের অকৃত্রিম ভালবাসায় সুচির মনের ভিতর গেঁথে থাকা খেদ যেন কোনদিন জেগে উঠতে না পারে। ওরা সবাই যার যার বুকের ভিতরের কষ্টের খাদটাকে ভরে তুলুক নতুন জীবনের সুখগাঁথা দিয়ে।
প্রথম অংশের জন্য ক্লিক করুন।
Click This Link
০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:২৪
সুফিয়া বলেছেন: আপনার দোয়া মহান আল্লাহ তায়ালা কবুন। এই দোয়া আমিও করছি।
২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৯
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: ভাল হয়েছে ।
৩| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১২
নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: প্রথম অংশটুকু পড়ে পড়ে নেব।
৪| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩১
অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: পড়ে ভালো লাগলো।
৫| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫০
সুফিয়া বলেছেন: সবাইকে অনুরোধ করছি লেখাটার প্রথম অংশটা পড়ার পর যা হোক মন্তব্য করনি। এটা কোন কাল্পনিক গল্প নয়। তাই আমার লেখাটা ভাল হল না-কি খারাপ হলো সেটা মুল বিষয় নয়। এটা স্কুলগামী একটি মেয়ের জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্বিসহ এক কাহিনী, যা আমি অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছি। স্কুলের গন্ডী না পেরোতেই একটি মেয়ে কি করে এক বখাটে ছেলের বউ হতে বাধ্য হলো, তারপর অপ্রাপ্ত বয়সে সন্তানের জননী হলো এবং সন্তানের জননী হবার কয়েক মাসের মাথায় বিধবা হলো। সেখান থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সেই মেয়েটি কিভাবে এখন একজন স্কুল শিক্ষিকা এবং সুগৃহীনি, সেই কাহিনীটাই আমি এখানে সকলকে জানাতে চেয়েছি। তাই অনুরোধ করছি সবাইকে প্রথম অংশটা একটু কষ্ট করে আপনার মূল্যবান সময় খরচ করে পড়ুন। তারপর মন্তব্য করুন।
ধন্যবাদ সবাইকে, যারা মন্তব্য করেছেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫০
ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: নতুন এই সুখী পরিবারের জন্য শুভ কমনা। তবে কোন সন্তান ই যেন বাবা, মা আথবা বাবা+মা ছাড়া না হয়। আল্লাহর কাছে কড়জোড়ে অনুরোধ আল্লাহ তুমি আমারদের সন্তানদের পিতৃ-মাতৃহীন কর না।