নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

সুফিয়া

পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।

সুফিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্নের মিছিল ও মোহনায় নদী

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২৭

স্বপ্নের মিছিল ও মোহনায় নদী

নিঝুপ প্রকৃতি গোপন অভিসারে ব্যস্ত। চাঁদের আলো প্রকৃতির উন্মত্ত ভালবাসার দিকে ধাবমান। পাতার গায়ে বাতাসের ঝিরঝির কাঁপুনি। শান্ত সরোবরে আকাশ থেকে ঝরে পড়া তারাদের মিছিল। ঘুম ঘুম আবহে জোনাকীদের এলোপাথারি ছুটে চলা।

এসব কিছুর মিলন ক্ষণে নিজকে জড়াতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে মিতুলী। নিজকে বড় অসহায় মনে হয় তার। ভাবে এই মুহূর্তে এসবের মাঝে হারিয়ে যেতে পারলে সেই অধরা সুখের সন্ধান পাওয়া যেত।

সুখ! কোথায় তার ঠিকানা? কোন অচেনা রাজ্যের অন্ধকার গলিপথ ধরে হাঁটলে একে খুঁজে পাওয়া যাবে। কে জানে?

গভীর রাতের নিস্তব্ধ প্রহরের বুকে মিতুলীর ভাবনাগুলো এভাবেই খাবি খেতে থাকে। ঘুম নামক প্রকৃতির শীতল ভালোবাসা এই মুহূর্তে তার চোখ থেকে উধাও। এর পিছু ছুটার কোন তাগিদ অনুভব করেনা মিতুলী নিজের ভিতর। তার মনের আঙ্গিনায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে দীর্ঘদিনের কোন এক না পাওয়ার অতৃপ্ত আর্তনাদ। মিতুলীর এই আর্তনাদ কেউ শুনতে পায়না। পাশে শুয়ে থাকা মানুষটি অনুভবের ছোঁয়ায় আজ পর্যন্ত মিতুলীকে এই রুদ্ধ কারাগার থেকে বের করে আনতে পারেনি। হয়ত তার মধ্যে এমন কোন চেষ্টাই নেই। অন্তত মিতুলীর চোখে একবারও তা ধরা পড়েনি। অথচ এই লোকটিই মিতুলীর স্বামী। তার সুখ-দু:খের সাথী। জীবনের সমস্ত চড়াই-উৎরাইগুলো একসংগে হাতে হাত রেখে পাড়ি দেবার অঙ্গীকারে মিতুলীকে বউ করে ঘরে এনেছিল সে।

আজ মিতুলীর কাছে সবকিছুই অতীত। যে অতীতের কোন রং নেই। অন্ধকারে সরিসৃপের মতো হেঁটে এসেছে সে অতীতের এই পাঁচটি বছর। এ থেকে কি পেয়েছে মিতুলী? অভাবের আষ্ঠেপৃষ্ঠের বাঁধন, অনিশ্চিত জীবনের ছোবল- কোন কিছুই বাদ যায়নি তার পাওয়ার হিসেব থেকে। অথচ এসব কিছুর প্রতি কোন তোয়াক্কা নেই ময়েজ আলীর। ঘরে এক বেলার খাবারের যোগাড় থাকলে পরের বেলার চিন্তা তাকে ব্যতিব্যস্ত করেনা। ঠেলা গাড়ীটা অবহেলায় পড়ে থাকে দিনের পর দিন। মিতুলীর মাঝে মাঝে মনে হয় সবকিছুকে উপেক্ষা করে সে নিজেই বেরিয়ে পড়বে ঠেলাগাড়ীটা নিয়ে।

না: মিতুলী এভাবে দেখতে চায়নি তার জীবনটাকে। ময়েজকে যেদিন সে প্রথম দেখেছিল সেদিন থেকে এক ধরনের বিভোরতা তাকে ঠেসে ধরেছিল। ময়েজের গাড়ীতে চড়ে নানীর বাড়ি যাওয়ার পথে ময়েজের কণ্ঠের উদাত্ত গান সারা রাস্তা আবিষ্ঠ করে রেখেছিল মিতুলীকে। ময়েজেরও মনে ধরেছিল মিতুলীকে। মিতুলীর ডাগর ডাগর চোখ দু’টি ময়েজকে পাগল করে তুলেছিল। সেই থেকে মিতুলীকে ঘরে তোলার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ে ময়েজ। অবশেষে সফল হয় ময়েজ। সৎপাত্র কিনা জানেনা । তবে মিতুলীর জন্য ময়েজকে উপযুক্ত পাত্রই ভেবেছিল মিতুলীর বাবা-মা। রঙিন সুতোয় ঘুড়ি উড়ানোর মতো নিজের মনের বাঁধন খুলে দিয়েছিল মিতুলী ময়েজকে পেয়ে।

কিন্তু তার উড়ন্ত মনে পিছুটান লাগতে সময় লাগেনি। মিতুলী আবিস্কার করে তার স্বামীর মধ্যে এক ধরনের অর্কমণ্যতা বোধ কাজ করে সব সময়। ঘরে তৃতীয় কোন মুখ না থাকায় অভাবের ছোবলটা বাইরে থেকে অতটা চোখে পড়েনা। কিন্তু এটা মেনে নিতে পারেনা মিতুলী। হোক না দু’জনার সংসার। তাই বলে ঘরে বসে এমন আলসেপনায় দিন কাটাতে হবে? অভূক্ত পেটে গান গেয়ে শুধুমাত্র মনের খোড়াক যুগিয়ে কতদিন চলা যায়? ভবিষ্যত বলে তো একটা কথা আছে! সংসার বড় হবে, মুখ বাড়বে। তাছাড়া দু’জনার সংসারে একটু বাড়তি স্বাচ্ছন্দের ব্যবস্থা করা গেলে ক্ষতি কি? কিন্তু ময়েজকে কে বুঝাবে এসব কথা? মিতুলীর কথা তার খোড়া যুক্তির কাছেও হার মেনে যায়।

বউ তুই মিছিমিছি ভাবছিস। সংসার ভরা আরাম আয়েশ থাকলে সেখানে গানের সুরে নিজকে উজাড় করে দেয়া যায়না। এ এক অন্য রকম আনন্দ রে বউ। এই গান শুনেই তো তুই আমাকে ভালোবেসেছিলি। মনে নেই তোর?

হ্যাঁ বেসেছিলাম। তখন পেটের মধ্যে ক্ষুধার গুমঢ় কান্না ছিলনা। তোমার সংসারে আসার পর সেই কান্না আমাকে অহরহ কাঁদায়। আমি পারিনা গানে মজে থেকে ক্ষুধার আস্ফালন ভুলে থাকতে।

কিন্তু তোকে তা পারতেই হবে বউ। আমিও যে পারিনা গান ছাড়া থাকতে। সব সময় কাজে ডুবে থাকতে আমার ভালো লাগেনা।

আর কথা বাড়ায়না মিতুলী। শুধু মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নেয়। গান পাগল ময়েজকে ঘিরে তার মনে আশার ডাল-পালা সে আর মেলতে দিবেনা। ময়েজ কোনদিন তার স্বপ্নের বাগানে ফুল ফুটাতে পারবেনা। একাজ তাকেই করতে হবে। অভাবের সাথে যুদ্ধ করে সংসারে একটি ছোট্র স্বপ্নের আঙিনা গড়ে তুলতে হবে তাকেই।

বসত বাড়ির পাশে নিজের এক টুকরো জমি, একটি ছোট্র উঠোন, গাছের ফাঁক গলিয়ে ছিটকে পড়া ঝিকিমিকি রোদের আলোয় সেই উঠোনে ছোট ছোট হাত-পা মেলে খেলা করবে ছোট্র একটি শিশু। এই তো মিতুলীর স্বপ্ন। আর এই স্বপ্নই তাকে একদিন টেনে নিয়ে যায় মাতবর বাড়ির ধান ভানার কাজে। মিতুলী ঢেকিতে একটি করে পাড় দেয় আর তার স্বপ্নের আঙিনা একটু একটু করে বড় হতে থাকে। নিজের শরীরের রক্ত শুষে বড় হতে থাকা ভ্রুণটির গায়ে আলতো করে হাত বুলাতে ইচ্ছে করে মিতুলীর। বলতে ইচ্ছে করে, ওরে দুষ্টু তুই কবে পৃথিবীর আলোতে বের হয়ে আসবি। আমার যে আর তর সইছেনা। তোর জন্য আমি ছোট্র ছোট্র অসংখ্য স্বপ্নের বীজ ছড়াচ্ছি চারপাশে। তুই এসে মুঠোয় মুঠোয় কুড়াবি সেই সব স্বপ্ন। আমি ভালোবাসার রঙিন সূতোয় জড়িয়ে রাখব সেগুলোকে।

মিতুলীর ভারী শরীরটা তার পরিশ্রান্ত সময় প্রবাহকে মেনে নিতে পারেনা। ধান ভানতে ভানতেই তলপেটে মোচড় দিয়ে উঠে মিতুলীর। দু’পা বেয়ে নেমে আসা রক্তের স্রোতধারায় খান খান হয়ে যায় মিতুলীর স্বপ্নের আঙিনা। চোখের জলে নদী বইয়ে মিতুলী আশ্রয় নেয় রাতের নিদ্রাহীন কোলে। সেই থেকে রাত জেগে প্রকৃতির খেলা উপভোগ করার মাঝে নিজের চিরচেনা অস্তিত্বকে খুঁজে ফিরে মিতুলী। ময়েজের এসব কোন কিছুতেই যেন কোন বিকার নেই। গানের সুরে নিজের অর্ন্তভেদী বেদনা বইয়ে দিয়ে আপাতত বেঁচে গেছে সে। কিন্তু মিতুলীর তো সে উপায় নেই। বরং ময়েজের একটি কথা তার বেঁচে থাকার সমস্ত আকাংখাকে দুমড়ে মুচড়ে খান খান করে দিয়েছে। ময়েজ ওকেই দোষী করছে সন্তান নষ্ট হবার জন্য।

আমার সন্তানটাকে তুই মেরে ফেললি বউ?

এই একটিমাত্র কথা মিতুলীর জীবনের সমস্ত আকুপাকু জিজ্ঞাসাগুলোকে এক ধাক্কায় ফেলে দিয়েছে অনিশ্চিত গহবরে। মিতুলী সেখান থেকে উঠে আসার পথ খুঁজে। রাতের নিস্তব্ধ আঁধার তাকে সেই পথের সন্ধান দিতে পারেনা। বরং এক অজানা রহস্যঘেরা জীবনের হাতছানিতে আবিষ্ঠ করে রাখে মিতুলীকে। মিতুলী ঘুমন্ত ময়েজের দিকে কিছুক্ষণ অপলক তাকিয়ে থাকে। পারবে কি সে নতুনের হাতছানিতে সাড়া দিয়ে এই মানুষটাকে নিয়ে স্বপ্নের একটা ছোট্র আঙিনার সন্ধান পেতে?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৯

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: মিতুলীর কথামালা ভালো লাগলো । জীবন বুঝি এমনই ! +

ভালো থাকবেন অনেক :)

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৯

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ বন্ধু রায়হান। আপনি ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.