![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।
সন্তান নিজের দুঃখ-কষ্টের ভাগ যত সহজে মা-বাবার সাথে ভাগাভাগি করে নেয় নিজেদের সুখের ভাগটুকু সেভাবে দেয় না।
সন্তানরা তাদের মা-বাবাকে দুঃখ-কষ্টের দিনে যতটা কাছে টেনে নেয় সুখের দিনে কি তা করে ? অর্থাৎ একটা সন্তান যতটা সহজে তার মা-বাবাকে নিজেদের দুঃখ-কষ্টের ভাগীদার করে ঠিক ততটাই কি সুখের ভাগীদার করে ? প্রশ্নটা মনে জাগতেই ছটফট একটা উত্তর পেয়ে গেলাম নিজের ভিতর থেকে। সেটা হলো ‘না’।
এই প্রশ্নটা কেন আমার মনে এলো সে প্রসঙ্গে এবার একটু বলি। মূলত সেটাই এই লেখার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। গত ১ নভেম্বর, ২০১৪ তারিখে সকালে অফিসে ঢুকার পর পরই এক মধ্যবয়স্ক হিন্দু মহিলা আসে। জিজ্ঞেস করে জানা গেল সে এমডি সাহেবের সাথে দেখা করতে এসেছে। এমডি স্যার সেদিন ঢাকায় ছিলেন না। তাই অফিসে আসার কোন নিশ্চয়তা নেই। আমরা সে খবর মহিলাকে জানিয়ে দিলাম। তবু বসে রইল মহিলা।
দরজা খুলে ঢুকতেই ভিজিটরদের বসার ব্যবস্থা। মহিলা সেখানে বসে ঘুমিয়ে গেল। একটা অফিসে এই দৃশ্য বড় দৃষ্টিকটু লাগে। তাই অফিসের ষ্টাফ একবার গিয়ে ডেকে তুলল মহিলাকে। বলে আসল, অফিসে ঘুমাবেন না, এটা খারাপ দেখা যায়। তবু মহিলা বসে রইল। এটা দেখে আমি একটু উৎসাহী হলাম। গিয়ে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, সে আমাদের এক কলিগের মা। তার ছেলে আমাদের এক শাখার ম্যানেজার ছিল। তাকে গতকাল জরুরী ভিত্তিতে তুলে আনা হয়েছে অনিয়মের অভিযোগে। এ কারণে সে তার মাকে ডেকে এনেছে এমডি স্যারকে বুঝানোর জন্য।
বিষয়টা আগে আমার জানা ছিলনা। তবে বুঝলাম গুরুতর কিছু ঘটিয়েছে এই মহিলার ছেলে ঐ শাখায়। ইদানীং ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে নানা অভিযোগের খবর আমাদের কানে আসছে। তাই আমি বিষয়টি নিয়ে আমার সিনিয়র এক কলিগের সাথে কথা বললাম। দেখলাম উনি সবই জানেন। জানালেন ঐ ম্যানেজারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের যে প্রমাণ পাওয়া গিযেছে তা গুরুতর। চাকুরি থাকে কি না সন্দেহ আছে। সাধারণত ব্যাংক এ জাতীয় আর্থিক কেলেংকারিতে জড়িত দোষীদের কোনভাবেই ক্ষমা করে না।
আমি এ নিয়ে আর কোন কথা বললাম না। গতকাল থেকেই দেখছিলাম এমডি স্যারের মেজাজ খুব খারাপ। বুঝলাম সেটা এ কারণেই। তাছাড়া এসব ব্যাপারে কোন কথা বলা বিপদজনক। তবে মহিলার এভাবে বসে থাকাটা সবার জন্য রীতিমতো অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়াল। তাই আমি আবার তার কাছে গিয়ে বললাম, আপনি এভাবে বসে আছেন ? এমডি স্যারের দেখা তো আজ পাবেন না। তারপর তাকে আমি কিছু খাবার অফার করলাম। কিন্তু কিছু খেতে রাজী হলনা মহিলা। জানাল এমডি স্যারের সাথে দেখা না হলেও তাকে সারাদিন এখানে বসে থাকতে হবে। তার ছেলের যেহেতু বসার সুব্যবস্থা নেই তাই তার মাকে ওখানে বসাতে পারছে না। ঢাকায় মগবাজারে তার এক দূর সম্পর্কের বোন আছে, সেখানেই উঠেছে ছেলে। কিন্তু মহিলা যে এখন ওখানে যাবে তার কোন উপায় নেই। কারণ, ছেলে কিছুতেই অফিস সময়ে বের হতে পারবে না, সে ঐ বিভাগের নজরদারিতে আছে। মহিলা নিজেও ঢাকার রাস্তা-ঘাট কিছু চিনেনা। তাছাড়া গিয়েও লাভ নেই। ঐ বাসায় এখন তালা, সবাই অফিসে আছে।
এটুকু বলে মহিলা একটু থামল। মহিলার শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে আমার খুব কষ্ট হলো। আমি আবারও বললাম, সারাদিন এভাবে বসে আছেন। কিছু খান, আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কিন্তু সে কিছুতেই কিছু খাবে না। বলল, আমি এভাবে বসে আছি বলে আপনাদের অসুবিধা হচ্ছে জানি। কিন্তু আমি নিরুপায়। খুলনা থেকে রাতের কোচে এসেছি। ছেলে আমাকে বাস থেকে নামিয়ে সরাসরি এখানে নিয়ে এসেছে। রাতে ঘুমাতে পারিনি, তাই ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু এমডি স্যারের সাথে যে করেই হোক আমাকে দেখা করতেই হবে। আমার একটামাত্র ছেলে, ওর চাকুরিটা চলে গেলে আর কিছু থাকবে না আমাদের। মহিলা আরও জানাল যে, ছেলের এই খবর শুনে তার বাবা স্ট্রোক করেছে। বাড়িতে কেউ না থাকায় তাকে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে রেখে আসতে হয়েছে।
তারপর মহিলা তাদের পারিবারিক অবস্থা এবং তার ছেলের এই অবস্থার জন্য কারা, কিভাবে দায়ী সে বিষয়ে আমার কাছে অনেক কিছু বলার চেষ্টা করল কান্নাজড়িত কন্ঠে। কিন্তু এই মুহূর্তে মহিলাকে বিশেষ করে একজন মাকে সান্তনা দেয়ার মতো কিছু নেই আমার কাছে। কারণ, একটু আগে মহিলার ছেলের যে কর্মকান্ডের কথা আমি শুনেছি তাতে ওকে ক্ষমা করার তো প্রশ্নই উঠেনা। বরং আরও কঠিন কি শাস্তি হয় ওর সেটাই এখন দেখার বিষয়। এই মহিলা মাতৃসুলভ স্নেহবাৎসল্যের কারণে ছেলের অপরাধটা হয়তো এভাবে দেখছেই না অথবা ছেলে হয়তো তার মাকে যতটা জানিয়েছে সেখানে নিজের অপরাধকে ততটা প্রকাশ করেনি।
মহিলার কান্না দেখে তার ছেলের উপর আমি যথেষ্ট বিরক্ত হলাম মনে মনে। আমার কলিগকে এসে বললাম, ঐ ম্যানেজার অফিসে যতটুকু অপরাধ করেছে তো করেছেই, এখন মাকে এভাবে সারাটা দিন কষ্ট দিয়ে আরও অপরাধ করছে। যাই হোক, সন্ধ্যা ছ’টার পরে আমি যখন অফিস থেকে বের হই তখন এই ফ্লোরে মহিলা আর কেউ নেই। খুব জুনিয়র কয়েকজন পুরুষ কলিগ আর স্টাফ আছে। এ অবস্থায় মহিলাকে অফিসে রেখে বের হয়ে যেতে আমার খারাপ লাগছিল। তাই আমি মহিলার কাছে গিয়ে বললাম, আমি এখন বের হবো। এখানে মহিলা আর কেউ নেই। সবাই বের হয়ে গেছে। আপনি কি বসে থাকবেন ? মহিলা অসহায়ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আমার ছেলে তো বলেছে রাত ন’টার আগে বের হতে পারবে না। আমি বললাম, রাত ন’টা পর্যন্ত এখানে কেউ থাকবে না। বড়জোড় সাতটা পর্যন্ত দুই/একজন থাকবে। মহিলা বলল, ঠিক আছে। আমি চলে যাই। দেখি ছেলে কোথাও বসতে দিতে পারে কি না।
উঠে গেল মহিলা। আমি অসহায়ের মতো তার গমন পথের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। মনে মনে বললাম, হায় রে মা ! সন্তানের জন্য সারাটা জীবন কেবল কেঁদেই গেল। আর সন্তান ! মা-বাবার বেলায় সন্তানরা প্রায়ই স্বার্থপর হয়ে থাকে। তাই সন্তান নিজের দুঃখ-কষ্টের ভাগ যত সহজে মা-বাবার সাথে ভাগাভাগি করে নেয় নিজেদের সুখের ভাগটুকু সেভাবে দেয় না। যদি দিত তাহলে পৃথিবীতে এত মা-বাবার চোখে অশ্রু ঝরত না।
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০২
সুফিয়া বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ । আমি জানি কেন কোন মন্তব্য আপনি করতে পারছেন না। আমার মনের ভিতরও সেই দিন থেকে একটা কষ্টের অনুভূতি দলা পাকিয়ে আছে।
২| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:১৮
আহলান বলেছেন: ঐ ম্যনেজার তো আসলেই ...অমানুষের জাত মনে হচ্ছে ...এটা কি কোন কো-অপারেটিভ ব্যাংক নাকি?
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৫
সুফিয়া বলেছেন: না, এটা কোন কো-অপারেটিভ ব্যাংক নয়, প্রাইভেট ব্যাংক।
ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্য।
৩| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২৭
ইলা বলেছেন: মা' সন্তানের জন্য কষ্ট করে সুখ পান। কারন সন্তানকে নিয়েই তঁার যত স্বপ্ন। িকন্তু আমরা সেটাকে দুর্বলতা বা কর্তব্য মনে করি। কী চান তঁারা আমাদের কাছে?? কখনও জিজ্ঞাস করা হলে উত্তর আসে -`কিছু না বাবা তোরা সুখে থাক।`
সেই মা'কেই আমরা বৃদ্ধ নিবাসে বাঠায়ে সুখে থাকি।
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৫
সুফিয়া বলেছেন: এখানেই মায়েদের দুর্বলতা। সন্তানের জন্য কষ্ট করে সুখ পান। আর সন্তানরা তারই সুযোগ গ্রহণ করে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
৪| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪২
মনিরা সুলতানা বলেছেন:
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৬
সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকবেন।
৫| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০৭
ঢাকাবাসী বলেছেন: সিনিয়রদের বলছি, দেখুন আর পড়ুন:
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৬
সুফিয়া বলেছেন: সুন্দর একটি পাখির ছবি দেয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
৬| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪৪
ঢাকাবাসী বলেছেন: পাখীর নীচে কিছু লেখা আছে রিটায়ার্ড সিনিয়রদের জন্য, পড়ুন।
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৫৬
সুফিয়া বলেছেন: আপনার লেখাটা আমি পড়েছি। কিন্তু আমার মনে হয়না কোন মা-বাবা সন্তানের প্রয়োজনের সময় এই ফান্ডটা খরচ না করে নিজের জন্য রেখে দিতে পারবে ।
এখানেও সেই সুবিধাবাদী সন্তান !
ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকেবন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:১৩
ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: মন্তব্য নি:প্রয়োজন।