নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।

সুফিয়া

পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।

সুফিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফরমায়েসী বক্তৃতা

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:০৮

ফরমায়েসী বক্তৃতা

সাহিত্য রচনায় মোটামুটি দখল আছে আফসানের। এটা ওর অফিসের সবাই জানে। বিষয়টা আফসানের জন্য একটা ভালো খবর বৈ তো নয়। কারণ, সাহিত্য রচনার বিষয়টি যদি কেউ না জানল তবে সেই সাহিত্যিকের লেখালেখির আনন্দ অনেকাংশে অপূর্ণ থেকে যায়। লেখক মাত্রেরই মনে একটা সুপ্ত বাসনা থাকে। সে চায় তার সম্পর্কে মানুষ জানুক, বেশী বেশী তাকে নিয়ে আলোচনা করুক মানুষ।

সেদিক থেকে দেখলে আফসানের সাহিত্য রচনার বিষয়টি অফিসের সকলেই জানে এটা কোনভাবেই তার জন্য দুর্ভাবনার কারণ হতে পারেনা। আফসান তাই তার কোন লেখা কোথাও প্রকাশিত হলে আগ্রহভরে সেটা অফিসের সবাইকে দেখায়। কিন্তু সব মানুষ যে সাহিত্য বুঝেনা কিংবা সাহিত্যের মূল্য দিতে জানেনা এটা হয়তো আফসানের জানা ছিলনা। তাই কেউ যখন তার সাহিত্য সাধনার বিষয়টি নিয়ে টিপ্পনী কাটে তখন একটুক্ষণের জন্য থমকে যায় আফসান। কিন্তু যারা সাহিত্য নিয়ে টিপ্পনী কাটতে পারে তারা শুধু এখানেই থেমে থাকেনা। মাঝে মধ্যেই আফসানের কানে আসে কেউ কেউ বলছে, অফিসের কাজ ফাঁকি দিয়ে সাহিত্য রচনা করছে। সেটা আবার সবাইকে দেখাতে আসছে !

আফসানের ভেতরের সাহিত্যিক মন এতে আহত হয় ভীষণভাবে। কিন্তু আফসান একথা কাউকে বুঝাতে পারেনা যে, সাহিত্য একটা আরাধনার বিষয়। ইচ্ছে করলেই যখন-তখন যত্র-তত্র বসে সাহিত্য রচনা করা যায়না। একটা সুন্দর সাহিত্য রচনার জন্য মনের আয়োজন দরকার। তার চেয়েও বড় দরকার মনের আবেগকে যথোপযুক্ত শব্দের সুবিন্যস্ত বিন্যাসে প্রকাশ করার জন্য অনুকূল পরিবেশ। ইচ্ছে করলেই অফিসের কাজের ফাঁকে সময় চুরি করে সাহিত্য রচনা করা যায়না। তাছাড়া অফিসে একজন দায়িত্বশীল ও নিষ্ঠাবান স্টাফ হিসেবে আফসানের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। আফসানের এই গুণের কারণে বড় সাহেব তাকে একটু অন্য দৃষ্টিতে দেখেন। এরপরও তার সাহিত্য রচনা নিয়ে কেন এমন প্রসঙ্গের অবতারণা হয় অফিসে আফসান সেটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারেনা।

আফসানের এই উত্তর না পাওয়া জিজ্ঞাসা আরও বড় হয়ে দেখা দেয় যখন বড় সাহেবের তরফ থেকে তার বক্তৃতা লিখে দেয়ার হুকুম আসে। বড় সাহেব অর্থাৎ মিনহাজ আকবরকে কোম্পানীর এমডি হিসেবে প্রায়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে হয়, বক্তব্য রাখতে হয়। আর তখনই ডাক পড়ে আফসানের। মিনহাজ সাহেব আফসানকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে বলেন, আফসান সাহেব আপনি তো কবি মানুষ। সুন্দর ভাষা দিয়ে আমাকে একটা বক্তৃতা লিখে দেন তো। দেখবেন, যেন অন্যদের বক্তৃতার মতো হয়ে না যায়। আর টপিকসটা মজনু সাহেবের কাছ থেকে জেনে নিবেন।
জ্বী স্যার -- বলে আফসান চলে যেতে উদ্যত হতেই পেছন থেকে মিনহাজ সাহেব আবার বলেন, বক্তৃতাটা আমার আজ বিকেলেই লাগবে। আমি ছ’টায় বেরিয়ে যাব। মনে করে আমার হাতে দিয়ে দিবেন।

জ্বী স্যার --- বলে বেরিয়ে আসে আফসান। মনের ভিতর একটা অসহিষ্ণু ভাব থাকলেও সেটা প্রকাশ করেনা। আফসান দেখেছে এমডি সাহেব কাউকে তার কক্ষে ডাকলে সে রীতিমতো বর্তে যায়। আফসানের কাজটা এরকম যে বড় সাহেবের কক্ষে তার খুব বেশী ডাক পড়েনা। যাদের ডাক পড়ে তারা হয়তো এমডি সাহেবের বিশেষ পছন্দের মানুষ এবং অফিসে তাদের ভবিষ্যত বেশ ঝরঝরে। এমন ভাবনা থেকে আফসান মাঝে মধ্যে হীনমন্যতায় ভুগেছে। কিন্তু অফিসে তার সাহিত্য প্রতিভার খবরটা প্রকাশিত হয়ে যাবার পর থেকে এভাবে মাঝে মধ্যেই আফসানের ডাক পড়ে এমডি সাহেবের কক্ষে। প্রথম প্রথম আফসান এটাকে তার প্রতি এমডি সাহেবের বিশেষ সুনজর হিসেবে দেখে মনে মনে পুলকিত হলেও এখন বুঝতে পারছে এই ডাক আর অন্যদের ডাক এক নয়। এটা তার প্রতি এমডি সাহেবে বিশেষ সুনজর নয়। বরং এক ধরনের অস্বস্তিকর অবস্থা তার জন্য। কারণ, একদিকে অফিসের কাজের ঝামেলা এবং অন্যদিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটা বক্তৃতা লিখে দেয়া, তাও এমডি সাহেবের মনের মতো ভাষা দিয়ে।

কিন্তু এটা কি করে সম্ভব ? ভাষা কি কোন বস্তু যে ফরমায়েশ দিয়ে বানানো যাবে ? এটা তো মানুষের মনের আবেগের বিষয়। মনের আবেগ যদি ইচ্ছেমতো পাখা মেলতে না পারে তাহলে ভাষারা সেখানে ধরা দিবে কেন ? কিন্তু এই কথাগুলো কাউকে বলতে পারেনা আফসান। এমডি সাহেবের উপর বিরক্তি ভাবটা নিজের ভিতর হজম করে নিয়ে মনে মনে বলে, অন্যের বক্তৃতা কি রকম হবে তা আমি জানব কি করে যে তাদের থেকে আলাদা একটা বক্তৃতা লিখে দিব ? এ যেন গাছের পাকা ফল আর কি ! ইচ্ছে করলেই হাত বাড়িয়ে নিয়ে আসা যাবে।

কিন্তু এমডি সাহেবের আদেশ বলে কথা ! আফসান হাতের কাজ ফেলে রেখে বক্তৃতা লিখতে বসে যায়। কিন্তু কিছুতেই মনের মতো করে এগোতে পারেনা। সাহিত্যের সুন্দর শব্দগুলো যেন আজ পণ করেছে কিছুতেই ধরা দিবেনা আফসানের নিকট। তবু চেষ্টা চালায় আফসান এমডি সাহেবের মনের মতো একটি বক্তৃতা লিখতে। জানলা গলিয়ে বাইরে তাকাতেই তার চোখে পড়ে আকাশে মেঘের ঘনঘটা। এটাকেই ব্যবহার করে আফসান। সম্বোধন লেখার পর শুরু করে সে “বর্ষণমুখর এই ভেজা সন্ধ্যায়----।” তারপর প্রয়োজনীয় টপিকসটা মজনু সাহেবের নিকট থেকে চেয়ে এনে বক্তব্য লেখা শেষ করে। এমডি সাহেব তড়িঘড়ি বের হয়ে যাবার সময় বক্তৃতার স্ক্রিপটা হাতে ধরিয়ে দেয় আফসান। সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে গাড়িতে বসে একবার বক্তৃতার স্ক্রিপটিতে চোখ বুলান এমডি সাহেব। বক্তৃতার প্রথম অংশটা তার বেশ মনে ধরে, খুশী হন তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসনে বসে সবার বক্তব্য খুব মনযোগ সহকারে খেয়াল করেন এমডি সাহেব। কেউ কাগজে লেখা বক্তৃতা পড়ছে না। এমডি সাহেবও সিদ্ধান্ত নেন তিনি না দেখে বক্তৃতা দিবেন। তাই বারবার চোখ বুলাতে থাকেন স্ক্রিপটির উপর। সবশেষে তার ডাক পড়ে। এমডি সাহেব উঠে দাঁড়ান এবং বেশ দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে যান মাইকের দিকে। বক্তৃতার প্রথম অংশটুকু তার বেশ মনে আছে। তাই সম্বোধনের পর হুবহু বলতে শুরু করেন “ বর্ষণমুখর এই ভেজা সন্ধ্যায় ----।” আর বেশীদূর এগোতে পারেন না এমডি সাহেব। দর্শক সারিতে উসখুস শুরু হয়ে গেছে ততক্ষণে এবং তা ক্রমশঃ সরব হতে থাকে। এমডি সাহেব বক্তৃতা থামিয়ে পেছনে তাকান। চেয়ারে বসা ঘোষক উঠে এসে তার কানে কানে বলে, স্যার, বৃষ্টি কোথায় দেখলেন ? খোলা আকাশের নিচে সবাই বসে আছে দেখছেন না ?
এমডি সাহেব তেমনি ফিসফিসিয়ে বলেন, বৃষ্টির কথা বলেছি না-কি আমি ?

ঐ যে বললেন, “বর্ষণমুখর ভেজা সন্ধ্যায় ---”?
ও হ্যাঁ, তাই তো ! ঠিক আছে আপনি বসুন, অমি শোধরে দিচ্ছি।

বলে এমডি সাহেব আবার শুরু করেন। “আলো ঝলমলে এই সন্ধ্যায় ---।” কিন্তু শেষ করতে পারেন না। আবার শুনা যায় দর্শক সারিতে গুঞ্জন। একজন উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠে, আপনি আলোতে বসে আছেন ঠিকই। আমরা কিন্তু অন্ধকারে। এখন লোডশেডিং চলছে। মঞ্চে আলোর ব্যবস্থা করা হলেও আমাদের এখানে ঝলমলে আলো নেই।

এমডি সাহেব তার ভুল বুঝতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করে কোনরকমে বক্তব্য শেষ করে তার নিজ আসনে গিয়ে বসেন। সেদিন থেকে সিদ্ধান্ত নেন অন্যের দ্বারা আর কখনও নিজের বক্তব্য লেখাবেন না। এই ঘটনা পাঁচ কান হয়ে আফসানের কানে এসে পৌঁছুলে সেও একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। অন্তত এই অফিসে সে যতদিন আছে ততদিন ফরমায়েসী বক্তৃতা লেখার উটকো ঝামেলা থেকে বাঁচা গেল।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০১

বর্নীল অরন্য বলেছেন: ;) ;) ভাল লাগলো

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৭

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ অরণ্য। নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।

২| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫

নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: হাহাহাহা ধারুন মজা লাগলো।

বক্তার দারুন শিক্ষা হয়েছে।

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৮

সুফিয়া বলেছেন: ঠিক বলেছেন । ধন্যবাদ আপনাকে।

নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।

৩| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪০

সকাল রয় বলেছেন:
বিষয়টা ভালো লাগলো।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্য।


তবে সত্যি বলতে শৈশবে একবার মঞ্চে উঠে কবিতা বলতে গিয়ে ভুলে গিয়েছিলাম। তারপর সে কি লজ্জা! এর পর আর কখনো মঞ্চে উঠা হয়নি। বক্তৃতা দেয়া হয়নি।

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৯

সুফিয়া বলেছেন: সেদিন যদি চালিয়ে যেতে পারতেন তাহলে বোধহয় পরবর্তীতে আরও সুযোগ আসত।

ধন্যবাদ আপনাকে লেখাটা পড়ার জন্য।

নতুন বছরের অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

৪| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:১৫

মহান অতন্দ্র বলেছেন: চমৎকার লেখা । ভীষণ ভাল লেগেছে ।

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫১

সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।

নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.