![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী আমাকে শূণ্যতায় বাঁধতে পারেনা অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।
কত বয়স হবে মেয়েটির ? বার কি তের ? প্রতিদিন ফুলহাতে মাশুকের সামনে এসে দাঁড়ায় মেয়েটি।
ভাইজান, এই নেন। আপনার জন্য এনেছি।
লাল টকটকে গোলাপের তোড়াটা হাতে নিয়ে নাকের কাছে ধরে মাশুক। তারপর লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলে
তোর এই গোলাপগুলোর জন্য আমি প্রতিদিন অপেক্ষা করে থাকি। তোর আসতে দেরী হলে আমার মনের ভিতরটা ছটফট করতে থাকে।
কেন ভাইজান ? প্রশ্ন করে নাহেলা।
কি জানি, হয়তো তোর জন্য্য !
উত্তর দেয় মাশুক।
আমিতো রোজ আসি আপনার কাছে। ফুল পেতে দেরী হলে আসতে দেরী হয়। ভাইজান, আপনি তো জানেন ফুল আনতে আমি কোথায় কোথায় যাই? আপনার পছন্দের গোলাপ কিসব জায়গায় পাওয়া যায় ?
তুই ঠিকই বলেছিস -- বলে অন্যদিকে দৃষ্টি ফেরায় মাশুক। এই ফাঁকে নাহেলা আবার বলে
আচ্ছা ভাইজান, লাল গোলাপ আপনার অত পছন্দ কেন ?
মাশুক এই প্রশ্নটা আরও অনেকবার শুনেছে। কিন্তু সরাসরি কোন উত্তর কাউকে দিতে পারেিন সে। তাই একটু ঘুরিয়ে বলে
লাল গোলাপ কার না পছন্দ বল ? সবাই পছন্দ করে লাল গোলাপ। আমিও করি। এটা আর এমন কি ?
মাশুকের কথা শেষ হলে নাহেলা যেতে উদ্যত হয়। বলে
আমি এখন যাই ভাইজান, কাজ আছে।
কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে আসে নাহেলা।
ভাইজান, আইজ কিন্তু মা রান্না করতে আসতে পারবনা। আপনি বাইরে ব্যবস্থা করে নিয়েন।
ঠিক আছে, তুই যা। আমার খাবার ব্যবস্থা আমি করে নিব সময় হলে।
চলে যায় নাহেলা। মাশুক আবার একা হয়ে পড়ে। ওর রুমমেট লিটন গতকাল বাড়ি গেছে। মেসের ছোট্ট রুমটিতে এখন সম্পূর্ণ একা মাশুক। তবু নিজের চারপাশটাকে এই মুহূর্তে মুখর মনে হয় মাশুকের। এর কারণটাও সে জানে। কারণটা হচ্ছে নাহেলা। প্রতিদিন নাহেলা এসে চলে যাবার পর নিজের চারপাশে একটি ভালো লাগার আমেজ অনুভব করে মাশুক। আজও তাই হচ্ছে। সে আলতো করে হাত বুলায় ফুলগুলোতে। নাহেলার উপস্থিতি উপলব্ধি করতে চেষ্টা করে।
নাহেলার বয়স কত হবে ? আবারও আন্দাজ করার চেষ্টা করে মাশুক। এগার, বার, তের কিংবা চৌদ্দ ? গত ছয় মাস ধরে নাহেলার সাথে মাশুকের পরিচয়। প্রথমেদিকে ওর মায়ের সাথে মাঝে মধ্যে আসত। তারপর যেদিন থেকে জেনেছে যে মাশুক লাল গোলাপ ভালোবাসে সেদিন থেকে ওর আসা নিয়মিত হয়ে গেছে।
নাহেলার বাবা অন্যের বাসায় মালির কাজ করে। সেখান থেকে মেয়ের জন্য প্রতিদিন হাতে করে দুই/একটা ফুল নিয়ে আসে নাহেলার বাবা। তাছাড়া ওদের নিজেরও একটা ফুলের ছোট্ট বাগান আছে। সেই বাগান থেকে রোজ একটা হলেও ফুল তোলে নাহেলা। বাবার দেয়া ফুলের সাথে মিলিয়ে একটা ছোট তোড়ার মতো বানিয়ে প্রতিদিন মাশুককে দিয়ে যায় নাহেলা। ওর কাছ থেকে গোলাপ পাওয়াটা একটা লোভনীয় ব্যাপারে পরিণত হয়ে গেছে মাশুকের।
ফুলের বিনিময়ে নাহেলাকে কিছু টাকা দেয়ার কথা চিন্তা করেও থেমে গেছে মাশুক। ওর মনে হয়েছে এতে যদি নাহেলাকে কোনভাবে ছোট করা হয় আর নাহেলা যদি সেটা বুঝতে পারে তাহলে মনে দু:খ পাবে। তাই মাশুক অন্যভাবে অর্থাৎ নাহেলার মাকে নানাভাবে সাহায্য করে পুষিয়ে দিতে চেষ্টা করে ফুলের দাম।
মাশুক নিজকে প্রশ্ন করে দেখেছে এই যে প্রতিদিন দিন সে নাহেলার জন্য অপেক্ষায় থাকে এটা কি সত্যিই ফুলের প্রতি লোভ নাকি অন্য কোন মোহময়তা ? কিন্তু নিজের কাছ থেকে কোন সদুত্তর পায়নি সে। তবে এটা সত্যি যে সহজ-সরল নাহেলার কাছে সে একটা মিথ্যা কথা বলেছে। না-কি নিজের কাছে বলেছে মিথ্যেটা ? লাল গোলাপ সে ভালোবাসে। তাই বলে এই ভালোবাসা এতটা তীব্র নয় যে, প্রতিদিন এই গোলাপ তাকে পেতেই হবে।
তাহলে কি গোলাপের ছলে নাহেলার জন্যই প্রতিদিন অপেক্ষা করে থাকে সে ?
এই প্রশ্নেরও কোন সদুত্তর খুঁজে পায়নি মাশুক। শুধু বুঝে নাহেলা আসলে ওর ভালো লাগে, মেসের নিরানন্দ সময়টা আনন্দে ভরে উঠে। মাশুকের ইচ্ছে করে নাহেলাকে বলতে নাহেলা যেন অনেকক্ষণ ধরে ওর কাছে থাকে। কিন্তু বলতে পারেনা। তাহলে কি নাহেলাকে ------?
কথাটা মনে হতেই নিজের মনে হেসে উঠে মাশুক। মনে মনে বলে
এই তো আর ক'টা মাস। মাস্টার্স পরীক্ষাটা শেষ হয়ে গেলেই এই মেস ছেড়ে চলে যাবে সে। তারপর কোথায় থাকবে নাহেলা ? কোথায় সে ? এসব ভাবনার কোন মানে হয়না।
রুমে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করবে মাশুক এমন সময় কানে এসে বাজে প্রচন্ড একটা আওয়াজ। হয়তো আবারও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুস্কৃতিকারীরা। বিরোধী দলের আন্দোলনে কয়দিন ধরে ককটেল-বোমা-জ্বালাও-পোড়াও এখন যেন অতি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশটার ভাগ্যে যে কবে সুদিন আসবে ? মনে মনে বলে বিছানায় গিয়ে বসে মাশুক।
বিকেলে হন্তদন্ত ছুটে আসে নাহেলার মা। দেখে অবাক হয় মাশুক। বলে
চাচী, আজ তো আপনার আসার কথা না ?
বাবা, তুমি আমার নাহেলারে বাঁচাও।
কি হয়েছে নাহেলার ? অাঁৎকে উঠে প্রশ্ন করে মাশুক।
ওর গায়ে গুলি লাগছে বাবা। দুপুরে তোমাকে ফুল দিয়ে যাবার সময় গুলি লাগছে আমার মেয়ের শরীরে। এখন আমি কি করব ? ওর বাপও বাড়ি নাই।
চলুন চাচী, আমি এক্ষুণি যাচ্ছি।
হাসপাতালে পৌঁছে নাহেলার নিথর দেহটার পাশে বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মাশুক। নাহেলার মায়ের বিলাপ ওর কানে ঢুকেনা। ডাক্তার কয়েকবার ডেকে ওর মনযোগ আকর্ষণ করে। তারপর জানায় গুলিটা লেগেছিল বুকে। তাই বাঁচানো গেলনা মেয়েটাকে।
মাশুকের কানে যেন কোন কথা ঢুকছেনা। সে আলতো করে নাহেলার নাকে-মুখে হাত বুলায়। অনেককিছু মনে করতে চেষ্টা করে। নাহেলার সাথে তার পরিচয়, প্রতিদিন ফুল দেয়া আর টুকরো টুকরো নানা কথা। কিন্তু কোথায় যেন এসে সব এলোমেলো হয়ে যায়। এমন সময় সহসা এক ঝলক দমকা হাওয়া এসে ওর মনের রুদ্ধ দুয়ার খুলে দেয়। মাশুকের ভিতর থেকে কে যেন কথা বলে উঠে।
এই আমার ভালোবাসা। আমার চোখের সামনে নিথর হয়ে শুয়ে আছে। আমিওকে অনেক অনেক ভালোবাসি ------------।
২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৪৮
সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আবু শাকিল।
২| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৫
বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সাথে ভালোবাসার একটা উপাখ্যান জুড়ে দিয়ে অস্থিরতার চিত্রটাকে নিষ্ঠুর আর দৃঢ় ভাবে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন সুফিয়া। আসলেই খুব ভালো লাগলো। সাবলীল লেখার মধ্যেও স্পর্শ করে যাওয়ার মতো চমৎকার উপস্থাপন। নিরন্তর শুভ কামনা রইলো।
২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৪৯
সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটা পড়ার জন্য এবং সুন্দর করে আপনার উপলব্ধি প্রকাশ করার জন্য।
ভালো থাকবেন।
৩| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫৩
তুষার কাব্য বলেছেন: চমৎকার গল্প,খুব ভালো লাগলো ।
শুভকামনা...
২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৬
সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ তুষার পড়ার জন্য। ভালো থাকবেন।
৪| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩৪
সুপ্ত আহমেদ বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন ! অনেক অনেক ভালো লাগলো ! আর অনেক ভালবাসা আর শুভ কামনা তো আছেই ! অনুসরণ করতে থাকলাম আপনাকে । আশা করি আরো ভালো ভালো লেখা পাবো ! ধন্যবাদ ।
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৩১
সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে সুপ্ত। ভালো থাকুন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:২৯
আবু শাকিল বলেছেন: প্রথম লাইক ।
ভাল লাগলো ।