নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্পীচ থেরাপিষ্ট সুমন

আমি পেশায় একজন স্পীচ থেরাপিষ্ট কিন্তু ব্লগ পড়া আমার নেশা। আর একটা নেশা আছে সেটা হল মুক্তিযুদ্ধের আসল ইতিহাস প্রতিটা মানুষের কাছে পৌছে দেয়া। আমি সে চেষ্টা এখনও চালিয়ে যাচ্ছি। আমি কোন ভালো লেখক নই কিন্তু আমি একজন ভালো পাঠক।

স্পীচ থেরাপিষ্ট সুমন

পেশাঃ স্পীচ থেরাপিষ্ট। প্রতিষ্ঠানঃ প্রয়াস, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা। মোবাইল নাম্বার - ০১৭১৭২৭৬৮১০ ই-মেইল : [email protected] ফেসবুক : https://www.facebook.com/sumonslt

স্পীচ থেরাপিষ্ট সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কণ্ঠেরও যত্ন প্রয়োজন

২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৩০





অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী



আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকায় ২০১২ সালে ১২ হাজার ৩৬০ জন কণ্ঠনালির ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে পুরুষ ৯ হাজার ৮৪০ এবং মহিলা দুই হাজার ৫২০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে তিন হাজার ৬৫০ জন মারা গেছেন। আমাদের দেশে এ ধরনের পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে আক্রান্তের হার এখানেও একই রকম হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। আমেরিকান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডেফনেস অ্যান্ড কমিউনিকেশনের মতে, বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৭৫ লাখ লোক কণ্ঠস্বরজনিত সমস্যায় ভুগছে। এ সমস্যার প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত আমরা চিকিৎসকের কাছে যাই না। অবস্থা জটিল আকার ধারণ করলে তবে টনক নড়ে।



কথা বলায় শব্দযন্ত্রের ব্যবহার



ল্যারিংস বা শব্দযন্ত্র মানুষের গলার সামনের অংশে থাকে। এতে আছে দুটি ভোকাল কর্ড। কম্পনের মাধ্যমে কর্ড দুটিতে শব্দ তৈরি হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় ফুসফুস থেকে প্রবাহিত বাতাস ভোকাল কর্ডে কম্পনের সৃষ্টি করে। কথা বলা বা গান গাওয়ার সময় এই পরিমাণ প্রতি সেকেন্ডে ১০০ থেকে এক হাজার বার। একজন বয়স্ক মানুষের দিনে এক মিলিয়ন বার ভোকাল কর্ড দুটির সংস্পর্শ হয়।



কণ্ঠনালির সমস্যার উপসর্গ



গলাব্যথা, কণ্ঠস্বর পরিবর্তন, কাশি, কিছু গিলতে অসুবিধা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি কণ্ঠনালির সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ। যদি ঘন ঘন স্বর পরিবর্তন হয়, কয়েক দিন বা দুই সপ্তাহেও ভালো না হয়, তবে নাক কান ও গলা বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে।



সমস্যার কারণ



কণ্ঠনালির প্রদাহ, কণ্ঠস্বরের অতিব্যবহার বা অতিকথন, কণ্ঠনালির কিছু রোগ, প্যারালাইসিস ইত্যাদি কারণে কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হতে পারে।



কণ্ঠনালির প্রদাহ



কণ্ঠস্বর পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ কণ্ঠনালির ভাইরাসজনিত তীব্র প্রদাহ। এতে কণ্ঠনালি ফুলে গিয়ে কম্পনের সমস্যা সৃষ্টি করে। ফলে স্বর পরিবর্তিত হয়। আবহাওয়া পরিবর্তন, পরিবেশদূষণের কারণেও কণ্ঠনালির প্রদাহ বা ল্যারিনজাইটিস হতে পারে। তীব্র প্রদাহ অবস্থায় জোরে কথা বললে কণ্ঠনালির ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। প্রচুর পরিমাণ পানি পান করলে এবং কণ্ঠনালিকে বিশ্রাম দিলে সাধারণত সেরে যায়। ভাইরাসজনিত রোগ বলে এতে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই। যদি ব্যাকটেরিয়াজনিত কণ্ঠনালির ইনফেকশন হয় এবং এর সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হয় তখন বিশেষ চিকিৎসা দরকার এবং পূর্ণমাত্রায় সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক লাগতে পারে।

ভাইরাসজনিত তীব্র প্রদাহ ঠিকমতো চিকিৎসা না করা হলে দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস হতে পারে। পাকস্থলীর এসিড রিফ্লাক্সেও দীর্ঘমেয়াদি কণ্ঠনালির প্রদাহ হতে পারে। ধূমপান, অতিরিক্ত গরম চা বা পানীয় পান করলে হাঁপানির জন্য ইনহেলার ব্যবহার বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস হতে পারে।



কণ্ঠের অতিব্যবহার



কথা বলার সময় কণ্ঠনালির সঙ্গে আশপাশের মাংসপেশির সাহায্যও লাগে। কণ্ঠনালিকে সঠিক ও নিয়মের বাইরে ব্যবহার করা, চিৎকার, হৈচৈ, অতিরিক্ত কথা বলা, দীর্ঘমেয়াদি বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বললে কণ্ঠনালির প্রদাহ দেখা দিতে পারে। গলা ও শব্দযন্ত্রের মাংসপেশির সংকোচন এবং কথা বলার সময় ঠিকভাবে শ্বাস না নিলে শ্বাসযন্ত্রের অবসাদ হয়, কথা বলতে কষ্ট হয়। ফলে কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে এবং ভোকাল কর্ডে পলিপ বা নডিউল এমনকি রক্তক্ষরণও হতে পারে।



ভোকাল কর্ড অপব্যবহারের কারণ



অধিক জনসমাবেশে, কোলাহল পূর্ণ পরিবেশে জোরে কথা বলা ছাড়া উপায় থাকে না। এ কারণে এমন স্থানে বসবাসকারীর ভোকাল কর্ডে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। আবার অতিরিক্ত এবং দীর্ঘ সময় কথা বললেও কর্ডে চাপ পড়ে। ঘাড় ও কানের মাঝে ফোন চেপে ধরে কথা বলায় ঘাড় ও শব্দযন্ত্রের মাংসপেশিতেও টান লাগে। উচ্চ স্বরে বা চিৎকার করে কথা বললেও কর্ডের খুব ক্ষতি হয়। জনসমাবেশে বা বড় লেকচার গ্যালারিতে মাইক ছাড়া জোরে কথা বলাও ভোকাল কর্ডের ক্ষতির বড় কারণ।



কম ক্ষতিকারক কণ্ঠনালির রোগ



বারবার অথবা দীর্ঘমেয়াদি কণ্ঠনালির অপব্যবহারেও যে ক্ষতি হয় পরবর্তী সময়ে তা কণ্ঠনালির কম্পনের মাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে এবং কণ্ঠনালিতে পলিপ, নডিউল বা সিস্ট হতে পারে। নডিউল সাধারণত কণ্ঠশিল্পীদের বেশি হয়। রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, আইনজীবী, অধিক সন্তানের জননী, মসজিদের ইমাম, হকারদের মধ্যে এসব রোগ হতে পারে। এর চিকিৎসা হলো মাইক্রোলেরিংগোসকপি এবং ভয়েস থেরাপি।



ভোকাল কর্ড প্যারালাইসিস বা দুর্বলতা



ভোকাল কর্ড বা ল্যারিংসের নার্ভের দুর্বলতা বা কোনো সমস্যার জন্য কণ্ঠনালির পরিবর্তন হতে পারে। ভাইরাসজনিত প্রদাহের জন্য নার্ভের দুর্বলতা হয়। সাধারণত এক দিকের নার্ভই প্যারালাইসিস হয়, দুই দিকের নার্ভ একই সঙ্গে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বিরল। এক দিকের নার্ভ প্যারালাইসিসের কারণ হচ্ছে ভাইরাল ইনফেকশন, টিউমার, ক্যান্সার ও থাইরয়েড অপারেশন। কণ্ঠনালির প্যারালাইসিসের জন্য ফ্যাঁসফ্যাঁসে আওয়াজ হয় এবং এটি নিঃশ্বাসের সঙ্গে জড়িত। কয়েক মাসের মধ্যে এক দিকের প্যারালাইসিস ভালো হয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভোকাল কর্ড প্যারালাইসিস ভালো হয় না, তখন চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।



কণ্ঠনালির ক্যান্সার



বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে গলার ক্যান্সার বা কণ্ঠনালির ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি। গলার স্বর পরিবর্তনের ১৫ দিনের মধ্যে ভালো না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। রোগীর ইতিহাস, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা খুবই গুরুত্বপূণ। গলার ক্যান্সার বা কণ্ঠনালির ক্যান্সারকে মোটেও অবহেলা করা উচিত নয়। কণ্ঠনালির ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করে চিকিৎসা করলে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায় এবং এ রোগের সব ধরনের চিকিৎসা যেমন- সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেশেই করা যায়।



কণ্ঠকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে হলে



পানি ভোকাল কর্ডকে আর্দ্র রাখে এবং আর্দ্র ভোকাল কর্ড শুষ্ক ভোকাল কর্ড থেকে বেশি ব্যবহার করা যায়। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। কমপক্ষে দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে। খেলা শুরুর আগে যেমন প্রস্তুতি দরকার তেমন বক্তৃতার আগেও ভোকাল কর্ডের হালকা ব্যায়াম করা উচিত। এতে ভোকাল কর্ডের কণ্ঠের মান ও উপস্থাপনা সুন্দর হয়। কথা বলা বা গান গাওয়ার মাঝখানে দীর্ঘ শ্বাস-প্রশ্বাস নিলে কথা বলা বা গান গাওয়া সুন্দর হয় এবং ভোকাল কর্ডের অবসাদ দূর হয়। বক্তব্য বা উপস্থাপনা বা বড় সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় মাইক্রোফোন ব্যবহার করা ভালো।



দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় কণ্ঠনালিকে বিশ্রাম দেওয়া উচিত, যা কণ্ঠনালির অবসাদ দূর করে এবং শক্তি ফিরিয়ে দেয়। নিজের কণ্ঠকে শুনুন এবং যদি কোনো রকমের উপসর্গ থাকে বা পরিবর্তন লক্ষ করেন, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যদি দুই সপ্তাহের বেশি স্বর পরিবর্তন লক্ষণীয় হয়, তাহলে নাক কান ও গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। এমন কিছু করবেন না, যা কণ্ঠনালির ক্ষতি হয়।

ধূমপান, অ্যালকোহল পান, অতিরিক্ত গরম পানীয় পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপান কণ্ঠনালির ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। এটি কণ্ঠনালির প্রদাহও তৈরি করে। জোরে জোরে বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বলা উচিত নয়। জোরে কথা বললে কণ্ঠনালি সূক্ষ্মভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। দূর থেকে কাউকে ডাকতে হলে হাততালি বা শিস বা হাত নেড়ে অথবা অন্য কোনোভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিৎকার করে ডাকা এড়ানো যায়। বড় খেলা উপভোগ করার সময় পছন্দের দলকে সাপোর্ট করার জন্য জোরে চিৎকার না করে পতাকা ওড়ান বা ব্যানার লিখতে পারেন।

এমন কিছু খাবেন না, যাতে এসিডিটি হতে পারে। উঁচু বালিশে ঘুমাবেন, টাইট কাপড় পরে ঘুমাবেন না, হালকা ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করে ঘুমাবেন। খাবারের সঙ্গে সঙ্গে ঘুমানো বা ক্যাফেইনযুক্ত খাবার গ্রহণ করা বাদ দিন।



Source: kalerkantho.com, বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০১৩।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.