![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই যে ব্যাস্ততা বাড়ছে, এই যে নিকোটিন!জ্বালিয়ে দেয়া সিগারেটে ধোয়াচ্ছন্ন বেডরুমপ্রতিদিন ভাল্লাগেনার ছাই জমে এস্ট্রেতেব্যাস্ততার কালচে লাইটার, এই যে অলস ঘুম!এক কপি স্বপ্ন আসে সৌজন্য কপি হয়েসারারাত ঘুমিয়ে থাকি প্রচ্ছদে হাত বুলিয়ে।কাশাফাদৌজা নোমান
হাওড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাড়িঁয়ে আছে সেই পাগলটি
পৃথিবীর সমস্ত পাগলের রাজা হয়ে
সে উলঙ্গ, কেননা উন্মাদ উলঙ্গ হতে পারে, তাতে
প্রকৃতির তালভঙ্গ হয়না কখনো
পাশেই গম্ভীর ট্রেন, ব্যস্ত মানুষের হুড়োহুড়ি
সকলেই কোথাও না কোথাও পৌঁছাতে চায়!
তার মধ্যে এই মূর্তিমান ব্যতিক্রম, ইদানীং
অযাত্রী, উদাসীন-
মাঝারী বয়েস, লম্বা, জট পাকানো মাথা
তার নাম নেই, কে জানে আমিত্ব আছে কিনা
অথচ শরীর আছে
সুতোহীন দেহখানি দেহ সচেতন করে দেয়
পেটা বুক, খাজঁকাটা কোমর, আজানুলম্বিত বাহু
এবং দীর্ঘ পুরুষাঙ্গ
চুলের জঙ্গলে ঘেরা
পুরুষশ্রেষ্ঠের মতন দাঁড়িয়ে রয়েছে ভিড়ে, যেন সদর্পে
সন্ন্যাসী হলেও কোন মানে থাকত, কেউ হয়ত
প্রনাম জানাতো।
কিন্তু এই শারীরিক প্রসঙ্গ এত অপ্রাসঙ্গিক
টিকিটবাবুও তাকে বাঁধা দেয়না
রেলরক্ষীরা মুখ ফিরিয়ে থাকে
ফিলমের পোষ্টারের নারী পুরুষদের সরে যাবার উপায় নেই
অপর নারী পুরুষরা তাকে দেখেও দেখে না
তারা পাশ দিয়ে যেতে যেতে একটু নিমেষহারা হয়েই
আবার দূরে চলে যায়
শুধু মায়ের হাত ধরা শিশুর চোখ বিস্ফোরিত হয়ে ওঠে!
একটি আপেল গড়িয়ে যায় লাইনের দিকে-
ঠিক সেই সময় বস্তাবন্দী চিঠির স্তূপের পাশ দিয়ে
এসে দাঁড়ায় দুটি হিজড়ে
নারীর বেশে ওরা নারী নয়, এবং সবাই জানে
ওদের বিস্ময়বোধ থাকেনা
তবু হঠাৎ ওরা থমকে দাঁড়ায়; পরস্পরের দিকে
তাকায় অদ্ভূত বিহ্বল চোখে
যেন ওদের পা মাটিতে গেঁথে গেল!!
সার্চ লাইটের মত চোখ ফেনলো পাগলটির শরীরে
সেই অপ্রয়োজনীয় সুঠাম সুন্দর শরীর,
নির্বিকার পুরুষাঙ্গ
যেন ওদের শপাং শপাং করে চাবুক মারে
সূর্য থেকে গল গল করে ঝড়ে পড়ে কালি
এই আছে ও’নেইর যুক্তিহীন বৈষম্যে প্রকৃতি
দুর্দান্ত নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে!!
সেই দুই হিজড়ে অসম্ভব তীব্র চিৎকার করে ওঠে-
ধর্মীয় সংগীতের মতন
ওরা কাঁদে,
দু’হাতে মুখ ঢাকে,
বসে পড়ে মাটিতে
এবং টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে মিশে যায়
নশ্বর ধুলোয়
অল্প দূরে, সিগারেট হাতে আমি এই দৃশ্য দেখি।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
©somewhere in net ltd.