নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নভেলার মাঝি...

সুপান্থ সুরাহী

কবিতার প্রেমে অক্ষরের সঙ্গে শুরু হয়েছিল ঘরবসতি। এখন আমি কবিতার; কবিতা আমার। শব্দচাষে সময় কাটাই...

সুপান্থ সুরাহী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ননডিটেইল মনোলগ

১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৪



কবিতার শেষ পংক্তি কিংবা কৌতুকের পাঞ্চ লাইনের মতো অথবা টক শো'র শেষ মিনিটে তর্কের উত্তেজনার মতো ঘণিভূত হয়ে আসছে আকাশের কালো মেঘ। এই মেঘ প্রথমে সূর্যকে ঢেকে দিয়েছিল নিজস্ব জেদ-প্রতিশোধে। চাঁদকে ঢেকে দিয়েছিল অগভীর ভালোবাসার দাবীতে। এরপর মেঘের পেছনে অন্ধকার এসে দাঁড়ালে আলোর শক্তি ক্রমশ ম্রিয়মান হতে হতে পৃথিবী বন্দি হয়ে যায় একটা সাপের লাঠির কাছে।

গ্রামের শিশু যেমন সাপ পিটিয়ে মারার পর লেজেও বিষ রাখতে চায় না; ঠিক তেমন করেই পৃথিবীর আমাকে একটা কালো মেঘ সূর্য-চাঁদ-আলো বঞ্চিত করে লেজ থেকে আমিত্বটাও শেষ করে দিতে উদ্যত হয়। এরপর দীর্ঘ অন্ধকার-বাসের পর পৃথিবীর মানুষেরা দিন ও আলো ভুলে যায়। সবার চোখই তখন আন্ধারসহা এক নতুন চোখ। কথাও সূর্য নেই। আলো নেই। চাঁদ নেই। চোখগুলো থেকেই নেই। এখানে মানুষ যা দেখার কথা; তা দেখে না। যা বলার কথা; তা বলে না। যা করার কথা; তা-ও করে না। নিতান্ত সুবোধ হয়ে মেনে নেওয়ার এক অবিশ্বাস্য শক্তি অর্জন করেছে মানুষ। ফানুষের মতো অথবা রাতে দেখা স্বপ্নের মতো জীবনকে কল্পিত রঙে সাজিয়ে দেখার বায়বীয় চৈতন্যে বুঁদ পুরো জনপদ।

কী এক অপার মোহ কিংবা নতুন হ্যামেলিয়নের বাঁশির সুরে ছুটে চলছি অজানায়। বাঁশিওলা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। পেছনের ছুটন্ত পথিকেরা বধির। থামানোর কথা যাদের ছিলো তারাই বাঁশি হয়ে গেছে। বাজতে বাজতে বেসুরো হওয়ার আগে থামবে না বলে অঙ্গীকার করেছে। অথচ যে বাজায় সে জানে; কীভাবে বাঁশিকে সুরে ও মোহে রাখতে হয়। পথিকের মিছিল বাড়ছে। অন্ধকার আরও ঘণিভূত হয়ে দীর্ঘ জ্বালের সরের মতো পুরো হয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই বাঁশিওলা সুর বাড়িয়ে সকল আওয়াজকে গৌণ করেছে নিজস্ব সুরকে মূখ্য করতে। ততক্ষণে আকাশের মেঘ জমিনের পরতে কায়েম করে ফেলেছে উপনিবেশ।

মেঘ, বাঁশিওলা, বাঁশির সুর, পথিক, পথহারা শূন্যের নাগরিকসহ জনপদের সবার চোখ অন্ধকার সয়ে নির্ঘুম হয়ে গেছে। রাতের অগোচরে দিনের মঞ্চে ঘুমের শামিয়ানা টানিয়ে চলছে প্রক্সি প্রক্সি খেলা। পৃথিবী ডুবছে অন্ধকারের প্রবহ-চৈতন্যে। মানুষ তখনও নিজস্ব চেতনা-বোধ-বিশ্বাস ফেলে আরোপিত সংজ্ঞায় অভ্যস্ত হয়ে; ভুলে যাচ্ছে নিজস্বতার রঙ। ধুকতে ধুকতে যে প্রথাপন্থী হাঁক ছেড়ে বলে যাচ্ছে রোদের অথবা চাঁদের মুক্তির কথা; তার দুই ঠোঁটে কে যেন লাগিয়ে দিয়েছে অধ্যাদেশের স্ট্যাপলার। খুলতে গিয়ে রক্তাক্ত ঠোঁটের কারণে 'ছাব্বিশ' ধারায় বন্দিত্ব বরণ আলোর পিয়াসী পথিক। বন্দিশালা বাড়তে বাড়তে আরেকটা আন্দামান-নিকোবর হতে হতে নতুন পৃথিবী হয়ে উঠে। যেখানে কেউ একজন হাঁক ছাড়ে মুক্তির।

মুক্তির প্রশ্নে রোদান্ধ যুবকেরা আওয়াজ তুলে। আওয়াজের উৎসে যুবকদের মগজ ছাড়া সব দেখা যায়। আওয়াজ আসে, "একজন মগজহীনকে বাঁচিয়ে তুলার আপদ কতটা তীব্র ও দীর্ঘ হতে পারে; কখনও ভেবেছো মানুষ! বিজ্ঞান প্রযুক্তি জানলেই সবখানে প্রয়োগ করতে হয় না।" দীর্ঘ অন্ধকারের কারণে আওয়াজের উৎস থেকে যায় অদেখা। কিন্তু আওয়াজ বাড়তে থাকে। নানামাত্রিক আওয়াজ। কেউ বলে এতো মগজহীনের জনপদে আলো আসলেই তো বিপদ। না-মগজীরা আলোর মূল্য দিবে কীভাবে অর কীভাবেই বা করবে ব্যবহার! মেঘের তীব্রতা বাড়লেই মগজহীন হয়!
- প্রশ্ন করা তো নিষেধ। অভিধান থেকে প্রশ্ন শব্দটা যুগ যুগ ধরে মুছে মুছে আসছি। তবুও প্রশ্ন কেনো? প্রশংসা, পোস্টার, ছবি, ভিত্তিপ্রস্থর, একদেশদর্শীর মতো একমাথাপন্থী হওয়ার যে সবসমানাঁধার দীক্ষা দিয়েছি তার ভুল প্রয়োগে কালোর আড়ালে আরেক কালোর নীচে থেমে যেতে পারো; সেই কথা মনে আছে!
- ধন্যবাদ। এখনও বলছেন কেবল। প্রয়োগ তো করেননি। যদি কালোর আড়ালে কালোর অতলে আমার হিসেবহীনতার নিয়তি হতো! তাহলে এই ধন্যবাদটাই পেতেন কোথায়?
- ধন্যবাদের নিকুচি করি। সেইসব যুগ পাড় হয়ে এখন গিভএন্টেক যুগের নিরোদ নিয়তিতে এসেছি। এখন বিলবোর্ডের বিপরীতে ধন্যবাদ কে নেয়! হা হা হা!

দুই.
বাঁশিওলা, বাঁশি আর বাঁশি নির্মাতা নিজেও চোখের জ্যোতিহীনতার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে মেঘের আড়ালে যাওয়ার পথে না-মগজ তারুণ্যের কাছে আটকে যায়। ওরা বলে, "কোথায় যাচ্ছেন! চোখ নিয়েছেন। বোধ নিয়েছেন। জন্ম দিয়েছেন মগজহীন। এখন আপনারা মেঘের আড়ালে গেলেই রোদ উঠবে। চাঁদ হাসবে। দিন ফিরবে আপন মহিমায়। রাত হয়ে যাবে আদিগন্ত অস্ত্রোপচার থিয়েটার।

আমরা হিসেবের বাইরে খরচের খাতায় ব্যয়ের কলামে চলে যাবো। ভাবতে পারেন; আপনি দীর্ঘ শূন্যতার পরেও কী-এক পূর্ণতা জেগে আছে! যেখানে হিসেব চলবেই। জাগরণ আসবেই আলোর।"

- এইসব তো তোমাদের সিলেবাসে নেই। যাও ফুর্তি করো। সেঞ্চুরি করো মাঠে অথবা খাটে। নতুন কথা কেনো শিখছো! তোমাদের এখন ট্রলের আর কমেডির সময়। এখন পিএইচডির আলাপে ইচড়ে পাকা হচ্ছো কেনো! কিছুই হবে না। বাঁশিওলা নতুন সুর বেঁধেছে। নতুন নতুন ইস্যূর মোহমধু নিয়ে সুর তুলবে। তোমরা পেছনে হ্যামেলিয়নের নাগরিকের মতো ছুটতে থাকো। ঘোরগ্রস্ত হও। অন্ধকার দীর্ঘজীবী হবেই। রোদের উপরে মেঘ থাকবেই। চাঁদের জ্যোৎস্নাকে বোধগত নিঃস্বতায় আঁধারের অনুগামী করে দেবো। তোমাদের পৃথিবী তোমাদের মতোই হবে। শুধু প্রশ্নটা ভুলে যাও। মুছে দাও অভিধান থেকে।

- ভরসার পথে অগণিত কাঁটাগুল্ম। সম্ভাবনার আলাপে তীব্র আত্মবিশ্বাস। মুক্তির আলাপ করতেই এসেছি। ঘোর কাটেই মানুষের। আমরা মানুষের নিয়তি উপলব্ধিতে উচ্চারণ করেছি। আমরা কোন পাহাড়ের আড়ালে হারাতে চাই। পৃথিবীর পথে নতুন ভোরের জাগরণ দেখতে চাই।

তীব্র ও ঝাঁঝালো শব্দের পর ঝড় আসে। আলাপের মঞ্চ ভেঙ্গে যায়। চিন্তার সূত্র ছিঁড়ে অচিন্তা-কুচিন্তা দখল নেয় খালি মগজের স্থান। ভেঙ্গে যায় আশাবাদের শেষ আশ্রম। অজানা আগামীর পথে আমার দ্বিধাগ্রস্ত চলতি পথ চলতে থাকে অচল অভিধান। প্রত্যাহার করা কয়েনের মতো অবহেলে ফেলে রাখা কয়েন আমি। শৌখিন সংগ্রাহকের উপকার হলেও আমার মালিকের বোঝা হয়ে জেগে থাকি শো-পিস হওয়ার স্বপ্নে। আর বহুদিন পর আবিষ্কার করি কোন ধুলোর আস্তরণে।

অগণিত পদধ্বনি আসতে থাকে। মিছিলের চলে কোরাস। স্লোগানের শেষে থমকে দাঁড়ায় সাহসের পদক্ষেপ। মালিকের বুকে মালিকের বন্দুক নির্লজ্জ তাক। আশ্বিনের আইত্ত্যানীর মতো, চারের বন্যার দীর্ঘ হতে থাকে কালো মেঘের আয়ুষ্কাল। চারদিক থেকে পাতাদের নুয়ে পরার কথা থাকলেও নুয়ে পড়ে অগণিত ডাল। অবশেষে বৃক্ষ। বটবৃক্ষ। ঘরটাও বিক্রি হয় ঋণের অপরিকল্পনায়। হাশরের মাঠ ভেবে ঘুম ভাঙ্গে। ততক্ষণে হিসেবের বাইরে জীবনের দাম। নাগালের বাইরে স্বস্তির অভিধান।

ঝুলতে ঝুলতে লোকাল বাসের যাত্রী হয়ে যায় দেশ, রাষ্ট্র আর রাষ্ট্রের বাঁশিওলা।

তিন.
অসুস্থ কুকুরের ঝুলে যাওয়া জিহ্বার মতো অগণিত জিহ্বার চাহিদায় চিৎকার করে ওঠে কেউ। এরপর মেরুকরণের দীর্ঘ পরিশ্রমে বিভাজন জেগে উঠে নদীর চরের মতো অনুভূতির উঠোনে। আলাপ মানেই বিরোধ। বিরোধ হলেই মেঘ নামে। আঁধার ঘণায়। মানুষ গৌণ হয়ে মূখ্য হয়ে যায় মানুষের মগজহীনতার অন্ধকার ও জেদগ্রস্থ হীনম্মন্যতা।

এরপর শহরের গলি গলি, মোড়ে মোড়ে ও ধ্যানে-জ্ঞানে কেউ কারো নয় দ্রুপদী অভিনয় মঞ্চস্থ হয়ে কারো কণ্ঠ চওরা হতে হতে ফেঁটে যায়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে, " রাষ্ট্র তুমি কার!" সংবিধান বলে, "সরকার যার আমি তার"। সরকার বলে, "অমরতার বিনিময়ে মুক্তি নাও।" ক্ষমতা বলে, "মধু বড়ো মধুময়।" আর পুরো জনপদে ভাঁড় ও কমেডিয়ানের মঞ্চ বাড়তে বাড়তে মানুষ ফানুস হয়ে থমকে দাঁড়ায়।

অন্ধকার বলে, 'রোদ ও সূর্য না থাকলেই আমার অস্তিত্ব।' রোদ বলে, 'আমার বন্দিত্ব শেষ হবে কবে?' জোৎস্নার কোমলতা তাকে কোন প্রশ্ন করার সাহস যোগায় না। বাঁশির সুরে তীব্রতা বাড়ে। বাঁশিওলার চোখে জেগে থাকে সেই আগামী; যেখানে নিজের বাঁশিই অন্যের ফুৎকারে 'বিগত মালিক' নিজের বিপক্ষে বেজে ওঠে।

জনতার কথা সবাই ভুলে যায়। নির্লজ্জ জনতা সবাইকে মনে রাখে। অথচ জনতার কথাই মনে রাখতে রাষ্ট্র ও প্রশাসনের জন্ম।

এইসব গল্প বলতে বলতে কবির মগজে মগজহীতা তৈরি হয়ে যায়। দীর্ঘ আলাপ, বিতর্ক, তর্ক, পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে কবি বলতে কিছুই ছিলো না মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তে আচানক নেতাদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। আর তখনই আবার ভোট, সংলাপ, নির্বাচন, অত্যাচার, স্বৈরাচার, জনতা শব্দগুলো কানে বাজলেও মগজে ও হৃদয়ে বাজে না।

পৃথিবীর চারপাশে একদল দুঃখী অসহায় ও বন্দি মানুষের অস্থির পাওয়া যায়। যাদের জীবনে স্বাধীনতা বলতে জুতোহীন পায়ে পঞ্চাশ টাকার ক্ষেপ শেষে একটা বনরুটি।

আমি চোখ বন্ধ করি, দেখি প্রতিশোধ। চোখ খুলি, দেখি প্রতিশোধ। সব দেখাদেখি বাদ দিলে দেখি আমার পক্ষে কেউ নাই। হৃদয়ের চোখ খুলে দিলে জেলখানা হয়ে যায় ঠাঁইহীন। অথচ জেলখানা ছাড়া আমার কোন ঠিকানা নাই।

হ্যান্ডকাফ...কবিতার শেষ পংক্তি কিংবা কৌতুকের পাঞ্চ লাইনের মতো অথবা টক শো'র শেষ মিনিটে তর্কের উত্তেজনার মতো ঘণিভূত হয়ে আসছে আকাশের কালো মেঘ। এই মেঘ প্রথমে সূর্যকে ঢেকে দিয়েছিল নিজস্ব জেদ-প্রতিশোধে। চাঁদকে ঢেকে দিয়েছিল অগভীর ভালোবাসার দাবীতে। এরপর মেঘের পেছনে অন্ধকার এসে দাঁড়ালে আলোর শক্তি ক্রমশ ম্রিয়মান হতে হতে পৃথিবী বন্দি হয়ে যায় একটা সাপের লাঠির কাছে।

গ্রামের শিশু যেমন সাপ পিটিয়ে মারার পর লেজেও বিষ রাখতে চায় না; ঠিক তেমন করেই পৃথিবীর আমাকে একটা কালো মেঘ সূর্য-চাঁদ-আলো বঞ্চিত করে লেজ থেকে আমিত্বটাও শেষ করে দিতে উদ্যত হয়। এরপর দীর্ঘ অন্ধকার-বাসের পর পৃথিবীর মানুষেরা দিন ও আলো ভুলে যায়। সবার চোখই তখন আন্ধারসহা এক নতুন চোখ। কথাও সূর্য নেই। আলো নেই। চাঁদ নেই। চোখগুলো থেকেই নেই। এখানে মানুষ যা দেখার কথা; তা দেখে না। যা বলার কথা; তা বলে না। যা করার কথা; তা-ও করে না। নিতান্ত সুবোধ হয়ে মেনে নেওয়ার এক অবিশ্বাস্য শক্তি অর্জন করেছে মানুষ। ফানুষের মতো অথবা রাতে দেখা স্বপ্নের মতো জীবনকে কল্পিত রঙে সাজিয়ে দেখার বায়বীয় চৈতন্যে বুঁদ পুরো জনপদ।

কী এক অপার মোহ কিংবা নতুন হ্যামেলিয়নের বাঁশির সুরে ছুটে চলছি অজানায়। বাঁশিওলা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। পেছনের ছুটন্ত পথিকেরা বধির। থামানোর কথা যাদের ছিলো তারাই বাঁশি হয়ে গেছে। বাজতে বাজতে বেসুরো হওয়ার আগে থামবে না বলে অঙ্গীকার করেছে। অথচ যে বাজায় সে জানে; কীভাবে বাঁশিকে সুরে ও মোহে রাখতে হয়। পথিকের মিছিল বাড়ছে। অন্ধকার আরও ঘণিভূত হয়ে দীর্ঘ জ্বালের সরের মতো পুরো হয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই বাঁশিওলা সুর বাড়িয়ে সকল আওয়াজকে গৌণ করেছে নিজস্ব সুরকে মূখ্য করতে। ততক্ষণে আকাশের মেঘ জমিনের পরতে কায়েম করে ফেলেছে উপনিবেশ।

মেঘ, বাঁশিওলা, বাঁশির সুর, পথিক, পথহারা শূন্যের নাগরিকসহ জনপদের সবার চোখ অন্ধকার সয়ে নির্ঘুম হয়ে গেছে। রাতের অগোচরে দিনের মঞ্চে ঘুমের শামিয়ানা টানিয়ে চলছে প্রক্সি প্রক্সি খেলা। পৃথিবী ডুবছে অন্ধকারের প্রবহ-চৈতন্যে। মানুষ তখনও নিজস্ব চেতনা-বোধ-বিশ্বাস ফেলে আরোপিত সংজ্ঞায় অভ্যস্ত হয়ে; ভুলে যাচ্ছে নিজস্বতার রঙ। ধুকতে ধুকতে যে প্রথাপন্থী হাঁক ছেড়ে বলে যাচ্ছে রোদের অথবা চাঁদের মুক্তির কথা; তার দুই ঠোঁটে কে যেন লাগিয়ে দিয়েছে অধ্যাদেশের স্ট্যাপলার। খুলতে গিয়ে রক্তাক্ত ঠোঁটের কারণে 'ছাব্বিশ' ধারায় বন্দিত্ব বরণ আলোর পিয়াসী পথিক। বন্দিশালা বাড়তে বাড়তে আরেকটা আন্দামান-নিকোবর হতে হতে নতুন পৃথিবী হয়ে উঠে। যেখানে কেউ একজন হাঁক ছাড়ে মুক্তির।

মুক্তির প্রশ্নে রোদান্ধ যুবকেরা আওয়াজ তুলে। আওয়াজের উৎসে যুবকদের মগজ ছাড়া সব দেখা যায়। আওয়াজ আসে, "একজন মগজহীনকে বাঁচিয়ে তুলার আপদ কতটা তীব্র ও দীর্ঘ হতে পারে; কখনও ভেবেছো মানুষ! বিজ্ঞান প্রযুক্তি জানলেই সবখানে প্রয়োগ করতে হয় না।" দীর্ঘ অন্ধকারের কারণে আওয়াজের উৎস থেকে যায় অদেখা। কিন্তু আওয়াজ বাড়তে থাকে। নানামাত্রিক আওয়াজ। কেউ বলে এতো মগজহীনের জনপদে আলো আসলেই তো বিপদ। না-মগজীরা আলোর মূল্য দিবে কীভাবে অর কীভাবেই বা করবে ব্যবহার! মেঘের তীব্রতা বাড়লেই মগজহীন হয়!
- প্রশ্ন করা তো নিষেধ। অভিধান থেকে প্রশ্ন শব্দটা যুগ যুগ ধরে মুছে মুছে আসছি। তবুও প্রশ্ন কেনো? প্রশংসা, পোস্টার, ছবি, ভিত্তিপ্রস্থর, একদেশদর্শীর মতো একমাথাপন্থী হওয়ার যে সবসমানাঁধার দীক্ষা দিয়েছি তার ভুল প্রয়োগে কালোর আড়ালে আরেক কালোর নীচে থেমে যেতে পারো; সেই কথা মনে আছে!
- ধন্যবাদ। এখনও বলছেন কেবল। প্রয়োগ তো করেননি। যদি কালোর আড়ালে কালোর অতলে আমার হিসেবহীনতার নিয়তি হতো! তাহলে এই ধন্যবাদটাই পেতেন কোথায়?
- ধন্যবাদের নিকুচি করি। সেইসব যুগ পাড় হয়ে এখন গিভএন্টেক যুগের নিরোদ নিয়তিতে এসেছি। এখন বিলবোর্ডের বিপরীতে ধন্যবাদ কে নেয়! হা হা হা!

দুই.
বাঁশিওলা, বাঁশি আর বাঁশি নির্মাতা নিজেও চোখের জ্যোতিহীনতার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে মেঘের আড়ালে যাওয়ার পথে না-মগজ তারুণ্যের কাছে আটকে যায়। ওরা বলে, "কোথায় যাচ্ছেন! চোখ নিয়েছেন। বোধ নিয়েছেন। জন্ম দিয়েছেন মগজহীন। এখন আপনারা মেঘের আড়ালে গেলেই রোদ উঠবে। চাঁদ হাসবে। দিন ফিরবে আপন মহিমায়। রাত হয়ে যাবে আদিগন্ত অস্ত্রোপচার থিয়েটার।

আমরা হিসেবের বাইরে খরচের খাতায় ব্যয়ের কলামে চলে যাবো। ভাবতে পারেন; আপনি দীর্ঘ শূন্যতার পরেও কী-এক পূর্ণতা জেগে আছে! যেখানে হিসেব চলবেই। জাগরণ আসবেই আলোর।"

- এইসব তো তোমাদের সিলেবাসে নেই। যাও ফুর্তি করো। সেঞ্চুরি করো মাঠে অথবা খাটে। নতুন কথা কেনো শিখছো! তোমাদের এখন ট্রলের আর কমেডির সময়। এখন পিএইচডির আলাপে ইচড়ে পাকা হচ্ছো কেনো! কিছুই হবে না। বাঁশিওলা নতুন সুর বেঁধেছে। নতুন নতুন ইস্যূর মোহমধু নিয়ে সুর তুলবে। তোমরা পেছনে হ্যামেলিয়নের নাগরিকের মতো ছুটতে থাকো। ঘোরগ্রস্ত হও। অন্ধকার দীর্ঘজীবী হবেই। রোদের উপরে মেঘ থাকবেই। চাঁদের জ্যোৎস্নাকে বোধগত নিঃস্বতায় আঁধারের অনুগামী করে দেবো। তোমাদের পৃথিবী তোমাদের মতোই হবে। শুধু প্রশ্নটা ভুলে যাও। মুছে দাও অভিধান থেকে।

- ভরসার পথে অগণিত কাঁটাগুল্ম। সম্ভাবনার আলাপে তীব্র আত্মবিশ্বাস। মুক্তির আলাপ করতেই এসেছি। ঘোর কাটেই মানুষের। আমরা মানুষের নিয়তি উপলব্ধিতে উচ্চারণ করেছি। আমরা কোন পাহাড়ের আড়ালে হারাতে চাই। পৃথিবীর পথে নতুন ভোরের জাগরণ দেখতে চাই।

তীব্র ও ঝাঁঝালো শব্দের পর ঝড় আসে। আলাপের মঞ্চ ভেঙ্গে যায়। চিন্তার সূত্র ছিঁড়ে অচিন্তা-কুচিন্তা দখল নেয় খালি মগজের স্থান। ভেঙ্গে যায় আশাবাদের শেষ আশ্রম। অজানা আগামীর পথে আমার দ্বিধাগ্রস্ত চলতি পথ চলতে থাকে অচল অভিধান। প্রত্যাহার করা কয়েনের মতো অবহেলে ফেলে রাখা কয়েন আমি। শৌখিন সংগ্রাহকের উপকার হলেও আমার মালিকের বোঝা হয়ে জেগে থাকি শো-পিস হওয়ার স্বপ্নে। আর বহুদিন পর আবিষ্কার করি কোন ধুলোর আস্তরণে।

অগণিত পদধ্বনি আসতে থাকে। মিছিলের চলে কোরাস। স্লোগানের শেষে থমকে দাঁড়ায় সাহসের পদক্ষেপ। মালিকের বুকে মালিকের বন্দুক নির্লজ্জ তাক। আশ্বিনের আইত্ত্যানীর মতো, চারের বন্যার দীর্ঘ হতে থাকে কালো মেঘের আয়ুষ্কাল। চারদিক থেকে পাতাদের নুয়ে পরার কথা থাকলেও নুয়ে পড়ে অগণিত ডাল। অবশেষে বৃক্ষ। বটবৃক্ষ। ঘরটাও বিক্রি হয় ঋণের অপরিকল্পনায়। হাশরের মাঠ ভেবে ঘুম ভাঙ্গে। ততক্ষণে হিসেবের বাইরে জীবনের দাম। নাগালের বাইরে স্বস্তির অভিধান।

ঝুলতে ঝুলতে লোকাল বাসের যাত্রী হয়ে যায় দেশ, রাষ্ট্র আর রাষ্ট্রের বাঁশিওলা।

তিন.
অসুস্থ কুকুরের ঝুলে যাওয়া জিহ্বার মতো অগণিত জিহ্বার চাহিদায় চিৎকার করে ওঠে কেউ। এরপর মেরুকরণের দীর্ঘ পরিশ্রমে বিভাজন জেগে উঠে নদীর চরের মতো অনুভূতির উঠোনে। আলাপ মানেই বিরোধ। বিরোধ হলেই মেঘ নামে। আঁধার ঘণায়। মানুষ গৌণ হয়ে মূখ্য হয়ে যায় মানুষের মগজহীনতার অন্ধকার ও জেদগ্রস্থ হীনম্মন্যতা।

এরপর শহরের গলি গলি, মোড়ে মোড়ে ও ধ্যানে-জ্ঞানে কেউ কারো নয় দ্রুপদী অভিনয় মঞ্চস্থ হয়ে কারো কণ্ঠ চওরা হতে হতে ফেঁটে যায়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে, " রাষ্ট্র তুমি কার!" সংবিধান বলে, "সরকার যার আমি তার"। সরকার বলে, "অমরতার বিনিময়ে মুক্তি নাও।" ক্ষমতা বলে, "মধু বড়ো মধুময়।" আর পুরো জনপদে ভাঁড় ও কমেডিয়ানের মঞ্চ বাড়তে বাড়তে মানুষ ফানুস হয়ে থমকে দাঁড়ায়।

অন্ধকার বলে, 'রোদ ও সূর্য না থাকলেই আমার অস্তিত্ব।' রোদ বলে, 'আমার বন্দিত্ব শেষ হবে কবে?' জোৎস্নার কোমলতা তাকে কোন প্রশ্ন করার সাহস যোগায় না। বাঁশির সুরে তীব্রতা বাড়ে। বাঁশিওলার চোখে জেগে থাকে সেই আগামী; যেখানে নিজের বাঁশিই অন্যের ফুৎকারে 'বিগত মালিক' নিজের বিপক্ষে বেজে ওঠে।

জনতার কথা সবাই ভুলে যায়। নির্লজ্জ জনতা সবাইকে মনে রাখে। অথচ জনতার কথাই মনে রাখতে রাষ্ট্র ও প্রশাসনের জন্ম।

এইসব গল্প বলতে বলতে কবির মগজে মগজহীতা তৈরি হয়ে যায়। দীর্ঘ আলাপ, বিতর্ক, তর্ক, পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে কবি বলতে কিছুই ছিলো না মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তে আচানক নেতাদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। আর তখনই আবার ভোট, সংলাপ, নির্বাচন, অত্যাচার, স্বৈরাচার, জনতা শব্দগুলো কানে বাজলেও মগজে ও হৃদয়ে বাজে না।

পৃথিবীর চারপাশে একদল দুঃখী অসহায় ও বন্দি মানুষের অস্থির পাওয়া যায়। যাদের জীবনে স্বাধীনতা বলতে জুতোহীন পায়ে পঞ্চাশ টাকার ক্ষেপ শেষে একটা বনরুটি।

আমি চোখ বন্ধ করি, দেখি প্রতিশোধ। চোখ খুলি, দেখি প্রতিশোধ। সব দেখাদেখি বাদ দিলে দেখি আমার পক্ষে কেউ নাই। হৃদয়ের চোখ খুলে দিলে জেলখানা হয়ে যায় ঠাঁইহীন। অথচ জেলখানা ছাড়া আমার কোন ঠিকানা নাই।

হ্যান্ডকাফ...

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৪৭

আহমেদ জী এস বলেছেন: সুপান্থ সুরাহী,




জটিল একটি লেখা। তবুও বলি ---
অন্ধকারে সমস্ত পৃথিবীটাকেই ঢেকে রাখা হয়েছে। এখন নিকষ অন্ধকার চারিদিকে।
"পথিক ! তুমি কি পথ হারাইয়াছো?" এর মতোই কেউ যেন বলে যায় সংগোপনে-- এই অন্ধকারে পথ হারানো তোমার নিশ্চিত! পথের অন্ধকার ঘুলঘুলিতে তোমাকে মগজহীন হয়ে ঘুরপাক খেতে হবে মরন অবধি। আওয়াজ তুলবে ? সে আওয়াজ অন্ধকারের দেয়ালে দেয়ালে মাথা ঠুকে মরবে। বাঁশির সুর হয়ে উঠবেনা কখনও.................

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.