নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অাসাদ

"প্রচার কর, যদি একটি মাত্র আয়াতও হয়"

provat

http://www.facebook.com/asad.rahman.7906

provat › বিস্তারিত পোস্টঃ

"ইসলামের রীতি অনুযায়ী, মানুষের সাথে কথা বলার দিক নির্দেশনাবলীসমূহ"

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৪০

মানুষের সাথে, একজন মুসলিম কীভাবে কথা বলবেন, সে বিষয়ে ইসলাম কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম পদ্ধতি প্রণয়ন করে দিয়েছে। সর্বাবস্থায় একজন মুসলিমকে অটুট বিশ্বাস নিয়ে মনে রাখতে হবে যে, তার মুখ দিয়ে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দের জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে। তিনি যদি উত্তম কিছু বলেন, তিনি পুরস্কৃত হবেন। আর তিনি যদি মন্দ কিছু বলেন, তবে সেই মন্দ কথার জন্য তাকে অবধারিতভাবেই শাস্তি ভোগ করতে হবে।



আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেছেন :

“মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী, তার সাথেই রয়েছে।” [সূরা কাফ : ১৮]



রাসূল (সা) আমাদেরকে সতর্ক করে বলেছেন যে, মুখের কথা খুবই বিপদজনক।

ইমাম আত-তিরমিযি এবং ইবনু মাজাহ কর্তৃক সংকলিত এবং সহীহ সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীসে আল্লাহ্‌র রাসূল বলেছেন,



“বান্দা, অনেক সময় এমন কথা বলে, যাতে সে গুরুত্ব দেয় না, অথচ সেই কথা আল্লাহ্‌কে সন্তুষ্ট করে। ফলে আল্লাহ্‌ তা‘আলা এর দ্বারা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। পক্ষান্তরে, বান্দা অনেক সময় এমন কথাও বলে, যাতে সে গুরুত্ব দেয় না, অথচ সেই কথা আল্লাহ্‌কে অসন্তুষ্ট করে। ফলে সেই কথাই তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে।” [বুখারী; অধ্যায় : ৮, খণ্ড : ৭৬, হাদীস : ৪৮৫]



কাজেই মুখের কথা বিপদের কারণ হতে পারে। আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূলের (সা) নির্দেশনা অনুযায়ী, ইসলামের সীমারেখার মধ্যে থেকে, আমাদেরকে কথা বলা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।



মুখের কথা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নীচে কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হলো :



১। কথা বলার উদ্দেশ্য হতে হবে উত্তম এবং কল্যাণকর।



যদি উত্তম কথা বলার উদ্দেশ্য বজায় রাখতে না পারেন, তবে চুপ থাকাই আপনার জন্য উত্তম এবং চুপ থাকাটাও একটি উত্তম কাজ।



বুখারী এবং মুসলিম কর্তৃক সংকলিত একটি হাদীসে রাসূল (সা) বলেছেন,

“যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ এবং কিয়ামত দিবসে বিশ্বাস রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে, নয়তো চুপ থাকে।” [বুখারী; খণ্ড : ৮, অধ্যায় : ৭৬, হাদীস : ৪৮২]



২। কথাবার্তায় সত্যবাদী হউন এবং মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকুন।



কারন, মু’মিন ব্যক্তি সর্বদায় সত্যবাদী, যিনি কৌতুক করেও মিথ্যা বলেন না।



বুখারী এবং মুসলিমের অন্য একটি হাদীসে রাসূল (সা) বলেছেন,

“তোমরা অবশ্যই সত্য কথা বলবে। কারন সত্য সদ্‌গুণের দিকে এবং সদ্‌গুণ জান্নাতের পথে চালিত করে। যে সর্বদা সত্য কথা বলে এবং সত্যকে গুরুত্ব দেয়, আল্লাহ্‌র নিকট তার নাম সত্যবাদীদের খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়। মিথ্যা থেকে দূরে থাকো, কারন- মিথ্যা পাপের দিকে এবং পাপ জাহান্নামের আগুনের দিকে চালিত করে। যে অনবরত মিথ্যা বলে এবং মিথ্যা বলার ইচ্ছা রাখে, আল্লাহ্‌র নিকট তার নাম মিথ্যাবাদীদের খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়।” [মুসলিম; খণ্ড : ৩২, হাদীস : ৬৩০৯]



৩। কথাবার্তার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে না — তা ক্রীড়াচ্ছলেই হউক অথবা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেই হউক।

কারন- আল্লাহ্‌ অবাধ্য, মন্দভাষীকে ঘৃণা করেন। আল্লাহ্‌ অপছন্দ করেন, এমন প্রতিটি শব্দের মাধ্যমেই কুফ্‌রী করা হয়,যেমন : অশ্লীল ও অশিষ্ট শব্দ ব্যবহার করা, মানুষকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা ইত্যাদি।



এ সম্পর্কে সহীহ সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীসে নবী (সা) আমাদেরকে সতর্ক করে বলেছেন,

“মু’মিনগণ কখনো অভিযোগ করে না, অন্যের প্রতি খারাপ ভাষা ব্যবহার করে না, আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধাচরণ করে না এবং নোংরা ভাষায় গালমন্দ করে না।”



অন্য একটি সহীহ হাদীসে রয়েছে,

“মুসলিমের জন্য গালিগালাজ করাই হলো কুফ্‌র।”

জীবিত কোনো মানুষকে গালিগালাজ করা যেমন নিষিদ্ধ, মৃত ব্যক্তিকে গালিগালাজ করাও তেমনিভাবে নিষিদ্ধ।

“মৃত ব্যক্তিদের গালমন্দ করবে না; তারা তাদের প্রতিদান পেয়ে গেছে।”



অন্য একটি হাদীসে রাসূল (সা) নির্দেশ দিয়েছেন,

“মৃতদের ভালো কাজগুলো নিয়ে আলোচনা করো।”



৪। কথা বলার সময় গীবত তথা পরচর্চা থেকে বেঁচে থাকুন।



গীবত হলো কোনো মুসলিমের অসাক্ষাতে, তার সম্পর্কে, অন্যকারও কাছে এমন কিছু বলা, যা শুনলে সে কষ্ট পায়। অতএব, পরচর্চা করবেন না। নামীমাহ থেকেও বেঁচে থাকুন। নামীমাহ হলো লোকজনের মধ্যে এমন তথ্য ছড়ানো, যা তাদের মধ্যে পারস্পরিক ঘৃণার সৃষ্টি করে।



সহীহ সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীসে রাসূল (সা) বলেছেন,

“যে ব্যক্তি গুজব ছড়ায়, সে কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”

যারা নামীমাহ চর্চা করে, তাদেরকে গোপনে নিষেধ করুন এবং সেগুলো শোনা থেকেও দূরে থাকুন। অন্যথায়, শুধু শোনার জন্যও আপনি সেই পাপের অংশীদার হবেন।



৫। কথায় কথায় কসম খাওয়া থেকে বেঁচে থাকুন।



এই মর্মে সূরা আল-বাকারাতে আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেছেন :

“আর নিজেদের শপথের জন্য আল্লাহর নামকে লক্ষ্যবস্তু বানিও না...।” (আল-বাকারা : ২২৪)



৬। নিজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার পরিসীমার মধ্যে থেকে কথা বলুন।



যে বিষয়ে জ্ঞান নেই, সে বিষয়য়ে মত প্রকাশ করবেন না।

সূরা আল-ইসরা-তে আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেছেন :

“যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, সে বিষয়ের পিছে পড়ো না।” (আল-ইস্‌রা : ৩৬)



৭। তদন্ত করে নিশ্চিত না হয়ে, শুধু শোনা কথা নিয়ে, মানুষের সাথে আলাপ করা যাবে না।

কারন- আপনি এমন কিছু শুনতে পারেন, যা সত্যও হতে পারে, আবার মিথ্যা কিংবা সন্দেহজনক হতে পারে। যা শুনবেন তা-ই প্রচার করলে, আপনিও পাপের অংশীদার হবেন।

একটি বিশুদ্ধ হাদীস অনুযায়ী, রাসূল (সা) সতর্ক করে বলেছেন :

“একজন মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য একটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনে, তা-ই প্রচার করে বেড়ায়।” [সহীহ মুসলিম ১/৮, হাদীস ৫; সুনান আবু দাউদ ২/৬৮১, হাদীস ৪৯৮২]



৮। খেয়াল রাখবেন, মানুষের সাথে আপনার কথাবার্তা এবং আলাপ আলোচনার উদ্দেশ্য যেন হয়, সত্যে উপনীত হওয়া।

সত্য আপনার মাধ্যমে উন্মোচিত হোক আর অন্য কারোরও মাধ্যমেই উন্মোচিত হউক — কার দ্বারা উন্মোচিত হলো সেটা বড় করে দেখবেন না। এক্ষেত্রে সত্যে উপনীত হওয়াটাই বড় কথা।



৯। অন্যকে ছোটো করা এবং অন্যের উপর জয়লাভ করার উদ্দেশ্যে অনর্থক তর্কে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকুন।

অকারনে তর্কে লিপ্ত হওয়া বিপথগামীতার লক্ষন। এ থেকে আমরা আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

এই মর্মে তিরমিযি কর্তৃক সংকলিত একটি হাদীসে রাসূল (সা) বলেছেন,

“আল্লাহ্‌ কাউকে পথ দেখালে, সে বিপথগামী হয় না কিন্তু তারা বিনা কারনে তর্কাতর্কিতে লিপ্ত হয়।”

আপনি নিজে সঠিক হলেও বিতর্ক পরিহার করুন।

আবু দাঊদের একটি হাদীসে রাসূল (সা) বলেছেন,

“সঠিক হওয়া সত্ত্বেও, যে ব্যক্তি বিনা কারনে তর্ক করা বন্ধ করে, আমি জান্নাতের সমীপে তার জন্য একটি ঘরের নিশ্চয়তা দিচ্ছি।” [আবূ দাঊদ; অধ্যায় : ৪১, হাদীস : ৪৭৮২]



১০। আপনার কথা হবে স্পষ্ট, সহজবোধ্য, দুর্বোধ্য শব্দমুক্ত।

প্রয়োজন না হলে বাগ্মিতা পরিহার করুন এবং মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে কিছু বলা থেকে বিরত থাকুন। কারন রাসূল (সা) এধরনের কথা অপছন্দ করতেন।

আত-তিরমিযি কর্তৃক সংকলিত অন্য একটি সহীহ হাদীসে নবী (সা) বলেছেন,

“যাদেরকে আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি এবং যারা কিয়ামতের দিন আমার থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করবে, তারা হলো সেইসব, যারা অনর্থক কথা বলে, এবং যারা অন্যকে ছোট করে, এবং যারা কথা বলার সময় নিজেদের (পাণ্ডিত্য) জাহির করে।” [আত-তিরমিযি; হাদীস : ৬৩১]



১১। আপনার কথা হবে শান্ত প্রকৃতির, পরিষ্কার, শ্রুতিগোচর এবং সর্ব সাধারণের নিকট বোধগম্য।

রাসূল (সা) সকলের বুঝার সুবিধার্থে একটি কথা তিনবার পুনরাবৃত্তি করতেন। তাঁর কথা ছিল সহজ, যা সকলেই বুঝতে পারতেন।



১২। কথাবার্তায় আন্তরিক হউন। অযথা কৌতুক করবেন না।

কথাবার্তায় হাস্যরস আনতে চাইলে, সেই ভাবে আনুন, যেভাবে নবী মুহাম্মদ (সা) তা করতেন।



১৩। অন্যের কথায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করবেন না।

কেউ কিছু বলতে চাইলে তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং তাকে তার কথা শেষ করতে দিন। তার কথা শোনার পর যদি আপনার পক্ষ থেকে ভালো এবং প্রকৃত অর্থেই প্রয়োজনীয় কিছু বলার থাকে, তবে বলুন। শুধু বলতে চাওয়ার স্বার্থেই কথা বলবেন না।



১৪। কথা বলুন, আর তর্কই করুন — তা করতে হবে, উত্তম পন্থায়।

এতে করে যেন কারও ক্ষতি না হয়, মানসিকভাবে কেউ যেন আঘাত না পায়, কাউকে খাটো করা না হয় বা তাদের প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপ প্রকাশ না পায়। সকল নবীদের মাধ্যমেই মানুষকে সুন্দরভাবে কথা বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) যখন মূসা (আ) এবং তাঁর ভাই হারূনকে (আ) ফির‘আউনের কাছে প্রেরণ করেছিলেন, তখন তিনি তাঁদেরকে বলে দিয়েছিলেন,

“তোমরা তার সাথে নম্র কথা বলবে। হয়তো সে উপদেশ গ্রহন করবে অথবা ভয় করবে।” [সূরা ত্ব-হা : ৪৪]

বলাই বাহুল্য যে, আপনি মূসা (আ) এবং হারূন (আ) থেকে উত্তম নন। আর যে লোকটির সাথে কথা বলছেন, সেই লোকটিও ফির‘আউনের থেকে নিকৃষ্ট নয়।



১৫। অন্যদের কথাবার্তা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করবেন না।

বিশেষকরে যখন দেখবেন যে, তারা যা বলছে, তার মধ্যে যেমন ভুল বা মিথ্যা রয়েছে, তেমনি কিছু পরিমাণ সঠিক বা সত্য তথ্যও রয়েছে। কারন সঠিক অংশটুকুকে প্রত্যাখ্যান করা মোটেও উচিত হবে না, যদিও তা ভুলের সাথে মিশিয়ে উপস্থাপন করা হয়। একইভাবে সত্য অংশ টুকুকে প্রত্যাখ্যান করা মোটেও উচিত হবে না, তা মিথ্যার সাথে মিশিয়ে উপস্থাপন করা হলেও। আপনাকে সঠিক ও সত্যটি গ্রহন করতে হবে এবং ভুল ও মিথ্যাটি ত্যাগ করতে হবে। এটিই হলো ন্যায়বিচার এবং ইনসাফ, যা করার জন্য আল্লাহ্‌ আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।



১৬। মানুষের সামনে নিজের প্রশংসা করবেন না, নিজেই নিজেকে বাহবা দেবেন না।

কারণ এমনটি করা উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের পরিচায়ক, যা করতে আল্লাহ্‌ তা‘আলা আমাদেরকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন,

“অতএব তোমরা নিজেদের সাফাই গেয়ো না। তিনিই ভালো জানেন মুত্তাকী কে।” [সূরা আন-নাজ্‌ম : ৩২]



ভাষান্তর : জহিরুল কাইয়ুম | সম্পাদনা : আব্‌দ আল-আহাদ

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৭

একজন ঘূণপোকা বলেছেন: সুন্দর পোস্ট।

ইসলামের সৌন্দর্য এখানেই, জীবনের সকল দিক নিয়ে এই ধর্ম আলোকপাত করেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.