নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় সাংবাদিক। ‘জল পরীর ডানায় ঝাপটা লাগা বাতাস’ (২০১৩), ‘সাদা হাওয়ায় পর্দাপন’ (২০১৫) দুটি কবিতার বই প্রকাশিত। তার লেখা নাটকের মধ্যে ফেরা, তৎকালীন, আদমের সন্তানেরা উল্লেখযোগ্য। লেখালেখির জন্য ২০১৫ সালে হত্যার হুমকি প্রাপ্ত হন।

সৈয়দ মেহেদী হাসান

আমার পরিচয় খুঁজচ্ছি জন্মের পর থেকেই। কেউ পেলে জানাবেন কিন্তু....

সৈয়দ মেহেদী হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মে দিবসের প্রপাগণ্ডায় এখনও শ্রমদাসত্ব

০১ লা মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫১



১৮৮৬ সালের ১ মে শিকাগোর হে মার্কেটের সামনে শ্রমিক হত্যাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের যে উদ্ভব সেটা আপেক্ষিক। কোন কোন দেশ দিনটিকে লেবার ডে বলে পালন করে আসছে এবং এটা বিশ্বব্যাপী। কিন্তু শ্রমিক দিবস পালনই কি শ্রমিকদের চাওয়া-পাওয়া? সে বিকর্ত শেষ হচ্ছে না বা শেষ হবার অনুকূলে কোন পক্ষও দাঁড়াবে হয়তো না। বছর যায় বছর আসে, শ্রমিকের ভাগ্য নিয়ে সাপলুডু খেলা চলে কিন্তু ভাগ্য পরিবর্তনের গ্রিন সিগন্যাল আসে না। এর প্রধানত দুটি কারণ হতে পারে। প্রথমত: মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রভাব ও দ্বিতীয়টি রাষ্ট্রের উগ্র ফ্যাসিবাদী শাসন, প্রকারন্তরে শোষণ ব্যবস্থা। একটু বড় পরিসরে বললে দাড়ায়, সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তবাজার অর্থনীতি দুই শ্রেণির মানুষের স্বার্থ ধ্বংস করে একটি শ্রেণির হাতে তুলে দিচ্ছে অর্থ। ঐ দুই শ্রেণি হল শ্রমিক শ্রেণি বেং ভোক্তা শ্রেণি। এদের প্রতিদ্বন্দি হিসেবেই ব্যবহার করছে মালিক শ্রেণি। অথচ অর্থ উৎপাদনের চালিকা শক্তিই হল শ্রমিক ও ভোক্তা। তাদের স্বার্থহানী করে তাদের মাধ্যমেই মালিক শ্রেণি হাতিয়ে নিচ্ছে প্রবল প্রতিপত্তি। এর পিছনের ক্রিড়নক হল মুক্তবাজার সিস্টেম। এখানে প্রতিযোগিতার রেওয়াজ চালু হওয়ায় মালিকের অর্থ আয়ের পথ খুললেও তলিয়ে গেছে শ্রমিকের পূর্ণ অধিকার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা।

তবে এ কথা প্রানিধানযোগ্য যে ১৮৮৬ পূর্ববর্তী সময়ে প্রকারান্তরে শ্রমিকরা যে দাস ব্যবস্থার বেড়াজালে বন্দি ছিল সে অবস্থা থেকে দেশ ভেদে কিছুটা উন্নতি অবস্থান পেলেও কোথাও কোথাও তা রয়ে গেছে পুরানো অদলে।

দ্বিতীয যে কারনটি ছিল সেটি ফ্যাসিবাদী শাসন প্রকারান্তরে শোসন ব্যবস্থা। আমরা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশের সরকারকে মালিক শ্রেণি থেকে ঋণ গ্রহণ করতে দেখছি। ফলে সরকার বা রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের মালিক শ্রেণির মুখাপেক্ষি হয়ে পড়ে। যে কারণে শাসনভার ও অর্থ উপার্জন এক কাতারের শামিল হয়ে যায়। ছিটকে পড়ে শ্রমিক শ্রেণি। এর প্রেক্ষিতে শ্রমিক শ্রেণি বার বার শাসকদের স্মরণাপন্ন হয়েও সুবিধা করতে পারে না। এগুলোর বাইরেও আরও একটি বড় কারণ রয়েছে, যা শ্রমিক দিবস পালন বা শ্রমিক দিবস প্রপাগণ্ডার থেকে বিপরীত অবস্থানে দাড় করায়। কারণটি হল, শ্রমিক হিসেবে বিবেচিত না হওয়া। খোলাসা করে বললে, আমাদের দেশে অনেকেই এখনো শ্রমিকের পর্যায়েই পড়ে না।

ফলে তাদের কাছে শ্রমিক দিবস পালন যেমন হাস্যকর তেমনি কষ্টেরও। সেইসব শ্রেণির মানুষগুলো শ্রম মেধা খাটিয়েও পারিশ্রমিক চাইতে পারে না। ফলে দাসত্বের যে প্রাগৈতিহাসিক সিস্টেম তারই কলাকৌশল চালু রয়েছে ঐ শ্রেণির উপর। শ্রমিক হিসেবে বিবেচিত না হওয়া এসব শ্রমদাসদের সমষ্টিগত বর্ণনায় এক শ্রেণিতে ফেলা হলেও এদের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগ আছে। ক্ষুদ্র শ্রম দাসরা থাকেন সমাজের প্রান্তিক পর্যায়। অর্থাৎ এদের সামাজিক তাৎপর্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় কেউ শ্রমিক নয়। যেন শ্রম বিকিয়ে কারও কারও করুনা লাভ করে। প্রসঙ্গত এই শ্রম দাসদের সামাজিক অবস্থানের কারণে মালিক শ্রেণির শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হয়। দীর্ঘদিন পর্যব্বেণ ও পর্যালোচনার মাধ্যমে প্রতিয়মান হচ্ছে এক শ্রেণির সাংবাদিক ও শিক্ষক, কবি-কথাসাহিত্যিক, যৌন কর্মীরাই বাংলাদেশে শ্রম দাসে পরিণত হয়েছে।

শ্রম দাস সাংবাদিক
দেশে ও বিশ্বে সুশাসন ও গণতন্ত্র পাশাপাশি আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তিটা প্রধানত জবাবদিহিতা। জবাবদিহিতার কাজটি করে থাকে গণমাধ্যমকর্মী বা সাংবাদিকরা। অন্যান্য দেশে সাংবাদিকদের রাষ্ট্রীয়ভাবেই গুরুত্বসহকারে দেখা হয়। তাদের শ্রম দান দাসত্বে পরিণত হয় না। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে বৃহদাংশ গণমাধ্যমকর্মী শ্রমদাস। এরা এই পেশায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ অধিকারতো পায় না তেমনি মালিক পক্ষকে বিনা পারিশ্রমিকে শ্রম দেয়ার উদাহরণ ভুরি ভুরি। এখানে মালিক পক্ষ যে কৌশলে সাংবাদিকের শ্রমে নিজে লাভবান হলেও ঐ শ্রমিক সাংবাদিককে ঠকাচ্ছেন সেটা আরও সুক্ষ্ম। যেহেতু বাংলাদেশে গণমাধ্যম একটি সম্ভাবনাময়ী ব্যবসা ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে, সেখানে ফি-বছর বৃহৎ অংকের সাংবাদিক বা শ্রমিক প্রয়োজন হয়। কিন্তু ঐ পরিমান সাংবাদিক বা শ্রমিক প্রস্তুত করার মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। ফলে দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলার সচেতন মানুষগুলো এর সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। মেধা চেষ্টার মাধ্যমে সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশনে বেশ দক্ষতা অর্জন করলেও মালিক পক্ষ থেকে পারিশ্রমিক প্রদানের নজির তেমন একটা নয়। যদিও কিছু কিছু মাল্টিলেভেল কোম্পানী সরকার নির্ধারিত মূল্যে সাংবাদিক নিয়োগ করলেও সেখানে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের প্রশ্নে মতবিরোধ রয়েছে। পুরো দেশের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানী এ কাজ করলেও তিনের দুই বা তারও বেশি অংশ থেকে যাচ্ছে পারিশ্রমিকহীন শ্রমদাস নিয়োগের পদ্ধতিতে। এ ধরণের ঘটনা ঘটছে মূলত আঞ্চলিক পত্রিকা গুলোতে। উদারহন স্বরূপ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকা থেকে সাপ্তাহিক, মাসিক, দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকা পঞ্চাশোর্ধ। প্রত্যহই এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে মাত্র দুটি পত্রিকায় ওয়েজবোর্ড ভুক্ত হলেও ফাঁকিবাজি করছে শ্রমিকদের সাথে। সেসব পত্রিকার সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, ওয়েজবোর্ড অনুসারে বেতনের খাতায় বেতন প্রাপ্তির স্বাক্ষর করলেও বাস্তবিক তাদের হাতে দেয়া হয় এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে। যা কোন অংশেই ওয়েজবোর্ড নির্ধারিত অর্থের সমান নয়। এছাড়া বাকি দু-একটি পত্রিকার হাতে গোনা ৩/৪ জনকে এমন ২/৩ হাজার টাকা দিয়ে নিয়োগ করা হলেও বাকি শ্রমশক্তি যারা নিয়োগ করছে তাদের কোন পারিশ্রমিকই নাই। যেহেতু মফস্বলের সাংবাদিকরা শ্রম দিয়েও পারিশ্রমিকহীন বা শ্রমিকের পর্যায়ে পড়ে না ফলে বিভিন্ন সময় এদের অসংলগ্ন কর্মকাণ্ডে জড়াতে দেখা যায়।


কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক দিনমজুরের চেয়েও নিচু
পিরোজপুর শহরের একটি কিন্ডারগার্টেনে পড়ান মনিরুল ইসলাম। মাস শেষে তাকে ১৫০০ টাকা প্রদানের চুক্তিতে নিয়োগ করা হয়েছে কিন্ডারগার্টেনটিতে। অর্থাৎ দৈনিক হিসেবে তার পারিশ্রমিক মাত্র ৫০ টাকা। পক্ষান্তরে এ সময়ে একজন দিনমজুর দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকা আয় করে থাকে। কিন্ডারগার্টেনগুলোর পরিচালনা পর্ষদ থেকে মনিরুল ইসলামকে নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থী ফুসলিয়ে নিয়ে ‘প্রাইভেট’ পড়ানোর সুযোগ দেয়া হয়। অর্থাৎ সমস্ত মেধা ও শ্রম কিন্ডারগার্টেনটিতে প্রদান করে পারিশ্রমিকহীন শিক্ষককে দ্বিতীয় দফায় শিক্ষার্থীদের ফুসলিয়ে প্রাইভেট পড়িয়ে তাকেই জীবিকা উপার্জন করতে হয়।

বিবেচনাহীন শব্দ শ্রমিকরা
শিল্প যে কোন দেশের প্রধানতম সম্পদ। এর মাধ্যমে পরিচিত হয় সেই দেশ, সে দেশের বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। শুধু ব্যত্যয় ঘটছে সেই শিল্প চর্চাকারীদের বেলায়। তারা মেধা খাটিয়ে, পরিশ্রম করে সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিলেও এরা শ্রমিকের কাতারেই পড়েনি। সরকার বা কোন প্রকাশনা সংস্থা থেকে এ সমস্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে টিকিয়ে রাখার নূন্যতম কোন প্রয়াশ নেই। দু-একটিতে যা রয়্যালটির ব্যবস্থা রয়েছে সেটা লেখকের মেধাটাকে অর্থাৎ বই বাজারজাতকরণ করে বৃহদাংশ নেন প্রকাশক আর নাম মাত্র টাকা প্রদান করেন লেখককে। সে ধরনের লেখকও হাতে গোনা। এর বাইরে যারা কাজ করছে তারা পারিশ্রমি বঞ্চিত বা পারিশ্রমিক পাবার যোগ্যতা রাখে তেমন বিবেচনাও করে না রাষ্ট্র বা প্রকাশনা সংস্থা। অথচ এদের মেধা ও চিন্তাকে পণ্য সাজিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসছে কোন কোন প্রকাশনা। বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে শব্দ শ্রমিকরা।

পারিশ্রমিক চেয়ে নির্যাতিত হন যৌনকর্মী
বরিশাল নগরীর পায়েল বোডিংয়ের যৌনকর্মী রুবিনা জানিয়েছেন, খদ্দেরের কাছে পারিশ্রমিক চাইলে অনেকেই খামচি দেয়, বা চড়-থাপ্পড় দিয়ে নির্যাতন করে। আর যারা দেয়, সে পরিমান অত্যান্ত নিম্ন। পাশাপাশি বোডিংয়ের কর্তৃপক্ষ ও দালালদের সাথে বিনা পারিশ্রমিকেই যৌনশ্রম খাটাতে হয়। রুবিনার মত ৫০ জন যৌনকর্মীর সাক্ষাৎকার নেয়া হয় ২০১৪ সালের আগস্ট থেকে ২০১৫ মে মাস পর্যন্ত। এর মধ্যে ৪৮ জন একই ধরণের বক্তব্য প্রদান করে। বাকি দুজন এটা নিয়তি মেনে নিয়েছে।

অতএব এটা প্রতীয়মান যে, উল্লেখিত স্তরগুলোতে পারিশ্রমিকের আশায় শ্রম খাটালেও মালিক পক্ষ তাদের শ্রমিক হিসেবেই বিবেচনা করে না। ফলে শ্রম দাসত্ব করছে মানুষগুলো। এমনকি এদের নির্ধারিত কোন শ্রম ঘন্টাও নেই। দিনের ২৪ ঘন্টাই শ্রমের সাথে সম্পৃক্ত থেকেও নামমাত্রেরও কম পারিশ্রমিক পায়। এটাকে শ্রমিকরা করুনা হিসেবে মনে করেন। অর্থাৎ শ্রমিক দিবসে একজন শ্রমিকের জন্য যতগুলো প্রতিশ্রুতি শোনা যায় তা কিন্তু এ সমস্ত ক্ষেত্রে ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়। তবে একথা মানতে হবে শ্রমিক দিবস শ্রমিকদের মূল্য বৃদ্ধি করলেও এখনো সবার অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। পাশাপাশি অনেক শ্রমিককে অস্বিকার করছে আরও। যে কারণে মালিক পক্ষের হাত ঘুরেই শ্রমদাসরা নিজেদের শ্রমিক প্রমান করতেই শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থার উত্তরন দরকার।

লেখকঃ কবি ও সাংবাদিক

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.