নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Understanding the Glorious Quran

তাহান

Understanding the Glorious Quran

তাহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করলে ‎‎গুনাহ হবে কি?

০৩ রা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ২:৪৪

কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী

অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করলে ‎

‎গুনাহ হবে কি?






-প্রফেসর ডাঃ মোঃ মতিয়ার রহমান (এফ আর সি এস) ‎ ‎

মূল বিষয়

মু’মিনের ১ নং আমল হচ্ছে কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা। আর ‎শয়তানের ১ নং কাজ হচ্ছে কুরআনের জ্ঞান থেকে মু’মিনকে দূরে রাখা ‎বা কুরআনের জ্ঞান অর্জনের পথে নানা রকম বাধার সৃষ্টি করা। অর্থাৎ ‎সকল মুসলিমের জন্যে সব ফরজের বড় ফরজ হচ্ছে কুরআনের জ্ঞান ‎অর্জন করা এবং সব থেকে বড় গুনাহ হচ্ছে কুরআনের জ্ঞান থেকে দূরে ‎‎থাকা। বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করেছি ‘মু’মিনের ১ নং কাজ এবং ‎শয়তানের ১ নং কাজ’ নামক বইটিতে। ‎

‎যে কোন সত্তা তার ১ নং কাজে সফল হওয়ার জন্যে সর্বাধিক চেষ্টা-‎সাধনা করবে, এটা স্বাভাবিক। তাই শয়তান তার ১ নং কাজে অর্থাৎ ‎কুরআনের জ্ঞান থেকে মানুষ বা মুসলিমদের দূরে রাখার কাজে সফল ‎হওয়ার জন্যে সব থেকে বেশি চেষ্টা-সাধনা করবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু ‎ভাবতে অবাক লাগে, ১ নং কাজটিতে তার (শয়তানের) সফলতা দেখে। ‎অনিষ্ঠাবান মুসলিমদের কথা দূরে থাক, আজ পৃথিবীর অধিকাংশ নিষ্ঠাবান ‎মুসলিমেরও কুরআনের জ্ঞান নেই। আরো অবাক লাগে যে সকল কথার ‎মাধ্যমে শয়তান মুসলিমদের কুরআনের জ্ঞান থেকে দূরে রেখেছে বা ‎কুরআনের জ্ঞান অর্জন করার পথে বাধার সৃষ্টি করেছে, সেগুলোর ধরন ‎‎দেখে। ঐ কথাগুলো যে অযৌক্তিক বা ধোঁকাবাজি, তা সাধারণ বিবেক-‎বুদ্ধির আলোকেও বুঝা সহজ। তারপরেও একটি জাতির অধিকাংশ লোক ‎কিভাবে তা মেনে নিলো, এটা একটা অবাক কাণ্ড। ‎

‘অজু ছাড়া কুরআন পড়া যাবে কিন্তু স্পর্শ করা যাবে না’-এ কথাটা ‎বর্তমান বিশ্বে মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচারিত। আর এর ব্যাখ্যা ‎‎থেকে মুসলিমরা ব্যাপকভাবে জানে ও মানে যে- মুসলিমরা‎

‎১. অজু ছাড়া কুরআন মুখস্থ পড়া যাবে কিন্তু স্পর্শ করে বা ধরে পড়া ‎যাবে না। ‎

‎২. অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা বা ধরা মহাপাপ। ‎

হাফেজ ছাড়া বাকি সব মুসলিমের কুরআনের অল্পই মুখস্থ থাকে। ‎আবার বেশির ভাগ মুসলিমের তাদের জাগ্রত জীবনের অধিকাংশ সময় ‎অজু থাকে না। তাই কথাটি অধিকাংশ মুসলিমের, জাগ্রত জীবনের ‎অধিকাংশ সময়, কুরআন ধরে পড়ার পথে এক বিরাট বাধা। অর্থাৎ ‎কথাটি অধিকাংশ মুসলিমের জন্যে কুরআনের জ্ঞান অর্জনের পথে এক ‎বিরাট বাধা। কথাটি যদি চালু না থাকত, তবে সকল বেঅজু মুসলিমের ‎পকেটে বা ব্যাগে কুরআন থাকতো এবং তা বাসায়, অফিসে বা পথে-‎ঘাটের যে কোন অবসর সময়ে পড়তে কোন অসুবিধা হত না। ফলে ‎তাদের কুরআন পড়ার অর্থাৎ কুরআনের জ্ঞান অর্জনের সময় অনেক ‎‎বেড়ে যেত এবং অনেক অনেক মুসলিম সহজে কুরআনের জ্ঞানে জ্ঞানী ‎হতে পারত। তাই কথাটা মুসলিমদের মধ্যে, কুরআনের জ্ঞানী লোক কম ‎‎থাকার একটা প্রধান কারণ।‎

কথাটি যদি কুরআন-হাদীস সম্মত না হয় তবে তা উচ্ছেদ করা ‎‎গেলে ইসলাম তথা মুসলিমদের অপরিসীম কল্যাণ হবে ভেবে কথাটার ‎বিপে বা পে কুরআন-হাদীস ও বিবেকের কী কী তথ্য আছে তা ‎পর্যালোচনা করে জাতির সামনে উপস্থিত করাই আমার এ প্রচেষ্টার ‎উদ্দেশ্য। ‎





ইসলামে অপবিত্রতার শ্রেণী বিভাগ ‎

ইসলামী জীবন বিধানে অপবিত্রতার শ্রেণী বিভাগ হল-‎





মানসিক অপবিত্রতা

ইসলামী জীবন বিধানে ঐ সব ব্যক্তিকে মানসিক দিক দিয়ে অপবিত্র ‎বলে যারা আক্বিদা-বিশ্বাসের দিক দিয়ে শিরকে নিমজ্জিত এবং যারা ‎কুরআনের যে কোন একটি বক্তব্যকেও মনের দিক দিয়ে অবিশ্বাস বা ঘৃণা ‎করে। ইসলামী পরিভাষায় এদের মুশরিক ও কাফের বলা হয়। এই ‎ধরনের ব্যক্তিরা গোসল করলেও মানসিক দিক দিয়ে পবিত্র হবে না। ‎কারণ, গোসল হচ্ছে শারীরিক অপবিত্রতা দূর করার উপায়। ‎

অন্যদিকে, যে ব্যক্তি কুরআন ও সূন্নাহের সকল বক্তব্যকে মন দিয়ে ‎বিশ্বাস ও ভক্তি করে, সে মানসিক দিক দিয়ে পবিত্র। কিন্তু প্রকাশ্যে ‎‎ঘোষণা দেয়ার আগ পর্যন্ত এটাতো আল্লাহ ছাড়া আর কারো পে বুঝার ‎উপায় নেই। তাই ইসলামী জীবন বিধানে মনের দিক দিয়ে পবিত্র ব্যক্তি, ‎যখন মুখে কালেমা তাইয়্যেবার ঘোষণা দেয়, তখনই শুধু তাকে ‎আনুষ্ঠানিকভাবে (ঋড়ৎসধষষু) মু’মিন বা ঈমানদার হিসাবে ধরা হয়। আর ‎‎সে যখন কালেমার দাবি অনুযায়ী কাজ করতে আরম্ভ করে, তখন তাকে ‎মুসলিম বলা হয়। এরকম ব্যক্তিরা শারীরিক দিক দিয়ে অপবিত্র হলেও ‎মানসিক দিক দিয়ে পবিত্র বা ঈমানদার থাকে। ‎

আবার কোন ব্যক্তির অবস্থা যদি এমন হয় যে, সে মুখে কালেমা ‎তাইয়্যেবার ঘোষণা দিয়েছে এবং ইসলামের কিছু কাজও (আমল) করছে ‎কিন্তু মনের দিক দিয়ে সে কুরআন ও সূন্নাহের সকল বক্তব্যের প্রতি ‎বিশ্বাস আনতে পারেনি, তবে সে মানসিক দিক দিয়ে অপবিত্র রয়েই ‎যাবে। এই ধরনের ব্যক্তিকে ইসলামী জীবন বিধানে মুনাফেক বলা হয়। ‎কুরআন বলছে, কিয়ামতে এদের স্থান হবে দোযখের সর্বনিম্ন স্তরে। ‎মানসিক পবিত্রতা-অপবিত্রতা সম্বন্ধে উপরোক্ত কথাগুলো কুরআন ও ‎হাদীসে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা পরে আসছে। ‎

শারীরিক অপবিত্রতা

ক. বড় ধরনের শারীরিক অপবিত্রতা

ইসলামী জীবন বিধান অনুযায়ী দু’ভাবে এ ধরনের অপবিত্রতা অর্জিত ‎হয়- ‎

‎১. যৌন মিলনের পর বা বীর্যপাতের পর এবং ‎

‎২. মেয়েদের মাসিক বা প্রসূতি স্রাব চলা অবস্থায়। এ ধরনের ‎অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্যে গোসল করা প্রয়োজন। ‎

খ. ছোট ধরনের শারীরিক অপবিত্রতা ‎

এ ধরনের অপবিত্রতা হতে শরীর পবিত্র করার উপায় হচ্ছে অজু ‎করা। অনেক কারণেই শরীর এরকম অপবিত্র হয়। তবে তার মধ্যে ‎সব থেকে বেশি যা মানুষের হয় তা হচ্ছে প্রস্রাব, পায়খানা ও পায়ু ‎পথে বায়ু নির্গত হওয়া। ‎

পবিত্রতা-অপবিত্রতার ব্যাপারে ইসলামী জীবন বিধানের উপরে বর্ণিত ‎‎মৌলিক কথাগুলো জানার পর চলুন এখন, বিভিন্ন ধরনের অপবিত্র ‎অবস্থায় কুরআন পড়া, স্পর্শ করা ও শোনার ব্যাপারে বিবেক-বুদ্ধি, ‎কুরআন ও হাদিসের তথ্যগুলো দেখা যাক।‎

‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা পাপ’-কথাটির ব্যাপারে ‎

বিবেক-বুদ্ধির’ তথ্য‎

তথ্য-১‎

‎ সম্মানের দৃষ্টিকোণ‎

‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা পাপ’-কথাটার পে সাধারণ যে যুক্তি ‎‎দেখানো হয় তা হচ্ছে, এটা কুরআনকে সম্মান দেখানো। কোন গ্রন্থের, ‎বিশেষ করে ব্যবহারিক (অঢ়ঢ়ষরবফ) গ্রন্থের, সব চেয়ে বড় সম্মান হল, ‎তা পড়ে জ্ঞান অর্জন করা এবং সে জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করা। আবার ‎সাধারণ বিবেকের সর্বসম্মত রায় হচ্ছে, কোন গ্রন্থের জ্ঞান অর্জনের পথে ‎বিরাট বাধা সৃষ্টি করে এমন বিষয় দ্বারা ঐ গ্রন্থকে সম্মান করা বুঝায় না। ‎বরং তা হল ঐ গ্রন্থের চরম অসম্মান। ‎

‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা পাপ’-কথাটা কুরআনের মত ‎ব্যবহারিক গ্রন্থের জ্ঞান অর্জনের পথে একটা বিরাট বাধা। তাই, সাধারণ ‎বিবেক অনুযায়ী কথাটার দ্বারা কুরআনকে সম্মান করা নয় বরং চরম ‎অসম্মান করা হয়। সুতরাং ঐ রকম একটা তথ্য ইসলামের বিষয় হওয়ার ‎কথা নয়। ‎

তথ্য-২ ‎

‎ গুরুত্বের দৃষ্টিকোণ‎

মুসলিম সমাজে যে কথাটি ইসলামের কথা হিসাবে চালু আছে তা ‎হচ্ছে ‘অজু ছাড়া কুরআন পড়লে গুনাহ নেই কিন্তু স্পর্শ করলে গুনাহ।’ ‎‎কোন গ্রন্থ পড়ার কাজটি, তা স্পর্শ করা কাজটি অপো কোটি কোটি ‎‎গুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোন বিশেষ অবস্থায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা ‎যাবে কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা যাবে না এটি একটি সম্পূর্ণ বিবেক-‎বিরুদ্ধ কথা। তাই বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী সহজেই বলা যায় অজু ছাড়া ‎কুরআন পড়া যাবে কিন্তু স্পর্শ করা যাবে না-কথাটি সম্পূর্ণ বিবেক ‎বিরুদ্ধ। বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী কথাটি হবে-‎

ক. অজু ছাড়া কুরআন পড়া গেলে তা স্পর্শও করা যাবে। ‎

খ. অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা না গেলে তা পড়াও যাবে না। ‎



তথ্য-২‎

‎ অন্য গ্রন্থের সহিত ব্যতিক্রমের দৃষ্টিকোণ‎

কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষ তা পড়ে জ্ঞান অর্জন করবে ‎এবং সে জ্ঞান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করবে। অন্যদিকে কুরআন ‎হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, তাই মানুষের লেখা যে কোন বইয়ের তুলনায় সব ‎দিক থেকে তার একটা বিশেষত্ব থাকবে। যেমন কুরআন নির্ভুল কিন্তু ‎অন্য কোন গ্রন্থ তা নয়, কুরআনের সাহিত্য মানের সঙ্গে অন্য কোন ‎বইয়ের সাহিত্য মানের তুলনা হয় না ইত্যাদি। তাই অপবিত্র অবস্থায় ‎কুরআন ছোঁয়ার ব্যাপারেও অন্য গ্রন্থের থেকে কিছু ব্যতিক্রম থাকবে ‎এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই ব্যতিক্রম এমন হওয়া সাধারণ বিবেক ‎বিরুদ্ধ যে, তা কুরআন নাযিলের প্রধান উদ্দেশ্য সাধনের পথে অর্থাৎ ‎কুরআনের জ্ঞান অর্জনের পথে বিরাট বাধার সৃষ্টি করবে। ‘অজু ছাড়া ‎কুরআন স্পর্শ করা পাপ’-কথাটা কুরআন ধরে পড়ার পথে অর্থাৎ ‎কুরআনের জ্ঞান অর্জনের পথে একটা বিরাট বাধা। ‎

‘তাই গোসল ফরজ অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ’-কথাটি এ ‎‎দৃষ্টিকোণ থেকে উভয় দিকই রা করতে পারে। কারণ, একদিকে তা ‎‎যেমন অপবিত্রতার একটি অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করতে না দিয়ে ‎কুরআনের ব্যতিক্রমধর্মী গুণ বজায় রাখবে; অন্যদিকে তা বেশিণ ‎মানুষকে কুরআন ধরে পড়া থেকে দূরে রাখবে না। কারণ, একজন ‎মুসলিম বেশি সময় গোসল ফরজ অবস্থায় থাকে না। পরবর্তী নামাজের ‎আগে তাকে অবশ্যই গোসল করে পবিত্র হতে হয়। তাই বিবেক বলে ‎অপবিত্র অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ হলে তা গোসল ফরজ ‎অবস্থায় হওয়াই সকল দিক দিয়ে যুক্তিযুক্ত। ‎



‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা পাপ’ কথাটির ব্যাপারে ‎

আল-কুরআনের তথ্য‎

তথ্য-১‎

‎ গুনাহের কাজে সহায়তার দৃষ্টিকোণ

কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী গুনাহের কাজে সহায়তা করা গুনাহ। যেমন, ‎সুদ খাওয়া, দেয়া, লেখা, সুদের সাী হওয়া সবই গুনাহ। কুরআন ও ‎হাদীস অনুযায়ী শয়তানের ১নং কাজ হল মানুষকে কুরআনের জ্ঞান থেকে ‎‎দূরে রাখা। অর্থাৎ সব গুনাহের বড় গুনাহ হল কুরআনের জ্ঞান থেকে ‎‎দূরে থাকা। ‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা পাপ’ কথাটি কুরআনের জ্ঞান ‎অর্জনের সময়কে ভীষণভাবে কমিয়ে দেয়। কারণ মানুষের জীবনের ‎‎বেশিরভাগ সময় অজু থাকে না। আর হাফিজ ব্যতীত অন্য সবাইকে ‎কুরআন ধরেই পড়তে হয়। অর্থাৎ ‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা পাপ’ ‎কথাটি সবচেয়ে বড় গুনাহের কাজটি সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে বিরাট ‎সহায়তা করে। তাই কুরআন অনুযায়ী এমন একটি কথা কোন মতেই ‎ইসলামের কথা হতে পারে না। ‎

তথ্য-২‎

‎ বিপরীতধর্মী বক্তব্য হওয়ার দৃষ্টিকোণ

সূরা নিসার ৮২ নং আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন ‎আল-কুরআনে পরস্পর বিরোধী কোন বক্তব্য বা তথ্য নেই। কুরআন ‎অনুযায়ী কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা সব ফরজের বড় ফরজ। আর ‘অজু ‎ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা পাপ’ কথাটি ঐ সব ফরজের বড় ফরজ কাজটি ‎করার পথে একটি বিরাট প্রতিবন্ধকতা। অর্থাৎ তথ্য দুটি পরস্পর ‎বিরোধী। কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা সব ফরজের বড়ো ফরজ তথ্যটি ‎কুরআনের একটি স্পষ্ট তথ্য। তাই এ তথ্যের বিপরীত হওয়ার কারণে ‎‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা পাপ’ কথাটি কুরআন তথা ইসলামের কথা ‎হতে পারে না।‎

তথ্য-৩‎

‎ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও বিবেক-বিরুদ্ধ হওয়ার দৃষ্টিকোণ ‎

সূরা আলে-ইমরানের ৭ নং আয়াতের মাধ্যমে পরোভাবে আল্লাহ ‎জানিয়ে দিয়েছেন যে, কুরআন তথা ইসলামে চিরন্তনভাবে মানুষের ‎বিবেক-বিরুদ্ধ থাকবে এমন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য (মুহকামাত) কোন বিষয় নেই। ‎চিরন্তনভাবে বিবেকের বাইরের বিষয় হবে কুরআনের অতীন্দ্রিয় ‎‎(মুতাশাবিহাত) বিষয়সমূহ। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ‎‘পবিত্র কুরআন, হাদীস অনুযায়ী ইসলামে বিবেক-বুদ্ধির গুরুত্ব কতটুকু ‎এবং কেন’ নামক বইটিতে। ‎

কুরআন পড়া, স্পর্শ করা এবং অজু-গোসল সবই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়। ‎সুতরাং সূরা আলে-ইমরানের ৭ নং আয়াতের পরো বক্তব্য অনুযায়ী ঐ ‎সকল বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত বিবেক-বিরুদ্ধ কোন কথা কুরআনের ‎কথা নয় বা কুরআনের কথা হবে না। ‎

অজু ছাড়া কুরআন পড়া যাবে কিন্তু স্পর্শ করা যাবে না- একটি ‎সম্পূর্ণ বিবেক-বিরুদ্ধ কথা। তাই এই আয়াতের আলোকে বলা যায় ‎একথাটি কুরআন তথা ইসলামের কথা হতে পারে না। এ আয়াতের ‎আলোকে এ বিষয়ে তথ্যটি নিম্নের দু’টির একটি হবে-‎

ক. অজু ছাড়া কুরআন পড়া ও স্পর্শ করা উভয়টি যাবে, ‎

খ. অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা ও পড়া কোনটি যাবে না। ‎

আল-কুরআন থেকে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসার নিয়ম হল ঐ বিষয়ে ‎কুরআনের সকল আয়াতের বক্তব্য পাশাপাশি রেখে পর্যালোচনা করে ‎চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা। আর ঐ পর্যালোচনার সময় খেয়াল রাখতে হবে ‎একটি আয়াতের অর্থ বা ব্যাখ্যা যেন অন্য কোন আয়াতের বিপরীত না ‎হয় এবং অস্পষ্ট আয়াতের অর্থ বা ব্যাখ্যা‏ ‏‎স্পষ্ট আয়াতের বক্তব্যের সাথে ‎সামঞ্জস্যশীল হয়। ‎

তাই পূর্বে উল্লিখিত তথ্য দুটি এবং পরে আসা তথ্যের সাথে মেলালে ‎সহজে বলা যায় সূরা আলে-ইমরানের ৭ নং আয়াতের তথ্য হচ্ছে-অজু ‎ছাড়া কুরআন পড়া ও স্পর্শ করা উভয়টি সিদ্ধ।‎

তথ্য-৪‎

‎ সূরা ওয়াকি‘আর ৭৯ নং আয়াতের দৃষ্টিকোণ ‎

‘বে-অজু কুরআন স্পর্শ করা যাবে না বা গুনাহ’-এ কথা যারা বিশ্বাস ‎করেন এবং বলেন, তাদের নিকট ঐ কথাটার ব্যাপারে দলিল জানতে ‎চাইলে, প্রায় সবাই যে আয়াতটি বলেন, তা হচ্ছে-‎

لاَ يَمَسُّهُ إلاَّ الْمُطَهَّرُوْنَ.‏

তাই আয়াতখানির প্রকৃত অর্থ অর্থাৎ মহান আল্লাহ আয়াতটিতে কী ‎বলেছেন, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা দরকার। ‎

আয়াতখানির মূল শব্দ (কবু ড়িৎফং) হচ্ছে তিনটি। যথা-মাস্ ‎‎(‎مَسٌّ‎), হু (‎هُ‎) এবং মুতাহ্হারুন (‎مُطَهَّرُوْنَ‎)। এই তিনটি শব্দের সঠিক ‎অর্থ নিতে পারলে আয়াতখানির সঠিক বক্তব্য বোঝা যাবে। অন্যথায় তা ‎কখনই সম্ভব হবে না। ‎

মূল শব্দ তিনটি অপরিবর্তিত রেখে আয়াতখানির সরল অর্থ দাঁড়ায়-‎‘মুতাহ্হারুন ব্যতীত ঐ কুরআন কেউ মাস্ করতে পারে না। ‎

আয়াতখানির মূল তিনটি শব্দের যে সকল অর্থ আরবী ভাষায় হয় বা ‎যা আল-কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে তা হল-‎

‎ মুতাহ্হারুন ‎‏(مُطَهَّرُوْنَ)‏

‎১. অজু বা গোসল করে পবিত্র হওয়া মানুষ, ‎

‎২. নিষ্পাপ সত্তা বা ফেরেশতা।‎

‎ ঐ কুরআন: ‎

‎১. পৃথিবীর কুরআন‎

‎২. লওহে মাহফুজে রতি কুরআনের মূল কপি।‎

‎ মাস্ (‎مَسٌّ‎)‎

‎১. স্পর্শ করা,‎

‎২. শাস্তি ভোগ করা (সূরা আল-আন’আমের ৪৯ নং আয়াত),‎

‎৩. অত্যাচারে জর্জরিত করা (সূরা বাকারার ২১৪ নং আয়াত),‎

‎৪. সম্মুখীন হওয়া বা ধারে-কাছে আসা (সূরা হিজরের ১৫নং আয়াত),‎

‎৫. স্ত্রী সহবাস (সূরা মায়েদার ৬ নং এবং নিসার ৪৩ নং আয়াত),‎

‎৬. কুপ্ররোচনা বা ধোঁকা দেয়া (সূরা বাকারা, ২৭৫নং আয়াত)।‎

আল-কুরআনের তাফসীরের নীতিমালা (উসূল) হল একটি আয়াতের ‎‎কোন শব্দের যদি একাধিক অর্থ হয় তবে শব্দটির সে অর্থটি নিতে হবে ‎‎যেটি নিলে-‎

‎ আয়াতটির অর্থ আগের ও পরের আয়াতের সাথে সামঞ্জস্যশীল হয় ‎

‎ অন্য আয়াতের সাথে সামঞ্জস্যশীল হয়,‎

‎ শানে নুযুলের (নাযিলের পটভুমি) সাথে সামঞ্জস্যশীল হয়,‎

এরপরও যদি নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো না যায় তবে পর্যালোচনা করতে ‎হবে ঐ বিষয়ে-‎

‎ রাসূল (সা.) এর বক্তব্য তথা হাদীস,‎

‎ সাহাবায়ে কিরামগণের বক্তব্য,‎

‎ পূর্ববর্তী মনীষীদের বক্তব্য,‎

‎ বর্তমান মনীষীদের বক্তব্য। ‎

কুরআন শরীফের আয়াতের তাফসীরের ব্যাপারে উপরোক্ত তথ্যগুলো ‎সামনে রেখে চলুন এখন আয়াতখানির সঠিক অর্থটি বের করার চেষ্টা ‎করা যাক-‎



‎ আয়াতখানির শানে নুযুল‎

মক্কার কাফেররা রাসূল (সা.) কে গণক, যাদুকর ইত্যাদি বলত। ‎তারা বলে বেড়াতো শয়তান কুরআন নিয়ে এসে মুহাম্মাদ (সা.) কে পড়ে ‎পড়ে শিখিয়ে দেয়। তারপর মুহাম্মাদ (সা.) সেটা অন্যদের জানায়। ‎কাফেরদের এই প্রচারণার উত্তরে মহান আল্লাহ আলোচ্য আয়াতখানিসহ ‎আরো কয়েকটি আয়াতে বক্তব্য রেখেছেন। যেমন সূরা শুয়ারার ২১০-‎‎২১২ নং আয়াতে বলা হয়েছে-‎

‏.‏

অর্থ: এটা (কুরআন) নিয়ে শয়তান অবতীর্ণ হয় নাই। এ কাজ তাদের ‎জন্যে শোভনীয় নয় এবং তারা এর সামর্থ্যও রাখে না। তারাতো ‎‎(অবতীর্ণের সময়) এটা শোনা হতেও দূরে চলে যেতে বাধ্য হয়। ‎

‎(শুয়ারা : ২১০-২১২) ‎

‎ শানে নুযুল এবং আগের ও পরের আয়াতের বক্তব্যের আলোকে ‎আলোচ্য আয়াতের প্রকৃত অর্থ‎

আয়াত খানির আগের ও পরের আয়াতসমূহ অর্থাৎ সূরা ওয়াকিয়ার ৭৭-‎‎৮১ নং আয়াত ‎

অর্থ: আলোচ্য ‎‏)‏‎৭৯‎‏ ‏নং) আয়াতের মূল তিনটি শব্দ হুবহু রেখে আয়াত ‎ক’খানির সরল অর্থ হবে- উহা এক অতীব উচ্চ মর্যাদার কুরআন। যা ‎আছে এক সংরতি গোপন কিতাবে লিপিবদ্ধ। মুতাহ্হারুনরা ব্যতীত ‎‎কেউ তা (ঐ কুরআন) ‘মাস’ করতে পারে না। এটাতো মহাবিশ্বের রবের ‎নিকট থেকে নাযিল হয়েছে। এই বক্তব্য কি তোমাদের ধারণাকে মলম ‎দিয়ে ঢেকে দেয় না (মিথ্যা প্রমাণিত করে না)? ‎

ব্যাখ্যা: ৭৯ নং আয়াতে ঐ কুরআন বলতে যে কুরআনকে বোঝানো ‎হয়েছে সে কুরআন সম্বন্ধে ৭৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে, তা আছে এক ‎সংরতি গোপন কিতাবে। ‘সংরতি গোপন’ শব্দ দুটির মাধ্যমে ‎সহজেই বোঝা যায় এখানে লওহেমাহফুজের কুরআন তথা কুরআনের ‎মূল কপিখানি যা লওহেমাহফুজে ‘সংরতি’ আছে তার কথা বলা ‎হয়েছে। কারণ পৃথিবীর কুরআন সংরতি ও গোপন কোনটিই নয়। যে ‎‎কেউ পৃথিবীর কুরআন যেকোন অবস্থায় ধরতে, পড়তে ছিঁড়তে ও ‎অপমানিত করতে পারে। ‎

এ তথ্যগুলো সামনে রেখে ৭৯নং আয়াতের মূল শব্দ তিনটির ‎‎দু’ধরনের অর্থ ধরে আয়াতখানির যে দু’ধরনের ব্যাখ্যা করা যেতে পারে ‎তা হল-‎

ক. উহা এক অতীব উচ্চ মর্যাদার কুরআন, যা লওহেমাহফুজে সংরতি ‎আছে। নিষ্পাপ ফেরেশতা ব্যতীত ঐ লওহেমাহফুজের কুরআনের ‎ধারে কাছেও কেউ যেতে পারে না। (পৃথিবীর কুরআন) মহাবিশ্বের ‎রবের নিকট থেকে নাযিল হওয়া। এ বক্তব্য কি তোমাদের ধারণাকে ‎‎(শয়তান কুরআন নিয়ে এসে মুহাম্মাদকে শুনায়) মিথ্যা প্রমাণিত ‎করে না?‎

খ. উহা এক অতীব উচ্চ মর্যাদার কুরআন, যা লওহেমাহফুজে সংরতি ‎আছে। অজু বা গোসল করে পবিত্র হওয়া মানুষ ব্যতীত ঐ ‎লওহেমাহফুজের কুরআন কেউ স্পর্শ করতে পারে না। (পৃথিবীর ‎কুরআন) মহাবিশ্বের রবের নিকট থেকে নাযিল হওয়া। এ বক্তব্য কি ‎‎তোমাদের ধারণাকে (শয়তান কুরআন নিয়ে এসে মুহাম্মাদকে ‎শুনায়) মিথ্যা প্রমাণিত করে না?‎

আয়াত ক’খানির এ দু’টি ব্যাখ্যার কোনটি গ্রহণযোগ্য হবে এ প্রশ্ন করলে ‎আমার তো মনে হয় পৃথিবীর সকল বিবেকসম্মত মানুষ একবাক্যে বলবে ‎প্রথমটি অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হবে এবং দ্বিতীয়টি কখনই গ্রহণযোগ্য হতে ‎পারে না। তাই তাফসীরের মূল নীতিমালার আলোকে সহজেই বলা যায় ‎সূরা ওয়াকিয়ার ৭৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা হল-‘নিষ্পাপ ফেরেশতা ব্যতীত ‎লওহেমাহফুজের কুরআনের ধারে-কাছেও কেউ যেতে পারে না’। ‎

চলুন, এখন দেখা যাক আয়াতটির তরজমা ও তাফসীরের ব্যাপারে ‎বিখ্যাত তাফসীরকারকগণ কী বলেছেন-‎

ক. বিখ্যাত তাফসীরকারক ইবনে কাসীর (রহ.) তাঁর তাফসীর গ্রন্থে এই ‎আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন, ‘যারা পূতঃ পবিত্র তারা ব্যতীত অন্য ‎‎কেউ তা স্পর্শ করে না। অর্থাৎ শুধু ফেরেশতারা এটা স্পর্শ করে ‎‎থাকেন’। তাহলে ইবনে কাসীর (রহ.) ঐ আয়াতে ‎‏ مُطَهَّرُوْنَএর ‎অর্থ ‘নিষ্পাপ ফেরেশতা’ বলেছেন। (পৃষ্ঠা নং ২৮৫ ও ২৮৬, ১৭তম ‎খণ্ড, ২য় সংস্করণ, তাফসীর পাবলিকেশন কমিটি, ঢাকা, বাংলাদেশ)‎

খ. মুফতি শফি (রহ.) তাঁর তাফসীর গ্রন্থ মা‘আরেফুল কুরআনে এই ‎আয়াতটির তাফসীরে লিখেছেন-‎

‎ বিপুল সংখ্যক সাহাবী, তাবেয়ী এবং তাফসীরবিদের মতে, সূরা ‎ওয়াকিয়ার ৭৯ নং আয়াতে ‎‏ مُطَهَّرُوْنবলতে ফেরেশতাদের ‎বুঝানো হয়েছে যারা পাপ ও হীন কাজকর্ম থেকে পবিত্র। অর্থাৎ ‎বিপুল সংখ্যক সাহাবী ও তাবেয়ীর মতে, ঐ আয়াতে ‎مُطَهَّرُوْن‎ ‎শব্দের অর্থ ‘নিষ্পাপ’। ‎

‎ কিছু সংখ্যক তাফসীরবিদ মনে করেন, কুরআনের ঐ বক্তব্য ‎মানুষের জন্যেও প্রযোজ্য হবে এবং পবিত্র বলতে তাদের ‎বুঝানো হবে যারা ‘হদসে আকবর’ ও ‘হদসে আসগর’ থেকে ‎পবিত্র। (পৃষ্ঠা নং ৩০, ৮ম খণ্ড, ১ম সংস্করণ, ইসলামিক ‎ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ) ‎

গ. হজরত আশরাফ আলী থানবী (রহ.) তাঁর তাফসীর গ্রন্থে এই ‎আয়াতের তরজমা ও তাফসীর করেছেন, ‘তাকে নিষ্পাপ ‎‎ফেরেশতাগণ ব্যতীত কেউ স্পর্শ করতে পারে না’। ‎

ঘ. মাওলানা মওদূদী (রহ.) তাঁর তাফসীর গ্রন্থ তাফহীমুল কুরআনে এই ‎আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন, এই আয়াতে ‎مُطَهَّرُوْن‎ শব্দ ‎‎ফেরেশতাদের বুঝাবার জন্যে ব্যবহৃত হয়েছে যারা সর্বপ্রকার ‎অপবিত্র আবেগ-ভাবধারা ও লালসা-বাসনা হতে পবিত্র। অর্থাৎ ‎মাওলানা মওদূদীও (রহ.) ‎مُطَهَّرُوْن‎ অর্থ নিষ্পাপ বলেছেন। (পৃষ্ঠা ‎নং ১২৫-১২৯, ১৭ তম খণ্ড, ১ম সংস্করণ, আধুনিক প্রকাশনী, ঢাকা, ‎বাংলাদেশ)‎

‎ সুতরাং ‘নিষ্পাপ ফেরেশতা ব্যাতীত কেউ লোহমাহফুজের ‎কুরআনের ধারে-কাছেও যেতে পারে না’ সূরা ওয়াকিয়ার ৭৯ নং ‎আয়াতের এ ব্যাখ্যার পে আছে-‎

‎ শানে নুযুল,‎

‎ আয়াতটির আগের দুটো আয়াতের বক্তব্য,‎

‎ পরের দুটি আয়াতের বক্তব্য,‎

‎ একই বিষয়ে অন্যান্য আয়াতের বক্তব্য, ‎

‎ বিপুল সংখ্যক সাহাবায়ে কিরামের বক্তব্য,‎

‎ বিপুল সংখ্যক তাবেয়ীর বক্তব্য। ‎

আর ‘অজু বা গোসল করে পবিত্র হওয়া ব্যক্তিরা ব্যতীত পৃথিবীর কুরআন ‎‎কেউ স্পর্শ করতে পারে না’ আয়াতখানির এ ব্যাখ্যার পে আছে ‎শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক তাফসীর কারক। ‎

তাই নিশ্চয়তাসহকারেই বলা যায় সূরা ওয়াকিয়ার ৭৯ নং আয়াতের ‎ব্যাখ্যা, ‘অজু বা গোসল করে পবিত্র হওয়া ব্যক্তিরা ব্যতীত কেউ পৃথিবীর ‎কুরআন স্পর্শ করতে পারবে না’ এ কথা বলার অর্থ হচ্ছে শানে নুযুল, ‎কুরআনের অন্যান্য আয়াতের বক্তব্য, বিপুল সংখ্যক সাহাবীর বক্তব্য এবং ‎বিপুল সংখ্যক তাবেয়ীর বক্তব্যকে অস্বীকার করে কিছু সংখ্যক ‎তাফসীরকারকের বক্তব্যকে মেনে নেয়া। অর্থাৎ এটি ইসলামে কোন ‎মতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ‎

তাই ‘কুরআন স্পর্শ করার আগে অজু করতে হবে’ কথাটার ভিত্তি ‎হচ্ছে আল-কুরআন, এ তথ্যটা একেবারেই ঠিক নয়। এই অতীব সত্য ‎কথাটি মুফতি শফী (র.) তাঁর তাফসীর গ্রন্থে এভাবে উল্লেখ করেছেন-‎‘যেহেতু বিপুল সংখ্যক সাহাবী ও তাবেয়ী মতভেদ করেছেন, তাই অনেক ‎তাফসীরবিদ অপবিত্র অবস্থায় কুরআনপাক স্পর্শ করার নিষেধাজ্ঞার ‎ব্যাপারে কুরআনের আয়াতকে (সূরা ওয়াকিয়ার ৭৯ নং আয়াত) দলিল ‎হিসেবে পেশ করেন না। তারা এর প্রমাণ হিসেবে কয়েকটি হাদীস পেশ ‎করেন মাত্র’। (সে হাদীসগুলোয় কী তথ্য আছে তা ব্যাখ্যাসহকারে পরে ‎আসছে।)‎



তথ্য-৫‎

‎ নামাজ আদায় ও কুরআন আরম্ভ করার আগে যা করার কথা কুরআনে ‎উল্লেখ আছে এবং যা করার কথা তথায় উল্লেখ নেই, তার দৃষ্টিকোণ‎

নামাজের আগে অজু বা গোসল করে পবিত্র হওয়া ইসলামের একটা ‎‎গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক (ফরজ) আমল। আর মৌলিক বলেই মহান আল্লাহ ‎আল কুরআনের ২টি সূরায় এ তথ্যটি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করে ‎‎রেখেছেন। চলুন, এখন দেখা যাক নামাজের আগে অজু-গোসল করার ‎কথাটা আল্লাহ কুরআনে কিভাবে উল্লেখ করেছেন-‎

অর্থ: হে মু’মিনগণ, যখন তোমরা নামাজের জন্যে উঠবে তখন স্বীয় ‎মুখমণ্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে। মাথা এবং গোড়ালি পর্যন্ত ‎পা মাসেহ করবে। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে গোসল করে পবিত্র ‎হবে। আর যদি রোগাক্রান্ত হও অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের ‎‎কেউ প্রস্রাব-পায়খানা সেরে এসে থাকে বা তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস ‎করে থাক, অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে ‎নিবে। অর্থাৎ ঐ মাটির দ্বারা (মাটির পর হাত রেখে সেই হাত দ্বারা) স্বীয় ‎মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় মুছে ফেলবে। (এ আদেশ দ্বারা) আল্লাহ তোমাদের ‎কষ্ট দিতে চান না। বরং এর দ্বারা তিনি তোমাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ‎করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর নেয়ামত (কল্যাণ কামনা) পরিপূর্ণ ‎করে দিতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। ‎

আর সূরা নিসার ৪৩ নং আয়াতে আল্লাহ আদেশটা এভাবে উল্লেখ ‎করেছেন-‎

অর্থ: হে ঈমানদারগণ, তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাজের ‎ধারে-কাছেও যাবে না, যতণ না বুঝতে পার কী পড়ছো। অনুরূপভাবে ‎‎গোসল ফরজ অবস্থায়ও নামাজের কাছে যাবে না, যতণ না গোসল ‎কর। কিন্তু মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র। আর যদি তোমরা অসুস্থ কিংবা ‎সফরে থাক অথবা তোমাদের মধ্য থেকে যদি কেউ প্রস্রাব-পায়খানা হতে ‎এসে থাকে বা স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করে থাকে কিন্তু পানি না পাওয়া যায়, ‎তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নিবে অর্থাৎ ঐ মাটি দ্বারা মুখ এবং ‎হাত মাসেহ করে নিবে। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা মাশীল। ‎

সুধী পাঠক, ল্য করুন, নামাজ পড়ার আগে অজু বা গোসল করে ‎শরীর পবিত্র করা ইসলামের একটা মৌলিক কাজ বা আমল বলে মহান ‎আল্লাহ তা বিস্তারিতভাবে ও পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে, আল কুরআনের অনেকটা ‎জায়গা নিয়ে, স্পষ্টভাবে, জানিয়ে দিয়েছেন। কুরআন নামাজের চেয়ে ‎অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই কুরআন পড়া বা স্পর্শ করার আগে ‎পবিত্রতা অর্জন করা দরকার বা গুরুত্বপূর্ণ হলে, আল্লাহর তা আরো ‎বিস্তারিত ও স্পষ্টভাবে, কুরআনের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার কথা। কিন্তু ‎কুরআন পড়া বা স্পর্শের আগে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে এমন একটি ‎কথাও আল-কুরআনের কোথাও উল্লেখ নেই (সূরা ওয়াকিয়ার ৭৯ নং ‎আয়াতে আল্লাহ এ বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন বলে যে কথা বলা হয় তা ‎‎মোটেই সঠিক নয়, সেটা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে।) পান্তরে কুরআন ‎পড়ার আগে যে কাজটি অবশ্যই করতে হবে, তা মহান আল্লাহ স্পষ্টভাবে ‎জানিয়ে দিয়েছেন সূরা নাহলের ৯৮ নং আয়াতে নিম্নোক্তভাবে-‎

অর্থ: অতএব যখনই তোমরা কুরআন পাঠ করতে শুরু করবে, তখনই ‎অভিশপ্ত শয়তান হতে (শয়তানের ধোঁকাবাজি হতে) আল্লাহর নিকট ‎আশ্রয় চাইবে। ‎

অর্থাৎ মহান আল্লাহ কুরআন পড়া শুরু করার সময় পবিত্রতা অর্জন ‎করতে না বলে যে কাজটি বাধ্যতামূলকভাবে করতে বলেছেন তা হল, ‎ইবলিস শয়তানের ধোঁকাবাজি থেকে তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা। ‎কারণ, কুরআনের জ্ঞান থেকে মানুষকে দূরে সরানো হচ্ছে শয়তানের ১ ‎নং কাজ এবং সে কাজে শয়তান সফল হওয়ার জন্যে সর্বোতভাবে চেষ্টা ‎করে। তাই আল্লাহর সাহায্য না পেলে শয়তানের ঐ সকল ‎‎ধোঁকাবাজিমূলক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা ‎কারো পে সম্ভব হবে না। ‎

তাহলে দেখা যাচ্ছে, কুরআন দেখে‏ ‏পড়া, মুখস্থ পড়া বা পড়ানোর ‎আগে যা বাধ্যতামূলকভাবে করতে হবে বলে আল্লাহ জানিয়েছেন, তা ‎হচ্ছে শয়তানের ধোঁকাবাজি থেকে তাঁর নিকট আশ্রয় চাওয়া। অন্যদিকে ‎কুরআন পড়া, স্পর্শ করা অথবা অন্য কোন কাজের আগে পবিত্রতা অর্জন ‎করতে হবে এমন কোন কথা আল্লাহ কুরআনের কোথাও উল্লেখ ‎করেননি। ‎

তাই কুরআন পড়া, পড়ানো বা স্পর্শ করার আগে অজু বা গোসল ‎করে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে এমন কোনো কথা যদি সহীহ হাদীসে ‎‎থেকেও থাকে (অজু করার কথা নেই) তবে তা হবে ইসলামের একটা ‎অমৌলিক বিষয়। কারণ, যে বিষয়টা কুরআনে প্রত্য, পরোভাবে ‎উল্লেখ নেই বা তা কুরআনের উল্লেখিত কোনো মূল বিষয়ের মৌলিক ‎বাস্তাবায়ন পদ্ধতিও নয়, তা সহীহ হাদীসে থাকলেও সেটা হবে ‎ইসলামের একটা অমৌলিক বিষয়। বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করেছি ‎‘পবিত্র কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী ইসলামের মৌলিক বিষয় ‎ও গুরুত্বপূর্ণ হাদীস কোন্গুলো তা জানা ও বুঝার সহজতম উপায়’ নামক ‎বইটিতে। ‎



‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে ‎কুরআনের তথ্যের সার-সংপে ‎

ক. আল-কুরআনের মাধ্যমে শুধুমাত্র নামাজ পড়ার আগে অজু বা ‎‎গোসল করে পবিত্র হওয়ার প্রত্য (উরৎবপঃ) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ‎অন্য কোন কাজ করার আগে অজু বা গোসল করে পবিত্র হওয়ার প্রত্য ‎‎(উরৎবপঃ) বা পরো (ওহফরৎবপঃ) কোন নির্দেশ কুরআনে দেয়া হয় ‎নাই। এই ‘অন্য কাজের’ মধ্যে কুরআন পড়া, পড়ানো, স্পর্শ করাসহ ‎অন্য সকল কাজই অন্তর্ভুক্ত। ‎

খ. বিভিন্ন ধরনের তথ্যের মাধ্যমে কুরআন পরোভাবে জানিয়ে ‎দিয়েছে ‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে না বা পাপ’ কথাটি কুরআন ‎বিরুদ্ধ কথা এবং ‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে’ কথাটি কুরআন ‎সিদ্ধ কথা। ‎

‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা পাপ’ কথাটার ব্যাপারে ‎

হাদীসের তথ্য‎

পূর্বের আলোচনা থেকে আমরা জেনেছি, অজু বা গোসল করে পবিত্র ‎না হয়ে কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ বা পাপ-এ ধরনের কোন কথা আল-‎কুরআনে নেই। তাই ঐ রকম কোন কথা যদি ইসলামে থেকেই থাকে ‎তবে তা অবশ্যই হাদীসে থাকতে হবে। চলুন, এখন দেখা যাক এ বিষয়ে ‎হাদীসে কী কী বক্তব্য আছে।‎

তথ্য-১‎‏.‏

অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। একদা রাসূল (সা.) শৌচাগার ‎হতে বের হয়ে আসলে তাঁর সামনে খাবার উপস্থিত করা হল। তখন ‎‎লোকেরা বলল, আমরা কি আপনার জন্যে অজুর পানি আনব না? তিনি ‎বললেন, যখন নামাজের প্রস্তুতি নিব শুধু তখন অজু করার জন্যে আমি ‎আদিষ্ট হয়েছি।‎ ‎ (তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসায়ী) ‎

তথ্য-২‎

ইবনে মাজাহ উপরোক্ত হাদীসটির ন্যায় একই রকম বর্ণনাসম্বলিত আর ‎একটি হাদীস আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন।‎

হাদীস দু’খানির সম্মিলিত ব্যাখ্যা: হাদীস দুখানির ব্যাখ্যা বুঝার জন্যে ‎তিনটি বিষয় আগে ভালো করে বুঝে নিতে হবে। যথা-‎

ক. হাদীস দুটোয় রাসূল (সা.) স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘তাঁকে শুধু নামাজ ‎পড়ার আগে অজু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ সমগ্র কুরআন ‎পর্যালোচনা করলেও দেখা যায়, তথায় নামাজ পড়ার আগে অজু বা ‎‎গোসল করে পবিত্র হওয়ার জন্যে দুটো সূরার মাধ্যমে (নিসা ও ‎মায়েদা) সরাসরি ও বিস্তারিতভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু অন্য ‎‎কোন কাজ করার আগে অজু বা গোসল করতে হবে এমন কোন ‎কথা আল-কুরআনে প্রত্য, পরো বা ইঙ্গিতেও উল্লেখ করা হয় ‎নাই। অর্থাৎ হাদীস দুটোর বক্তব্য কুরআনের বক্তব্যের অনুরূপ। তাই ‎হাদীস দুটোর বক্তব্য প্রায় কুরআনের বক্তব্যের ন্যায় শক্তিশালী এবং ‎বিষয়ে অন্য কোন হাদীস এ হাদীস দুটোর থেকে বেশি শক্তিশালী ‎হতে পারে না। কারণ, তা হতে হলে সেই হাদীসকে কুরআনের ‎‎থেকেও বেশি শক্তিশালী হতে হবে, যা কখনই হতে পারে না। ‎

খ. হাদীস দুটোতে রাসূল (সা.) অজু কথাটা সুনির্দিষ্টভাবে ‎‎(ঝঢ়বপরভরপধষষু) উল্লেখ করেছেন। গোসলের কথাটি তিনি এখানে ‎উল্লেখ করেননি। ‎

গ. হাদীস দুটো দু’জন বিখ্যাত সাহাবী ইবনে আব্বাস (রা.) ও আবু ‎হুরায়রা (রা.) সরাসরি রাসূল (সা.) এর উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন ‎এবং তা চারটি হাদীস গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, আবু ‎হুরায়রা (রা.) হচ্ছেন সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী। ‎

হাদীস দুখানির ব্যাপারে উপরের তথ্যগুলো সামনে রেখে চলুন এখন তার ‎বক্তব্যকে ব্যাখ্যা করা যাক। খাওয়ার আগে অজু করা লাগে ভেবে, ‎‎শৌচাগার হতে বের হয়ে রাসূল (সা.) খেতে বসতে গেলে অজুর পানি ‎আনবে কিনা এ প্রশ্নটি সাহাবায়ে কিরামগণ তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। ‎সাহাবায়ে কিরামগণের ঐ প্রশ্নের উত্তরে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষটি সহজেই ‎বলতে পারতেন, ‘খাওয়ার আগে অজু করার দরকার নেই।’ কিন্তু তা না ‎বলে তিনি বললেন, ‘তিনি নামাজ পড়ার আগে অজু করার জন্যে আদিষ্ট ‎হয়েছেন।’ অর্থাৎ তিনি স্পষ্ট করে বলে দিলেন কুরআনের মাধ্যমে তাঁকে ‎শুধু নামাজ পড়ার আগে অজু কথা জানানো হয়েছে। অন্য কোন কাজ ‎করার আগে অজু করার কথা জানানো হয় নাই। এই অন্য কাজের মধ্যে ‎‎যেমন পড়বে খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য। ‎‎তেমনি তার মধ্যে পড়বে রোজা থাকা, জিকির করা, দোয়া করা, কুরআন ‎ও অন্যান্য গ্রন্থ দেখে বা মুখস্থ পড়া বা পড়ানো, কুরআন স্পর্শ করা ‎ইত্যাদি। ‎

তাহলে পুস্তিকার আলোচ্য বিষয়ের ব্যাপারে কুরআনের বক্তব্যের ‎অনুরূপ বক্তব্য সম্বলিত অর্থাৎ প্রায় কুরআনের আয়াতের ন্যায় শক্তিশালী ‎এই হাদীস দুটোর বক্তব্য থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায়-‎

ক. কুরআন দেখে বা মুখস্থ পড়া বা পড়ানোর জন্যে অজুর প্রয়োজন নেই।‎

খ. কুরআন স্পর্শ করার জন্যেও অজু করার দরকার নেই। ‎

গ. কুরআন পড়া বা স্পর্শ করার আগে (গোসল ফরজ অবস্থায়) ‎‎গোসল করতে হবে কিনা এখানে সে বিষয়ে কিছু বলা হয় নাই।‎

চলুন, এবার দেখা যাক অন্য হাদীসে আলোচ্য বিষয়ের ব্যাপারে কী কী ‎বক্তব্য আছে-‎

তথ্য-৩‎

এ হাদীসটির পুস্তিকার আলোচ্য বিষয়ের সাথ

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-১

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ২:৪৮

তাহান বলেছেন:
তথ্য-৩‎
এ হাদীসটির পুস্তিকার আলোচ্য বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত অংশই শুধু ‎উল্লেখ করা হলো: ‎
অর্থ: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি তাঁর খালা, রাসূলের ‎‎(সা.) স্ত্রী, মায়মুনার (রা.)-এর ঘরে এক রাত কাটান। তিনি বলেন, ‎আমি বিছানায় আড়াআড়ি এবং রাসূল (সা.) ও তাঁর স্ত্রী লম্বালম্বি ‎শুইলেন। রাসূল (সা.) অর্ধ রাত বা তার কিছু কম-বেশি সময় ঘুমালেন। ‎তারপর তিনি ঘুম থেকে উঠে হাত দিয়ে চোখ মুখ মলতে মলতে বসে ‎পড়লেন। অতঃপর তিনি সূরা আলে-ইমরানের শেষ দশ আয়াত পাঠ ‎করলেন। তারপর ঝুলন্ত মশকের নিকট গিয়ে উত্তমরূপে অজু করলেন। ‎এরপর নামাজ পড়তে দাঁড়ালেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, আমিও ‎উঠে গিয়ে তাঁর মত করলাম। তারপর তাঁর (বাম) পার্শ্বে গিয়ে ‎‎দাঁড়ালাম।....‎ ‎ (বুখারী)‎
ব্যাখ্যা: বর্তমান হাদীসখানি এবং পরে আসা হাদীসগুলোর ব্যাখ্যা করা ও ‎‎বোঝার সময় মনে রাখতে হবে ইসলামের বক্তব্য জানা ও বোঝার জন্যে ‎মানুষের বিবেক-বুদ্ধিকে আল্লাহ ও রাসূল (সা.) অপরিসীম গুরুত্ব ‎দিয়েছেন। পুস্কিকার তথ্যের উৎস বিভাগে ঐ ব্যাপারে কুরআন ও ‎হাদীসের কিছু তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আর তা বিস্তারিতভাবে ‎আলোচনা করা হয়েছে। ‘কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী বিবেক-বুদ্ধির গুরুত্ব ‎কতটুকু এবং কেন’ নামক বইটিতে। ‎
আলোচ্য হাদীসখানির মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে জানা যায় বিনা অজুতে ‎কুরআন পড়া ইসলাম সিদ্ধ। কারণ, রাসূল (সা.) নিজে বিনা অজুতে ‎কুরআন পড়েছেন এবং হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) কে বিনা অজুতে ‎কুরআন পড়তে তিনি নিষেধ করেননি। আর যেহেতু পড়া কাজটি স্পর্শ ‎করা কাজটির চেয়ে কোটি কোটি গুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেহেতু উল্লিখিত ‎হাদীসখানির তথ্য ও বিবেক-বুদ্ধির রায়ের ব্যাপারে রাসূল (সা.) এর ‎বক্তব্য মেলালে সহজে বলা যায়, বে-অজু কুরআন পড়া যখন ইসলামে ‎সিদ্ধ তখন বে-অজু কুরআন স্পর্শ করাও ইসলাম সিদ্ধ হবে। অর্থাৎ অজু ‎ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে না এটি সুন্নাহ তথা ইসলাম বিরুদ্ধ কথা। ‎

তথ্য-৪‎‏.‏
অর্থ: আলী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) পায়খানা হতে বের হয়ে বিনা ‎অজুতে আমাদের কুরআন পড়াতেন এবং আমাদের সঙ্গে গোশত ‎‎খেতেন। তাঁকে কুরআন হতে বাধা দিতে পারত না বা বিরত রাখত না ‎জানাবাত (গোসল ফরজ হয় এমন অবস্থা) ব্যতীত অন্য কিছু।‎
‎ (আবু দাউদ, নাছায়ী ও ইবনে মাজাহ) ‎
‎দারাকুতনী, মুস্তাদারাকে হাকেম ও আল ইস্তিযকার গ্রন্থে হাদীসটির ‎‘কুরআন হতে বিরত রাখত না’ কথাটার স্থানে ‘কুরআন তিলাওয়াত বা ‎পড়া (‎تِلاَوَةً /قَر َاءَةً‎) হতে বিরত রাখত না’ কথাটা উল্লেখ করা হয়েছে। ‎
ব্যাখ্যা: ‘জানাবাত ব্যতীত অন্য কিছু’ কথাটার অর্থ হয় অপবিত্রতার অন্য ‎অবস্থা অর্থাৎ বে-অজু অবস্থা।‎
হাদীসখানি থেকে তাই স্পষ্ট জানা ও বুঝা যায়, গোসল ফরজ ‎অবস্থায় রাসূল কুরআন পড়তেন বা পড়াতেন না। কিন্তু বে-অজু অবস্থায় ‎রাসূল (সা.) তা করতেন। ‎
অর্থাৎ এ হাদীসখানির আলোকে বলা যায়-‎
‎ গোসল ফরজ অবস্থায় কুরআন পড়া ও পড়ানো নিষেধ।‎
‎ বে-অজু অবস্থায় কুরআন পড়া ও পড়ানো সিদ্ধ। এটি ১, ২ ও ৩ ‎নং তথ্যের হাদীস তিনটিরও বক্তব্য।‎
ইসলামী জীবন বিধানে যে কাজ করা নিষিদ্ধ তার সহায়তাকারী ‎সকল কাজও নিষিদ্ধ। যেমন: মদ খাওয়া নিষিদ্ধ-তাই মদ উৎপাদন, ‎‎বেচা, কেনা ইত্যাদি সবই নিষিদ্ধ। সুদ নিষিদ্ধ-তাই সুদ দেয়া, নেয়া, ‎সুদের সাী হওয়া ইত্যাদি সবই নিষিদ্ধ। এ তথ্যের আলোকে আলোচ্য ‎হাদীসখানির বক্তব্য থেকে তাহলে সহজেই বলা ও বুঝা যায়, যেহেতু ‎‎গোসল ফরজ অবস্থায় কুরআন পড়া বা পড়ানো নিষিদ্ধ, সেহেতু ঐ ‎অবস্থায় কুরআন ধরতে পারাও নিষিদ্ধ হবে। কারণ, অধিকাংশ মানুষের ‎মুখস্থ না থাকায় কুরআন ধরে পড়তে হয়। অর্থাৎ ধরা কাজটি কুরআন ‎পড়া কাজটিতে ভীষণভাবে সহায়তা করে। সুতরাং হাদীসখানির সাথে ‎বিবেক-বুদ্ধির গুরুত্ব প্রদানকারী হাদীসসমূহ ও উপরোল্লিখিত ইসলামের ‎‎কোন বিষয় নিষিদ্ধ হওয়ার সাধারণ নীতিমালা মেলালে যে তথ্য বের হয়ে ‎আসে, তা হচ্ছে-‎
‎ গোসল ফরজ অবস্থায় কুরআন পড়া, পড়ানো ও স্পর্শ করা সবই ‎নিষিদ্ধ।‎
‎ বে-অজু অবস্থায় কুরআন পড়া, পড়ানো ও স্পর্শ করা সবই সিদ্ধ। ‎
তথ্য-৫‎
অর্থ: আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) মাসিক ঋতু অবস্থায় আমার ‎‎কোলে হেলান দিয়ে কুরআন পাঠ করতেন। ‎ ‎ (বুখারী)‎
ব্যাখ্যা: হাদীসখানা থেকে বুঝা যায়, গোসল ফরজ অবস্থায় আয়েশা ‎‎(রা.) রাসূল (সা.)‎‏ ‏এর মুখ থেকে কুরআন পড়া শুনেছেন এবং রাসূল ‎‎(সা.) তা নিষেধ করেননি। সুতরাং এ হাদীসখানি থেকে সহজে বলা ও ‎বুঝা যায় গোসল ফরজ অবস্থায় কুরআন শুনা নিষেধ নয়। ‎
তথ্য-৬‎
অর্থ: হযরত ইবনে উমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ঋতুবতী ‎মহিলা এবং গোসল ফরজ অবস্থায় কোন ব্যক্তি কুরআনের কিছুই পড়বে ‎না।‎ ‎ ‎ ‎ (তিরমিজী) ‎
ব্যাখ্যা: ৪ নং তথ্যের হাদীসখানির ব্যাখ্যার ন্যায় এ হাদীসখানির ব্যাখ্যা ‎‎থেকেও তাহলে বলা ও বুঝা যায়-গোসল ফরজ অবস্থায় কুরআন পড়া, ‎পড়ানো ও স্পর্শ করা নিষেধ। ‎
তথ্য-৭‎
বুখারী শরীফের হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূল (সা.) রোমের বাদশাহ্ ‎কাইজার হেরাকিয়াসকে যে চিঠি পাঠিয়েছিলেন, তাতে কুরআন মজিদের ‎এ আয়াতটিও লেখা ছিল-‎
تَعَالَوْ اِِلَى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَ بَيْنَكُمْ.‏
‎হেরাকিয়াসকে চিঠিটা ধরে পড়ার জন্যে রাসূল (সা.) দিয়েছিলেন। ‎অন্যান্য কাফের বা মুশরেক নেতার কাছেও রাসূল (সা.) কুরআনের ‎আয়াত লেখা চিঠি দিয়েছেন। তাই রাসূলের (সা.) এ সুন্নাহ থেকে বুঝা ‎যায়, কাফের বা মুশরিকদের অর্থাৎ মানসিক দিক দিয়ে অপবিত্র ‎ব্যক্তিদের কুরআন স্পর্শ করা এবং পড়া নিষেধ নয়। নিম্নের বিষয়গুলো ‎‎থেকেও এ বক্তব্যটার সত্যতা প্রমাণিত হয়। ‎
‎ ইসলামের আক্বীদাগত (বিশ্বাসগত) এবং ব্যক্তিগত বিধান শুধু ‎মুমিনদের জন্যে প্রযোজ্য, কাফের বা মুশরিকদের জন্যে প্রযোজ্য ‎নয়। তবে সামাজিক বিষয়গুলো সকল মানুষের জন্যে প্রযোজ্য। ‎আর তাই ইসলামী রাষ্ট্রে একজন মুসলিম নামাজ না পড়লে বা ‎‎রোজা না থাকলে তাকে শাস্তি দেয়া যেতে পারে কিন্তু কাফের বা ‎মুশরেককে ঐ কারণে শাস্তি দেয়া যাবে না। কিন্তু চুরি করলে ‎কাফের, মুশরেক ও মুসলিম সবাইকে শাস্তি দেয়া যাবে। ‎
‎ কুরআন স্পর্শের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের একটি উদ্দেশ্য ‎হচ্ছে, কুরআনকে সম্মান দেখানো। যে ব্যক্তি কুরআনকে বিশ্বাসই ‎করে না (কাফের ও মুশরিক তথা মানসিক অপবিত্র ব্যক্তি) তাকে ‎কুরআনকে সম্মান দেখাতে বলা যুক্তিসঙ্গত কথা নয়। ‎
‎ আল-কুরআনের অনেক জায়গায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কুরআন ‎সকল (কাফের, মুশরেক, ঈমানদার) মানুষের জন্যে। আল-‎কুরআনে ইসলামের সকল প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয় উপস্থাপন ‎করা হয়েছে এবং তা বুঝানো বা তার প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় করার ‎জন্যে নানা ধরনের উদাহরণ ও কাহিনী বলা হয়েছে। অর্থাৎ ‎ইসলাম কী এবং কেন তা অন্যান্য জীবন ব্যবস্থা থেকে শ্রেষ্ঠ, ‎যুক্তিসঙ্গত ও কল্যাণকর, তা কুরআনে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন ‎করা হয়েছে। তাই অমুসলিমরা যদি কুরআন ধরে পড়তে না ‎পারে, তবে তারা তো জানতেই পারবে না ইসলাম কী এবং ‎‎কেন এটি তাদের পালনকৃত জীবন ব্যবস্থা থেকে শ্রেষ্ঠ, ‎যুক্তিসঙ্গত ও কল্যাণকর। ফলে তারা ইসলাম গ্রহণের দিকে ‎অগ্রসরই হতে পারবে না। আর ইসলাম সরাসরি কুরআন তথা ‎আল্লাহর নিকট থেকে জানা, আর অন্য মানুষ (নবী-রাসূল বাদে) ‎বা অন্য গ্রন্থের থেকে জানার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। ‎সুতরাং অমুসলিমদের শারীরিক অপবিত্র অবস্থায় কুরআন স্পর্শ ‎করতে নিষেধ করার অর্থ হচ্ছে তাদের ইসলাম গ্রহণের পথে ‎বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। তাই এমন বিধি-নিষেধ ইসলামে ‎না থাকারই কথা। ‎
তথ্য-৮‎
অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার আমার সঙ্গে রাসূলুল্লাহের (সা.) ‎সাাৎ হলো। আমি তখন বীর্যপাতের দরুন নাপাক ছিলাম। তিনি ‎আমার হাত ধরলেন এবং আমি তাঁর সহিত চলতে থাকলাম যে পর্যন্ত না ‎তিনি বসলেন। তখন আমি চুপি চুপি সরে পড়লাম এবং ঠিকানায় এসে ‎‎গোসল করলাম। এরপর আবার ও তাঁর নিকট গেলাম। তখনও তিনি ‎তথায় বসে ছিলেন। তিনি বললেন, এতণ কোথায় ছিলে আবু হুরায়রা? ‎আমি তাঁকে ব্যাপারটা বললাম। তিনি (আশ্চর্য হয়ে) বললেন, ‎সুবহানাল্লাহ! মুমিন নাপাক বা অপবিত্র (নাজাস) হয় না।(বুখারী, মুসলিম)‎
ব্যাখ্যা: যুনুবি অর্থাৎ ফরজ গোসল অবস্থার দরুন অপবিত্র থাকার জন্যে ‎আবু হুরায়রা (রা.) রাসূল (সা.)-এর শরীর স্পর্শ করতে অস্বস্তি বোধ ‎করছিলেন। তাই তিনি সুযোগ মতো সরে পড়ে গোসল করে আসেন। ‎কারণ, তিনি জানতেন যুনুবি অবস্থায় গোসল না করলে পাক বা পবিত্র ‎হওয়া যায় না। ব্যাপারটা জানতে পেরে রাসূল (সা.) বললেন, মুমিন ‎নাপাক বা অপবিত্র (নাজাস) হয় না। মুমিন শারীরিক দিক দিয়ে অবশ্যই ‎অপবিত্র হয়। তাই রাসূল (সা.) এখানে বলেছেন, মুমিন মানসিক অর্থাৎ ‎বিশ্বাসগত দিক দিয়ে অপবিত্র হয় না। রাসূল (সা.)-এর এ কথাটি আল-‎কুরআনের সূরা তওবার ২৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যা বলা চলে। সেখানে ‎আল্লাহ বলেছেন-‎
অর্থ: মুশরেক লোকেরা নাপাক বা অপবিত্র। ‎
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ এখানে জানিয়ে দিয়েছেন মুশরেকরা মানসিক দিক ‎দিয়ে সকল সময় অপবিত্র। ‎
তাই এ হাদীস এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত কুরআনের আয়াত থেকে ‎নিঃসন্দেহে বুঝা যায়, মুমিন যেমন শারীরিক অপবিত্রতার দরুন মানসিক ‎বা আক্বিদাগত দিক দিয়ে অপবিত্র হয় না, তেমনই মুশরেক বা কাফের ‎অজু বা গোসল করলেও শারীরিক দিক দিয়ে পবিত্র হয় না। ‎
এ পর্যন্তকার উল্লিখিত হাদীসগুলোর তথ্যের সার-সংপে
‎ অজু ছাড়া কুরআন পড়া, পড়ানো, শোনা ও স্পর্শ করা সব কিছুই ‎জায়েয বা সিদ্ধ।‎
‎ গোসল ফরজ অবস্থায় কুরআন পড়া, পড়ানো ও স্পর্শ করা ‎নাযায়েজ বা নিষিদ্ধ কিন্তু শোনা সিদ্ধ।‎
‎ কাফের-মুশরেকদের ইসলামকে জানা ও বুঝার জন্যে কুরআন পড়া, ‎‎শোনা বা স্পর্শ করার ব্যাপারে অজু-গোসল কোন শর্ত নয়। ‎
‘অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ’ কথাটির দলিল বলে ‎বর্ণিত হাদীসটি ও তার পর্যালোচনা
অর্থ: আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে ‎হাজম বলেন, রাসূল (সা.) আমর ইবনে হাজমের (রা.) নিকট যে সব ‎লিখিত বিধি-বিধান পাঠিয়েছিলেন তাতে একটি হুকুম এই ছিল যে, ‎‘পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না।’ (মুয়াত্তা)‎
‎ ‎
আবি দাউদ মুরসাল হাদীস হিসেবে উপরের হাদীসটি এভাবে উল্লেখ ‎করেছেন, ‘ইমাম জুহরী বলেন, তিনি, ইবনে আবুবকর ইবনে মুহাম্মাদ ‎ইবনে হাজমের নিকট রাসূলে করীম (সা.)-এর যে লিখিত ফরমান ‎‎দেখেছিলেন, তাতে এ হুকুমটিও ছিলো- ‎لاَ يَمَسُّ الْقُرْآنَ إِلاَّ طَاهِرٌ‎ ‎পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না।’ ‎
ব্যাখ্যা: এটিই হচ্ছে সেই হাদীস যেটি বর্তমান মুসলিম সমাজে ‘বে-অজু ‎কুরআন স্পর্শ করা হারাম, নাযায়েজ বা মহাপাপ’। কথাটি চালু হওয়ার ‎ব্যাপারে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে। আর তা মুসলিমদের কুরআন অধ্যয়নের ‎সময়কে ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছে। তাই হাদীসটিকে বিস্তারিতভাবে ‎ব্যাখ্যা করা দরকার। আর সেই ব্যাখ্যার মাধ্যমে যদি প্রতীয়মান হয় ‎হাদীসটিকে ব্যাখ্যা করে ঐ রকম কথা কোনভাবেই বলা যায় না, তবে ‎‎সে তথ্যটাও বর্তমান মুসলিম জাতিকে ব্যাপকভাবে জানতে হবে। ‎
হাদীসটিকে ব্যাখ্যা করে সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে হলে যে চিরসত্য ‎কথাগুলো আগে জানতে ও বুঝতে হবে, তা হচ্ছে-‎
‎ কোন নির্ভুল হাদীসের বক্তব্য ব্যাখ্যা কুরআনের কোন প্রত্য বা ‎পরো বক্তব্যের বিপরীত অবশ্যই হতে পারে না বা পারবে না। ‎
‎ হাদীস থেকে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে হলে ঐ বিষয়ের ‎সকল সহীহ হাদীস পাশাপাশি রেখে পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত ‎সিদ্ধান্তে আসতে হবে। ‎
‎ শক্তিশালী হাদীসের বক্তব্য কম শক্তিশালী হাদীসের বক্তব্যের ‎‎থেকে অগ্রাধিকার পাবে। ‎
‎ সুনির্দিষ্ট (ঝঢ়বপরভরপ/‎خاص‎) বক্তব্যসম্বলিত হাদীস অনির্দিষ্ট ‎
‎ (ঘড়হ-ঝঢ়বপরভপ/‎‏ عام‎) হাদীসের উপর অগ্রাধিকার পাবে। ‎
‎ একটি হাদীসের বক্তব্য আর একটি হাদীসের বক্তব্যকে রহিত ‎
‎ করতে পারে তবে রহিতকারী হাদীসটিকে অবশ্যই রহিত হওয়া ‎
‎ হাদীসটি অপো বেশি শক্তিশালী হতে হবে। ‎
‎ মুরসাল হাদীস (যে হাদীসে বর্ণনাকারীদের মধ্যে সাহাবীর নাম ‎
‎ নেই) দ্বারা ইসলামের কোন বিধান নির্ণয় করা সাধারণভাবে ‎নিষেধ।‎
চলুন প্রথমে দেখা যাক হাদীসটি ‘মুরসাল’ না ‘সহীহ’। আলোচ্য হাদীসটি ‎‎দুইজন মনীষী তাঁদের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের একজন, ইমাম ‎মালেক (রহ.) হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন। আর দ্বিতীয়জন আবি দাউদ ‎‎(রহ.) হাদীসটিকে মুরসাল বলেছেন। মুরসাল হাদীস হচ্ছে সেই হাদীস, ‎‎যে হাদীসে রাবিদের (বর্ণনাকারীদের) মধ্যে সাহাবীর নাম নেই। অর্থাৎ ‎তাবেয়ী সরাসরি রাসূল (সা.) এর উদ্ধৃতি দিয়ে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ‎‎কোন তাবেয়ীর সঙ্গে রাসূলের (সা.) দেখা হয়নি। তাই, রাসূল (সা.) ‎উদ্ধৃতি দিয়ে তাবেয়ীর বলা কোন কথা আসলে রাসূল (সা.) এর কথা ‎কিনা এ ব্যাপারে বিরাট সন্দেহ থেকে যায়। এ জন্যে ইসলামী শরীয়াতে ‎সত্যিকারভাবে মুরসাল হাদীস দিয়ে কোন বিধান বানানো নিষেধ। ‎
তবে কোন কোন তাবেয়ী কিছু হাদীস বর্ণনা করার সময় সাহাবীর ‎‎(রা.) নাম উল্লেখ করেননি এটা ভেবে যে, হাদীসটি এবং তার বর্ণনাকারী ‎সাহাবী এত প্রসিদ্ধ যে, তাঁর (সাহাবীর) নাম উল্লেখ না করলেও হাদীসটি ‎সহীহ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ হওয়ার কথা নয়। তাই কোন মুরসাল ‎হাদীসকে বিধান বানানোর মর্যাদা থেকে বাদ দিতে হলে প্রথমে ‎সঠিকভাবে প্রমাণ করতে হবে যে, হাদীসটি ‘সত্যিকারভাবে মুরসাল’।‎
হাদীসটির ব্যাপারে বিখ্যাত তাফসীরকারক ইবনে কাসীর তাঁর ‎তাফসীর গ্রন্থে লিখেছেন, ‘যদিও এ রেওয়ায়েতটির বহু সনদ রয়েছে ‎কিন্তু প্রত্যেকটির বিষয়েই চিন্তা-ভাবনার অবকাশ আছে। এসব ব্যাপারে ‎আল্লাহ তা’আলাই ভাল জানেন।’ ইবনে কাসীর (রহ.)-এর বক্তব্য থেকে ‎‎স্পষ্ট বুঝা যায়, হাদীসটির সবগুলো বর্ণনাই সন্দেহজনক। আর ‘এ ‎ব্যাপারে আল্লাহই ভাল জানেন’ কথাটি বলা হয় ঐ সকল হাদীসের ‎ব্যাপারে যেখানে রাসূল (সা.) প্রকৃতভাবে কী বুঝিয়েছেন, সে বিষয়ে ‎নিশ্চিত হওয়া না যায় । ‎
এখন চলুন, বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করে দেখা যাক, ‎হাদীসটি ‘মুরসাল’ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, না সহীহ হওয়ার সম্ভাবনা ‎‎বেশি ।‎
‎দৃষ্টিকোণ-১‎
‎ রাসূল (সা.)-এর ইসলামের বিধান জানানোর সাধারণ নিয়মের ‎‎দৃষ্টিকোণ‎
ইসলামের কোন বিধান জানানোর ব্যাপারে রাসূল (স.)-এর সাধারণ ‎নিয়ম ছিলো, সাহাবায়ে কিরামদের জমায়েতে তা ঘোষণা করা যেন বেশি ‎সংখ্যক সাহাবী সে বিধান সরাসরি তাঁর মুখ থেকে শুনতে পারেন। ‎‎স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য সাহাবায়ে কিরামদের অধিক বড় ‎জমায়েতে রাসূল (সা.) উপস্থাপন করতেন। ‎
‎যে দুটো গ্রন্থে আলোচ্য হাদীসটি উল্লেখ করা হয়েছে, সে উভয়ে ‎গ্রন্থেই উল্লেখ করা হয়েছে রাসূল (সা.) এ বাণীটি জানিয়েছেন, আমর ‎বিন হাজম (রা.) এর কাছে লেখা একটি চিঠিতে। প্রশ্ন হচ্ছে, একটা ‎বিধান যা কুরআন ও সুন্নাহে ঘোষিত মুসলিমদের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ‎আমলটি পালন করার পথে বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে এবং যা তার ‎বর্ণনা করা অন্যান্য বক্তব্যের প্রত্য বা পরো বিরোধী, তা তিনি ‎সাহাবায়ে কিরামদের জমায়েতে স্পষ্টভাবে ঘোষণা না করে একজন ‎সাহাবীর নিকট লেখা একটা চিঠির মাধ্যমে জানাবেন, এটা কি পৃথিবীর ‎‎শ্রেষ্ঠ মানুষটির বিচার-বিবেচনার সঙ্গে সঙ্গতিশীল হতে পারে? আমার দৃঢ় ‎বিশ্বাস, আপনারা সবাই বলবেন, তা অবশ্যই হতে পারে না। বরং রাসূল ‎‎(স.) এর বিচার-বিবেচনার সঙ্গে এটাই সঙ্গতিশীল ছিল যে, এমন একটি ‎কথা তিনি সাহাবায়ে কিরামদের বিরাট জমায়েতে ঘোষণা করবেন, যাতে ‎অসংখ্য সাহাবী কথাটা সরাসরি তাঁর মুখ থেকে শুনতে পায়। অর্থাৎ ‎হাদীসটি মুতাওয়াতির সহীহ হওয়া উচিত ছিল। তাই এ দৃষ্টিকোণ থেকে ‎হাদীসটি মুরসাল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ‎

‎দৃষ্টিকোণ-২‎
‎ সাহাবীদের বর্ণনা না করার দৃষ্টিকোণ
হাদীসটির দুটো বর্ণনাতেই দেখা যায়, বিধানটি রাসূল (সা.) আমর ‎বিন হাজম (রা.) এর নিকট চিঠিতে লিখে পাঠিয়েছিলেন। রাসূল (সা.) ‎লিখতে পারতেন না। তাহলে নিশ্চয়ই তিনি অন্য একজন সাহাবী দ্বারা ‎চিঠিটা লিখিয়েছিলেন। অর্থাৎ কমপে দুইজন সাহাবী (যিনি লিখেছিলেন ‎এবং যার কাছে চিঠিটা লেখা হয়েছিল) অবশ্যই বক্তব্যটা জানতেন। আর ‎‎যেহেতু বক্তব্যটা লেখা ছিলো তাই ঐ বক্তব্যকে রাসূল (স.)-এর বক্তব্য ‎বা তাতে কোন কম-বেশি হয় নাই, সে ব্যাপারে ঐ দুজন সাহাবীর কোন ‎সন্দেহ থাকার কথা নয়। কিন্তু হাদীসটির দুটো বর্ণনাতেই দেখা যাচ্ছে, ‎হাদীসটি ঐ সাহাবী দু’জনের কেউই বর্ণনা করেননি, বরং তা বর্ণনা ‎করেছেন আবদুল্লাহ (র.) বা জহুরী (র.) নামের দু’জন তাবে তাবেয়ীন। ‎অর্থাৎ সাহাবায়ে কিরামদের ৪ প্রজন্ম (এবহবৎধঃরড়হ) পরের দুই মনীষী। ‎এমন একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিধান যদি রাসূল (সা.) এর লেখা কোন ‎চিঠিতে থাকত, তবে সেই চিঠি লেখা বা পড়া সত্ত্বেও দু’জন সাহাবীর ‎‎কেউ তা প্রকাশ করলেন না এটা কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে? তাই এ ‎‎দৃষ্টিকোণ থেকেও এরকম একটি বিধান রাসূল (সা.) এর ঐ চিঠিতে ‎‎লেখা ছিল কিনা সে ব্যাপারে এক বিরাট প্রশ্ন অবশ্যই এসে যায়। ‎
‎দৃষ্টিকোণ-৩‎
‎ যে কথা কুরআনের কোন তথ্যের প্রত্য বা পরো বিরোধী, তা ‎রাসূল (সা.) এর বলা না বলার দৃষ্টিকোণ
‎যে কথা কুরআন ঘোষিত মুসলিমদের ১ নং আমলের পথে বিরাট ‎প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং মহান আল্লাহ তা আল-কুরআনে উল্লেখ ‎করেননি তেমন কথা রাসূল (সা.) বলতে পারেন না। ‎
এ হাদীসটির বক্তব্য কুরআন ঘোষিত মুসলিমদের ১ নং আমলের ‎পথে একটা বিরাট প্রতিবন্ধকতা এবং কুরআনে আল্লাহ এ রকম কোন ‎বক্তব্য রাখেননি। এ দৃষ্টিকোণ থেকেও তাই এ হাদীসটি মুরসাল হবে। ‎
‎দৃষ্টিকোণ-৪‎
‎ নিজ বলা অন্য কথার বিপরীত বক্তব্য রাসূল (সা.) এর বলা না বলার ‎
‎দৃষ্টিকোণ‎
অনির্দিষ্ট (ঘড়হ-ঝঢ়বপরভরপ) হওয়ার জন্যে আলোচ্য হাদীসটি বিশ্লেষণ ‎করে তিনটি বিধান বের করা সম্ভব। যথা-‎
ক. বে-অজু কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ,‎
খ. গোসল ফরজ অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ এবং
গ. কাফের-মুশরেকদের কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ।‎
এই তিনটি বিধানের দুটোর (ক এবং গ নং) বিপরীত বক্তব্য ‎বর্ণনাকারী হাদীস আছে (আগে উল্লেখ করা হয়েছে) এবং সেই ‎হাদীসগুলো বর্তমান হাদীসটির থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। যে কথার ‎‎বেশির ভাগ অংশ নিজের বলা অধিক শক্তিশালী কোন কথাসমূহের ‎বিপরীত তেমন কোন কথা রাসূল (সা.)-এর না বলারই কথা। তাই এ ‎‎দৃষ্টিকোণ থেকেও আলোচ্য হাদীসটির মুরসাল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ‎

‎দৃষ্টিকোণ-৫‎
‎ অধিকাংশ সাহাবীর সমর্থন না থাকার দৃষ্টিকোণ
মুফতি শফী (র.)-এর তাফসীর গ্রন্থের তথ্য অনুযায়ী (পূর্বে উল্লেখ ‎করা হয়েছে) আল-কুরআনের সূরা ওয়াকিয়ার যে আয়াতটিকে কিছু কিছু ‎তাফসীরকারক অপবিত্র অবস্থায় কুরআন স্পর্শের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে ‎‎দলিল মনে করেন, সে আয়াতের ব্যাপারে, বিপুল সংখ্যক সাহাবায়ে ‎কিরামের মত হচ্ছে, ঐ আয়াতটির বক্তব্য ফেরেশতাদের জন্যে, মানুষের ‎জন্যে নয়। ঐ কিছু কিছু তাফসীরকারক ঐ আয়াতটির যে তরজমা এবং ‎ব্যাখ্যা করেছেন, আলোচ্য হাদীসটির বক্তব্যও প্রায় তদ্রƒপ। তাই আলোচ্য ‎হাদীসটির বক্তব্যকে সমর্থনকারী সাহাবীর সংখ্যা অনেক কম বা শূন্য ‎হওয়ার কথা। সুতরাং এ দৃষ্টিকোণ থেকেও হাদীসটি মুরসাল হওয়ার ‎সম্ভাবনা বেশি। ‎
সুধী পাঠক,‎ মানুষের আল্লাহ প্রদত্ত বিবেক যদি সঠিক থাকে তবে ‎অতীন্দ্রিয় (মুতাশাবিহাত) বিষয় এবং রাসূলের (সা.) মুজেজা ছাড়া ‎ইসলামে এমন কোন বিষয় নেই, যা চিরন্তনভাবে সে বিবেকের বাইরে বা ‎বিরুদ্ধ হবে। যে হাদীসটি এতগুলো দৃষ্টিকোণ থেকে মুরসাল হওয়ার ‎সম্ভাবনা বেশি, সে হাদীসটির দ্বারা মুসলিমদের ১নং আমলের পথে বিরাট ‎প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এমন বিধান তৈরি করা কোনভাবে ‎যুক্তিসঙ্গত হতে পারে? আপনাদের বিবেক কী বলে? আমার বিশ্বাস, ‎আপনাদের সবার বিবেক বলবে, অবশ্যই হতে পারে না। ‎
চলুন এখন দেখা যাক, তর্কের খাতিরে হাদীসটিকে যদি নির্ভুলও ধরা ‎হয় তবে তার বক্তব্যকে অপবিত্র অবস্থায় কুরআন পড়া ও স্পর্শ করার ‎ব্যাপারে কুরআন, অন্যান্য সহীহ হাদীস এবং বিবেকের তথ্যগুলোর ‎পাশাপাশি রেখে পর্যালোচনা করলে যে তথ্যগুলো বের হয়, তার কোনটি ‎গ্রহণযোগ্য হবে আর কোনটি হবে না এবং কেন তা হবে বা হবে না। ‎
এ পর্যালোচনার সময় মনে রাখতে হবে-‎
ক. ইসলামে অপবিত্রতা তিন ধরনের যথা-‎
‎১. মানসিক অপবিত্রতা,‎
‎২. অজু করলে পবিত্র হয় এমন শারীরিক অপবিত্রতা এবং
‎৩. গোসল করলে পবিত্র হয় এমন শারীরিক অপবিত্রতা।‎
খ. বর্তমান হাদীসটি পবিত্রতার দৃষ্টিকোণ থেকে অনির্দিষ্ট (ঘড়হ-‎ঝঢ়বপরভরপ বা ‎عام‎)। কারণ, হাদীসটিতে অপবিত্র লোকদের ‎কুরআন স্পর্শ করতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু কোন্ ধরনের ‎অপবিত্র লোক তা নির্দিষ্ট করে বলা হয় নাই।‎

‎১. বে-অজু কুরআন দেখে যা মুখস্থ পড়া বা পড়ানো যাবে‎
‎ বিধানটির পে কুরআনের পরো বক্তব্য আছে,‎
‎ ২ ও ৩ নং তথ্যের হাদীস দু’খানি প্রত্যভাবে বিধানটির প,ে‎
‎ ১ নং তথ্যের হাদীস দুটো বিধানটির পে এবং সেখানে অজু ‎কথাটি প্রত্যভাবে উল্লেখ করা হয়েছে,‎
‎ আলোচ্য হাদীসটি বা অন্য কোন হাদীস এ বক্তব্যের বিরুদ্ধ নয়। ‎
‎ ‎‏ ‏সুতরাং বিধানটি ইসলামে গ্রহণযোগ্য হবে।‎

‎২. বে-অজু কুরআন স্পর্শ করা যাবে না‎
‎ কুরআনে এ বিধানটির পে প্রত্য, পরো বা ইঙ্গিতেও কোন ‎বক্তব্য নেই,‎
‎ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী পরোভাবে কুরআন বিরুদ্ধ,‎
‎ ১ নং তথ্যের হাদীস দুটোর বিরুদ্ধ। আর ঐ হাদীস দুটো প্রায় ‎কুরআনের আয়াতের সমান শক্তিশালী। সেখানে কুরআন স্পর্শ ‎করা কথাটি পরোভাবে আসলেও অজু কথাটি প্রত্যভাবে ‎এসেছে।‎
‎ বর্তমান হাদীসটি বিধানটিকে সমর্থন করে। কিন্তু এ হাদীসটি ১ ‎নং তথ্যের হাদীস দুটো থেকে নিম্নের দুটো দৃষ্টিকোণ থেকে ‎অনেক অনেক কম শক্তিশালী- ‎
ক. ১ নং তথ্যের হাদীস দুটোর বক্তব্য কুরআনের তথ্যের ‎অনুরূপ। কিন্তু বর্তমান হাদীসটির বক্তব্যের ব্যাপারে ‎কুরআনের কোন সমর্থন তো নেই বরং তা কুরআনের ‎পরো বক্তব্যের বিরোধী। ‎
খ. বর্তমান হাদীসটি পবিত্রতার দৃষ্টিকোণ থেকে অনির্দিষ্ট। ‎কারণ সেখানে অপবিত্রতার কোন্ অবস্থায় বে-অজু ‎‎(বে-গোসল, না মানসিক অপবিত্রতা) কুরআন স্পর্শ ‎করা যাবে না, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।‎
‎ তাই এ বিধানটি কোনভাবেই ইসলামে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ‎‎৩. বে-অজু কুরআন পড়া যাবে কিন্তু স্পর্শ করা যাবে না ‎
‎ সম্পূর্ণ বিবেক-বিরুদ্ধ,‎
‎ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী পরোভাবে কুরআন বিরুদ্ধ,‎
‎ ‘বে-অজু কুরআন স্পর্শ করা যাবে না’ কথাটা বর্তমান হাদীস ‎সিদ্ধ কিন্তু পূর্বে উল্লিখিত অনেক শক্তিশালী হাদীস বিরুদ্ধ।‎
‎ তাই কুরআন, হাদীস ও বিবেক অনুযায়ী এ কথাটাও কোনক্রমেই ‎
‎ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।‎
‎৪. গোসল ফরজ অবস্থায় কুরআন পড়া ও স্পর্শ করা যাবে না‎
‎ বিবেক-সিদ্ধ। কারণ-‎
ক. স্পর্শ করা না গেলে পড়তে না পারাও যুক্তিসঙ্গত। আবার ‎পড়া নিষেধের সাথে সাথে স্পর্শ করাও নিষেধ থাকলে ‎পড়ার নিষেদাজ্ঞাটা বেশি কার্যকরী হয়।‎
খ. অপবিত্র অবস্থায় স্পর্শের ব্যাপারে অন্য গ্রন্থের থেকে ‎কুরআনের বিশেষত্ব থাকে। কারণ অন্য সকল গ্রন্থ গোসল ‎ফরজ অবস্থায় ধরা যায়। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা মুসলিমদের ‎‎বেশিণ কুরআন থেকে দূরে রাখতে পারে না। কারণ, ‎মুসলিমরা গোসল ফরজ অবস্থায় বেশিণ থাকে না। ‎পরবর্তী নামাজের আগে তাদের অবশ্যই গোসল করতে হয়, ‎
‎ কুরআন বিরুদ্ধ নয়। কারণ, কুরআনে এর পে বা বিপে ‎প্রত্য বা পরো কোন বক্তব্য নেই,‎
‎ ৪ ও ৬ নাম্বারের হাদীস তিনটি প্রত্য ও পরোভাবে এর প,ে ‎
‎ বর্তমান হাদীসটিও এর প।ে কারণ, ‘অপবিত্র’ কথাটার মধ্যে ‎‎গোসল ফরজ অবস্থাটাও অন্তর্ভুক্ত। তবে কথাটা এখানে অনির্দিষ্ট
‎ তাই এ বিধানটি ইসলামে গ্রহণযোগ্য হবে। ‎
‎৫. মানসিক অপবিত্ররা (কাফের-মুশরেকরা) কুরআন স্পর্শ করতে পারবে না
‎ বিবেক-বিরুদ্ধ। কারণ-‎
ক. যারা কুরআন মানেই না (কাফের-মুশরেক) তাদের ‎কুরআনকে সম্মান দেখাতে বলা অর্থহীন,‎
খ. কাফের-মুশরেকরা অজু গোসল করলেও শারীরিক দিক দিয়ে পবিত্র ‎হয় না। ‎
‎ পরোভাবে আল-কুরআনের বিরুদ্ধ। কারণ, আল কুরআনে ‎বলা হয়েছে কুরআন হচ্ছে সকল মানুষের জীবন পরিচালনা ‎‎হেদায়েত, গাইড লাইন বা ম্যানুয়াল। আর ইসলামের ব্যক্তি ‎জীবনের বিধান অমুসলিমদের ব্যাপারে প্রযোজ্য নয়। ‎
‎ ৭ নং তথ্যের হাদীসটির প্রত্য বিরুদ্ধ,‎
‎ বর্তমান হাদীসটি এর পে হলেও হাদীসটি বক্তব্য অনির্দিষ্ট ‎অর্থাৎ হাদীসটি ৬ নং তথ্যের হাদীসটি থেকে দুর্বল।‎
‎ তাই এ বিধানটিও কুরআন হাদীস ও বিবেকের তথ্য অনুযায়ী ‎
‎ গ্রহণযোগ্য নয়। ‎
হযরত ওমর (রা.) এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা থেকে কুরআন ‎‎স্পর্শের ব্যাপারে শিা‎
এই ঘটনাটা অনেকেই ‘বে-অজু কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ’ কথাটার ‎পে দলিল হিসেবে পেশ করেন। তাই ঘটনাটা নিয়েও একটু বিস্তারিত ‎আলোচনা দরকার। আর সে আলোচনা থেকে সহজে বুঝা যাবে ঘটনাটা ‎‘বে-অজু কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ’-এই কথাটার বিপে না প।ে ‎
ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা করার আগে যে তথ্যগুলো আগে জানা দরকার ‎তা হচ্ছে-‎
‎ ঘটনাটি কোন হাদীস নয়, একটা ঘটনামাত্র।‎
‎ ইসলামের সকল বিধানের মূল উৎস হচ্ছে কুরআন, সুন্নাহ এবং ‎বিবেক-বুদ্ধি।‎
‎ কোন ঘটনা বা তার ব্যাখ্যা যদি কুরআন বা নির্ভুল হাদীসের ‎‎কোন বক্তব্যের বিরোধী হয়, তবে সে ঘটনার ইসলামে কোন ‎মূল্য নেই। অর্থাৎ কোন ঘটনা বা তার ব্যাখ্যা ইসলামে শুধু ‎তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যদি তা কুরআন এবং নির্ভুল হাদীসের ‎বক্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল হয়। ‎
তাই হযরত ওমরের (রা.) ইসলাম গ্রহণের ঘটনা ব্যাখ্যা করে যদি ‎অপবিত্র অবস্থায় কুরআন পড়া বা স্পর্শ করার ব্যাপারে কোন তথ্য বের ‎করা হয় এবং তা যদি ইসলামী জীবন বিধানে গ্রহণযোগ্য হতে হয়, তবে ‎‎সে তথ্যকে অবশ্যই কুরআন ও নির্ভুল হাদীসের ঐ বিষয়ের তথ্যের সঙ্গে ‎সামঞ্জস্যশীল হতে হবে।‎
সীরাতে ইবনে হিশামে হযরত ওমরের (রা.) ইসলাম গ্রহণের ‎ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখান থেকে পুস্তিকার ‎আলোচ্য বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত অংশটুকু হুবহু রেখে ঘটনাটি ‎সংপ্তিভাবে প্রথমে উল্লেখ করছি। ‎
মক্কার কাফেরদের সঙ্গে পরামর্শ করে ওমর রাসূল (স.) কে হত্যার ‎উদ্দেশ্যে খোলা তরবারী নিয়ে বের হয়ে পড়লেন। পথে তিনি জানতে ‎পারলেন, তাঁর বোন ও ভগ্নিপতি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তাই প্রথমে ‎‎বোন-ভগ্নিপতিকে হত্যা করার জন্যে ওমর তাদের বাড়ির দিকে রওয়ানা ‎দিলেন। হযরত খাব্বাব (রা.) তখন ওমরের ভগ্নি ফাতেমা (রা.) ও তাঁর ‎‎স্বামীকে সূরা ত্বহার অংশবিশেষ পড়ে পড়ে কুরআন শিা দিচ্ছিলেন। ‎
ওমরের আগমন টের পেয়ে খাব্বাব (রা.) অন্য একটা কে লুকান ‎এবং ফাতেমা (রা.) কুরআনের আয়াত লেখা জিনিসটি লুকিয়ে ফেলেন। ‎ওমর গৃহে প্রবেশের সময় শুনেছিলেন, খাব্বাব (রা.) কুরআন পড়ে ‎তাদের দু’জনকে শুনাচ্ছেন। তিনি ঘরে প্রবেশ করেই বললেন, ‘তোমরা ‎কী যেন পড়ছিলে শুনলাম’। সাইদ (রা.) (ভগ্নিপতি) ও ফাতেমা (রা.) ‎উভয়েই বললেন, ‘তুমি কিছুই শোননি’। ওমর বললেন, আল্লাহর শপথ, ‎আমি শুনেছি তোমরা মুহাম্মাদের ধর্ম গ্রহণ করেছ এবং তা অনুসরণ করে ‎চলেছ’। এ কথা বলেই ওমর ভগ্নিপতি সাইদকে (রা.) একটা চড় বসিয়ে ‎দিলেন। ফাতিমা (রা.) তাঁর স্বামীকে রা করার চেষ্টা করতে গেলে, ‎ওমর ফাতেমা (রা.) কে এমন জোরে আঘাত করলেন যে, তিনি আহত ‎হলেন। ওমরের এই বেপরোয়া আচরণ দেখে তারা উভয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ, ‎আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান ‎এনেছি। এখন আপনি যা খুশি করতে পারেন’। ওমর (রা.) নিজের ‎‎বোনের গায়ে রক্ত দেখে অনুতপ্ত হলেন। অতঃপর অনুশোচনার সুরে ‎‎বোনকে বললেন, ‘আচ্ছা, তোমরা যে বইটা পড়ছিলে, সেটা আমাকে ‎‎দাওতো। আমি একটু পড়ে দেখি, মুহাম্মাদ কী বাণী প্রচার করে?’ ‎ফাতেমা (রা.) তখন বললেন, ‘আমার আশঙ্কা হয় বইটা দিলে আপনি তা ‎নষ্ট করে ফেলবেন।’ উত্তরে ওমর দেবদেবীর শপথ করে বললেন, ‘তুমি ‎ভয় পেয়ো না, আমি পড়ে অবশ্যই তা ফিরিয়ে দেব।’ এ কথা শুনে ‎‎বোনের মনে আশার সঞ্চার হলো যে, তিনি হয়তো ইসলাম গ্রহণ ‎করবেন। তাই তিনি বললেন, ‘ভাইজান আপনি মুশরেক হওয়ার কারণে ‎অপবিত্র। অথচ এই বই স্পর্শ করতে হলে পবিত্রতা অর্জন করা ‎প্রয়োজন।’ ‎
ওমর তৎণাৎ গোসল করে পবিত্র হয়ে আসলেন। ফাতেমা (রা.) ‎তখন কুরআনের আয়াত জিনিসটি তাঁর হাতে দিলেন। খুলেই যে অংশটি ‎‎পেলেন তা হচ্ছে সূরা ‘ত্বহা’। প্রথম থেকে কিছুটা পড়েই বললেন, ‘কী ‎সুন্দর কথা! কী মহান বাণী!’ আড়াল থেকে এ কথা শুনে খাব্বাব (রা.) ‎‎বের হয়ে এসে বললেন, ওমর ,আমার মনে হয় আল্লাহ তাঁর নবীর দোয়া ‎কবুল করে তোমাকে ইসলামের জন্যে মনোনীত করেছেন। গতকাল তিনি ‎‎দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আবুল হাকাম ইবনে হিশাম অথবা ওমর ‎ইবনুল খাত্তাবের দ্বারা ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি কর। হে ওমর, তুমি আল্লাহর ‎ডাকে সাড়া দাও, তুমি আল্লাহর ডাকে সাড়া দাও!’ ‎
ওমর তখন বললেন, ‘হে খাব্বাব, আমাকে মুহাম্মাদের সন্ধান দাও। ‎আমি তাঁর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করি।’ এর পর ওমর (রা.) রাসূল ‎‎(সা.) এর অবস্থান জেনে নিয়ে সেখানে গিয়ে কালেমা তাইয়্যেবা মুখে ‎পড়ে অর্থাৎ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলেন। রাসূল (সা.) ‎কালেমা তাইয়্যেবা পড়ানোর আগে তাঁকে আর গোসল বা অজু কোনটাই ‎করাননি।‎
ঘটনাটির ব্যাখ্যা ‎
ঘটনাটি একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লে যে বিষয়গুলো সহজে বুঝা যায় তা ‎হচ্ছে- রাগান্বিত ওমর কুরআনের আয়াত লেখা কাগজটি পড়তে চাইলে ‎তাঁর বোন ফাতেমা (রা.) তা দিতে অস্বীকার না করে বললেন, ‘আমার ‎ভয় হয়, লেখাটি দিলে আপনি তা নষ্ট করে ফেলবেন অর্থাৎ কুরআনের ‎আয়াতকে অপমান করবেন।’ ফাতেমা (রা.) এর, কাফের ওমরকে ‎কুরআন দিতে অস্বীকার না করে এরকম বলার কারণ হচ্ছে, তাঁর জানা ‎ছিল যে-‎
‎ রাসূলের সুন্নাহ অনুযায়ী অমুসলিমরা আগ্রহসহকারে পড়তে ‎চাইলে কুরআন তাদের হাতে উঠিয়ে দেয়া নিষেধ নয়। বরং এ ‎কাজে তাদের উদ্বুদ্ধ করা উচিত,‎
‎ যদি বুঝা যায় কোন অমুসলিম কুরআনকে অপমান করতে পারে, ‎তবে তাকে কুরআন স্পর্শ করতে না দেয়া বা সে যাতে কুরআন ‎‎স্পর্শ করতে না পারে, তার ব্যবস্থা নেয়া সকল মুসলিমের ‎ঈমানী দায়িত্ব,‎
‎ সুন্নাহ অনুযায়ী (৫ নং তথ্যের হাদীসটি) অজু-গোসল করলেও ‎কাফের-মুশরেকদের শরীর পবিত্র হয় না এবং
‎ অবস্থার পরিপ্রেেিত ফাতেমা (রা.) এর সন্দেহ হচ্ছিল, তাঁর ‎রাগান্বিত ভাই হাতে পেলে কুরআনকে অপমান করতে পারে। ‎
এ ঘটনায় বর্ণিত ফাতেমা (রা.) এর পরবর্তী সকল বক্তব্য বিশ্লেষণ ‎করার সময় উপরে বর্ণিত বিষয়গুলোকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। ‎চলুন, এখন ঘটনার পরবর্তী অংশটুকু বিশ্লেষণ করা যাক- ‎
ফাতেমা (রা.) এর আশঙ্কা নিরসনের জন্যে ওমর যখন দেব-দেবীর ‎‎দোহাই দিয়ে বললো, পড়ার পর সে কুরআনের আয়াত লেখা কাগজটি ‎‎ফেরত দিবে, তখন ফাতেমা (রা.) কিছুটা আশ্বস্ত হলেও পুরোপুরি ‎শংকামুক্ত হতে পারেননি। তাই পরবর্তীতে তিনি এমন কিছু কথা ‎বলেছেন, যার মাধ্যমে ওমরের রাগ কমানো যায় বা বুঝা যায় তাঁর রাগ ‎কমেছে। ‎
এটা সবার জানা, রাগ কমানোর সব চেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে ‎সময়পেণ। আর রাগ কমেছে কিনা তা বুঝার একটা উপায় হচ্ছে এটা ‎‎দেখা যে, নির্দেশ বিনা বাক্যব্যয়ে সন্তুষ্ট চিত্তে পালন করা হচ্ছে কিনা। ‎আবার গোসল করলেও রাগ কমে। এ কারণেই ফাতেমা (রা.) তাঁর ‎ভাইকে বলেছিলেন, ‘আপনি মুশরেক হওয়ার জন্যে অপবিত্র, তাই ‎কুরআন স্পর্শ করে পড়তে হলে আপনাকে গোসল করে আসতে হবে’। ‎‎গোসল করা সময়ের ব্যাপার এবং তখন আরব দেশে গোসল করার জন্যে ‎প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি পাওয়া কঠিন ছিলো। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওমর ‎‎বোনের কথা মাথা পেতে নিয়ে গোসল করে আসলেন। তারপর ফাতেমা ‎‎(রা.) তাঁর হাতে কুরআনের আয়াত লেখ

২| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ২:৫০

তাহান বলেছেন:
কিন্তু তা সত্ত্বেও ওমর ‎‎বোনের কথা মাথা পেতে নিয়ে গোসল করে আসলেন। তারপর ফাতেমা ‎‎(রা.) তাঁর হাতে কুরআনের আয়াত লেখা জিনিসটি ধরে পড়ার জন্যে ‎তুলে দিলেন। উল্লেখ্য, ওমর তখনো কাফেরই ছিলেন। ‎
ঘটনাটির শেষের দিকে কাফের ভাইকে বলা ফাতেমা (রা.) এর ‎কথাগুলোর অর্থ যদি এটা ধরা হয় যে, ভাইকে গোসল করে আসতে বলার ‎পিছনে কারণ ছিলো, রাগ কমানো নয় বা রাগ কমেছে কিনা তা যাচাই করা ‎নয় বরং পবিত্রতা অর্জন করানো, তবে অবশ্যই বলতে হবে যে-‎
‎১. ফাতেমা (রা.) এর জানা ছিল না-‎
‎ সুন্নাহ অনুযায়ী কাফের-মুশরেকরা অজু-গোসল করলেও ‎শারীরিক পবিত্র হয় না। ‎
‎ কাফের-মুশরেকরা যদি আগ্রহসহকারে কুরআন ধরে পড়তে ‎চায়, তবে সে পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার পরিবর্তে ‎উৎসাহ প্রদান করতেই বলেছে কুরআন ও সুন্নাহ। ‎
‎২. ফাতেমা (রা.) জেনে-শুনে রাসূল (স.) এর উপরোক্ত সুন্নাহকে ‎অমান্য করেছে।‎
সুধী পাঠক, ফাতেমা (রা.) এর শেষের দিকের কথাগুলোর কারণ হিসেবে ‎‎কোন বিষয়টি (রাগ কমানো, না পবিত্রতা অর্জন) বেশি যুক্তিসঙ্গত বা ‎সুন্নাহের অনুসরণ হবে, আপনিই বলুন! ‎
এরপরও যদি ধরা হয়, ফাতেমা (রা.) পবিত্রতা অর্জনের জন্যে ‎ভাইকে গোসল করে আসতে বলেছিলেন, তবু এর মাধ্যমে এ কথা তো ‎বলা যাবে না যে, কুরআন ধরতে অজু করা লাগবে। কারণ ফাতেমা ‎‎(রা.) তাঁর ভাইকে অজু করে আসতে বলেননি, গোসল করে আসতে ‎বলেছিলেন। ‎
তাই অপবিত্র অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা না করা সম্বন্ধীয় ‎পূর্বোল্লেখিত হাদীসগুলোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এ ঘটনার ব্যাখ্যা থেকে যে ‎তথ্যগুলো গ্রহণযোগ্য হতে পারে তা হচ্ছে-‎
‎ কাফের-মুশরেকদের হাতে জ্ঞান অর্জনের জন্যে কুরআন তুলে ‎দিতে নিষেধ নেই,‎
‎ যদি ভয় থাকে কোন কাফের বা মুশরেক কুরআনকে অপমান করতে ‎পারে, তবে সে কুরআনকে অপমান করবে না-এ ব্যাপারে নিশ্চিত ‎হওয়ার আগ পর্যন্ত, তার হাতে কুরআন তুলে দেয়া যাবে না। ‎
আলোচ্য বিষয়ে কুরআন, হাদীস, বিবেক-বুদ্ধি ও ওমর (রা.) ‎এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা থেকে বের হয়ে আসা চূড়ান্ত রায়‎
‎১. মুসলিমের জন্যে অজু ছাড়া কুরআন পড়া, পড়ানো, স্পর্শ করা ও ‎‎শোনা কোনটিই নিষেধ বা গুনাহ নয়,‎
‎২. গোসল ফরজ অবস্থায় মুসলিমের জন্যে কুরআন পড়া, পড়ানো ও ‎‎স্পর্শ করা নিষেধ কিন্তু শোনা নিষেধ নয়, ‎
‎৩. সকল সময় অজু অবস্থায় থাকা একটি মুস্তাহাব কাজ। তাই ‎অজুসহ কুরআন পড়লে, পড়ালে বা স্পর্শ করলে, অজুর সওয়াব ‎‎যোগ হওয়ার জন্যে সওয়াব বেশি হবে,‎
‎৪. ইচ্ছা করছে সময়ও আছে কিন্তু অজু না থাকার জন্যে কুরআন ‎ধরে না পড়লে, টুপি না থাকার জন্যে নামাজ না পড়লে যেমন ‎‎গুনাহ হয় তেমন গুনাহ হবে,‎
‎৫. কাফের-মুশরেকদের ব্যাপারে জানার জন্যে কুরআন ধরে পড়ার ‎বিষয়ে অজু বা গোসলের শর্ত নাই,‎
‎৬. কোন কাফের ভক্তিসহকারে কুরআন পড়তে চাইলে সকল ‎মুসলিমের আগ্রহসহকারে কুরআন তার হাতে তুলে দিতে হবে। ‎কিন্তু যদি বুঝা যায়, কোন অমুসলিম কুরআনকে অপমান করতে ‎পারে তবে সে যাতে কুরআন ধরতে না পারে সে ব্যাপারে সব ‎ধরনের ব্যবস্থা নেয়া সকল মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব। ‎

ফরজ গোসল অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা বা পড়া‎
কত বড় গুনাহ
‘ফরজ গোসল অবস্থায় কুরআন পড়া বা স্পর্শ করা নিষেধ’ এ কথাটা ‎কুরআনে প্রত্য, পরো কোনভাবেই বলা হয় নাই। কিন্তু কথাটা ‎‎যেহেতু হাদীসে আছে, তাই এটা অবশ্যই ইসলামের বিষয়। তবে তা ‎একটা অমৌলিক বিষয়। ‎
‎কোন নিষিদ্ধ কাজ করলে বা করতে বাধ্য হলে গুনাহ হওয়া বা না ‎হওয়ার ব্যাপারে ইসলামের বিধান হচ্ছে-‎
‎ সমান গুরুত্ব ও পরিমাণের ওজর অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার ‎‎চেষ্টা থাকলে কোন গুনাহ হয় না। অর্থাৎ মৌলিক নিষিদ্ধ কাজ ‎করার সময় প্রচণ্ড এবং অমৌলিক নিষিদ্ধ কাজ করার সময় অল্প ‎‎গুরুত্ব ও পরিমানের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা ‎‎থাকলে গুনাহ হয় না। ‎
‎ কোন রকম গুরুত্ব বা পরিমাণের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার ‎পাওয়ার চেষ্টা ছাড়া অর্থাৎ খুশি মনে বা ঘৃণাসহকারে একটি ‎অমৌলিক আমলও কেউ না করলে কুফরীর গুনাহ হবে। ‎
সুতরাং গোসল ফরজ অবস্থায় কুরআন পড়লে বা স্পর্শ করলে-‎
‎ গুনাহ হবে না যদি ছোট-খাট গুরুত্বের ওজর, এবং অল্প ‎পরিমাণের অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা থাকে। ‎
‎ কোন রকম ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা ছাড়া ‎অর্থাৎ খুশি মনে বা ঘৃণাসহকারে তা করলে কুফরীর গুনাহ হবে। ‎‎যেমন ধরুন একজন ছাত্রীর কুরআনের পরীার আগে মাসিক ‎ঋতুস্রাব শুরু হলো। তার ঋতুস্রাব যদি ৫ দিন চলে আর ঐ ৫ ‎দিন যদি সে কুরআন ধরে পড়তে না পারে, তবে তার ভীষণ ‎‎তি হয়ে যাবে। এ জন্যে মাসিক চলা অবস্থায় তার কুরআন ‎‎স্পর্শ করে পড়লে গুনাহ হবে না। ‎
‎শেষ কথা‎
সুধী পাঠক, আলোচ্য বিষয়টির ব্যাপারে ব্যক্তিগত কোন মতামত ‎আপনাদের উপর চাপিয়ে দেয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই। আর ‎সিদ্ধান্ত দেয়ার কোন অবস্থানেও আমি নই। বিষয়টির ব্যাপারে কুরআন, ‎হাদীস ও বিবেকের যে তথ্যগুলো আমি পেয়েছি, জাতির অপরিসীম ‎কল্যাণ হবে ভেবেই তা ব্যাখ্যাসহকারে উপস্থাপন করেছি। আর এ কাজ ‎করার জন্যে কুরআন ও সুন্নাহ প্রতিটি মুসলিমকে নির্দেশ দিয়েছে। আশা ‎করি তথ্যগুলো জানার পর বিবেকবান এবং বাস্তবতাকে অস্বীকার করেন ‎না এমন যে কোন ব্যক্তির পে আলোচ্য বিষয়টির ব্যাপারে সিদ্ধান্তে ‎‎পৌঁছা মোটেই কঠিন হবে না। আর যারা সিদ্ধান্ত দেয়ার অবস্থানে আছেন ‎তাদের নিকট আমার আকুল আবেদন, উপস্থাপিত তথ্য ও ব্যাখ্যাগুলো ‎সামনে রেখে বিষয়টি নিয়ে আপনারা আবার একটু ভাবুন এবং এই ‎‎দুর্ভাগা জাতিকে দিক-নির্দেশনা দিন। ‎
ইবলিস শয়তান তার এক নাম্বার কাজে (কুরআনের জ্ঞান থেকে দূরে ‎রাখা) সফল হওয়ার জন্যে সর্বতভাবে চেষ্টা করবে সেটা তো স্বাভাবিক। ‎কিন্তু মুসলিম জাতি যদি ইসলাম বিরুদ্ধ কথাকে ধরে ফেলার জন্যে ‎তাদের সবার মধ্যে মহান আল্লাহ বিবেক নামের যে শক্তিটি দিয়েছেন ‎‎সেটাকে যথাস্থানে রাখে, তবে ইবলিসের পে ইসলাম বিরুদ্ধ কথা ‎মুসলিম সমাজে ঢুকানো অসম্ভব হয়ে যাবে। ‎
আসুন কায়মনোবাক্যে রাব্বুল আলামিনের নিকট দোয়া করি, তিনি ‎‎যেন আমাদের সবাইকে মতা এবং সুযোগ দেন, কুরআনের জ্ঞান ‎অর্জনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী যে সকল কুরআন-সুন্নাহ বিরুদ্ধ ‎কথা মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে চালু আছে, সেগুলো শনাক্ত করতে ‎এবং তার প্রতিকারের জন্যে কার্যকরভাবে এগিয়ে আসতে। আমিন! ছুম্মা ‎আমিন!‎
পরিশেষে সবার নিকট আবেদন, পুস্তিকায় কোনো ভুল-ত্র“টি ধরা ‎পড়লে আমাকে দয়া করে জানাবেন। সঠিক হলে পরবর্তী সংস্করণে তা ‎ছাপানো হবে ইনশাআল্লাহ। আপনাদের দোয়া চেয়ে শেষ করছি। ‎

সমাপ্ত

৩| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ২:৫০

তাহান বলেছেন:
কিন্তু তা সত্ত্বেও ওমর ‎‎বোনের কথা মাথা পেতে নিয়ে গোসল করে আসলেন। তারপর ফাতেমা ‎‎(রা.) তাঁর হাতে কুরআনের আয়াত লেখা জিনিসটি ধরে পড়ার জন্যে ‎তুলে দিলেন। উল্লেখ্য, ওমর তখনো কাফেরই ছিলেন। ‎
ঘটনাটির শেষের দিকে কাফের ভাইকে বলা ফাতেমা (রা.) এর ‎কথাগুলোর অর্থ যদি এটা ধরা হয় যে, ভাইকে গোসল করে আসতে বলার ‎পিছনে কারণ ছিলো, রাগ কমানো নয় বা রাগ কমেছে কিনা তা যাচাই করা ‎নয় বরং পবিত্রতা অর্জন করানো, তবে অবশ্যই বলতে হবে যে-‎
‎১. ফাতেমা (রা.) এর জানা ছিল না-‎
‎ সুন্নাহ অনুযায়ী কাফের-মুশরেকরা অজু-গোসল করলেও ‎শারীরিক পবিত্র হয় না। ‎
‎ কাফের-মুশরেকরা যদি আগ্রহসহকারে কুরআন ধরে পড়তে ‎চায়, তবে সে পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার পরিবর্তে ‎উৎসাহ প্রদান করতেই বলেছে কুরআন ও সুন্নাহ। ‎
‎২. ফাতেমা (রা.) জেনে-শুনে রাসূল (স.) এর উপরোক্ত সুন্নাহকে ‎অমান্য করেছে।‎
সুধী পাঠক, ফাতেমা (রা.) এর শেষের দিকের কথাগুলোর কারণ হিসেবে ‎‎কোন বিষয়টি (রাগ কমানো, না পবিত্রতা অর্জন) বেশি যুক্তিসঙ্গত বা ‎সুন্নাহের অনুসরণ হবে, আপনিই বলুন! ‎
এরপরও যদি ধরা হয়, ফাতেমা (রা.) পবিত্রতা অর্জনের জন্যে ‎ভাইকে গোসল করে আসতে বলেছিলেন, তবু এর মাধ্যমে এ কথা তো ‎বলা যাবে না যে, কুরআন ধরতে অজু করা লাগবে। কারণ ফাতেমা ‎‎(রা.) তাঁর ভাইকে অজু করে আসতে বলেননি, গোসল করে আসতে ‎বলেছিলেন। ‎
তাই অপবিত্র অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা না করা সম্বন্ধীয় ‎পূর্বোল্লেখিত হাদীসগুলোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এ ঘটনার ব্যাখ্যা থেকে যে ‎তথ্যগুলো গ্রহণযোগ্য হতে পারে তা হচ্ছে-‎
‎ কাফের-মুশরেকদের হাতে জ্ঞান অর্জনের জন্যে কুরআন তুলে ‎দিতে নিষেধ নেই,‎
‎ যদি ভয় থাকে কোন কাফের বা মুশরেক কুরআনকে অপমান করতে ‎পারে, তবে সে কুরআনকে অপমান করবে না-এ ব্যাপারে নিশ্চিত ‎হওয়ার আগ পর্যন্ত, তার হাতে কুরআন তুলে দেয়া যাবে না। ‎
আলোচ্য বিষয়ে কুরআন, হাদীস, বিবেক-বুদ্ধি ও ওমর (রা.) ‎এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা থেকে বের হয়ে আসা চূড়ান্ত রায়‎
‎১. মুসলিমের জন্যে অজু ছাড়া কুরআন পড়া, পড়ানো, স্পর্শ করা ও ‎‎শোনা কোনটিই নিষেধ বা গুনাহ নয়,‎
‎২. গোসল ফরজ অবস্থায় মুসলিমের জন্যে কুরআন পড়া, পড়ানো ও ‎‎স্পর্শ করা নিষেধ কিন্তু শোনা নিষেধ নয়, ‎
‎৩. সকল সময় অজু অবস্থায় থাকা একটি মুস্তাহাব কাজ। তাই ‎অজুসহ কুরআন পড়লে, পড়ালে বা স্পর্শ করলে, অজুর সওয়াব ‎‎যোগ হওয়ার জন্যে সওয়াব বেশি হবে,‎
‎৪. ইচ্ছা করছে সময়ও আছে কিন্তু অজু না থাকার জন্যে কুরআন ‎ধরে না পড়লে, টুপি না থাকার জন্যে নামাজ না পড়লে যেমন ‎‎গুনাহ হয় তেমন গুনাহ হবে,‎
‎৫. কাফের-মুশরেকদের ব্যাপারে জানার জন্যে কুরআন ধরে পড়ার ‎বিষয়ে অজু বা গোসলের শর্ত নাই,‎
‎৬. কোন কাফের ভক্তিসহকারে কুরআন পড়তে চাইলে সকল ‎মুসলিমের আগ্রহসহকারে কুরআন তার হাতে তুলে দিতে হবে। ‎কিন্তু যদি বুঝা যায়, কোন অমুসলিম কুরআনকে অপমান করতে ‎পারে তবে সে যাতে কুরআন ধরতে না পারে সে ব্যাপারে সব ‎ধরনের ব্যবস্থা নেয়া সকল মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব। ‎

ফরজ গোসল অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা বা পড়া‎
কত বড় গুনাহ
‘ফরজ গোসল অবস্থায় কুরআন পড়া বা স্পর্শ করা নিষেধ’ এ কথাটা ‎কুরআনে প্রত্য, পরো কোনভাবেই বলা হয় নাই। কিন্তু কথাটা ‎‎যেহেতু হাদীসে আছে, তাই এটা অবশ্যই ইসলামের বিষয়। তবে তা ‎একটা অমৌলিক বিষয়। ‎
‎কোন নিষিদ্ধ কাজ করলে বা করতে বাধ্য হলে গুনাহ হওয়া বা না ‎হওয়ার ব্যাপারে ইসলামের বিধান হচ্ছে-‎
‎ সমান গুরুত্ব ও পরিমাণের ওজর অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার ‎‎চেষ্টা থাকলে কোন গুনাহ হয় না। অর্থাৎ মৌলিক নিষিদ্ধ কাজ ‎করার সময় প্রচণ্ড এবং অমৌলিক নিষিদ্ধ কাজ করার সময় অল্প ‎‎গুরুত্ব ও পরিমানের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা ‎‎থাকলে গুনাহ হয় না। ‎
‎ কোন রকম গুরুত্ব বা পরিমাণের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার ‎পাওয়ার চেষ্টা ছাড়া অর্থাৎ খুশি মনে বা ঘৃণাসহকারে একটি ‎অমৌলিক আমলও কেউ না করলে কুফরীর গুনাহ হবে। ‎
সুতরাং গোসল ফরজ অবস্থায় কুরআন পড়লে বা স্পর্শ করলে-‎
‎ গুনাহ হবে না যদি ছোট-খাট গুরুত্বের ওজর, এবং অল্প ‎পরিমাণের অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা থাকে। ‎
‎ কোন রকম ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা ছাড়া ‎অর্থাৎ খুশি মনে বা ঘৃণাসহকারে তা করলে কুফরীর গুনাহ হবে। ‎‎যেমন ধরুন একজন ছাত্রীর কুরআনের পরীার আগে মাসিক ‎ঋতুস্রাব শুরু হলো। তার ঋতুস্রাব যদি ৫ দিন চলে আর ঐ ৫ ‎দিন যদি সে কুরআন ধরে পড়তে না পারে, তবে তার ভীষণ ‎‎তি হয়ে যাবে। এ জন্যে মাসিক চলা অবস্থায় তার কুরআন ‎‎স্পর্শ করে পড়লে গুনাহ হবে না। ‎
‎শেষ কথা‎
সুধী পাঠক, আলোচ্য বিষয়টির ব্যাপারে ব্যক্তিগত কোন মতামত ‎আপনাদের উপর চাপিয়ে দেয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই। আর ‎সিদ্ধান্ত দেয়ার কোন অবস্থানেও আমি নই। বিষয়টির ব্যাপারে কুরআন, ‎হাদীস ও বিবেকের যে তথ্যগুলো আমি পেয়েছি, জাতির অপরিসীম ‎কল্যাণ হবে ভেবেই তা ব্যাখ্যাসহকারে উপস্থাপন করেছি। আর এ কাজ ‎করার জন্যে কুরআন ও সুন্নাহ প্রতিটি মুসলিমকে নির্দেশ দিয়েছে। আশা ‎করি তথ্যগুলো জানার পর বিবেকবান এবং বাস্তবতাকে অস্বীকার করেন ‎না এমন যে কোন ব্যক্তির পে আলোচ্য বিষয়টির ব্যাপারে সিদ্ধান্তে ‎‎পৌঁছা মোটেই কঠিন হবে না। আর যারা সিদ্ধান্ত দেয়ার অবস্থানে আছেন ‎তাদের নিকট আমার আকুল আবেদন, উপস্থাপিত তথ্য ও ব্যাখ্যাগুলো ‎সামনে রেখে বিষয়টি নিয়ে আপনারা আবার একটু ভাবুন এবং এই ‎‎দুর্ভাগা জাতিকে দিক-নির্দেশনা দিন। ‎
ইবলিস শয়তান তার এক নাম্বার কাজে (কুরআনের জ্ঞান থেকে দূরে ‎রাখা) সফল হওয়ার জন্যে সর্বতভাবে চেষ্টা করবে সেটা তো স্বাভাবিক। ‎কিন্তু মুসলিম জাতি যদি ইসলাম বিরুদ্ধ কথাকে ধরে ফেলার জন্যে ‎তাদের সবার মধ্যে মহান আল্লাহ বিবেক নামের যে শক্তিটি দিয়েছেন ‎‎সেটাকে যথাস্থানে রাখে, তবে ইবলিসের পে ইসলাম বিরুদ্ধ কথা ‎মুসলিম সমাজে ঢুকানো অসম্ভব হয়ে যাবে। ‎
আসুন কায়মনোবাক্যে রাব্বুল আলামিনের নিকট দোয়া করি, তিনি ‎‎যেন আমাদের সবাইকে মতা এবং সুযোগ দেন, কুরআনের জ্ঞান ‎অর্জনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী যে সকল কুরআন-সুন্নাহ বিরুদ্ধ ‎কথা মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে চালু আছে, সেগুলো শনাক্ত করতে ‎এবং তার প্রতিকারের জন্যে কার্যকরভাবে এগিয়ে আসতে। আমিন! ছুম্মা ‎আমিন!‎
পরিশেষে সবার নিকট আবেদন, পুস্তিকায় কোনো ভুল-ত্র“টি ধরা ‎পড়লে আমাকে দয়া করে জানাবেন। সঠিক হলে পরবর্তী সংস্করণে তা ‎ছাপানো হবে ইনশাআল্লাহ। আপনাদের দোয়া চেয়ে শেষ করছি। ‎

সমাপ্ত

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.