নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অামি অামাকে চিনি... অামি অামাকে খুজি...

তাহিন

তাহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুহিলপুরে গ্রামের মানুষের আকবর পাগলা

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪২

আকবর আলী ভাই আমার সাথে আপনার পরিচয় নেই, দেখাও হয়নি। তবে গত কয়েকদিনে আপনি আমার অনেক পরিচিত। আপনি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী। আর ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার সুহিলপুরে গ্রামের মানুষের আকবর পাগলা। মুক্তিযুদ্ধ করে ক্ষান্ত হননি, ৪২ বছর ধরে রাস্তা পাহারা দিয়েছেন কোন কিছু ছাড়াই। আপনার মতো এই ত্যাগী মানুষদের আমরা পাগল বলেই ঢাকি। ভাই অনেক প্রশ্ন জানার ছিল, কেন এত কষ্ট করছেন? কত দিন না খেয়ে থেকেছেন ? কত দিন এখানে ওখানে খেয়েছেন? কিন্তু দায়িত্ব ছাড়েনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত....



এত ত্যাগের পরও আপনি চিকিৎসার খরচের অভাবে পড়ে ছিলেন ব্রাক্ষণবাড়ীয়া হাসপাতালে। এই খবর শোনার পর কয়েকজন তরুণ আপনাকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসে উন্নত চিকিৎসার জন্য। শুরু হয় তাদের যুদ্ধ একজন মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচানোর জন্য। কত মায়া আর মমতার সাথে আপনাকে সুস্থ্য করতে ঔষধ, চিকিৎসা, আইসিইউ কত কিছুর জন্য তারা দৌড়েছে। আকবার ভাই যারা ছুটছেন তাদের সামর্থ্যও বেশি না, তবে মনটা অনেক বড়।



আকবর আলী ভাই, আপনার ভাল চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়ে কাল রাতে মেইল পাঠানো হলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। বড় প্রয়োজন ছিল আইসিইউ-র, জরুরি সহযোগিতা চেয়ে পাঠানো হলো ফ্যাক্স। কতবার ফোন দেয়া হলো, কিন্তু মন্ত্রণালয় হতে কেন উত্তর পাওয়া যায়নি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মেইল আর ফ্যাক্স কেউ দেখে কিনা জানিনা! একবার হয়তো জানাতে পারতেন তাদের কিছু করার নেই। এ বড় মন্ত্রণালয়, এত বড় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কেন উত্তর পাওয়া যায়নি, তা জানিনা। আপনাদের জন্য এ মন্ত্রণালয়, আপনার সমস্যা জানার বিশেষ ব্যবস্থা থাকা দরকার। বড় বড় প্রতিষ্ঠান হলেই সেবা দিবে, তা ঠিক না। মনটাকে বড় করতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে। প্রতিষ্ঠান আছে হয়তো মনটা নেই। হয়তে তাদের অভাব আপনার থেকে হয়তো অনেক বেশী।



আকবর আলী ভাই একবার চোখ খুলে যদি দেখতেন, দেশের প্রতি আপনার ভালবাসার জন্য, কত তরুণ তাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। এত তরুণ এসেছে আপনার জন্য। তাদের রক্তের কোন সম্পর্কে নেই, নেই পরিচিতির। তারা ছুটেছে একজন দেশপ্রেমিকে শ্রদ্ধা জানাতে, বাঁচাতে।আকবর আলী ভাই এ শ্রদ্ধা আপনার প্রাপ। নিখাদ শ্রদ্ধা। কোন মনোনয়ন, পোষ্ট বা সুবিধা পাওয়ার জন্য এই শ্রদ্ধা নয়। এই শ্রদ্ধা ও ভালবাসা বিনয়ের, কৃতজ্ঞতার।



আকবর আলী ভাই নিশ্চয়ই আপনি শুনতে পাচ্ছেন, হাত জোরে ক্ষমা চাই। দেশের জন্য যে স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ করেছেন, তা এখনোর অর্জিত হয়নি। সুবিধাভোগীদের দৌড়ে আপনি বড় অযোগ্য ছিলেন। প্লট, চাকরি, ভাতা, ফ্লাট, গাড়ী, পদবী তো আপনার ভাগ্য জোটেনি। জোটেনি প্রথম পর্যায়ের চিকিৎসাও। আপনার মতো লোকদের জন্য কিছু হবে কিনা জানি না। তবে জনগনের অর্থ খরচের জন্য নানা কাজ হবে। কত কত মানুষের বক্তৃতা শুনতে হবে, দেখতে হবে। আপনাদের ত্যাগেই তো সুবিধাবাদীদের ভোগ....



গত ৪২ বছর আপনি রাত জেগে সুহিলপুরের রাস্তায় পাহারা দিয়েছেন। নির্জন রাতে মানুষকে সাহস দিয়েছেন। আজ আপনি শান্তিতে ঘুমান আকবর আলী ভাই। আপনার নিজের ঘরে আপন ঠিকানায়। কোন চিন্তা কইরে না, আপনার দেশ আর রাস্তায় থাকবে আপনার মতোই কেউ দেবে। দেখেন কত তরুণ আপনার জন্য এগিয়ে এসেছে। তারা স্বপ্নের কারিগরি। আপনাদের স্বপ্নের দেশ তারা গড়বে। এ তরুণরা এ দেশকে একদিন এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ দেশ আপনার স্বপ্নের দেশ হবেই...



আকবর আলী ভাই কথা দিলাম, আপনাকে দেখতে আসব। আপনার পাশে বসব। আপনার রাস্তা একটু পাহারা দেবো। আপনার কথা শুনার বড় ইচ্ছে, আপনার স্বপ্নগুলো, কষ্টগুলো জানতে বড় ইচ্ছে হয়। আপনার আজবীনের ত্যাগের কথা বলব, আমার সন্তানকে। আপনি শান্তিতে থাকুন।

----

জনাব আকবর আলী ১৪ নভেম্বর ২০১৩ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। তাদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে বিদ্রোহী কবির মাজারের পাশের মসজিদের জানাজার পর পাঠিয়ে দেয়া হয় ব্রাক্ষণবাড়ীয়ায়। সেখানে আজ রাতে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে তাকে দাফন করা হয়। যারা আকবর আলী ভাইকে বাচাতে আপ্রাণ কাজ করেছে, তাদের প্রতি অবনতভাবে শ্রদ্ধা জানাই। রুবায়েত, শোভন, ইবনুল ভাই, জাবেদ ভাই, সৈকত, শাওন, শাকিল, বাবু, সোহেল, অঞ্জন দা... আরো অনেক অনেকজন —

আরো তথ্য Click This Link

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০০

অনেকের মধ্যে একজন বলেছেন: আমরা বাংলাদেশিরা উপকারের প্রতিদান এভাবেই দিয়ে থাকি।

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:১০

ল্যাটিচুড বলেছেন: এদেশে মুক্তি যোদ্ধাদের কোন অভিভাবক নাই - মুক্তিযুদ্ধকে পুজিঁ করে আপনার আমার মত দেশ পাগল ছেলে মেয়েদের ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে এরা শুধু ক্ষমতায় যেতে চায়, ক্ষমতা ভোগ করতে চায় .................. এদের মুখে থুথু ছিটানোর সময় এসেছে

অত্যান্ত দুখের সাথে বলতে চাই - খোদার কসম আকবর আলী ভাই রাজাকার হলে তাকে বিনা চিকিৎসায় এভাবে ধুকে ধুকে মরতে হত না।

অপ্রিয় সত্য হলেও এটাই সত্য যে - মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা না দিয়ে, তাদের অর্থ হরিলুট করছে। অন্যদিকে, রাজাকারদের সেবার জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো - রাজাকাররা সততার সাথে পরিচালনা করে সাধারণ মানুষর মন জয় করে প্রতি বছর দেশে নতুন নতুন হাসপাতাল, চিকিৎসা কেন্দ্র খুলছে আর ভবিষ্যত রাজাকারদের স্বাস্থ সেবা নিশ্চিত করছে।

আকবর আলী ভাই - আমাদের ক্ষমা করুন, আমরা স্বাধীনতার সন্মান রাখতে পারিনি, আজও আমাদের নিরাপক্ষ ভোটে প্রয়োগ অধিকাররের জন্য পরাধীন রাষ্টের মত ভারত আর আমেরিকার দিয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। আপনি না ফেরার দেশে চলে গিয়ে বেচে গেছেন ...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.