![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সব কিছুকে সহজ ভাবে নিতে চেষ্টা করি
অনুবাদ : নাজিব ওয়াদুদ
সম্ভবত নিছক চতুর কৌতুক ছিল ব্যাপারটা, কিন্তু এটা একটা গল্প হয়ে উঠেছে, প্রত্যেকের গল্প। কেন যে রামাল্লায় যাওয়ার জন্য এত পীড়াপীড়ি করছে নিজার তা কেউ জানে না। পরিস্থিতি মোটেও উৎসাহব্যঞ্জক নয়Ñ মিলিটারি চেকপয়েন্ট, হয়রানি-অপমান, পাহাড় এবং মাটির তৈরি বেড়া ও প্রাচীরের মধ্য দিয়ে কষ্টকর হাঁটা। তবুও শ্রমিকের জেদ নিয়ে নিজার বলল : রামাল্লায় একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে, তার সমাধান দরকার। তাকে যেতেই হবে। ‘রাস্তার কষ্ট সইতে হবে... এর সাথে অভ্যস্ত হয়েই বড় হয়েছি আমরা... এসব আমাদের কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ইসরাইলিরা এটা উপলব্ধি করতে পারে না যে, আমাদের জীবনের সব কিছু অস্বাভাবিককে তারা স্বাভাবিক বানিয়ে ফেলেছে... আমরা কী করতে পারি? মৃত্যু না আসা পর্যন্ত বসে থাকা, এই তো? তাহলে অপো কিসের?’
সে গাড়িতে উঠল এবং যাত্রা করল। তাকে রামাল্লায় পৌঁছতেই হবে, এই পথে, বা ওই পথে, যেকোনো উপায়ে।
গাড়িগুলো চলেছে পাহাড়ের মধ্য দিয়ে, এক কিলোমিটার রাস্তা পিচের তৈরি, আরেক কিলোমিটার মাটির। পাহাড়ের দিকে দৃষ্টি ফেরাল নিজার। লোকেরা সব সময় চেকপয়েন্টের আশপাশে পথ খোঁজে; চেকপয়েন্ট আর সেখানকার হুমকি-ধমকি, নিদারুণ শ্রান্তি এবং দুর্দশা এড়াতে পাশের চোরাপথগুলো তাদের অভিজ্ঞ করে তুলেছে। তারা পিঁপড়ার দঙ্গলের মতো, যখন তাদের বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট গুঁড়িয়ে দেয়া হয়, তখন তারা নতুন পথ ও সমাধান সন্ধান করে; নতুন পথ আবিষ্কার, খাপ খাইয়ে নেয়া এবং টিকে থাকার ব্যাপারে তারা যথেষ্ট অভিজ্ঞ। দিনের পর দিন, এই পিঁপড়েরা তাদের মুখ ও ছোট্ট ছোট্ট ডানা দিয়ে গর্ত খোঁড়ে, মাটির গুঁড়া দূরে বয়ে নিয়ে যায়। তারা একটা ছোট্ট সুড়ঙ্গ তৈরি করে, কিন্তু সেটাই যথেষ্ট; তারা সে পথেই চলতে থাকে যেন কিছুই ঘটেনি। হয়তো এক মিনিট পরেই, ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা ভুল করে, তাদের কেউ একজন সুড়ঙ্গটা নষ্ট করে ফেলে। পিঁপড়েরা তখন থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে, উত্তেজিত হয়ে শুঁড় ঘোরায়, দৃশ্যটাকে মনোযোগ দিয়ে পর্যবেণ করে, তার চারপাশে জড়ো হয় এবং চিৎকারে ফেটে পড়ে, তারপর আবার কাজ শুরু করে।
ধুলার রাস্তায় লোকেরা হাজির হয় ছোট ছোট কালো ঢিবির মতো, সারি বেঁধে; মানবাকৃতির এই ঝাঁক খোঁড়ায়, থামে, সামনে এগোয় এবং তারপর পেছনে ফিরে আসে। গন্তব্যে পৌঁছার জন্য তারা যেকোনো কিছুর ওপর চড়বে; তারা হাঁটে যেন দান্তের নরকের ভেতর দিয়ে। সোজা পথে তারা গাদাগাদি করে হাঁটে; মাটির প্রাচীরের ওপর ওঠে, লাফ দিয়ে পার হয় প্রাচীরগুলো। ঘণ্টাখানেক পর বুলডোজার এসে ভেঙে ধ্বংস করে দিতে পারে তাদের রাস্তা, বন্ধ করে দিতে পারে পাথর, মাটি আর সিমেন্ট ব্লক ফেলে। কালো পিণ্ডগুলো থামে, চারদিকে তাকায়, দেখে নিজেদের, তাদের ভোগান্তি, তাদের অশ্র“, তাদের ঘাম, কিন্তু তার পরও তারা আবার নতুন পথ খোঁজে, তৈরি করে, আবিষ্কার করে এবং চলতে থাকে অসীম দৃঢ়তায়।
অন্যদের মতই এগুলো নিজার। রাগে গড়গড় করতে করতে, অভিশাপ দিতে দিতে, পিঁপড়া পথ ধরে উঠতে লাগল। তার পা ব্যথা করতে লাগল, পড়ে গেল, উঠে দাঁড়াল, একজন বৃদ্ধের সাথে হাত ধরাধরি করে পাহাড়ের ওপর উঠতে থাকল। তাকে অবশ্যই রামাল্লায় পৌঁছতে হবে। এই মুহূর্তে সে হয়তো ভুলে গেছে কেন সে রামাল্লায় যেতে চায়। সেটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়। পৌঁছতে পারাটাই তার মূল ল্যÑ অদম্য হতে পারা, নিজেকে জাহির করা, যেন স্রেফ পৌঁছতে পারাই এক ধরনের বিজয় এবং সেটাই যথেষ্ট।
সময় চলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, গরম ও ধুলোময় : বেড়া, বন্দুক, সৈন্য, পরিচয়পত্র পরীা, দীর্ঘ অপো, গালাগাল এবং অপমান-লাঞ্ছনা। সব কিছু মিশে যাচ্ছে সব কিছুর সাথে; এগোও বা পিছাও সমান ভোগান্তি। পেছনে বেড়া ও লাঞ্ছনা; সামনেও তাই। সুতরাং, সামনেই এগোলো সে। পৌঁছানো, ভোগান্তি কাটিয়ে ওঠা, ভেঙে পড়াকে অস্বীকার করা, এ সবই কি সরল, পরিষ্কার সমতার প্রমাণ নয়? একটা গোটা জাতি বিকল্প পথের সন্ধান করছে, যুক্তি ও কার্যকারণের ঊর্ধ্বে উঠে নিজের জন্য একটা যুক্তি তৈরি করছে, সেটা হলোÑ প্রথমে অস্তিত্ব রার জন্য অটল হও, অথবা মৃত্যুকে বরণ করো।
কল্পনামগ্নতার মধ্য দিয়ে নিজার পায়ের কান্তিকর থপথপ শব্দ করতে করতে অনেকখানি এগিয়েছে। প্রত্যেকটা পাহাড় একেকটা বাধা, যা তাকে অবশ্যই অতিক্রম করতে হবে; এটা তার দৃঢ়তা বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রত্যেকটা হাসি প্রতিরোধের একটা উপায়, যেন পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী মানুষ সে। অবশ্য যখন সে প্রকৃতই সুখ অনুভব করবে তখন হাসবে অকৃত্রিম হাসি।
সে এ গাড়ি থেকে সে গাড়ি, এ পাহাড় থেকে সে পাহাড়, এক চেকপয়েন্ট থেকে আরেক চেকপয়েন্টে কৌশলে এগোতে থাকল। সে এগিয়ে চলল, আঁকাবাঁকা, এবড়ো-খেবড়ো রাস্তা; অবশেষে সে নিজেকে আবিষ্কার করল গাড়ির মধ্যে জবুথবু বসে আছে, চারদিকে কী ঘটছে তার প্রতি কোনো খেয়াল নেই তার।
ভোর থেকে ছয় ঘণ্টা খুব একটা দীর্ঘ সময় নয়, সে ভাবল এবং হাসল। কাউকে কাউকে গন্তব্যে পৌঁছতে, কাক্সিত জিনিস অর্জন করতে, দশ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়। কালান্দা রিফিউজি ক্যাম্পের সামনে শেষ চেকপয়েন্টের খুব কাছে গেল সে। যুদ্ধ জয়ের আর মাত্র এক ধাপ বাকি।
পিচঢালা সড়কে অসংখ্য গাড়ির লম্বা লাইন। তার গাড়ির গতি শ্লথ হলো এবং ধীরে ধীরে লাইনের শেষ মাথায় পৌঁছে থামল। দরজা খুলে বাইরে বেরোল সে, চার পাশ পরীা করে দেখল। রাস্তার উভয় পাশেই, গাড়িগুলোর মধ্য দিয়ে, ধুলোর মধ্যে ঘোরাঘুরি করছে পিঁপড়েরা; নারী, শিশু, তরুণ ও বৃদ্ধ, হকার, ছাত্র, গাধা, সবাই চলেছে সামনে অথবা পেছনে; কথা, চেঁচামেচি, ফিসফাস, সওয়াল-জবাবÑ মানুষের হতবিহ্বল করা মিশ্রণ; যন্ত্রণা ও ময়লা, নাছোড়বান্দার কাকুতি-মিনতি ও ধুলা; এবং জীবনের মিশেল।
গাড়ি ছেড়ে সে সামনে এগোলো, যোগ দিল হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে চলা মানুষের দঙ্গলে। একটা পরিষ্কার কালো গাড়ি ধুলোর ঘূর্ণি সৃষ্টি করে চলে গেল, পরিত্যক্ত পথরেখায় রেখে গেল তীব্র কটূক্তি।
সূর্য মানুষের মাথার চাঁদি ঝলসে দিচ্ছে; ঘাড় বেয়ে স্রোত নামছে লবণাক্ত ঘামের, ঝাপসা করে তুলছে তাদের চোখগুলো। কিন্তু, এত সব সত্ত্বেও, এগিয়ে চলার বিকল্প নেই।
স্থিরসঙ্কল্প হয়ে হাঁটছে নিজার, তার কানে ভেসে আসছে কথার টুকরো : ‘সিভিল প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছে যারা তাদের ছাড়া আর কাউকে ওরা যেতে দেবে না।’
‘আমাকে অবশ্যই রামাল্লায় যেতে হবে, অনুমতি দিক না দিক, আমি ফিরছি না।’
সে চেকপয়েন্টের কাছে গেল এবং সিমেন্ট ব্লকের সামনে দাঁড়াল। কয়েকজন সৈন্য ইতস্তত ঘুরছিল; কয়েকজনের বয়স আঠারই পেরোয়নি; এখনো তাদের গোঁফ গজায়নি। তাদের সামনে শত শত নারী-পুরুষ অপেমাণ, তারা সচেষ্ট সৈন্যগুলোর মন গলানোয় এবং আশান্বিত যে, তারা তাদের যেতে দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ মতা প্রয়োগ করবে। কিন্তু সব বৃথা; যুক্তি, কান্না, বয়স, অসুস্থতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া, কোনো কিছুই কাজ দিচ্ছে না... ‘না, কোনোক্রমেই না।’
চাপ ও ভিড় বাড়ছে। একজন সৈন্য একটা গ্যাসবোমা ছুড়ল, সেটা ভিড়ের মধ্যে চাপা শব্দে বিস্ফোরিত হলো। লোকেরা দৌড়ে পালাল, কাশতে লাগল, অজ্ঞান হয়ে গেল, কিন্তু সব বৃথা। না, কোনোমতেই না।
জনতা আবারো হামাগুড়ি দিতে শুরু করল। নিজারও এগোলো। সে দাঁড়াল সিমেন্ট ব্লকের সামনে, তারপর সামনে এগোলো সরু গলিটার দিকে।
-হেই, তুই, কোথায় যাচ্ছিস ব্যাটা? থাম!
-আমি যেতে চাই।
-অনুমতিপত্র আছে?
-না, আমার কোনো অনুমতিপত্র নেই।
-তাহলে পেছনে যা। এটা নিষিদ্ধ।
-কিন্তু, জনাব, আমাকে যেতেই হবে, অনেক দূর থেকে এসেছি আমি, আমার একটা জরুরি কাজ আছে।
-তাতে আমাদের কিচ্ছু আসে-যায় না। এটা নিষিদ্ধ। ফিরে যা, নাহলে গুলি করব।
-কেন গুলি করতে চাচ্ছেন? আপনারা দেখছেন, আমি নিরস্ত্র।
-না বলেছি না? নিষেধ আছে।
-দ্বিধান্বিত নিজার। সে মাথা ঘোরাল, চোখের পাতার ধুলোর পরদা ভেদ করে জনতার দিকে তাকাল, তারপর আবার চেষ্টা করল :
-দয়া করুন, যদি চান তো আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত আমার পরিচয়পত্রটা রেখে দিন। এই যে, নিন এটা।
-ওটার কোনো প্রয়োজন নেই। যাওয়া নিষেধ। এ কথাই চূড়ান্ত।
-কেন ভাই? কী চান আপনারা, বলেন? আমাকে রামাল্লায় যেতেই হবে।
সৈন্যটা দূরে তাকাল এবং তারপর দৃষ্টি ফিরিয়ে আনল নিজারের মুখের ওপর। এটাই সুযোগ কৌতুক ও মজা করার। সৈন্যটি নিজারের কাছ থেকে তার পরিচয়পত্র চাইল। একবার সেটার দিকে আরেকবার নিজারের দিকে তাকাল সে।
-শোন, আমি তোকে যেতে দেবো যদি তুই তোর টুপিটা রেখে যাস!
নিজার সৈন্যটার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকাল, তারপর মাথা থেকে টুপিটা খুলল এবং দূরে ছুড়ে ফেলল।
-এখন আমি যেতে পারি কি?
সৈন্যটি হো হো করে হেসে উঠল। তার চোখ টুপিটাকে অনুসরণ করল, সেটা লাফাতে লাফাতে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল।
-এখনো সব শেষ হয়নি; আরো কিছু শর্ত আছে, যদি যেতে চাস।
নিজার বুঝতে পারল সে প্রাথমিক এবং সম্পূর্ণ অস্বীকৃতির বাধা ভাঙতে সম হয়েছে। সে অধ্যবসায় চালিয়ে গেল, দরকষাকষি করতে লাগল।
-হ্যাঁ, আর কী চান? সে সৈন্যটিকে জিজ্ঞেস করল।
-তোকে জুতা খুলতে হবে, সেগুলো এখানে আমার কাছে রেখে যাবি এবং ফেরার পথে ফেরত নিবি।
নিজার সৈন্যটির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাল। এটা কি একটা কৌতুক, নাকি বুঝে-শুনেই বলছে সৈন্যটি?
-এটা সম্ভব নয়। তাহলে এই গরমে, ভাঙা কাচ, ময়লা... এসবের ভেতর দিয়ে আমি হাঁটব কী করে?
-বেশ, চাস না তো? তাহলে ফিরে যা সেখানে যেখান থেকে এসেছিস।
নিজার মাথা নামাল এবং একটু ঘোরাল। জ্বলন্ত রোদ ও ধুলার মধ্যে জনতাকে পরখ করল সে। মুহূর্তের মধ্যে সারা জীবনের ভোগান্তি তার চোখের সামনে ভেসে উঠল।
-বেশ, আমি রাজি। দৃঢ়তার সাথে বলল সে।
সে সামনে ঝুঁকে জুতা জোড়া খুলল এবং সিমেন্ট ব্লকের ওপর রাখল, হতবিহ্বল সৈন্যটার সামনে, কোনো অনুমতির জন্য অপো না করে।
-হেই, থাম, থাম। শর্ত সব শেষ হয়ে যায়নি এখনো।
নিজার হাঁটছিল যেন আনন্দে বিহ্বল হয়ে। ময়লা রাস্তা সূর্যের তাপে উত্তপ্ত।
-Ñযাওয়ার আগে আমার জন্য এক গ্লাস চা এনে দে।
নিজার সৈন্যটার দিকে তাকাল, তার পায়ের দিকে তাকাল। তার গালের ধার বেয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়িয়ে পড়ছে, ঝরে পড়ার আগে চিবুকের প্রান্তে একটু থামছে এবং শেষ পর্যন্ত তাপদগ্ধ ধুলায় পড়ে উবে যাচ্ছে।
সে শ্লথ পায়ে চলে গেল। মিনিট পাঁচেক পর বিশাল এক গ্লাস ভর্তি চা নিয়ে ফিরে এলো। সৈন্যটি তাতে চুমুক দিয়ে অন্য সৈন্যদের সাথে হাসি-মশকরা করতে লাগল। নিজার চেকপয়েন্ট ত্যাগ করল, অবশেষে সেটা অতিক্রম করল সে এবং রামাল্লার পথ ধরল। সে যে সেটা অতিক্রম করেছে তা-ই হলো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
(এখানে, সাহিত্যের যুক্তির খাতিরে, গল্পটা শেষ হতে পারে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই একজন যথার্থ ফিলিস্তিনি গল্পটাকে অন্য এক সমাপ্তির দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য জেদ ধরেছে)।
চার ঘণ্টা পর নিজার ফিরল। চেকপয়েন্টে পৌঁছার আগে সে তার নতুন জুতা খুলে প্লাস্টিক ব্যাগে পুরল। চুক্তি মোতাবেক তার খালি পায়ে ফেরার কথা।
সে চেকপয়েন্টের দিকে এগোলো, সৈন্যটার দিকে।
-হেই, দেখ, আমি ফিরে এসেছি। আমার জুতা কোথায়?
সৈন্যটি হাসিতে ফেটে পড়ল, চৌকোনা সিমেন্ট ব্লকের কাছে জুতার দিকে হাত তুলে দেখাল সে।
নিজার জুতার কাছে গেল। ডান পা’টা জুতার মধ্যে গলিয়ে দিতেই সে টের পেল এর মধ্যে গরম পানি জাতীয় কিছু আছে। চমকে উঠে সে পেছনে সরে এলো। জুতা হাতে নিয়ে সৈন্যটির দিকে তাকাল সে। সৈন্যটা তখন সঙ্গী চারজনসহ হাসতে শুরু করল।
নিজার জুতা উল্টে ধরল; তার ভেতর থেকে কাদার মতো হলুদ পাতলা জিনিস পড়তে লাগল। জুতাটা কয়েকবার ঝাড়ল সে। খবরের কাগজ দিয়ে মুছতে চেষ্টা করল, তার পাতায় পাতায় রাজনৈতিক নেতা এবং শীর্ষ বৈঠকের খবর ও ছবি। সে শান্তভাবে উঠল, পায়ে জুতা পরল এবং চেকপয়েন্টের মধ্য দিয়ে হাঁটা ধরল। তিন ধাপ এগিয়েছে, হঠাৎ থামল সে। ঘুরে সিমেন্ট ব্লকের দিকে পা বাড়াল।
-কী চাও হে তুমি? সৈন্যটা তাকে জিজ্ঞেস করল, তার মুখে হাসি ও বিস্ময়।
নীরবে দাঁড়াল নিজার। সে মানুষ এবং গাড়িগুলোর দিকে তাকাল। জুতা জোড়া খুলে সিমেন্ট ব্লকের ওপর রাখল। তারপর সোজা সৈন্যটির চোখের দিকে তাকাল।
-একটা শেষ কথা আমি আপনাদের বলতে চাই, দৃঢ়কণ্ঠে বলল সে, যত দিন পর্যন্ত আপনারা আমাদের জুতায় আর আমরা আপনাদের চায়ে প্রস্রাব করতে থাকব তত দিন আমাদের মধ্যে শান্তি আসবে না। বুঝেছেন?
দ্রুত ঘুরল নিজার। খালি পায়ে, ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল সে।
মুল: নাসর ইবরাহীম
অনুবাদ : নাজিব ওয়াদুদ
কপিড
©somewhere in net ltd.