নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মাঝেই স্বর্গ নরক

সব কিছুকে সহজ ভাবে নিতে চেষ্টা করি

ত্বাকী’র মোড়

সব কিছুকে সহজ ভাবে নিতে চেষ্টা করি

ত্বাকী’র মোড় › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুবাদ গল্প :

০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:৪৮



জাকারিয়া তামের

অনুবাদ : হোসেন মাহমুদ



বাবা-মা আর ছোট তিন ভাইয়ের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সুয়াদ। কাঁদতে কাঁদতে সে বললÑ

: আমি আমার সম্ভ্রম হারিয়েছি। পরিবারকে কলঙ্ক থেকে বাঁচাতে আমাকে মেরে ফেল।

তার বাবা কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করেনÑ

: কান্না রাখ। কী হয়েছে খুলে বল।

সুয়াদ বললÑ

: আমার যা হয়েছে তা বললে কেউ বিশ্বাস করবে না। যদিও অবিশ্বাস্য, কিন্তু তাই ঘটেছে।

বাবার চেহারা রাগে থমথম করছে। বললেনÑ

: কী ঘটেছে আমি তা জানতে চাই। কোনো কিছু বাদ না দিয়ে সব বলে যাও।

সুয়াদ বলে চলে : রাতে সে তার ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। রোজকার অভ্যাসমতো শোয়ার আগে ভেতর থেকে দরজায় তালা দিয়ে খিল লাগিয়ে শুয়ে পড়েছিল সে। ঘুমিয়ে পড়ার পর স্বপ্ন দেখে যে একটা পার্কের মধ্যে সে হেঁটে বেড়াচ্ছে। সেখানে কোনো জীবন্ত প্রাণী চোখে পড়ল না তার। হঠাৎ এক যুবক এসে তার ওপর হামলা করল। সুয়াদ তাকে চেনে না কিংবা সে কোথা থেকে এলো তাও জানে না। যুবকটি তাকে মাটিতে ফেলে তার শরীরের ওপর চড়ে বসল। সে সুয়াদের জামাকাপড় টেনে ছিঁড়ে ফেলে সম্ভ্রম হানি করল তার। সে কত কাকুতি-মিনতি করল, সাহায্যের জন্য চিৎকার করল, তার চোখের পানিতে গণ্ডদেশ ভিজে গেল। কিন্তু বর্বর যুবকটি কোনো কিছুতেই ভ্রƒক্ষেপ করল না।

দ্বিতীয়বার সে স্বপ্ন দেখল যে সে একটি লোকজন ভরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। হঠাৎ সেই যুবকটি ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরল। তারপর সবার সামনেই তার সম্ভ্রম নষ্ট করল সে। একটি লোকও তাকে বাধা না দিয়ে যা ঘটল তা দাঁড়িয়ে দেখল।

তারপর সে তৃতীয় স্বপ্ন দেখল। সে তার পিতামহের কবর জিয়ারত করতে গেছে। সে দোয়া-দরুদ পাঠের পর মরহুমের রূহের মাগফিরাত চেয়ে মুনাজাত করছিল। এ সময় সে বিস্মিত হলো দেখে যে সেই একই যুবক সেখানে হাজির হয়েছে এবং সে তৃতীয়বার তার সম্ভ্রম হানি করল। সে হাসতে হাসতে বললÑ চার পাশে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সে এটা করেছে।

বাবা গর্জন করে ওঠেনঃ

: যুবকটি কে?

সুয়াদ বললঃ

: আমি তাকে চিনি না। আমি আগে কখনো তাকে দেখিনি। স্বপ্নের মধ্যে দেখে তাকে আমি চিনব কী করে? কিন্তু এরপর আবার যদি আমি তাকে দেখতে পাই তাহলে অবশ্যই তার পরিচয় জানব। কারণ আমি তার চেহারা ভুলে যাইনি।

বাবা জিজ্ঞেস করলেনঃ

: ঘুম থেকে তুমি জেগে ওঠার পর কী ঘটল?

: আমি নিজেকে বিছানায় শোয়া দেখতে পেলাম। জামাকাপড় ছেঁড়া-ফাড়া, শরীরের এখানে-সেখানে নখের আঁচড়ে রক্ত ঝরছে আর দাঁতের কামড়ে দাগ হয়ে গেছে।

সুয়াদের মা বললেনঃ

: আমার মেয়েকে আমি ভালো করেই চিনি। তার ঘুম এত গভীর যে কানের কাছে কামানের গর্জন করলেও তার ঘুম ভাঙবে না। ঘুম ও স্বপ্নের মাঝে যা ঘটেছে তার কোনো মূল্য নেই। এমন তো ঘটেনি যে পাড়ার কোনো বখাটে যুবক তার ঘরে ঢুকে ঘুমের মধ্যে তার সম্ভ্রম হানি করেছে?

বাবা বললেনঃ

: কার এত বড় দুঃসাহস যে আমরা এতগুলো মানুষ থাকা সত্ত্বেও আমাদের বাড়িতে ঢুকে এ রকম কাণ্ড ঘটাবে?

সুয়াদের পরের ভাইটি ক্ষেপে উঠেছিল।

সে শপথ করে বললঃ

: যদি কোনোভাবে বদমাশ লোকটির পরিচয় পেতাম তাহলে এমন টুকরো টুকরো করে কাটতাম যে মাংসের সবচেয়ে বড় টুকরোটিও একটি কিশমিশের চেয়ে বড় হতো না।

সুয়াদ মায়ের দিকে চেয়ে বললঃ

: তোমার কথা যদি সত্য হতো তাহলে আমি যুবকটিকে চিনতে পারতাম। কারণ এ পাড়ার প্রত্যেক যুবককেই আমি ভালো করে চিনি।

বাবা সুয়াদকে জিজ্ঞেস করেনÑ

: একজন সম্মানিত মহিলা যেমনটি করেন তুমিও কি সেভাবে তাকে বাধা দিয়েছিলে?

সুয়াদ বললঃ

: আমি তাকে বাধা দিয়েছি এবং সর্বশক্তিতে চিৎকার করেছি। কিন্তু সে হেসেছে আর বলেছে যে আমরা

এখন ঘুমের মধ্যে রয়েছি। আর মানুষের ঘুমের জগতে কী ঘটে তা জেগে থাকা মানুষেরা টের পায় না।

সুয়াদের বাবা ব্যাপারটা নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে ভাবলেন। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় মেয়েকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বললেন, সে যেন আর একটা প্রাণীকেও তার এ স্বপ্ন দেখার কথা না জানায়। কারণ, তার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে পাড়ার আরো অনেক মেয়ের ক্ষেত্রেও তা ঘটবে। তাতে তাদের অভিভাবকেরা হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে। যারা তাদের মেয়েদের সম্ভ্রম হানি করবে তাদের বিরুদ্ধে তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হবে না। তখন তারা চেষ্টা করবে মেয়েদের ঘুমাতে না দেয়ার জন্য। কিন্তু তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হবে, মেয়েরা বাধ্য হবে ঘুমাতে আর ছিন্নভিন্ন পোশাক নিয়ে জেগে উঠবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.