নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
তথাকথিত হেফাজতের আমির আল্লামা শফী সম্প্রতি নারীদের তেঁতুলের সঙ্গে যে তুলনা করেছেন এতে শুধু নারী সমাজেরই সম্মানহানি করেননি বরং তিনি কোরআন ও মহানবী (সা.)-এরও অবমাননা করেছেন। নারীদের সম্পর্কে এ ধরনের নোংরা বক্তব্য দিয়ে তিনি নিজেই নিজেকে জনগণের সামনে উপস্থাপন করেছেন তিনি কতোটুকু ইসলামের হেফাজতকারী।
ইসলাম ও বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিশ্বব্যাপী নারী সমাজের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার এক জীবন্ত আদর্শ স্থাপন করেছেন। মানব মন ও মানব সমাজে নারী প্রগতির গোড়াপত্তন করে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। ইসলামে নারীর স্বাধীন মত প্রকাশের মৌলিক বাক্-স্বাধীনতা আছে। নর-নারী উভয়ে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে স্বীকৃত এবং কর্মফল অনুযায়ী স্বর্গ লাভের সমঅধিকার প্রাপ্য। যেভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক ঘোষণা করছেন, ‘তিনি তোমাদের এক-ই সত্তা হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার জীবনসঙ্গিনীকে একই উপাদান হতে সৃষ্টি করেছেন’ (সূরা নিসা-আয়াত: ১)। অপর এক স্থানে আল্লাহ বলছেন, ‘যে ব্যক্তি মোমেন অবস্থায় সৎকর্ম করবে সে পুরুষ হোক বা নারী সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (সূরা মোমেন-আয়াত: ৪০)।
ইসলামের কষ্টিপাথরে নারী-পুরুষের মর্যাদা ও অধিকার তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইসলাম নারীকে শুধু পুরুষের সমঅধিকার নয় বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুষ থেকে নারীকে অধিক মর্যাদা দিয়েছে। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত ঘোষণা করে ইসলাম নারী জাতিকে সর্বোত্তম মর্যাদায় ভূষিত করেছে। যে মর্যাদা পুরুষকে দেয়া হয়নি। ইসলামে একজন নারী একজন পুরুষের চেয়ে তিনগুণ বেশি শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি ও মর্যাদার অধিকারী। পারিবারিক জীবনে সংসার পরিচালনার ক্ষেত্রে নারীর ওপর পুরুষের প্রাধান্য থাকলেও সার্বিক মূল্যায়নে ইসলাম নারী জাতিকে পুরুষের অধিক মান-মর্যাদার উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করেছেন, যা অন্য কোন ধর্ম বা জাতিতে করেনি। ইসলাম পর্দা প্রথাকে নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো শ্রেণীগত পার্থক্য বা বৈষম্য সৃষ্টি করেনি। ইসলাম নর-নারী উভয়কে পর্দার আদেশ প্রদান করেছে। যেমন বলা হয়েছে, ‘হে নবী! মোমেন পুরুষদের বলে দিন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি বিনত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটা তাদের পক্ষে পবিত্রতম নীতি’ (সূরা নূর: ৩০)। এর পরের আয়াতে বলা হচ্ছে, ‘হে নবী! মোমেন স্ত্রীলোকদের বলুন তারা যেন নিজেদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে’ (সূরা নূর: ৩১)। ইসলাম নারী-পুরুষের জন্য পৃথক পৃথক কোন আদেশ-নিষেধও করেননি আবার তাদের মাঝে কোনো পার্থক্য সৃষ্টি করেনি।
পবিত্র কোরআন পাঠে দেখা যায় ইসলামের শিক্ষা সবার জন্য, কোথাও বলা হয়েছে, হে মানবম-লী, আবার কোথাও বলা হয়েছে মোমেনগণ বা হে যারা ঈমান এনেছ। এ থেকে বোঝা যায় আল্লাহতায়ালা নিজেই নারী-পুরুষের মাঝে কোনো বৈষম্য সৃষ্টি করেননি। যেভাবে বলা হয়েছে, নারী-পুরুষ যে-ই ভালো কাজ করবে সে-ই জান্নাতে প্রবেশ করবে। এছাড়া ইসলামে নারী জাতির অবদান অনেক। সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার মর্যাদাও লাভ করেছিলেন একজন নারীই। ইসলামের উন্নতির জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থের জোগানও দিয়েছিলেন একজন নারীই। ইসলামের পক্ষে জেহাদ করতে গিয়েও সর্বপ্রথম যিনি নিজের জীবন দান করেন তিনিও ছিলেন একজন নারী। যেখানে আল্লাহ নিজেই নারী-পুরুষের মর্যাদা নিশ্চত করেছেন সেখানে নারীদের নিয়ে আল্লামা শফীর এ ধরনের মন্তব্য করা কি ইসলাম ও মহানবী (সা.)-এর শিক্ষার পরিপন্থি নয়?
তথাকথিত হেফাজতিরা যে আসলেই প্রকৃত ইসলামের সাথে সম্পর্ক রাখে না তা আবারো তারা নিজেরাই প্রমাণ করেছে। এছাড়া গত মে মাসে এই ধর্মীয় জঙ্গি সংগঠন হেফজতের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়নি পবিত্র কোরআন এবং মহানবী (সা.)-এর হাদিস। যাদের হাত থেকে পবিত্র কোরআন পর্যন্ত রক্ষা পায়নি, যাদের কাছে কোরআনের কোনো মূল্য নেই তারা আবার কিভাবে ইসলামের কথা মুখে উচ্চারণ করে? এরা নিঃসন্দেহে ধর্মীয় সন্ত্রাসী, এরা কখনো মুসলমান হতে পারে না। তথাকথিত হেফাজতিরা পবিত্র কোরআনের অবমূল্যায়ন করে সমগ্র মুসলমানের হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করেছিল সেদিন আর এখন নারীদের নিয়ে এমন মন্তব্য করে মাতৃজাতিকে যেমন অপমান করেছে তেমনি ইসলামের অবমাননা করেছে। সরকারের উচিত হবে, যারা এ ধরনের বক্তব্যের সঙ্গে জড়িত এবং যাদের উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে এ দেশের শান্তি বিনষ্ট হয় এবং ইসলামের অবমাননা হয় তাদের প্রত্যেকের ব্যাপারে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা।
ধর্মের নামে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ কখনও ইসলাম সমর্থন করে না। আজ যারা ‘হেফাজতে ইসলাম’ নামে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করছে তাদের বলতে চাই, ইসলামের হেফাজত করা কার দায়িত্ব? যিনি ইসলামকে এ পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে মনোনীত করেছেন তার না আপনাদের? ইসলামের হেফাজতের কথা বলে সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মানুষদের করা হচ্ছে বিভ্রান্ত। এর দায়ভার কি আপনাদের নিতে হবে না? ইসলামকে কিভাবে হেফাজত করতে হবে এর সম্পূর্ণ দায়িত্ব আল্লাহর হাতে। ভাবতে অবাগ লাগে ইসলামবিরোধী এমন কথা বলা সত্ত্বেও কিভাবে বিরোধী দলের সংসদ সদস্য সৈয়দা আশিফা আশরাফী পাপিয়া একজন নারী হয়ে আল্লামা শফীর পক্ষেই সাফাই গেয়েছিলেন সংসদে। যেখানে আল্লামা শফী নারীর অধিকার ও স্বাধীনতাবিরোধী বক্তব্য রাখলেন আর সেই বক্তব্যের পক্ষেই কথা বলছেন আরেক নারী। ধিক্কার এসব নারী নামে কলঙ্কদের। মানুষের অধঃপতন যখন হয় তখন তার কাছে কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিকÑ সে হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। এমন কা-জ্ঞানহীন বক্তব্য একজন নারীর কাছ থেকে জাতি আশা করেনি। আল্লামা শফী যেমন ভুলে গিয়েছিলেন তিনি যে একজন নারীরই সন্তান এবং একজন নারীর দুধ পান করেছেন, ঠিক তেমনিভাবে পাপিয়াও ভুলেগেছেন তিনিও যে একজন নারী। যদি তিনি নিজেকে একজন নারী মনে করতেন তাহলে কখনো আল্লামা শফীর পক্ষে কথা বলার জন্য দাঁড়াতেন না।
কোরআনের অবমাননা যারা করতে পারে তাদের মুখ থেকে শুধু নারীদের নিয়ে নয় আরো কতো কিছুই যে বের হতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই স্পষ্টভাবে হেফাজতিদের বলতে চাই, ধর্মের লেবাস পরে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে বিভ্রান্ত অনেক করেছেন, আর করার সাহস না দেখানোটাই উত্তম হবে। হেফাজতের নামে যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে সব স্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে সেই সাথে প্রতিটি নারীকে সোচ্চার হতে হবে। সুত্র
©somewhere in net ltd.