নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

এরই নাম রাজনীতি?

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৪

মনে হচ্ছে হরতাল বন্ধ হবে না। হরতাল আরও সহিংস হবে। ফোনালাপ হবে, বৈঠক হবে না। সংলাপ হবে_ সমঝোতা হবে না। গাড়ি পুড়বে, মানুষ মরবে; একদল গদি ছাড়বে না, অন্যদল গদির নেশায় হরতাল দেবে; সংঘাতে জড়াবে। এমন অবস্থায়ই দেশে চলছে। ৪ নভেম্বর একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকের শিরোনাম -দচৎব-ংঃৎরশব ারড়ষবহপব ৎড়পশং পরঃুদ অপর দুটি বাংলা দৈনিকের শিরোনাম-'হরতালের আগেই বোমা হামলা' এবং 'রাজধানীতে হরতালপূর্ব নাশকতা'। এছাড়া হরতালের দিন টিভি সেটের সামনে বসে যা দেখলাম তা সংবাদপত্রের ছবি এবং শিরোনামের চেয়েও আরও বেশি ভয়ঙ্কর। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট ৪ নভেম্বর থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ৬০ ঘণ্টা সারা দেশে হরতাল ডেকেছে। আর হরতাল আহ্বানের পরই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে তা-ব চালিয়েছে বিএনপি ও স্বাধীনতাবিরোধী এই চক্র। হরতালের আগের দিনই দেশজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা করেছে। আতঙ্ক সৃষ্টির জন্যই যে এ হরতাল তা বেশ বোঝা গেছে। পুলিশ প্রশাসনে ভয় এবং জনমনে ভয় সৃষ্টিই এ হরতালের লক্ষ্য ছিল। নাশকতার জন্য হরতালের মতো কর্মসূচি ডাকা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরত থাকা উচিত। তারপরও যদি হরতালের ডাক দিতে হয় তা যেন ভয়তালে পরিণত না হয় সে দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। সরকারের প্রতি জনগণের দাবি, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশের কোন নাগরিক যেন হারিয়ে না যায় তার নিশ্চয়তা সরকারকেই দিতে হবে। হরতাল মানে ভয়তাল! মানুষ ভয়ে রাস্তাঘাটে বের হয় না। জান-মালের নিরাপত্তার বড়ই অভাব বোধ করেন জনগণ। তার অর্থ এই নয় যে হরতাল সফল হয়েছে।

প্রতি ৫ বছর অন্তর দেশে হরতালের মৌসুম আসে। দেশে এখন হরতালেরই মৌসুম চলছে। তাই হরতাল নিয়ে সর্বত্র নানা কথা চাউর হচ্ছে। হরতাল ডাকলে কি গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যায়? হরতাল কি সত্যিই গণতন্ত্রবিরোধী। কিংবা রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি। এক কথায় সাফ উত্তর হলো না। হরতাল কোন গণতন্ত্র রোধী কর্মসূচি নয়। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন, কারণে-অকারণে হরতাল নয়। যে কোন হরতালের আগে আরও প্রতিবাদের ভাষা গণতন্ত্রের অভিধানে আছে। সেগুলো প্রয়োগ না করে হরতালের মতো কর্মসূচি নেওয়ার যৌক্তিক কারণ নেই। রাজনীতি যদি জনকল্যাণের জন্য করা হয় তা হলে হরতালের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি কেন? জ্বালাও পোড়াও কেন? মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা কেন? এ সবই হচ্ছে এখনকার সন্ত্রাসী হরতালে। এ ধরনের জনগণের ভোগান্তি বাড়িয়ে সুফল পাওয়া যাবে না। জনমানুষের জন্য নাকি রাজনীতি? তাহলে আমাদের রাজনৈতিকরা এ কেমন রাজনীতির খেলায় নেমেছেন?

দেশের মানুষ বড় অসহায়। সিংহভাগ মানুষের নুন আনতে পানতা ফুরায়, বেকারত্ব সীমাহীন। শিক্ষাব্যবস্থায় জটিলতা ও সেশনজট শিক্ষাজীবনে নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টি করেছে। ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এমনি অবস্থায় জ্বালাও পোড়াও মার্কা হরতালের কর্মসূচি দেশপ্রেমের পরিচয় বহন করে না। রাজনীতিকদের এ ধরনের হরতাল পরিহার এবং হরতালের বিকল্প খুঁজে বের করা প্রয়োজন। জনজীবন অচল করে দিয়ে, মানুষ পুড়িয়ে, গাড়ি পুড়িয়ে, ককটেল ফাটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, মানুষ হত্যা করে, রাজনীতি করার অধিকার রাজনৈতিক দলের থাকা উচিত নয়। বিগত হরতালগুলোতে আমরা কি দেখলাম? এ হরতালে রীতিমতো ভয়-আতঙ্কে পড়েছেন দেশের ব্যবসায়ী-জনতা। হরতাল আহ্বানকারীদের ভয়ে ফেলতে, সরকার ব্যাপক ব্যবস্থা করেছে। সরকারি ভয়ের বিপরীতে জামায়াত-শিবিরও ভয়ানক অ্যাকশনে যায় এ হরতালে হুমকি পাল্টা হুমকি; ভয় পাল্টা ভয় দেখিয়ে দেশজুড়ে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে তাতে স্বাভাকিত কর্মকা-, ব্যবসাবাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। তারা প্রয়োজনে সিরিজ হরতাল ঘোষণার ভয় দেখিয়েছে। তাদের পারস্পরিক এ ভয়াল হরতাল পরিণত হয়েছে ভয়তালে। সরকারি দল চায় হরতালসহ বিরোধীদের যে কোন কর্মসূচি ভ-ুল করতে। আর বিরোধীদল নানা কর্মসূচির নামে দেশব্যাপী চালাচ্ছে ভাঙচুর আর জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি। দুদশক ধরে সব রাজনৈতিক কর্মসূচি আর হরতালই হয় শক্তি প্রদর্শনের মহড়া হিসেবে। আমাদের দেশে এক সময় স্বতস্ফূর্ত এবং জনমুখী ছিল হরতাল। হরতাল ছিল পাকিস্তানি শাসকদের (শোষক) মোকাবিলার লক্ষ্যে। তখন আমজনতা নিজেরাই হরতাল পালন করত, হরতাল পালনের জন্য কাউকে বাধ্য করার প্রয়োজন হতো না। সে হিসাবেই, হরতালকে বলা হয় গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু হরতালের নামে এখন জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা আর লুটতরাজ এটাও কি গণতান্ত্রিক অধিকার? যারা যখন সরকারে থাকেন তখন হরতালের বিরুদ্ধে থাকেন। তখন তারা বুঝতে পারেন, হরতালে দেশের ক্ষতি হয়, প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। বিরোধীদলকে এসব বিষয়ে জ্ঞান দান করতে থাকেন। তারা এরপর বিরোধীদলে গেলেও আর হরতাল ডাকবেন না, এ মর্মে প্রতিশ্রুতিও দিতে থাকেন, সে প্রতিশ্রুতি কখনো পালিত হয় না। কেউ কথা রাখে না।

এক পরিসংখানে দেখা যায়, ১৯৭২ সাল থেকে ২০০০ পর্যন্ত ২৮ বছরে বাংলাদেশে কমপক্ষে ৪৩৩টি পূর্ণ দিবস ও ৫৭৯টি অর্ধদিবস হরতাল মিলে মোট ১০১২টি হরতাল পালিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭২ সালের শুরু থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচটি পূর্ণ দিবস ও ১২টি অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৮২ সালের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালে পালিত হয় ১০টি পূর্ণ দিবস ও ৪৩টি অর্ধদিবস হরতাল। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের ভেতর ১০৪টি পূর্ণ দিবস ও ১৯৪টি অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়। ১৯৯০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত সময়কালে পালিত পূর্ণ দিবস হরতালের সংখ্যা ১৫৫ এবং অর্ধদিবস হরতালের সংখ্যা ২২৩। ১৯৯৬ সালের ৩১ মার্চ থেকে ২০০০ সালের ১২ জুনের মধ্যে পালিত হয় ১৫৯টি পূর্ণ দিবস ও ১০৭টি অর্ধদিবস হরতাল। পরবর্তীকালে পত্র-পত্রিকার হিসাব অনুযায়ী ২০০০ সালের ১২ জুনের পর থেকে ২০১০ সালের ২৭ জুন পর্যন্ত সময়কালে আরও ১৭৭টি হরতাল পালিত হয়। ২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রাজত্বকালে কোন হরতাল পালিত হয়নি। এরপর ২০১০ থেকে আবার শুরু। এরপর খুব বেশি হরতাল হয়েছে তা বলা যাবে না। তবে এখন লক্ষণ মোটেও ভালো ঠেকছে না। হরতালের টোটাল নৈরাজ্যের দিকেই যেন যাচ্ছে দেশ। হরতালে দেশের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির একটা হিসাব পাওয়া যায় ইউএনডিপির স্থানীয় গবেষণা থেকে। ২০০৫ সালে প্রকাশিত ইউএনডিপির একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৯০-১৯৯১ অর্থবছর থেকে ১৯৯৯-২০০৭ অর্থবছর পর্যন্ত সময়কালে হরতালের কারণে প্রতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গড়ে ক্ষতি হয়েছে ৮৪ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা! কেন হরতাল সফল হয়, কীভাবে হয় তা আর সাধারণ মানুষের জানতে বাকি নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষ যেটা জানে না তা হলো, কর্মনাশা হরতাল আদৌ কি তাদের কোনো স্বার্থ রক্ষা করতে পারে? সমস্যা সমস্যার জায়গাতেই থাকে। বরং হরতাল সমস্যাটাকে আরও ঘণীভূত করে; আরও প্রকট করে। নিছক ক্ষমতার লড়াইয়ের অংশ হিসেবে, এক দলকে হটিয়ে আরেক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশব্যাপী হরতাল ডেকে জনগণকে তাদের স্বাভাবিক কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করা সংবিধানে প্রদত্ত 'গণতান্ত্রিক অধিকার'-এর পর্যায়ে পড়ে না। এতে হরতাল আহ্বানকারীদের কথিত 'গণতান্ত্রিক অধিকার'-এর নামে বাদবাকি জনগণের 'গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকার' হরণ করা হয়।

বস্তুত আমাদের দেশে এখন যে ধরনের হরতাল হয় তা রাজনৈতিক সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছুই নয়। হরতাল সাংবিধানিক অধিকার নয়, এমনকি 'গণতান্তিক' বা 'নাগরিক' অধিকারও নয়। হরতাল হচ্ছে প্রকৃত অর্থে 'আইন অমান্য আন্দোলন'। সংবিধান কোন নেতা-নেত্রী বা কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীকে এভাবে সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপর্যস্ত করার, কিংবা রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধন করার অধিকার কখনই দেয়নি। সংবিধানের ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯ অনুচ্ছেদে মতপ্রকাশের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তার কোথাও হরতালকে 'সাংবিধানিক অধিকার' হিসেবে অভিহিত করা হয়নি। সাংবিধানিক অধিকার, নাগরিক অধিকার যে কোন অর্থে হরতাল নামের এ 'ভয়তাল' কোন অধিকারের মধ্যেই পড়ে না।

সাধারণ মানুষের কল্যাণে রাজনীতিবিদরা এ যাবৎ কিছুই করতে পারেননি, অথবা কিছু করার চেষ্টা করেননি। এখনও মোট জনসংখ্যার ৪০% দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে, তাদের কল্যাণে কিছুই করা হয়নি ৪৩ বছরে, হরতালের তো কর্মসূচি দিয়ে গরিব জনসাধারণের ভোগান্তি বাড়ানো সমীচীন হতে পারে না। হরতাল যেমন আন্দোলনের হাতিয়ার তেমনি আবার অর্থনীতিকে ধ্বংস করার সহিংস উপায়ও বটে। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল ও উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। একটি দেশে স্থিতিশীলতা বলতে বোঝায় প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থা এবং তার ধারাবাহিকতার মেয়াদপূর্তি হলে নির্বাচন, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন, আইনের আওতায় থেকে ও আইন মেনে ক্ষমতা প্রয়োগকরণ অর্থাৎ আইনের শাসন, সুশাসন জাতীয় সংসদ চালু থাকা এবং সেখানে সরকারের জবাবদিহি করা, অর্থনীতিতে গতি থাকা। আমরা এখনো পুরনো রাজনীতির চর্চা করছি। অতীত থেকে আমরা কোন শিক্ষা পাইনি। আর পাইনি বলেই প্রতিহিংসার রাজনীতি সর্বক্ষেত্রে। কী সরকারি দল, কী বিরোধী দল সবাই ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে। ব্যক্তি ও দলীয় চিন্তার বাইরে কেউই যেতে পারছি না। সম্ভাবনার এই বাংলাদেশকে সব ক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে হলে এ ঘূর্ণিপাক থেকে বের হতে হবে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হলে সবাইকে ইতিবাচক চিন্তা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় হুমকির মুখে পড়বে দেশের অর্থনীতি। বিপন্ন হবে দেশের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও গণতন্ত্র। সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.