নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনৈতিক অধিকারের নামে নৃশংসতা কি চলতেই থাকবে?

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৩৩

চা-স্টলে, মেঠো জমায়েতে, অলস আড্ডায় আকসার এমন ধারণা উঠে আসে যে বাঙালি অপরাপর যে কোনো জাতির চেয়ে অধিক মাত্রায় রাজনীতি-সচেতন! সে নিয়ে বাঙালির যেন গর্বের শেষ নেই! সেই সাধারণ জনগণের মধ্যে এমন ধারণা জোরালোভাবে গ্রোথিত যে আওয়ামী লীগ-বিএনপি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আরো একটু গভীরে বুঝতে চান যারা তারা মনে করেন শুধু আওয়ামী লীগ-বিএনপি নয়, তারা এবং জাপা-জামাতও এক ঝাড়ের বাঁশ! গুণগতভাবে এই দলগুলোর ভেতর কোনো পার্থক্য নেই। বাহ্যিক কিছু পার্থক্য এটাই নির্দেশ করে যে এরা একই জাতের শাসকশ্রেণী, কিন্তু সুবিধের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নামে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছে।

এই আপাত স্থিরকৃত মতটি যদি প্রবলভাবে জনগণের মধ্যে গেড়ে বসে থাকেই তাহলে সেই জনগণের কাছে এটা কি বিরাট প্রশ্ন হয়ে জাগে না যে তাহলে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে এই দল দুটি, বিশেষ করে বিএনপি বর্তমানে যে চরম প্রতিশোধ স্পৃহায় চরম প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে রাজনীতিকে পয়েন্ট অব নো রিটার্ন-এ নিয়ে গেছে সেটার পেছনে কোনো বিশ্লেষণ থাকতে পারে? এর কারণ বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন রকম হতে পারে। তবে আজ যদি পেছনের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা হয় তাহলে দেখা যাবে এটা মোটেই অনাকাক্সিক্ষত নয়।

সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান সামরিক ক্যুদেতার মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর তার জন্য একটি ‘প্ল্যাটফর্ম’ তৈরি করা ফরজ হয়ে পড়ে। সে সময় শাসক দল আওয়ামী লীগের বিপক্ষে অমন একটি দল গঠন করতে গেলে সূত্রমতে যাদের কাছে পাওয়ার কথা তিনি তাদেরই কাছে টেনেছিলেন। একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামাত, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামীসহ ধর্মাশ্রয়ী মৌলবাদী, পথভ্রষ্ট বিচ্যুত বাম এবং কোনো কোনোভাবে একাত্তরে পাকিস্তানের কোলাবরেটরদের নিয়ে তিনি যে দলটি গঠন করলেন তার মূল এজেন্ডা হলো আওয়ামী লীগ বিরোধিতা, কার্যত মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতা করা। একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে মুক্তিযুদ্ধের এবং মুক্তিযুদ্ধে সম্পৃক্ত দলকে বিরোধিতা করাটা জনগণ মেনে নাও নিতে পারে সন্দেহে তারা কৌশলে বাকশাল বিরোধিতাকে সামনে নিয়ে আসে। আর সেটাই সাধারণ মানুষকে প্রলুব্ধ করতে সক্ষম হয়, কেননা সাধারণ মানুষ স্বাধীনতাকে যে মাপে ধারণ করে ঠিক সে ভাবেই বাকশালকে মেনে নেয়নি। একদলীয় শাসনকে মেনে নেয়নি। আর এটাই হয়ে উঠেছিল ওই কোলাবরেটরদের তুরুপের তাস!

এই অবস্থান থেকে বিশ্লেষণ করলে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে বুর্জোয়া মাপকাঠিতে এই বড় দুটি দলকে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ ভাবা হলেও কার্যত এদের সম্পর্ক জন্ম থেকেই সাপে-নেউলে! সুতরাং এখন নির্দলীয় নিরপক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যে আন্দোলনের কথা বলা হচ্ছে তার ব্যাকফায়ার এমন যুদ্ধংদেহী, জীবন-মরণ হয়েছে। সাদা চোখে মনে হতেই পারে যে কেবলমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এমন ‘সর্বগ্রাসী যুদ্ধাবস্থা’ পার্লামেন্টারি রাজনীতিতে প্রচলিত কি-না? আরো মনে হতে পারে কেবলমাত্র এই দাবিটি আদায়ের জন্য জাতিযুদ্ধের মতো ফ্রন্ট ওয়ার প্রাসঙ্গিক কি-না? এবং সঙ্গত কারণেই এটাও মনে হতে পারে, শুধুমাত্র নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের জন্য উল্লিখিত পদ্ধতিগুলো প্রয়োগের দরকার পড়ে না। তারপরও কেন বিএনপি তথা ১৮ দল সেই গৃহযুদ্ধপরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে? এর উত্তর খোঁজার জন্য ওই পেছনের জন্মসূত্রটা অনুসরণ করতে হবে। বিএনপি এখন হরতাল-অবরোধের আড়ালে যা করছে তাকে কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক রীতিনীতি বলার অবকাশ নেই। এটা স্রেফ একটা এনার্কি তৈরি করে বহির্বিশ্বের নজরকাড়া এবং সুযোগসন্ধানী কোনো ‘তৃতীয়পক্ষকে’ ডেকে আনার ধনুর্ভঙ্গ পণ। হরতাল, অবরোধ, ঘেরাওসহ অন্যান্য আইনি অনেক উপায় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনসিদ্ধ, কিন্তু আন্দোলনের নামে যা-ই করা হোক তা হতে হবে আইনি বাধ্যবাধকতাকে মেনে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। পিকেটিং, রাজপথে সমাবেশ, মিছিল, মিটিং, জঙ্গি মিছিল সবই চলতে পারে। চলতে পারে হরতাল পালনে রাস্তা ফাঁকা রাখার কৌশলে যানবাহন ভাঙচুর পর্যন্ত। কিন্তু বাস-ট্রাক, সিএনজি-রিকশা থেকে যাত্রীদের নামার সুযোগ না দিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা কি এসব প্রচলিত রাজনীতির কৌশল হতে পারে? না। কোনোভাবেই না। এটা স্রেফ ঠা-া মাথার পরিকল্পিত হত্যা ছাড়া আর কিছু নয়। কেন এতো প্রতিহিংসা? কেন এই নির্মমতা? দেশে কি গৃহযুদ্ধ চলছে? দেশ কি ভিনদেশী কেউ শাসন করছে? এসব প্রশ্নের একটিই উত্তর হতে পারে। বিএনপি বা ১৮ দল শুধুমাত্র তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলনের নামে এসব করছে না। তাদের মূল এজেন্ডা সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো। দিনের পর দিন এসব হত্যাকা-, এসব বীভৎসতা চালাতে থাকলে সেই কাক্সিক্ষত তৃতীয়পক্ষ অথবা জাতিসংঘ এসে দায়িত্ব নেবে! তারা দায়িত্ব নিলেই ‘সবকিছু’ আবার নতুন করে শুরু করার নামে সাজাপ্রাপ্তদের বের করে আনা যাবে। আপাত হিডেন এই পলিসি বাস্তবায়ন করতেই বিএনপি জামাতের তৈরি করা ‘ওয়ারপ্ল্যান’ সর্বসম্মতিক্রমে (!) বাস্তবায়ন করে চলেছে।

গত দিনগুলোর সংখ্যওয়ারি বা খাতওয়ারি পরিসংখ্যানের বাইরে কেবলমাত্র একজন গীতা সরকারের প্রশ্নের কী জবাব দেবেন বেগম খালেদা? কোনো জবার আছে কি? নেই। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কথোপকথন: ‘ওরা যে বোমগুলো মারে বা যাই মারে, ওদের শনাক্ত করুন এবং যারা অর্ডার দেয় তাদের পরিবারের লোককে ধরে ধরে আপনারা আগুনে পুড়িয়ে দেন। ওরা অর্ডার দিতে পারে, আমাদের তো রক্ষা করতে পারে না। আমাদের জন্য আপনারা সরকার।’ প্রধানমন্ত্রী : ‘এই জিনিসটা কখনো দেখি নাইৃ’ গীতা আবার বলেন : ‘আমরা আপনাদের তৈরি করছি, আপনারা আমাদের তৈরি করেন নাই। আমাদের স্বামীরটা আমরা খাই। আপনারা আমাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। ওনারে এক হইতে বলেন, আপনারা সবাই এক হন। হয়ে আমাদের রক্ষা করেন। যারা বলে হরতাল দিবো, তাদের সাথেৃহরতালের যে যে ঘটনা হয়, তাদের পরিবারের সাথে সেটা হোক। আপনারা সেটাই এখন করেনৃ(প্রথম আলো, ২ ডিসেম্বর, ২০১৩)। এরকম শত শত গীতা সরকারের আহাজারিতে ভারী হয়ে আছে এই দেশের আকাশ-বাতাস। এমন অনেক গীতা সরকারের অব্যক্ত কান্নায় ভারী হয়ে আছে বাংলাদেশ, যাদের দুঃখকষ্টের বিবরণ মিডিয়ায় আসছে না বলে আমরা বুঝতে পারছি না কার কতোটুকু গেছে! কে কিভাবে নিঃস্ব হয়ে আহাজারি করছে! এর কোনো সমাধান সাধারণ মানুষের হাতে নেই। আছে রাষ্ট্রের হাতে। রাষ্ট্র তার তৈরিকৃত আইন দিয়ে যদি তার নাগরিককে রক্ষাই করতে না পারে তাহলে সেই আইনের প্রয়োজন কিসে? সাধারণ মানুষকে পই পই করে আইন মানতে নসিয়ত করা গেলে সেই একই আইন ক্ষমতাবান রাজনীতিকদের মানতে বাধ্য করা হবে না কেন? সাধারণ মানুষ ভোট দিয়ে বিনিময়ে কোনো কিছু চায় না, চায় এতোটুকু শান্তি। তা যদি দিতে না-ই পারেন তাহলে দেবেন না, কিন্তু লাশ উপহার তো চায়নি তারা? তাহলে লাশ কেন? আগুনে পুড়িয়ে হত্যা কেন? কেনই বা এই প্রকাশ্য হত্যাকা-ের পরও তারা বিচারের আওতায় না আসা? কেন হত্যাকারীরা বীরদর্পে ঘুরে বেড়াবে প্রচলিত রাজনীতির চাদর গায়ে, নিরাপদে। কেন? যখন মিডিয়াব্যুমের তোড়ে সব কিছু বেনোজলের মতো ভেসে যাচ্ছে, যখন সাতকাহনের সালতামামিতে আর টিভিসি হচ্ছে না, যখন আশ্চর্য শক্তিবর্ধক মলম আর ঐশ্বরিক বোঝাপড়ার কুদরতি দাওয়াইও মিডিয়ায় মুড়িমুড়কি দরে মিলছে, তখন মিডিয়ার ক্যামেরাচোখে ওই সব ক্রিমিনালদের ফুটেজ ধরা পড়ছে না বা ধরা পড়েনি এটা কোনো আহম্মকও বিশ্বাস করবে না। তাহলে সেই সব ফুটেজ ধরে ধরে কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তাদের পাকড়াও করতে পারছে না? এসব অবরোধ, হরতাল যে কোনোভাবেই প্রতিবাদ-প্রতিরোধ বা আন্দোলনের পদ্ধতি নয়, প্রচলিত রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং নির্জলা সন্ত্রাস সেটি বোঝার জন্য কি সমাজবিশারদ হতে হয়? মোটেই নয়। সাদা চোখেই বোঝা যাচ্ছে তারিয়ে তারিয়ে এসব অপমৃত্যুও এক একটি রাজনৈতিক উপাদান হয়ে উঠেছে এই ভ্রষ্ট রাজনীতির সংস্কৃতিতে। দিনের পর দিন যেন এ এক অলঙ্ঘনীয় পারাবার। যেন এ এক অনতিক্রম্য চরাচর! মানুষের চাওয়া-পাওয়া তো কবেই ফুৎকারে উড়ে গেছে! এখন শেষ পর্যন্ত মানুষের বেঁচে থাকাটাও হয়ে উঠেছে এসব নষ্ট রাজনীতির উপাদান। কেন? আর কতো?

সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.