নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রাচ্যভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি

২৯ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৮:৪৪



আওয়ামী লীগের গত সরকারটি কৌশলগতভাবে ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের আশীর্বাদ লাভ করার ফলে বিশ্বের মার্কিন বন্ধুদের কাছ থেকেও গত সরকারটি সহায়তা পেয়ে আসছিল। যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং মধ্যপ্রাচ্যের অনেকেরই সুদৃষ্টি লাভের সুযোগ পেয়েছিল গত সরকারটি। কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই যুক্তরাষ্ট্রের আসল রূপ দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল বাংলাদেশের। তবে ভারতের কংগ্রেস সরকারের প্রকাশ্য সহযোগিতা পাওয়ার ফলে বাংলাদেশের হাসিনা সরকার বেশ একটু শক্ত হয়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করেছিল। একের পর এক যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী নীতি গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বিরক্ত ছিল। বাংলাদেশকে শিক্ষা দেয়ার কৌশল হিসেবে বিশ্বব্যাংকের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের প্রতি চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। পদ্মা সেতু নিয়ে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত ভুল এবং আত্মঘাতী ছিল, এটা ঠিক। তবে বিশ্বব্যাংকের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও নীতিসিদ্ধ ছিল না। বরং তাদের সিদ্ধান্ত ছিল রাজনৈতিক কৌশলের অংশবিশেষ। বিশ্বব্যাংকসহ বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সংগঠনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব অনস্বীকার্য। যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করার জন্য বিশ্বব্যাংকসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থাই কোনো কোনো দেশের পক্ষে, আবার কোনো কোনো দেশের বিপক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক যে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি এবং তা যে রাজনৈতিক কারণেই হয়েছে, এমনটা সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির কালো নকশা পেয়েই বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রদানের সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে কিনা তা জানার আগেই বিশ্বব্যাংক প্রস্তাবিত ঋণ বাতিল করে দিয়ে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশকে দুর্র্নীতিবাজ দেশ হিসেবে প্রমাণ করে দিলো। বিশ্বব্যাংকের এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রভাবশালী কোনো সদস্য রাষ্ট্রই কোনো শব্দ উচ্চারণ করেনি, তাও যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। যুক্তরাষ্ট্র মূলত বাংলাদেশকে চাপের মধ্যে রাখতে বিশ্বব্যাংকের ঋণের বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের অনমনীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কৌশলই ফলপ্রসূ হয়নি। আর তাই শেষ অধ্যায়টি ছিল বাংলাদেশকে কলঙ্কের দাগ দিয়ে বিশ্বব্যাংকের পলায়ন।

বিগত সময়ে যুক্তরাষ্ট্র কয়েকটি বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে চাপের মধ্যে ফেলেছিল। ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির বাড়াবাড়ি ছিল। যুক্তরাষ্ট্র সবসময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে যা ভাবে, ঠিক তেমনটাই ভেবেছিল। ড. ইউনূস কিংবা গ্রামীণ ব্যাংক যে বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয় তা যেন যুক্তরাষ্ট্র বেমালুম ভুলেই গিয়েছিল। তাই সরাসরিভাবে বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে সরাসরি অনুরোধ করে বসেছিলেন, যা নিশ্চিতভাবে কূটনৈতিক রীতিবিরুদ্ধ ছিল। বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের গুম হওয়ার বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে একাধিকবার চাপ প্রয়োগ করে। এরপর আসে বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যু। যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে ব্যাপকভাবে চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে অপরাধীদের বিচার এবং শাস্তি নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে চাপের মুখে রেখেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার একের পর এক যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অতিক্রম করে যাচ্ছিল এবং নিজ সিদ্ধান্তে অটল ছিল। পরপর কয়েকটি ইস্যুতে চাপ দিয়েও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে নতজানু করতে না পেরে শেষ পর্যায়ে জিএসপি সুবিধা বাতিল করে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। হাসিনা সরকার কোনো এক অদৃশ্য শক্তির জোরে বারবার যুক্তরাষ্ট্রের অন্যায় সিদ্ধান্তের কাছে মাথা নত না করে বরং সাহসিকতার সঙ্গে পথ চলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। বাংলাদেশ পাশে পেয়েছিল ভারত, রাশিয়া, চীন এবং জাপানকে। নির্বাচনের পর বাংলাদেশ যখন ভারতের পূর্ণ সমর্থন পেয়ে গিয়েছিল এবং শক্ত হাতে সরকার গঠন করেছিল, ততোদিনে যুক্তরাষ্ট্র বুঝে ফেলেছিল বাংলাদেশ তাদের ওপর ততোখানি নির্ভরশীল নয়। ফলে একই সুরের ধারা লক্ষ্য করা গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর কাছ থেকে।

ততোদিনে নতুন সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার সরকার তার পররাষ্ট্রনীতিতে একটুখানি পরিবর্তন আনার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের নামাবলি গায়ে না জড়িয়ে বরং এবারের সরকার আঞ্চলিক দেশগুলোর দিকে সুদৃষ্টি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার দ্বিতীয়বারের শাসনে সর্বপ্রথম জাপান সফরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। সফরটি শুধু বাস্তবায়িত হলো তাই নয় বরং বলা যায়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাপান জয় করেই ফিরলেন। জাপান বাংলাদেশকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সার্বিকভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। জাপান আগামী চার-পাঁচ বছরে ছয় বিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। জাপানের এমন পজিটিভ প্রস্তাবনা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় সফরটি ছিল চীন। জাপানের মতো চীনেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অত্যন্ত সাদরে গ্রহণ করা হল। লালগালিচা অভিনন্দন অপেক্ষা করছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। সফল এবং ফলপ্রসূ সফর শেষে জাপানের মতো চীন জয় করেই দেশে ফিরলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়া গিয়েছে চীন থেকে। যৌথ উদ্যোগে পটুয়াখালী জেলায় ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হওয়ার সুযোগ হয়েছে। কর্ণফুলীর তলদেশে বহু লেনভিত্তিক সুরঙ্গপথ নির্মাণে চীন সহজ শর্তে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চীনের সহায়তায় গভীর সমুদ্র বন্দর হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে এবং দুদেশই এ বিষয়ে আরো আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

চলতি মাসেই ভারতের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের কথা। ভারতে বিজেপি সরকার আসার প্রাক্কালে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে সংশয় ছিল। বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রাক-নির্বাচনী কয়েকটি বক্তব্য ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে টানাপড়েনের সুযোগ করে দিয়েছিল। কিন্তু সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের সম্পর্ক উন্নয়নের ইঙ্গিতই নানাভাবে প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ করে খুব শিগগিরই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরটিও সম্পর্ক উন্নয়নের পথে ইতিবাচক দিক হিসেবেই দেখার সুযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে বিজেপি সরকার তিস্তা নদী এবং সীমান্ত সমস্যার সমাধান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। ভারতের বিজেপি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্কটি সুন্দর এবং স্বাভাবিক হওয়ার ইঙ্গিত সবদিক থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বর্তমান সময়ে বিশ্ব রাজনৈতিক পটভূমিকায় নতুন মোড়ের একটি পর্যায়ে যাওয়ার পথ খুঁজছে এমনটাই মনে হচ্ছে। জাপান ও চীনের মধ্যে এবং চীন ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক কিছু সমস্যা থাকলেও বাংলাদেশ তাদের দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ না করে প্রতিটি দেশের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের পাশে জাপান, চীন, ভারত, রাশিয়া বেশ প্রকাশ্য কূটনৈতিক কৌশলেই আছে এমনটা প্রতীয়মান হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের সাহসী উদ্যোগের প্রশংসা করতেই হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আর মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের দিকে বেশি ঝুঁকে না থেকে বাংলাদেশের সংবিধানের অমোঘ ঘোষণা ‘কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব’ এই জায়গাটিতে বাংলাদেশ এবার একটু সতর্কভাবেই অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

চীন, জাপান আর ভারতের বন্ধুত্বকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার বৈদেশিক নীতি বাংলাদেশের উন্নয়নকে আরো বেগবান করবে। এদের আর্থিক এবং সামাজিক সহযোগিতাও বাংলাদেশের সমাজকে অগ্রগতির পথে সাহায্য করবে। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের বিশেষ কূটনৈতিক অবস্থান স্বীকার না করে বরং ভারত, চীন এবং জাপানের বিশেষ অবস্থানকে গ্রহণ করলে বাংলাদেশ বেশি উপকৃত হবে। এর অর্থ এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অবনতির স্বপ্ন দেখা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অন্যায় আবদার অথবা নীতিহীন পরামর্শ গ্রহণ না করার মতো সাহসিকতা দেখানোর পর্যায়ে যদি বাংলাদেশকে দেখতে পারি, তবে বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে কিছুটা শান্তি পাবো। শ্রমিক নেতার মৃত্যুর বিচার হবে কিনা অথবা গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে কিনা অথবা পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে কিনা- এর সবটুকুই বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয় এবং সবকিছুই আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো দেশের কূটনৈতিক রীতিনীতি বিসর্জন দিয়ে নাক গলানোর বিষয়টি আমরা পছন্দ করবো না। আর তেমন একটি অবস্থানে যদি সরকার আমাদের দেশের সম্মানকে নিয়ে যেতে পারে, তবে তো তাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.