নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
তার কোনো পাত্তাই নেই। অথচ ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকারের শাসনামলে ক্ষমতার ব্যাপক দাপট দেখিয়েছেন আর অবৈধভাবে একের পর এক সম্পত্তি কামাই করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ও বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারিছ চৌধুরী গত আট বছর ধরে কোথায় আছেন তা কেউ জানে না।
অভিযুক্ত এই লোকটি এখন কোথায় আছে- তা না বলতে পারে তার দলের লোক, না বলতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কেউ কেউ ধারণা করছেন তিনি ভারতে লুকিয়ে আছেন। আবার কেউ বলছে তিনি ইউরোপের কোনো দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনী এবং একাধিক সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাসমর্থিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময়টাতেই হারিছ ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জে পালিয়ে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, করিমগঞ্জে হারিছের আত্মীয়স্বজন রয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পূর্ব পর্যন্ত তিনি আত্মগোপনেই ছিলেন।
সম্প্রতি গোয়েন্দা কাজের অংশ হিসেবে ভারতের করিমগঞ্জ, শিলচর ও শিলং সফর করে আসা ওই কর্মকর্তা বলেন, ভারতে অবস্থানকে নিরাপদ মনে করেননি হারিছ। আর তাই ইউরোপের কোনো দেশে পালিয়ে যেতে পারেন তিনি। এটাও ধারণা করা হচ্ছে যে, তিনি যুক্তরাজ্য গিয়েছেন। সেখানে তার অবৈধ কামাই করা টাকার পাচার রয়েছে।
২০০১ থেকে ২০০৬ সালে ক্ষমতায় থাকাকালে হারিছের ঘনিষ্ঠ এক ছাত্রদল নেতা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলের কারো সঙ্গে কোনো রকমের যোগাযোগ নেই হারিছের। তবে তিনি তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
তিনি বলেন, 'আমরা জেনেছি হারিছ অসুস্থ। ভারত থাকাকালে তাকে দেখতে গেছেন তার ভাই ও আত্মীয়স্বজনরা।'
এদিকে, এমন একটা গুঞ্জন রয়েছে যে, হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন। তবে তা নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'তার সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। তবে শুনেছি তিনি বিদেশে আছেন।'
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র বলেন, 'হারিছ সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে এবং তাকে আদালতে হাজির করতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।'
বৃহস্পতিবার সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকা-ের মামলায় করা অভিযুক্ত নয়জনের মধ্যে হারিছ চৌধুরীও রয়েছেন। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদের বাজারে আয়োজিত সমাবেশে গ্রেনেড হামলার শিকার হয়ে নিহত হন কিবরিয়া।
বিএনপি নেতা হারিছ, যিনি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, গাড়ি কিনেছিলেন, হাতিয়ে নিয়েছেন বিশাল অংকের টাকা তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি ও বাড়িতে বন্যপ্রাণী রাখার অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দিয়েছে আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের করা এক মামলায় তাকে ৬৯ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায়ও তার নাম রয়েছে।
হারিছ ছিলেন সাধারণ এক গাড়ি ব্যবসায়ী। কিন্তু পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটিপতি হয়ে উঠেছেন তিনি। দেশে এবং বিদেশে প্রচুর অবৈধ টাকা জমিয়েছেন হারিছ। আর এ ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ব্যবসায়ী কন্ট্রাক্টরদের কাজের সুবিধা পাইয়ে দিয়ে।
জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায়ও অভিযুক্ত হারিছ। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে যুবদলে যোগ দেয়ার মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবনযাত্রা শুরু হয়। ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে আরেক ক্ষমতাধর ভবন হিসেবে পরিচিত হাওয়া ভবনে নির্বাচনের প্রার্থীদের কাছ থেকে ফান্ড সংগ্রহ করার দায়িত্ব নেন হারিছ। নির্বাচনের টাকা দিয়ে নিজের অ্যাকাউন্ট সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। আর শান্তিনগর ছেড়ে তার বাসা তৈরি করেছেন অভিজাত বারিধারা এলাকায়। পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি গুলশানে অবস্থান করতেন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার গঠনের পরই খালেদা জিয়ার খুব কাছাকাছি চলে আসেন হারিছ। প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হিসেব।
২০০৮ সালের তদন্তে দেখা যায় বিভিন্ন ব্যাংকে হারিছের ২৫টি অ্যাকউন্ট রয়েছে। আর এগুলো করা হয়েছে তার স্ত্রী, ভাই, শ্যালিকা, বোন, পুত্র ও সাবেক সহকারীর নামে। সোনালী ব্যাংকের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অ্যাকাউন্ট ছাড়া বাকিগুলোতে দেখা গেছে অবৈধ পথে কামাই করা টাকার হিসাব। হারিছ এবং অন্যদের নামে করা ক্যাশ টাকা ও সম্পত্তির মোট পরিমাণ কম করে হলে ২২.৫ কোটি টাকা পরিমাণ হবে। এগুলো ছাড়াও হারিছ ও অন্যের নামে লন্ডনে বাড়ি ও দোকান পাটের মালিকানা রয়েছে।
সুত্র
©somewhere in net ltd.