নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
আন্দোলনে নিহতরা 'জাতীয় বীরের' মর্যাদা পাবেন: খালেদা ও তার সন্তানরা কেন নিতে চাচ্ছেন না?
আন্দোলনে নিহতরা 'জাতীয় বীরের' মর্যাদা পাবেন : বিএনপি
যাযাদি রিপোর্ট
বর্তমান সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার বলে মনে করছে বিএনপি। পাশাপাশি চলমান গণআন্দোলনে সরকারি বাহিনীর হাতে যাদের প্রাণ দিতে হচ্ছে, তাদের 'জাতীয় বীর' এবং এই প্রজন্মের 'মুক্তিযোদ্ধা' হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করবে সংগঠনটি। একই সঙ্গে ওইসব পরিবার এবং তাদের সন্তানদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অবৈধ সরকার স্বীকৃতি ও সহানুভূতি আদায়ের প্রত্যাশা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দুয়ারে দুয়ারে ধরনা দিয়ে অবশেষে প্রত্যাখ্যাত হয়ে বর্তমানে নির্মম পতনের প্রহর গুনছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রত্যাখ্যাত অবৈধ সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
তিনি বলেন, তুমুল বিতর্কিত এবং ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচন থেকে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটকে জঙ্গিবাদের সমস্যা হিসেবে চিত্রিত করার অপকৌশল আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বাসযোগ্য করাতে ব্যর্থ হয়ে সরকার এখন চূড়ান্ত পর্যায়ের হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে।
সরকারকে হুশিয়ার করে দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, গণতন্ত্র মুক্তির এই আন্দোলনে মানুষের ভোটের অধিকার এবং মৌলিক ও মানবাধিকার আদায়সহ জনগণের সব ন্যায্য নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গণহত্যা, জুলুম-নির্যাতন এবং গণগ্রেপ্তার করে স্তব্ধ করা যাবে না।
সালাহ উদ্দিন বলেন, এ দেশের ইতিহাসই সাক্ষ্য দেয়, রক্ষীবাহিনীর গণহত্যা বাকশালকে রক্ষা করতে পারেনি। আপনারাও পেটোয়া পুলিশ-র্যাব-বিজিবি দিয়ে গণহত্যা চালিয়ে অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারবেন না।
বিবৃতিতে পুলিশ বাহিনীর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের কথা তুলে ধরে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত শুক্রবার বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার ছাত্রনেতা টিপু হাওলাদার এবং জাসাস নেতা কবির হোসেনকে ঢাকা থেকে বিনা কারণে গ্রেপ্তার করে আগৈলঝাড়ায় নিয়ে ঠা-া মাথায় খুন করে ক্রসফায়ারের আষাঢ়ে গল্প সাজিয়েছে পেটোয়া পুলিশ বাহিনী।
জাতীয় হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সময়ের পট পরিবর্তন হলে এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ উপযুক্ত আদালতে বিচারের আওতায় আনা হবে।
প্রধানমন্ত্রীপুত্র জয়ের সাম্প্রতিক মন্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, 'উত্তরাধিকার সূত্রে অসংযত জিহ্বার রোগে আক্রান্ত রাজনীতির নাবালক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত জয় সাহেবকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া প্রদান থেকে বিরত থেকে আগে বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ প্রদান করছি।'
তিনি বলেন, সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূলের হাতিয়ারে পরিণত করেছে। দেশের জনগণ এখন সরকারি শ্বেতসন্ত্রাসের করুণ শিকারে পরিণত হয়েছে।
গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ ও কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সরকারি বাহিনীর জুলুম-নির্যাতন এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অধিকাংশ তথ্য থেকে সরকার দেশবাসী এবং আন্তর্জাতিক মহলকে অন্ধকারে রাখছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বিবৃতিতে সালাহ উদ্দিন আরো বলেন, প্রতিনিয়তই ক্রসফায়ার, গুপ্তহত্যা, গুম, অপহরণ, গণগ্রেপ্তার এবং জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে সরকার প্রিয় মাতৃভূমিকে একটি রক্তাক্ত প্রান্তরে পরিণত করেছে।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, অতএব পিতার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন, দ্রুত পদত্যাগ করে দেশকে বাঁচান। অন্যথায় তীব্র গণআন্দোলনের মুখে নির্মম পতন অবশ্যম্ভাবী।
বিবৃতিতে গণতন্ত্রের মুক্তির দাবিতে চলমান অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে পালনের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে ২০ দলীয় জোটের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি ১৭৯ সাবেক সাংসদের
এদিকে, চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন অষ্টম জাতীয় সংসদের ১৭৯ জন সদস্য, যারা ওই সময় বিএনপি সমর্থিত সাংসদ ছিলেন। রোববার বিকালে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে এসব সাবেক সংসদ সদস্য বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগতকারী শেখ হাসিনার পদত্যাগই একমাত্র পথ। অনতিবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আপনার নিরাপদ প্রস্থানের পথ বেছে নিন। জাতিকে মহাবির্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করুন।
অষ্টম জাতীয় সংসদের সদস্য ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার, ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কামাল ইবনে ইউসুফ, শাজাহান সিরাজ, সেলিমা রহমান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন, আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর প্রমুখের নাম বিবৃতিতে উল্লেখ রয়েছে।
বিবৃতির শুরুতে সাবেক এসব সংসদ সদস্য বলেন, 'বিরাজমান পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, সরকারের ২০ দলীয় জোটকে দমন-পীড়ন এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে নিশ্চিহ্নকরণের যে সুস্পষ্ট অপচেষ্টা চলছে, তা শুধু স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারকেই ক্ষুণ্ন করেনি, বরং আইনের শাসনের অপমৃত্যু ঘটিয়ে মুক্ত রাজনীতির পথও রুদ্ধ করেছে।'
গত ৩ জানুয়ারি থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে 'অবরুদ্ধ' করা, ট্রাক দিয়ে তার কার্যালয়ের সামনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, বিদ্যুৎ-কেবল লাইনসহ নাগরিক সেবা বন্ধ করা, খাবার প্রবেশে বাধা দেয়া_ এসব বিষয় বিবৃতিতে তুলে ধরা হয়।
তারা বলেন, 'সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে এরূপ অন্যায় আচরণ সম্পূর্ণ বেআইনি ও অগণতান্ত্রিক; এবং বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সরকারের এহেন আচরণ সম্পূর্ণ মানবতাবিরোধী, অনৈতিক এবং মৌলিক মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সরকারকে আমরা এ ধরনের মানবতাবিরোধী কর্মকা- থেকে বিরত থাকার এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে খাবার সরবরাহে বাধা না দেয়ার জোর দাবি জানাই।'
দেশব্যাপী নাশকতার জন্য ক্ষমতাসীনদের দায়ী করে এসব সাংসদ বলেন, সারাদেশে সাধারণ মানুষের ওপর অগি্নবোমা নিক্ষেপ করে হতাহত করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করছে না। কিন্তু গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মিছিল থেকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে পুলিশের কাছে দেয়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, গণহত্যা বন্ধ করুন, বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকুন। আদালত আপনাকে 'রং হেডেড' উপাধি দিয়েছে। যদি বিএনপির অস্তিত্ব বিলীন করতে চান, তাহলে রায়টি আমলে নিন। আদালত স্বীকৃত কোনো রং হেডেড ব্যক্তির কাছে দেশের সার্বভৌমত্ব এবং মানুষ নিরাপদ নয়।
©somewhere in net ltd.