নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাধীনতা, মার্কিন দলিল ও সিআইএ এজেন্ট

২৫ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:০৬



বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সে সময়কার বিশ্বরাজনীতির কী প্রভাব পড়েছিল- এ নিয়ে কাজ করছি দীর্ঘদিন ধরে। প্রথমত আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একজন ছাত্র হিসেবে, দ্বিতীয়ত পেশাগত কারণে। সম্প্রতি অবমুক্ত করা গোপন মার্কিন নথিপত্রে এ সংক্রান্ত চমকপ্রদ কিছু তথ্য পেয়েছি, যার ফলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নতুন তথ্য সংযোজন করা এবং মুক্তিযুদ্ধকে নতুন তথ্যের আলোয় দেখা সম্ভব হবে। এ নথিপত্র বলছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেধে যাওয়া ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত করার পরিকল্পনা ছিল দিল্লির। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন আরও পিছিয়ে যেতে পারত।

এ বিষয়ে আলোচনার আগে সে সময়কার বিশ্বরাজনীতি তথা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মেরুকরণের চিত্রটি একপলক দেখে নেয়া প্রয়োজন। আমরা জানি, তখন বিশ্বরাজনীতি ছিল মোটের ওপর দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী বিশ্ব, অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব। সত্তরের দশকের শুরুর ওই সময়টিতে এ দুই পরাশক্তির মধ্যে তীব্র স্নায়ুযুদ্ধ অর্থাৎ যুদ্ধ না করেও যুদ্ধের মতো উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্বরাজনীতির মেরুকরণ নির্ধারিত হয়ে আসছিল। অনেক ক্ষেত্রে এ মেরুকরণ ঘটছিল মতাদর্শকে ছাপিয়ে বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থের আলোকে। দক্ষিণ এশিয়াও এর বাইরে থাকেনি। যেমন ভারত আদর্শগতভাবে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের অংশীদার হলেও পরিণত হয়েছিল সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্রে। আবার ভারতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে মিত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর একটি কারণ ছিল

পাকিস্তানের মাধ্যমে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। তবে বড় কারণটি ছিল, বলাই বাহুল্য, এ অঞ্চলে কমিউনিজমের প্রবেশ ঠেকানো।

জন্মসূত্রেই ভারত ও পাকিস্তান একে অপরকে হুমকি হিসেবে দেখে এসেছে। উভয় দেশ সব সময় চেয়েছে একে অপরের ক্ষমতা ও শক্তি খর্ব করতে। এ ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভারতের অনুকূলে একটি সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল। অনেকে বলে থাকেন, ভারত নিজ স্বার্থ বিবেচনায় মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সর্বোতভাবে সহায়তা দিয়েছে। অবশ্যই। একে বাঁকা চোখে দেখার কিছু নেই। এর পেছনে কাজ করেছে দেশটির জাতীয় স্বার্থ। জাতীয় স্বার্থকে ব্যক্তিস্বার্থের মতো নৈতিকতার আয়না দিয়ে বিচার করলে চলে না। একটি রাষ্ট্র তার জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে এটাই স্বাভাবিক এবং সে এ লক্ষ্যেই নির্ধারণ করবে তার পররাষ্ট্রনীতি ও নীতি-কৌশল। যেমন ১৯৭১ সালে আমাদের এই ভূখণ্ডের মানুষের সবচেয়ে বড় স্বার্থ নিহিত ছিল পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাঝে। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের নেয়া পদক্ষেপগুলো এর আলোকেই দেখা সমীচীন।

সম্প্রতি অবমুক্তকৃত গোপন মার্কিন নথিপত্রে প্রকাশ পেয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানকে ঘিরে ভারতের পরিকল্পনা ছিল ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। ভারত চেয়েছিল পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে এবং পশ্চিম পাকিস্তানকে ভেঙে খণ্ড-বিখণ্ড করে ফেলতে। শুরুতেই বলেছি, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় আসত না। দেশ স্বাধীন হতে আরও অনেক বেশি সময় লেগে যেত। সেটা কতদিন কে জানে! কারণ ভারতকে তখন পূর্ব ফ্রন্টের চেয়ে তার পশ্চিম ফ্রন্টেই বেশি মনোযোগ দিতে হতো। ভারতের ওই পরিকল্পনায় বড় ধরনের কাটছাঁট করতে হয় একজন মন্ত্রীর বিশ্বাসঘাতকতার কারণে। ইন্দিরা গান্ধীর মন্ত্রিসভার ওই সদস্য ছিলেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইয়ের এজেন্ট। তিনি ভারতের পরিকল্পনার কথা ৬ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ফাঁস করে দিয়েছিলেন। এতে ভারত বাধ্য হয় যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার বিষয়ে মনোযোগ দিতে।

মার্কিন নথিপত্র বলছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এক বৈঠকে তার শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীদের জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশকে স্বাধীন করা ছাড়াও ভারতের উদ্দেশ্য পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখলে নেয়া এবং পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা, যাতে দেশটি ‘ভবিষ্যতে আর কখনও ভারতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে না পারে।’

মুক্তিযুদ্ধ যখন তীব্র আকার ধারণ করে, তখন নিউইয়র্ক টাইমস প্রথমবারের মতো ভারত সরকারের অভ্যন্তরে একজন সিআইএ এজেন্টের উপস্থিতি সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয়। ডিসেম্বরে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের দক্ষিণ এশিয়া নীতি নির্দেশিত হচ্ছে ‘মিসেস গান্ধীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের রিপোর্টে’র ভিত্তিতে।

সিআইএ’র এ রিপোর্ট জানতে পেরে ক্রধোন্মত্ত প্রেসিডেন্ট নিক্সন বলেছিলেন, ‘এই মহিলা (ইন্দিরা গান্ধী) আমাদের বোকা বানিয়েছে।’ উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে ওয়াশিংটন ডিসিতে সর্বশেষ সাক্ষাৎকারে নিক্সনকে ইন্দিরা গান্ধী প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন, ভারত পূর্ব পাকিস্তানে হামলা চালাবে না। তিনি অবশ্য পশ্চিম পাকিস্তান ও পাকিস্তান

নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকে টার্গেট করার বিষয়ে

কিছু বলেননি।

সিআইএ’র মূল্যায়ন ছিল, ভারতের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ‘কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির আত্মপ্রকাশ ঘটার আশংকা আছে, যা পাকিস্তানকে ভেঙে তিন থেকে চারটি পৃথক রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারে।’

সিআইএ’র কাছ থেকে এ তথ্য পেয়ে নিক্সন প্রশাসন পশ্চিম পাকিস্তানকে ব্যাপক-বিস্তৃত ভারতীয় আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য সর্বাত্মক তৎপরতা শুরু করে। নথিপত্রে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, নিক্সন তখন সোভিয়েত ইউনিয়নকে এই বলে হুমকি দিয়েছিলেন যে, মস্কো ভারতকে পশ্চিম পাকিস্তানে হামলা চালানো থেকে নিবৃত্ত করতে ব্যর্থ হলে ‘বড় ধরনের সংঘর্ষ’ বেধে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (পরবর্তী সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী) হেনরি কিসিঞ্জার জাতিসংঘে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধির সঙ্গে গোপনে সাক্ষাৎ করে তাকে সিআইএ’র রিপোর্টের কথা জানান। কিসিঞ্জার তাকে এ কথা বলে উসকে দেয়ার চেষ্টা করেন যে, সোভিয়েত

সহায়তায় পাকিস্তানকে নিয়ে ভারত যে পরিকল্পনা করেছে, সেটা চীনের ক্ষেত্রেও একই ধরনের হামলার একটি ‘ড্রেস রিহার্সেলে’ রূপ নিতে পারে।

এ প্রেক্ষাপটে সোভিয়েত ইউনিয়নের ফার্স্ট ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভাসিলি কুজনেৎসভ দিল্লি সফরে আসেন। তিনি ভারতকে তার ‘পরিকল্পনা পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে’ এবং ‘আজাদ কাশ্মীরসহ পশ্চিম পাকিস্তানের কোনো অংশ দখলে নেয়ার চেষ্টা না করার’ অনুরোধ করেন। কারণ ‘উপমহাদেশকে কেন্দ্র করে একটি বড় ধরনের সম্ভাব্য সংঘর্ষের ব্যাপারে মস্কো উদ্বিগ্ন।’ শুধু তাই নয়, ভারত পশ্চিম পাকিস্তানে আক্রমণ করবে না মর্মে ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে একটি নিশ্চয়তাও আদায় করে নেন সোভিয়েত ফার্স্ট ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নিক্সনের কাছে এ সিদ্ধান্তের কথা দ্রুত পৌঁছে দেয়া হয়।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর নিক্সনকে যখন ভারতের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কথা জানানো হয়, তখন তিনি উল্লসিত হয়ে বলে ওঠেন : ‘আমরা এটা করেছি... রাশিয়ানরা আমাদের পক্ষে কাজ করেছে।’ পশ্চিম পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য কিসিঞ্জার সোভিয়েতদের অভিনন্দন জানান।

প্রশ্ন হল, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের যুদ্ধ

পরিকল্পনা ফাঁস করে দিয়েছিলেন যে গুপ্তচর, তার পরিচয় কী?

পরবর্তী বছরগুলোয় ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই এবং দু’জন উপপ্রধানমন্ত্রী- জগজীবন রাম ও ওয়াইবি চাভানের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে সিআইএ’র হয়ে কাজ করার অভিযোগ উঠেছিল। তবে এ ধরনের অভিযোগের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি এ বিষয়টি নিয়ে ভারতে আজ পর্যন্ত কোনো গঠনমূলক আলোচনাও হয়নি। তবে

অকাট্য মার্কিন নথিপত্র অবমুক্ত হওয়ার পর এটা স্পষ্ট যে, ১৯৭১ সালে ভারতের মন্ত্রিসভার ভেতর বাস্তবিকই সিআইএ’র একটি ‘বিশ্বস্ত’ সূত্র ছিল।

মার্কিন নথিপত্রে অবশ্য সূত্রের নাম সেন্সর করা হয়েছে। সেটা ঢেকে দেয়া হয়েছে কালো কালিতে। কারণ সিআইএ পরিচালকের এ ব্যাপারে ‘সংবিধিবদ্ধ বাধ্যবাধকতা’ রয়েছে। এ ধরনের এজেন্টের নাম বহু বছর পর প্রকাশ করা হলেও তা ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ওপর নিশ্চিতভাবেই বিরূপ প্রভাব ফেলবে এবং সিআইএ নিজেও নতুন এজেন্ট নিয়োগে সমস্যায় পড়বে।

ভারতের গোয়েন্দা বিভাগের একজন সাবেক পরিচালক বলেছেন, ওই গুপ্তচরের পরিচয় প্রকাশের ব্যাপারে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়ে থাকে। তবে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর আর্কাইভের কোথাও না কোথাও সেই ব্যক্তির পরিচয় রয়ে গেছে বলে মনে করা হয়।

আমরা, বাংলাদেশের মানুষ শুধু এটুকুই বলতে পারি, ভাগ্যিস ভারত সেদিন ওই পরিকল্পনা নিয়ে এগোয়নি! নয়তো বাংলাদেশের মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগ আরও দীর্ঘায়িত হতো। প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি বাড়ত। তাছাড়া পাকিস্তান খণ্ড-বিখণ্ড হওয়ার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্যহীনতা তৈরি হলে এ অঞ্চলে অস্থিরতাও আরও বেড়ে যেত। এতে বিঘ্নিত হতো শান্তি।

সুত্র

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:৫১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সবাই নিজের স্বার্থ নিয়ে কাজ করে কিন্তু ভারত যা করেছে তাতে আমাদের উচিৎ তাদের প্রাপ্য সম্মান দেয়া| আপনার পোস্ট ভালো লেগেছে| কিন্তু কিছু রেফারেন্স দিতে পারতেন| এটা জরুরী

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.