নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাধীনতা দিবস ও বর্তমান প্রেক্ষাপট

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৩

আজ ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হাজার বছরে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মাতৃভূমিকে হানাদারমুক্ত করতে বাংলার বীর সন্তানরা অস্ত্র কাঁধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রণাঙ্গনে। আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটেছিল বাঙালির সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের। ডাক এসেছিল দেশকে হানাদারের কবল থেকে মুক্ত করার। এই মার্চ মাস এলেই সেই উত্তাল দিনগুলোর কথা খুবই মনে পড়ে যায়।

এই মার্চেই আমাদের বাঙালিদের জীবনে অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণেই আজকের এই কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ থেকে শুরু করে খাজা নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে চুক্তি, ২১ মার্চে জিন্নাহর রেসকোর্সের ভাষণ, অপারেশন সার্চলাইট, ২৫ মার্চের গণহত্যার পথ পেয়েই অবশেষে আসে আমাদের সেই ২৬ মার্চ, স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর শুরু করে নিষ্ঠুর গণহত্যা। গ্রেপ্তার করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। সেই কালরাত থেকেই শুরু হয় মৃত্যু, ধ্বংস, আগুন আর আর্তনাদের পৈশাচিক বর্বরতা। কিন্তু ওই ঘোরতর অমানিশা ভেদ করেই- আমরা অবশেষে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে ঠিকই পৌঁছেছিলাম। আর দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য। আমরা পাই একটি স্বাধীন সার্বভৌম মানচিত্র, বাংলার আকাশে উড়তে থাকে গৌরবের লাল-সবুজের পতাকা। তবে এই স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি ৩০ লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে। দীর্ঘ নয় মাস বাংলার সাধারণ মানুষের রক্তে ভেজা বাংলার প্রতিটি স্তরের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে সে কাহিনী মনে পড়লে আজো গা শিহরিত ওঠে। সে সময় আমি বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট বর্তমান শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। থাকতাম সিরাজ-উদ-দৌলা হলের ৪ নম্বর কক্ষে। আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে ’৬৯ সালে মোটামুটি এবং ’৭০, ’৭১ সালে পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। ১৯৭০ এবং ’৭১-এর শুরুর দিকে তখন সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আওতায় সব আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলাম। ২৫ মার্চ রাতে আমি হলে ছিলাম। রাত ১২.৩০ মিনিটের দিকে প্রচণ্ড গুলির শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। চারপাশ থেকে মানুষের চিৎকারের শব্দ ভেসে আসছে। হলের টিনশেটের ওপর দিয়ে একের পর এক গুলি চলে যাচ্ছে। আমার রুমমেট রেজাউল করিম মনা ঘুম থেকে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। আমি তাকে বললাম চুপ থাক। তখন দুজনেই ভয়ে খাটের নিচে আশ্রয় নিলাম। রেডিও, টেলিফোন সব বন্ধ। রাতটা এভাবেই কাটল। পরদিন প্রায় সারাদিন কারফিউ। রাস্তাঘাটে থমথম অবস্থা। ২৬ মার্চ ভোরে রেজাউলের বাসা মনিপুরীপাড়া গিয়ে উঠলাম। কারফিউ থাকা সত্ত্বেও গণহত্যার সেই দৃশ্য দেখার জন্য ছাত্র-জনতার সঙ্গে আমি রেজাউলকে সঙ্গে নিয়ে ফার্মগেট চলে আসি। রাস্তায় বের হয়ে এলে পাকিস্তানি সেনারা ঘোষণা দেয় যে, ঢাকায় কারফিউ বলবৎ রয়েছে। কেউ রাস্তায় বের হলে দেখামাত্র গুলি করা হবে। পাকিস্তানি সেনাদের এ ঘোষণার পর আমরা সরে পড়লাম। সেদিন সারা শহরে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করে পাক বাহিনী। রিকশাওয়ালা, ভিখারি, শিশু, ফুটপাতবাসী কেউই তাদের ভয়াল থাবা থেকে রেহাই পায়নি। বস্তির পর বস্তি জ্বালিয়ে দেয়া হয় এবং প্রাণভয়ে পলায়ণপর আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাকে ব্রাশফায়ারে পাখির মতো হত্যা করা হয়। মিরপুর, মোহাম্মদপুরের বিহারিরা নিজেদের বাঙালি প্রতিবেশীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল হিংস্র উল্লাসে। রাতারাতি ঢাকা পরিণত হলো মৃত মানুষের শহরে। রোকেয়া হলের মেয়েদের ধরে নিয়ে যাওয়া হলো ক্যান্টনমেন্টে। ২৬ মার্চের সূর্য উঠলে দেখা গেল ঢাকা শহরজুড়ে নিরীহ মানুষের লাশ ও ভস্মীভূত ঘরবাড়ি। তাণ্ডব দেখে জ্বলে উঠল মুক্তিকামী মানুষের চোখ, গড়ল প্রতিরোধ। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে ‘জয় বাংলা’ তীব্র স্লোগান তুলে ট্যাঙ্কের সামনে এগিয়ে দিল সাহসী বুক। ছিনিয়ে আনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম অর্জন- মহান স্বাধীনতা।

যে লক্ষ্য ও আদর্শ নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, স্বাধীনতার ৪৪ বছরে এ সময়ে আমাদের আত্মজিজ্ঞাসার প্রয়োজন যে আমরা কী করতে পেরেছি, কী পারিনি, মুক্তিযুদ্ধে এত আত্মদান ও ত্যাগ-তিতিক্ষার পেছনে আমাদের যে লক্ষ্য ও স্বপ্নগুলো ছিল, সেসব কতটা পূরণ হয়েছে। আমরা জানি যে, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল গণতন্ত্র এবং অসাম্প্রদায়িকতা; আমাদের মুক্তি সংগ্রামের মর্মকথা ছিল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সব ধরনের অন্যায়-অবিচার, বৈষম্য থেকে মানুষের মুক্তি। বলাবাহুল্য, স্বাধীন দেশে আমরা দেখছি প্রায় আড়াই মাস ধরে বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের গণতন্ত্র রক্ষার নামে হরতাল-অবরোধ দিয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার পাঁয়তারা করছে। আর বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল মানেই হলো পেট্রলবোমা ছুড়ে মানুষ হত্যা, গাড়িতে আগুন দেয়া। এতে হতাহত হচ্ছে সাধারণ এবং শ্রমজীবী মানুষ। সবেচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। বিশ্বের কোনো স্বাধীন দেশে দায়িত্বশীল কোনো রাজনৈতিক দল এত লম্বা সময় যাবৎ হরতাল-অবরোধ করেছে কিনা আমার জানা নেই।

দেশ যখন অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানা সূচকে বিশ্বের প্রশংসা অর্জন করছে তখন নেতিবাচক রাজনীতি দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত, প্রায় সর্বক্ষেত্রে অবকাঠামোবিহীন সেদিনের সেই সদ্যজাত জাতির ৪৪ বছরের অর্জনের পরিসংখ্যানও নিতান্ত অপ্রতুল নয়। নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের করা মন্তব্য এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তার মতে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেয়ার মতো সাফল্য আছে বাংলাদেশের। বিশেষত শিক্ষা সুবিধা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার ও জন্মহার কমানো, গরিব মানুষের জন্য শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান এবং শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম অন্যতম। তাছাড়া দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ শুধু নয়- এখন চাল বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে এবং দেশ উন্নতির পথে এগিয়েই চলছে। গত বছর মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে একই সঙ্গে প্রায় তিন লাখ মানুষের অংশগ্রহণে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। উন্নতি আর সাফল্যের এ পর্যায়ে একদল অশুভ শক্তি পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে জেগে ওঠার চেষ্টা করছে। যা কোনোভাবেই সফল হতে দেয়া যাবে না। অশুভ শক্তির এসব চক্রান্ত সফল হলে আমাদের সোনার দেশ আবার পিছিয়ে যাবে বহু বছর।

নীতিহীন রাজনীতির এ নিষ্ঠুর চক্রচাল থেকে মুক্তি পাক আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ- এবারে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে এ হোক আমাদের দৃপ্ত শপথ। একাত্তরের চেতনায় প্রিয় বাংলাদেশ এগিয়ে যাক এটাই এবারের স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যাশা।
সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.