![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
১৯৭১ বাঙালির জীবনে স্বপ্ন দেখা, স্বজন হারানোর বিয়োগ বেদনা, পরিবার সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘুরে বেড়ানো; শেকড় থেকে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে কুঁকড়ে থাকার ভয়াবহ স্মৃতিতাড়িত ক্ষণ। অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে পঁচিশে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের পর বিধ্বস্ত দেশে বেঁচে থাকার লড়াই, আত্মগোপন, ট্রেঞ্চ খুঁড়ে আত্মগোপনে থাকা গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা- শরণার্থী হয়ে দেশত্যাগ করা কিংবা দেশে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পালিয়ে বেড়ানো। পাকিস্তানি বাহিনী দোকানপাট জ্বালিয়ে দিচ্ছে, মাথার ওপর চক্কর মারছে বোমারু বিমান। পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর আলবদর, রাজাকার, আলশামস বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের ধরিয়ে দিচ্ছে। যুবতী, নারী ধরে নেয়া হচ্ছে ক্যাম্পে। মৃতদেহ একসঙ্গে জড়ো করে কবর দেয়া হচ্ছে। স্বাধীনতার পর অনেক মা প্রতীক্ষায় থেকেছেন; তাদের সন্তান ফিরে আসেনি। আমাদের শহরে ‘মুকুল’ নামে এক যুবক মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। সে ফিরে আসেনি। তার মা ছেলের জন্য অপেক্ষা করতে করতে মারা গেছেন। বাংলাদেশের হাজারো গণকবর, স্মৃতিচিহ্ন, আজো চিহ্নিত হয়নি। অশ্রæসজল মায়ের কান্না স্বজনদের আহাজারি বাতাস ভারী করেছে। একসময় স্বজন হারানো মানুষ বেঁচে থাকার সংগ্রামে নিয়োজিত হয়ে নিজেই নিখোঁজ হয়েছেন। হারিয়েছেন পৃথিবী থেকে। বীরদের কথা আমরা কজন স্মরণ করি? যে স্বপ্ন প্রত্যয় নিয়ে বাঙালি একাত্তরের নয় মাস যুদ্ধ করেছিল তা কি পূরণ হয়েছে? সেদিনের টগবগে যুবক যদি বেঁচে থাকেন তাদের বয়স ষাট/সত্তর পার হয়েছে। কিন্তু কেন এমন হলো? স্বাধীনতার পর যে বীর দেশে প্রত্যাবর্তন করেছে, যে যোদ্ধা বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে বিভোর ছিল তার স্বপ্ন অধরা হয়ে থাকল। সে ধুঁকে ধুঁকে অসুখ, আর্থিক অনটন আর জীবন সংগ্রামে বিপর্যস্ত হয়ে পথে পথে আজো ঘুরে ফেরে। সাতচল্লিশের দেশভাগের পর মুসলিম মানসে যে জাতীয় জাগৃতি ঘটেছিল তা অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়ে। ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাঙালিকে বুকের রক্ত ঢেলে দিতে হয়েছিল। ষাট দশকে ৬ দফা-১১ দফায় মুক্তির স্বপ্ন জাগ্রত হয়। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির আত্মত্যাগ, জীবন উৎসর্গ স্বাধীন বাংলাদেশের মাইলফলক হয়ে আছে। বাঙালি দুর্যোগ দুর্বিপাকে এক হয়। একাত্তরে মাহেন্দ্রক্ষণে সম্প্রদায় ও জাতিগত দ্ব›দ্ব ভুলে বাঙালি সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আন্তর্জাতিক সমর্থন, ভারত-রাশিয়ার ঐকান্তিক সহযোগিতায় আমাদের মুক্তিবাহিনী মিত্র বাহিনীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে যুদ্ধ করেছিল। ১৯৭২-১৯৭৫ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির স্বরূপ নিয়ে বিস্তর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মডেল তার কাছে গ্রহণীয় হয়ে উঠেছিল। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সংসদীয় গণতান্ত্রিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে বহুদল নিয়ে জোট ভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন গঠন করে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
তারপর ২১ বছর ইতিহাসের চাকা উল্টো পথে ঘুরেছে। রাজনীতিতে স্বাধীনতাবিরোধীরা আবির্ভূত হয়ে ইতিহাস বিকৃতিতে অংশ নেয়। সামরিক ও স্বৈরশাসক ক্ষমতা দখল করে সংবিধানে পরিবর্তন আনে। আশির দশকে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠন করে নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে স্বাক্ষর করে। ২০০১ সালে ক্ষমতাসীন বিএনপি জোট জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। ২১ বছর স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করে পাঠ্যপুস্তক ও প্রচার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ২০০০ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার আসামিদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করান। ২০১৪ সালে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচারকাজ শুরু হয়। ২০১৫ রাজনীতিতে বিএনপি-জামায়াত জোটের অসহযোগ কর্মসূচির নামে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ, বোমা বিস্ফোরণ, যানবাহন ভাঙচুর, হরতালে নিরীহ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তন, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ থাকার কারণে অভিভাবক, শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন।
স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছর পর যে উন্নতি, সাফল্য ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করার কথা ছিল তা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া যোদ্ধারা আজো ক্ষুধা, দারিদ্র্য নিয়ে জীবন ধুঁকে ধুঁকে মরছে। স্বাধীনতাবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত। স্বাধীন ভূখণ্ড লাভ কিংবা নতুন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ যথেষ্ট নয়। পাটশিল্পের বাজার বেদখল হয়ে গেছে। গার্মেন্টস শিল্পের বাজার ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে নানা রাজনৈতিক কর্মসূচি অবরোধ, হরতালের কারণে। জনসংখ্যা বাড়ছে। ঢাকা কেন্দ্রিক মানুষের যাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। কর্মসংস্থানের পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি করা যায়নি। ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের শুশ্রƒষা ও পৃষ্ঠপোষকতা বাড়েনি। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য দলমতনির্বিশেষে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার বিকল্প নেই। মত-মতান্তর থাকবে রাজনীতিতে। তাই বলে রাজনৈতিক দলসমূহ এমন কর্মসূচি কেন গ্রহণ করবে যাতে উৎপাদন ব্যাহত হয়? শিশু-কিশোরদের মুখে হাসি ফোটানো শিক্ষা ব্যবস্থা গতানুগতিক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের সঙ্গে যারা স্বাধীনতা অর্জন করেছিল সেসব রাষ্ট্রের দিকে তাকালে দেখা যাবে তারা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করে বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে উঠেছে। ক্রিকেট ও কম্পিউটার বিজ্ঞানে আমাদের সাফল্য এসেছে ঠিকই কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি।
১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য পাকিস্তান ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনা রব্বানি অতীতের কথা ভুলে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীর অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। তাদের সহযোগী আলবদর, আলশামস, রাজাকারদের মানবতাবিরোধী অপরাধের শাস্তি এই বাংলায় হতেই হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সোনার বাংলা গড়ার ব্যাপারে অগ্রবর্তী হতে হবে। বাংলার মাটি উর্বরা। উর্বরা মাটিতে ফসল ফলাতে হবে। ক্ষুদ্রশিল্পের বিকাশ প্রসার ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে আমাদের আগামী দিনের অবদান ভবিষ্যতে বিশেষ আসনে আমাদের বিশ্ব দরবারে স্থায়ী করবে- এই-ই আমাদের প্রত্যাশা। আমাদের কণ্ঠে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান। বাঙালি লড়াকু, বীরের জাতি। কর্মী ও বীর সোনার বাংলায় ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূর করে পৃথিবীতে লাল-সবুজ পতাকা উড্ডীন করবে এ ব্যাপারে আমাদের সংশয় নেই। আমরা অপেক্ষায় আছি।
©somewhere in net ltd.