নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিটি নির্বাচন থেকে সরে আসতে পারে বিএনপি!

৩১ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:৫৪

রুমানা জামান : আসন্ন সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিলেও সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি না হলে যে কোনো সময় সরে আসতে পারে বিএনপি। এমন সিদ্ধান্ত বিবেচনায় রেখেই নির্বাচনী ট্র্যাকে ছুটতে শুরু করেছে দলটি। সরকার ও প্রশাসনের অবস্থান দেখেই দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে নির্বাচনে থাকা না থাকার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তারা। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না হলে নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবে। দলের একাধিক নেতাকর্মী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানায়, আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনে ইসির নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরির অপেক্ষায় বিএনপি জোট। পরিস্থিতি দেখে একটি প্রতিনিধিদলের মাধ্যমে ২-১ দিনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। ওই চিঠিতে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা, প্রার্থীদের সমান প্রচারণার সুযোগ দেয়া, ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটদানের নিশ্চয়তার পাশাপাশি খালেদা জিয়ার স্বাভাবিক চলাফেরার সুযোগ চাইবে বিএনপি। এছাড়া কারাবন্দী সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে মুক্তি, নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের সব অফিস খুলে দেয়া, প্রার্থীদের জামিনে বাধা সৃষ্টি না করাসহ বেশকিছু দাবিও রয়েছে দলটির। এসব বিষয়ে কমিশনের আশ্বাস পেলেই নির্বাচনী মাঠে নামবে তারা। তা নাহলে নির্বাচন থেকে তাদের সরে আসার সম্ভাবনাই বেশি। নিয়ে ২-১ দিনের মধ্যে খালেদা জিয়া এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনও করতে পারেন।

এছাড়া বিএনপির একাধিক নেতা জানান, বিএনপি নির্বাচনে গেলেও বয়কটের পথ খোলা রাখবে। সরকারের আচরণ দেখে যদি মনে হয় তারা নির্বাচনে কারচুপি বা তাদের প্রার্থীকে জয়ী করতে মরিয়া, সে ক্ষেত্রে বিএনপি তাৎক্ষণিক নির্বাচন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেবে। তারা জানান, আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আমরা সিটি নির্বাচনে যাচ্ছি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনে সরকারের আচরণের ওপর নজর

রাখছেন। তিন সিটি কবজায় নিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের নীতিনির্ধারক মহলে চলছে পরিকল্পনা। ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিনিয়র ও জুনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে আলাদা আলাদা কমিটি গঠন করে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকার ও প্রশাসন কতটা ভূমিকা রাখছেন এ বিষয়ে তদারকির নির্দেশ রয়েছে তারেকের। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না হলে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করবে- এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নেতারা।

এদিকে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভিন্ন কর্মকৌশল নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। গত ৩ মাসের আন্দোলনের ক্ষত কাটিয়ে ওঠাই এখন মূল লক্ষ্য তাদের। কিন্তু নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত না হলে এই ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে নতুন নতুন কর্মসূচি দেবে তারা। সুদূরপ্রসারী চিন্তা থেকেই এটি করা হচ্ছে। বিএনপির নেতারা মনে করেন, সরকার বিএনপিকে ফাঁদে ফেলতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আয়োজন করেছে। তাই তারাও পাল্টা কৌশল নেবেন, যাতে সরকারই উল্টো বেকায়দায় পড়ে।

দলটির বেশিরভাগ নেতাদের মতে, নির্বাচনী প্রচারের আড়ালে মূল লক্ষ্য থাকবে আন্দোলনে ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার পাশাপাশি সংগঠনকে শক্তিশালী করা। গত আন্দোলনে রাজধানীতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে না পারার দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানে কাজ করা হবে। প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচার সমন্বয় করতে নেতাদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব দেয়ার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। ওই নেতারাই পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করবেন। এ জন্য থানা ও ওয়ার্ডে ছোট ছোট সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের রাজপথে নামানোর কৌশল নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি মনোবল ফিরে পাবে বলে মনে করছেন দলটির হাইকমান্ড।

দলীয় সূত্রমতে, নির্বাচনের কৌশলের ব্যাপারে দলের হাইকমান্ড তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত নিয়েই পরিকল্পনা মাফিক এগোচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ঢাকার রাজপথ দখলে প্রয়োজনে এবার তৃণমূলকেই ঢাকামুখী করা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তারা। এ বিষয়ে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনের একটি আলোচনা সভার বক্তৃতায় সম্প্রতি তৃণমূলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরই দলের সিদ্ধান্ত এবং আন্দোলন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে তৃণমূল নেতাদের চাপেই অবশ্য অবরোধের পাশাপাশি হরতালও বহাল রাখা হয়েছে। কারণ, হরতাল না থাকলে তৃণমূলে গুম, খুনসহ গ্রেপ্তার-হয়রানি বাড়বে বলে আশঙ্কা মাঠ পর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মীদের। এসব বিবেচনায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর বাদ দিয়ে সারা দেশে ফের ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকা হয়।

বিএনপির নেতারা জানান, ঢাকা সিটিতে বিরোধী নেতাকর্মীরা একেবারেই কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন। সবার ওপর মামলা ঝুলছে। বাড়িতে বাড়িতে পুলিশি তল্লাশি চলছে। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখেও নির্বাচনের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে নতুন কৌশলে হাঁটছে বিএনপি। কারণ এবার ভোটারদের নীরব ভূমিকার ওপর বেশি আস্থা রাখতে চায় শীর্ষ নেতৃত্ব। এই কৌশলকে সামনে রেখে ঢাকায় নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে তৎপরতা শুরু করেছে বিশিষ্ট নাগরিকদের সংগঠন শত নাগরিক কমিটি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের মতো ঢাকায় সুনির্দিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন ঘোষণা দিতে পারে শত নাগরিক কমিটি। নাগরিক সমাজের ব্যানারে নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে বিশিষ্ট নাগরিকদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা হবে। নেতারা জানান, নির্বাচনী পরিবেশের ওপরই সর্বাধিক জোর দেবে ২০ দল।

জানা যায়, সহসাই আন্দোলন থেকে সরে আসার কোনো ঘোষণা দেবে না দলটি। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আন্দোলন শিথিল রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকায় কোনো কর্মসূচি না থাকলেও নির্বাচনী প্রচারণা চালানোটাও একটা আন্দোলনের কৌশল হিসেবে দেখা হবে। পাশাপাশি এ দুই মহানগরীতে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করতে চাইছে দলটি। সেখানেও তারা জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি তুলে ধরে বক্তৃতা করবে। দেশের অন্যসব জেলায় আন্দোলন চালিয়ে যাবে তারা। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কর্মসূচি দিলে তারা একদিকে দাবিও আদায় করতে পারবে, অন্যদিকে তারা মিডিয়াতেও নিজেদের সংবাদের আধিপত্য রাখতে পারবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. মাহবুবুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, বিএনপি সব সময় নির্বাচনমুখী দল। এ কারণেই আন্দোলনের পরিপূরক হিসেবেই আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি আমরা। কিন্তু নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত না হলে বিএনপির প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় বাধাগ্রস্ত হবেন। তিনি আরো বলেন, বিএনপি চাইবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে আমাদের সব চেষ্টাই বহাল থাকবে। সরকার যদি সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু নির্বাচন চায় তাহলে সেই পরিবেশই তৈরি করবে। তবে এখনো পর্যন্ত তার কোনো লক্ষ্যই দেখা যাচ্ছে না। সরকার যদি বিএনপিকে কোনো ফাঁদে ফেলার কৌশল নেয়, বিএনপিও পাল্টা কৌশল নিতে বাধ্য হবে। এমনকি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তও নিতে পারে।

শত নাগরিক কমিটির প্রধান ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করার পর আমরা এটা বুঝতে পেরেছি তিনি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চান। আর এ ক্ষেত্রে তিনি কৌশলে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষেই মত দিয়েছেন। তবে এই মুহ‚র্তে নির্বাচনের জন্য আগে পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ না হলে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের মতো প্রশ্নবিদ্ধ হবে। জনগণ তা সহ্য করবে না। এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশন নতুন করে ভাববে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশের পাশাপাশি আন্দোলন শিথিল করেই নির্বাচনে যাওয়াটা ভালো। এরপরও যদি দেখা যায় সরকার ও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করছে না সে ক্ষেত্রে তখন আবার কর্মসূচি দিয়ে নির্বাচন বর্জন করা যাবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারমস্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে সিটি নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের বিপক্ষে। এতে চলমান আন্দোলনের ব্যত্যয় ঘটবে। নির্বাচনে গেলে গত আড়াই মাসের আন্দোলন কার্যত জিরো বলে বিবেচিত হবে। তবে নির্বাচনে গেলে অবশ্যই সুষ্ঠু পরিবেশে নিশ্চিত করে আগানোই ভালো।

দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের নেতাকর্মীদের কাছে এখন সব বার্তা স্পষ্ট। তারা নির্বাচনের জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে মাঠে নামার আগে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ দরকার, যা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। তবে এবারের নির্বাচনে বিএনপি কৌশলে এগোচ্ছে বলে জানান তিনি।
http://www.bhorerkagoj.net/print-edition/2015/03/31/26075.php

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.