![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
তিন মাস পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া তার নিজ বাড়িতে ফিরে গেলেন। স্বাভাবিক সময়ে এমন কোনো ঘটনা জাতীয় গণমাধ্যমের খবর হওয়ার যোগ্য ছিল না। কিন্তু খালেদা জিয়ার বাড়ি ফেরার খবরটি দেশের বেশিরভাগ গণমাধ্যমের প্রধান শিরোনাম হয়েছে। বলতে কি_ তার সঙ্গত কারণ ছিল।
গুনে গুনে ৯২টি দিন কাটিয়েছেন বিএনপি নেত্রী গুলশান এলাকায় তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে। ৩ জানুয়ারি তিনি এ বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন শেষবারের মতো। ৫ জানুয়ারি তাকে বাড়ি থেকে বেরোতে বাধা দিয়েছে পুলিশ 'নিরাপত্তা'র প্রশ্নে। ৬ জানুয়ারি থেকে ডাক দিয়েছেন তিনি সরকারবিরোধী আন্দোলন। তারই ডাকে টানা ৯০ দিন রাত-দিন যানবাহন অবরোধ চলেছে। চলেছে প্রতি সপ্তাহেই পাঁচ দিন করে হরতাল। না, অবরোধ বা হরতালই শেষ কথা নয়। এসব কর্মসূচির মূল টার্গেট ছিল সাধারণ বাসযাত্রী, খেটে খাওয়া ট্রাক-টেম্পোর শ্রমজীবী মানুষ_ যে বর্বরতা ছিল নজিরবিহীন। বলার অপেক্ষা রাখে না, আন্দোলনকারীদের মূল দাবি ছিল নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচন।
কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের কর্মসূচি পালন করবে; তা নিয়ে কারও কিছু বলার থাকে না, যদি তা শান্তিপূর্ণ হয়, নিয়মতান্ত্রিক হয়। কিন্তু দীর্ঘ তিন মাস বা ৯০ দিন ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তে টানা যে সহিংসতা ও নাশকতায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে, নজিরবিহীন সম্পদহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার প্রেক্ষাপটেই খালেদা জিয়ার বাড়ি ফেরার খবরটি মূল্যায়িত হয়েছে। প্রায় সবাই বলাবলি করছেন, শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে তিনি বাড়ি ফিরলেন।
খালেদা জিয়া কোনো সাধারণ নাগরিক নন। তিনি দেশের একাধিকবারের প্রধানমন্ত্রী। যতদিন ইচ্ছা, যেখানে ইচ্ছা তিনি স্বচ্ছন্দে বসবাস করবেন। এ তার অধিকার। কিন্তু তিনি নিজেই এমন একটি ধারণা তৈরি করেছিলেন যে, আন্দোলন সফল করেই তিনি বাড়ি ফিরবেন। সে আশা তার পূরণ হয়নি। আন্দোলন ব্যর্থ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে। এমনকি বর্তমান সরকারের অধীনেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুটি নির্বাচনে যোগ দিয়ে ক্ষমতাসীনদের বৈধতা স্বীকার করে নিতে হয়েছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠবে_ এ রকম একটি নৈরাজ্যকর আন্দোলন পরিচালনার পরও কি বিএনপি বা তার জোটের দাবি আদায় হয়েছে? তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হয়েছে? বলাই বাহুল্য, হয়নি। কাজেই অগণিত মৃত্যু, অগণিত মানুষের দুঃসহ শোক, অসহনীয় ভোগান্তি, নির্বিচার সম্পদহানি ও জননিরাপত্তার ব্যাঘাত ঘটানো আন্দোলনের চরম নেতিবাচক বিষয়গুলো এখন সামনে আসবে বৈকি। কিছু কিছু কাগজে বলা হয়েছে, আন্দোলনের চূড়ান্ত ব্যর্থতায় বিএনপি দলটিতে আত্মসমালোচনার ঝড় বইছে। দলের কিছু নীতিনির্ধারকের মাঝে এ ঝড় নাকি দুর্বার হয়েছে। আমি সেদিকে যেতে চাইনি। কারণ বিষয়টি নিছকই তাদের নিজস্ব। কিন্তু এ প্রশ্ন সঙ্গত কারণেই করতে হবে_ এমন একটি ভয়ঙ্কর আন্দোলন পরিচালনা করে দল হিসেবে কী পেল বিএনপি? না, কেবল বিএনপি কেন; দেশ-জাতি বা গণতন্ত্র কী লাভ করল সেটিও দেখার বিষয়।
দেখার এই বিষয়গুলো আদপেই জয়-পরাজয়ের নয়। প্রশ্নগুলো আলোচিত হওয়া উচিত বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও তার গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্বার্থে। কারণ বিএনপি-জামায়াতের এই নৈরাজ্যকর আন্দোলনের ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকারের সীমা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর অবসান হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় রাষ্ট্রের নিয়মতান্ত্রিকতা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য।
তিন মাসের সহিংস আন্দোলনে (বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যমতে) ১৩৮ জন মানুষ নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে একমাত্র পেট্রোল বোমার আগুনে মারা গেছে ৭০ জনের ওপর। বোমাধারী বা সন্ত্রাসীর 'ক্রসফায়ারে' মৃত্যু ৩০ জনের মতো, সংঘর্ষে ২৮ জন। এখানেই শেষ নয়; আগুনে পুড়ে হাসপাতালে পড়ে আছে এখনও তিন শতাধিক মানুষ। নাশকতার শিকার দুই হাজারের ওপর যানবাহন। রেলপথেরও ৮০টি স্থানে চালানো হয়েছে ভয়ঙ্কর নাশকতা। এই তিন মাসের বেশিরভাগ সময় স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমিক পরীক্ষা চালাতে হয়েছে একের পর এক তারিখ পরিবর্তন করে। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ কত হাজার কোটি টাকা, তার হিসাব নিশ্চয়ই করবে সংশ্লিষ্ট মহল।
বিএনপি ও তার জোটভুক্তরা ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন বর্জন করেছিল। সংবিধান পরিবর্তন করে তাদের দাবিমতে আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি ফিরিয়ে আনা হয়নি বলে তারা শুধু ভোটই বর্জন করেনি; নির্বাচন বন্ধ করতে নজিরবিহীন নৈরাজ্য চালিয়েছিল। ভোটকেন্দ্র্রে আগুন, আক্রমণসহ ভোট কর্মকর্তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তাদের কর্মীরা। তারপরও তারা ঠেকাতে পারেনি। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় দেশে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে।
যদি বিএনপি দলটি গত বছরের সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নিত, ফলাফল কী হতে পারত জানি না; তবে এটুকু বলা যায়, দেশে আজ যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তার পরিবর্তন ঘটত নিঃসন্দেহে। কিন্তু খালেদা জিয়া সে সুযোগ গ্রহণ করেননি। তিনি আপসহীন বটে। তবে একজন নেত্রী হিসেবে তার জানা উচিত যে, আপসযোগ্য বিষয়েও আপসহীনতা ভালো লক্ষণ নয়। এতে মন্দ ফলই বয়ে আনে। একটি দেশের সাধারণ জনতা সবাই সরকারের সমর্থক হয় না বা তা হওয়ার কারণও নেই। সে কারণেই গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সরকার ও বিরোধী দল প্রতিপক্ষ হওয়া সত্ত্বেও তারা পরিপূরক। সে কারণেই বিরোধীরা সরকারের সমালোচনা করার অধিকার রাখেন। সে কারণেই তারা আন্দোলন করতে পারেন। এ অধিকার তাদের সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক।
কিন্তু খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অধিকারের নামে যে আন্দোলনটি বিগত তিন মাস ধরে চালানো হয়েছে তাকে দেশের বৃহত্তর মানুষ, একমাত্র দলীয় কর্মী ছাড়া, গণতান্ত্রিক আন্দোলন বলে গ্রহণ করতে পারেনি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, এ আন্দোলনের দাবি নতুন নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার কথা থাকা সত্ত্বেও প্রথম দিন থেকেই এটি ছিল ভয়ঙ্করভাবে সহিংস ও নৈরাজ্যকর। এর মাধ্যমে গোটা জনগোষ্ঠীকে পণবন্দি করা হয়েছিল। বলতে গেলে প্রথম দিন থেকেই মানুষ মারার কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশের মতো অস্থির রাজনীতির দেশেও আগে কখনও ঘটেনি।
মোট কথা, আন্দোলনটি পরিচালিত হয়েছিল এমন এক দুর্ভাগ্যজনক পরিকল্পনায়_ কে মরল বড় কথা নয়, এভাবে মানুষ মরতে থাকলে, নৈরাজ্য-অস্থিরতা ও জনজীবনের অনিরাপত্তা বাড়তে থাকলে এক সময় না এক সময় পরিস্থিতি আন্দোলনকারীদের অনুকূলে যাবেই কিংবা অসাংবিধানিক পন্থায় সরকারের পতন ঘটবেই! বলাই বাহুল্য, এমন ন্যক্কারজনক মানসিকতা শুধু রাজনীতির জন্য নয়; গোটা সমাজের জন্যই বিপর্যয়ের। কিন্তু আন্দোলনকারীদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দৃঢ়তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সক্ষমতা ও গণমানুষের সচেতনতা শেষ পর্যন্ত ভয়ঙ্কর এ কৌশলকে ব্যর্থ প্রমাণ করেছে। আরও বলা যায়, যেসব সাধারণ নিরপরাধ মানুষ পেট্রোল বোমায় মারা গেছে, যারা হাসপাতালে মৃত্যুর প্রহর গুনছে, যে পরিবারগুলো সর্বস্বান্ত হয়েছে, তাদের অভিশাপে বিচূর্ণ হয়েছে নৈরাজ্যকারীদের স্বপ্ন।
দৃশ্যতই, গত দুই বছরে বিএনপি নেত্রী দ্বিতীয়বারের মতো বড় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলেন। প্রথমবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ঠেকানোর ব্যর্থতা এবং দ্বিতীয়বার ২০১৫-এর শুরুতে সরকারকে সহিংস আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত করার ব্যর্থতা। আরও বলা যায়, ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের ঐতিহাসিক বিচারকে ভণ্ডুল করতে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি যৌথভাবে যে নৈরাজ্য চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল, সেটি ছিল তাদের প্রথম বিপর্যয়। সেবারের আন্দোলনে কার্যত তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রকেই আক্রমণ করে বসেছিল।
বিস্মিত হওয়ার মতো আরও একটি বিষয় আছে। এ রাষ্ট্রে যেন আইন কারও কারও জন্য, ক্ষমতাবানরা যেন ব্যতিক্রম! এ রকম দৃষ্টান্ত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয় না। যেভাবে খালেদা জিয়া তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার শুনানিতে অনুপস্থিত থেকেছেন, যেভাবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও থানা পর্যন্ত তা পেঁৗছেনি, বলার অপেক্ষা রাখে না, অন্য কোনো মানুষ হলে কী ঘটত! এর পরও স্বস্তির কারণ আছে যে, বিএনপি নেত্রী শেষ পর্যন্ত আদালতে গেছেন এবং আইনসিদ্ধ পন্থায় তার জামিন মঞ্জুর হয়েছে।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি শেষ পর্যন্ত প্রার্থী দেওয়ায়, অর্থাৎ ভোটে যোগ দেওয়ায় অনেকেই ভাবছেন, দেশের রাজনীতিতে একটা পরিবর্তন সূচিত হবে। হয়তো হবে, আশা করি রাজনৈতিক অঙ্গনে সুস্থতা ফিরে আসুক। তবে বিএনপি নেতৃত্ব যেভাবে আন্দোলনকে গুরুত্বহীন ও ভয়ার্ত করে ফেলেছিলেন, তাতে মুখরক্ষার আর কি কোনো সুযোগ ছিল তাদের? এটিও বলা যায় যে, সিটি নির্বাচন ঘোষণাতে মুখরক্ষার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে মানতেই হবে, নেতিবাচক কর্মকাণ্ডেরও কিছু ইতিবাচক ফল হয় কখনও। এ ধরনের আন্দোলনের ফলে সমাজের সচেতনতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জাগরিত হয়েছে, ভাবতেই হবে। সাধারণ মানুষ নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতে আর কেউই এ ধরনের আন্দোলনের কথা মুখে আনতে একশ'বার ভাববেন। আমার বিশ্বাস, খালেদা জিয়ার তিন মাসের এই আন্দোলন জাতীয় রাজনীতিতে একটি বড় শিক্ষা হয়ে থাকবে। কারণ তারা এমন একটি আন্দোলন করেছেন, যাতে না ছিল তাদের নেতাকর্মী বা সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা। এ আন্দোলনটি ছিল মূলত সন্ত্রাসনির্ভর, জনবিচ্ছিন্ন, যাকে গ্রহণযোগ্যতা দেওয়ার সুযোগ নেই।
যে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে সাফল্য-ব্যর্থতা থাকে। কেউ যদি তাদের ব্যর্থতার কারণ মূল্যায়ন করেন তাহলেই লাভ। কিন্তু কথা হচ্ছে, এই যে অগণিত নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হলো, এই যে শত শত মানুষ পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হলো, শত শত সাধারণ পরিবার, যাদের সঙ্গে রাজনীতির কোনো যোগ নেই, বিপন্ন-অসহায়-ক্ষতিগ্রস্ত হলো, শত শত যানবাহন ধ্বংস করা হলো, অফিস-আদালতে আগুন লাগানো হলো, তার কী হবে? এসব মানুষের মৃত্যু ও যাতনা কি রাজনীতির নামে বলি হবে, নাকি এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের বিচার হবে? আমি মনে করি, বাংলাদেশে যদি সত্যিকার আইনের শাসন রাখতে হয়, যদি গণতন্ত্রকে স্থায়ী আসন দিতে হয়, তাহলে এসব অপকর্মের বিচারের কোনো বিকল্প নেই। রাজনীতির কোনো সমীকরণেই এসব হত্যা ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতাকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
সুত্র
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৫
নীল আকাশ ২০১৪ বলেছেন: 'গণতন্ত্র' 'আপোষহীন নেত্রী' 'উন্নয়ন' কি ও কত প্রকার, জনগণ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।