নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিএনপির বিলাপ

২৬ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:৫৯

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল তিনটি সিটি নির্বাচনের পর বিএনপির এক সাবেক তুখোড় নেতা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান অনলাইন পত্রিকায় বিএনপির দলীয় অবক্ষয়ের চিত্র তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন। ইদানীং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেছেন, 'বিএনপি দুর্নীতিগ্রস্ত, কলুষিত ও রুগন।' তারপর বলেছেন, 'বিএনপি জিয়াউর রহমানকে নির্বাসিত করেছে। বিএনপি জিয়ার আদর্শ চর্চা করে না। জিয়ার আদর্শ থেকে বিএনপি আজ হাজার হাজার মাইল দূরে সরে গেছে। এজন্য বিএনপি দুর্নীতিগ্রস্ত, স্বজনপ্রীতি, কলুষিত, অরষ্ঠিত আর রুগন দলে পরিণত হয়েছে।' (ইত্তেফাক-৫/৬/১৫)। দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশ পেয়েছে 'আমার মনে তোমরা যে আঘাতটা দিছো, এটাওতো কাবার ঘরে লাগছে রে ভাই। তুমি আবার প্রধানমন্ত্রী হইতে চাও। প্রধানমন্ত্রী হয়ে আবার আঘাত দিবা এটা তো আল্লাহ সহ্য করবে না। আমার মনে এত আঘাত আমি সহ্য করবো না।
আক্ষেপের এই সুর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমানের কণ্ঠ থেকে শোনা গেল। সাম্প্রতিক ফাঁস হয়ে যাওয়া এক টেলি আলাপ থেকে মাহবুবুর রহমানের এই আক্ষেপের কথা জানা যায়। দলের সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে ওয়ান ইলেভেনের সময় জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে গেলে ভিন্ন মতাবলম্বীরা বিএনপির এই নেতাকে জুতোপেটা করে। আর তাতেই তিনি মনের গভীরে ভীষণ আঘাত পান, যা এখনো পুষে রেখেছেন। হৃদয়ের সেই রক্তক্ষরণ এত বেশি যে, খালেদা জিয়াকে তিনি আর প্রধানমন্ত্রীর আসনেও দেখতে চান না।' (১২/৬/১৫)।
বিএনপির চিরস্থায়ী কমিটির আরেক প্রভাবশালী সদস্য ড. আবদুল মঈন খান এক বক্তৃতায় বলেছেন, 'এবার ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করলে মুখোশ খুলে দেয়া হবে।'
জিয়াউর রহমানের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এক অনুষ্ঠানে এই হাস্যকর বক্তব্য দিয়েছেন ড. মঈন খান।
তিনি বলেছেন, সরকার দলীয় লোকজন বলার চেষ্টা করছে, আমরা ইসলামী দল। কিন্তু পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমরা ইসলামী দল নই। তবে আমরা ধর্মহীন নই।' (জনকণ্ঠ-১২/০৬/১৫)। যে দলটি ধর্ম ব্যবসার রাজনীতি করে রাজনৈতিক পুঁজি গঠন করেছে সেই দলের এক নেতা গলা উচিয়ে বলছেন, 'ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করলে মুখোশ খুলে দেয়া হবে।' এই হুংকার শুনে হাসব না কাঁদব তা ভেবে পাচ্ছি না। জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বকে যারা কবর থেকে টেনে তুলল, দালাল আইন বাতিল করল, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ছাড়পত্র দিল, জাতির পিতাকে ইসলামের শত্রু বানাল, সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভ 'ধর্মনিরপেক্ষতা'কে নির্বাসনে পাঠাল, তাবৎ ইসলামের নামধারী স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোকে বহুদলীয় রাজনীতির নামে আওয়ামী লীগের কল্লা কাটার জন্য দাঁড় করানো হলো, আবার এরাই নাকি ধর্মীয় রাজনীতির মুখোশ খুলে দেবে। দৈনিক জনকণ্ঠের 'উবাচ' কলামের কথাটুকু তুলে ধরছি, 'দেশে ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির প্রবক্তাই বিএনপি। জামায়াত-হেফাজতের সঙ্গে এই সখ্য হালে নয়, বরং দেশে জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন বিএনপি নামের এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা। নিজের ক্ষমতার চেয়ারকে পোক্ত করতে জিয়াউর রহমান সব থেকে বেশি ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়েছেন, উদার সংস্কৃতিমনা বাঙালির মনে নানাভাবে বক্ররেখা টেনে দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তার বাইরে ওরা হিন্দু আমরা মুসলমান এমন ধর্মীয় বিভেদ ছড়িয়ে দিয়েছেন। এই তো সেদিনের কথা, জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তারা, আবার এখন সেই জামায়াতের অর্থে এবং সাংগঠনিক শক্তির ওপর ভর করে আন্দোলন চলে।' (১২/০৬/১৫)।
ইংরেজের হাতে যখন ভারতীয় মুসলমানদের পতন হয়েছিল, আর কোমর সোজা করতে পারেনি, তখন ভারতের মুসলমানরা যে আহাজারি আর বিলাপ শুরু করেছিল এখন বিএনপি সেই সুরে বিলাপ শুরু করেছে।
সড়ক ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, 'আগে যারা আওয়ামী লীগকে ভারতের এজেন্ট বলত তারাই এখন ভারতের এজেন্ট হওয়ার জন্য ধরনা দিয়ে বেড়ায়। যাদের মনে ভারতভীতি ছিল তারা এখন ভারতপ্রীতিতে ব্যস্ত। সকালে ভারতের দূতাবাস খোলার আগে বিএনপির সিনিয়র বুদ্ধিজীবী নেতাদের হাজিরা দিতে দেখা যায়।'
মন্ত্রীর কথার মধ্যে অতিশয়োক্তি নেই। বিএনপি নেতাকর্মীদের আক্রমণাত্মক ভারতবিরোধিতার সুর এখনো কানে বেজে ওঠে। 'ভারত যাদের মামার বাড়ি বাংলা ছাড় তাড়াতাড়ি', 'জয়বাংলা জয় হিন্দ লুঙ্গি ছেড়ে ধূতি পিন্দ', 'হরে কৃষ্ণ হরে রাম শেখ হাসিনার বাপ', এসব রুচি বিকারগ্রস্ত সস্নোগান দিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিএনপির লোকজনরা বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষরা এমন কি তার মাতা পিতাও নাকি 'হিন্দু', এই অদ্ভুত ইতিহাস প্রচার করেছে। জিয়াউর রহমান ভারতের তোষণও করেছে বিরোধিতাও করেছে। বিএনপির নেতারা ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে 'গণতন্ত্রের প্রবক্তা' বলেছেন। একটি সাম্প্রদায়িক দলের নেতা গণতন্ত্রের প্রবক্তা হতে পারেন কিনা সে তর্কে এ কলামে লিপ্ত হবো না। ছিটমহল চুক্তির ব্যাপারে ভারতের পার্লামেন্ট কংগ্রেস ও বামপন্থী দলের জোরালো সমর্থন ছিল। তদুপরি কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকতে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়েছে, তা বিজেপির বিরোধিতার কারণে এতকাল বাস্তবায়ন হয়নি। সোনিয়া গান্ধীর কংগ্রেস পুরনো সে কথা মনে না রেখে ছিটমহল চুক্তি বাস্তবায়ন হোক তা সমর্থন করেছে। তবুও বিএনপি শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী ও কংগ্রেসের নূ্যনতম প্রশংসা করেনি। বিএনপি মূলত কংগ্রেস বিরোধী বিজেপি বিরোধী নয়। কারণ দু'দলই সাম্প্রদায়িক বিএনপি এ কথা কখনো বলেনি যে, 'আমরাও একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল।' এ কথা কখনো বলতে পারবে না, 'আমরা একটা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চাই।' বিএনপির হাইকমান্ড থেকে যেসব বক্তব্য বের হয়ে আসছে তার মধ্যে স্ববিরোধিতা আর আত্মপ্রবঞ্চনায় ভরপুর।
নরেন্দ্র মোদির ঢালাও প্রশংসা করার মধ্যে যথেষ্ট শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অসামান্য অবদানকে বিএনপি ঘুণাক্ষরেও প্রশংসা করে না। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর ব্যক্তিগত বুদ্ধিমত্তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মৌল পাথেয় ছিল। অথচ অতীতে বিএনপি ইন্দিরা গান্ধীকে হীনবর্ণে চিত্রিত করেছে, অবমূল্যায়ন করেছে। এখনো তাই করে। বিএনপি বলেছে, 'আমরা ভারতবিরোধী নই।' যদি খোলাসা করে বলত, 'আমরা ভারতবিরোধী নই, কিন্তু কংগ্রেসবিরোধী', তাহলে ভালো হতো।
মূলত বিএনপি একটি পাঁচ মিশেলি দল তাই এখন পাঁচ মিশেলি সুরে তাদের বিলাপ শোনা যাচ্ছে। স্বার্থের কংক্রিটে গাঁথা দলটি সামান্য আঘাতে বিচূর্ণ হয়ে পড়েছে। মুক্তিযোদ্ধা, রাজাকার, ঘাতক দালাল, সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতির মুকুটহীন সম্রাট, ধর্ম-অধর্ম, গণতন্ত্র-অগণতন্ত্র সবকিছু আছে বিএনপিতে। গোলাম আযমের জামায়াত আছে আবার গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মতো হিন্দুও আছে। বেগম জিয়া বলেছেন, মসজিদে উলুধ্বনি বাজবে, আবার পূজাম-পে হাজির হয়ে বলেছেন, 'আওয়ামী লীগ হিন্দুদের শত্রু।' বলেছেন শান্তিচুক্তি হলে ফেনী পর্যন্ত ভারত দখল করবে। আবার সেই ভারতের উদ্বাত্ত প্রশংসা করছেন। ক্ষমতায় যেতে না পারার হতাশা থেকে এসব বিলাপ করছেন। ১৯৫১ সালের অক্টোবর মাসে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার আগে নাকি লিয়াকত আলী খান বলেছিলেন, 'আল্লাহ পাকিস্তানকে হেফাজত করো।' কিন্তু পাকিস্তান রক্ষা পায়নি, রসাতলে গেছে, বিএনপিও রক্ষা পাবে না রসাতলে যাবে।

সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.