নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
সৃষ্টির শুরু থেকেই পৃথিবীতে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে পুরুষ জাতি। খোদা প্রদত্ত শারীরিক শক্তি, বুদ্ধিমত্তা, বন্ধুত্বসুলভ আচরণ দিয়ে তাবত্ দুনিয়া আজও পুরুষরাই নিয়ন্ত্রণ করছে। সেই সুবাদে অতীতে কোন এক সময়ে লিঙ্গ-বৈষম্যের স্বীকার হয়েছে নারীরা। এই নিয়ে অনেক বিরোধ, আন্দোলন হয়েছে এবং ফলাফল হিসেবে নারীরা আজ বিশ্বমঞ্চের কর্মযজ্ঞে যোগ্যতা দিয়ে নিজেদের জায়গা দখল করছে। এখন নারীদের অবজ্ঞা করার মত লিঙ্গ-বৈষম্য নেই বললেই চলে, থাকলে আমাদের দেশে এত নারীনেত্রী থাকতেন না। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, বিএনপির নেত্রী, স্পীকার—সবই এখন নারী। তাই বুকে হাত দিয়ে নিশ্চিন্তে বলা যায় আমাদের সমাজে এখন নারীরা লিঙ্গ-বৈষম্যের শিকার হচ্ছে না। তবে পুরুষশাসিত সমাজে নারীকে লিঙ্গ-বৈষম্য থেকে মুক্ত করে এখন পুরুষরা নিজেরাই হচ্ছে লিঙ্গ-বৈষম্যের শিকার। কিছু লাভজনক প্রতিষ্ঠানে এখন যোগ্যতাকে চুলোয় পাঠিয়ে কেবল রূপ-লাবণ্য-যৌবনে ভরপুর কোমলমতি নারীদেরই সুযোগ দেয়া হচ্ছে যোগ্যতাসম্পন্ন পুরুষকে হটিয়ে। রূপসী নারীর চেয়ে অধিক যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র ‘পুরুষ’ হওয়ার কারণে অনেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে যেকোনো কর্পোরেট অফিসেরই এখন রিসিপশন টিম থাকে। প্রাথমিক তথ্য বর্ণনা করার পাশাপাশি কোন ডকুমেন্ট বা কাগজপত্র আদান-প্রদানের জন্য অতিথি বা ক্লায়েন্টের সাথে সাক্ষাত্কার পর্বে রিসিপশন টিমকেই ভূমিকা পালন করতে হয়। এই রিসিপশন টিম দুই বা ততোধিক সদস্য নিয়েই মূলত গঠিত হয়ে থাকে। তবে কোথাও কোথাও একজনকেই গোটা রিসিপশনের কাজ সামালতে হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই রিসিপশনের কাজের জন্য সর্বদাই সুদর্শন প্রার্থীদের বাছাই করা হয়। অবশ্য প্রবাদেই আছে- ‘আগে দর্শনধারী তারপর গুণবিচারী’। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, রিসিপশন টিম একজনের হোক আর একাধিক জনের হোক, সেখানকার চিত্রটা হর-হামেশাই হিন্দি সিরিয়ালের ন্যায়, যেখানে নারীর ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। ছেলেরা যেন রিসিপশন টিমে অমাবস্যার চাঁদ। এখন সুদর্শন ছেলের চাইতে সুন্দরী মেয়েদেরকেই রিসিপশন টিমে জায়গা করে দিতে কর্তৃপক্ষ বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
হাসপাতালের সিস্টার বা সেবিকা পদটি যেমন নামে এবং কর্মে কেবলই নারীদের জন্য অর্থাত্ নারী ছাড়া সেবিকা নামটি যেমন চিন্তাই করা যায় না, ঠিক তেমনি টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক এবং খবর পাঠক পদ দুটি এখন একচেটিয়া নারীদের দখলে। টিভি খুললে এখন দু’একটা চ্যানেলের রাজনৈতিক টক-শো ছাড়া বাকি সব কয়টা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, খেলাধুলা, বিনোদনসহ সব অনুষ্ঠানের উপস্থাপক নারী। হাতেগোনা দু’একজন সাংবাদিক এখনো নিজেদের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে টিকে থাকলেও নবীন পদগুলোতে নামমাত্র সুযোগও পাচ্ছে না ছেলেরা। যথার্থ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মেয়েদের কাছে হেরে যাচ্ছে ছেলেরা। কেবলমাত্র দর্শক ধরে রাখার লোভে নারীকে পণ্যের মত ব্যবহার করা হয়। যদিও তা নারীদের আগ্রহ এবং সম্মতিতেই করা হচ্ছে। কিন্তু মাঝখান দিয়ে বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে পুরুষরা।
বাংলাদেশ সংবিধানের মৌলিক অধিকার অংশের ২৮ অনুচ্ছেদের ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না বলে ঘোষণা দেয়া আছে। আজকাল বিভিন্ন নির্দিষ্ট পেশায় এই বৈষম্য দেখা দিয়েছে। নারীরা বৈষম্যের স্বীকার হলে দেশে-বিদেশে অনেক প্রতিবাদী কণ্ঠ গর্জে ওঠে, কিন্তু পুরুষদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া নিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই।
সংবিধানের ২৮(২) নাম্বার অনুচ্ছেদের স্পষ্ট বলা আছে, ‘রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন’। এই অনুচ্ছেদের দোহাই দিয়ে নারীরা যদি তাদের সমঅধিকার আদায় করতে সক্ষম হয়, তবে পুরুষদেরও এই অনুচ্ছেদের সুবিধা দিয়ে দেশের সকল কর্মসংস্থানে যোগ্যতার বিচার করে সমান সুযোগ দেয়া এখন সময়ের দাবি। যোগ্যতায় যদি নারী পুরুষের চেয়ে এগিয়ে থাকে তবে নারীকে সেই যোগ্যতার পূর্ণ মর্যাদা দেয়া সকলের দায়িত্ব। কেবল বাহ্যিক অবয়ব এবং রূপ-সৌন্দর্যে অন্ধের মত মুগ্ধ না হয়ে যোগ্যতা, দক্ষতা এবং পারিপার্শ্বিক বিষয়সমূহ বিবেচনায় আনা উচিত। পুরুষকে ঢালাওভাবে অবজ্ঞা করে নারীকে পাইকারিহারে সুযোগ দান থেকে সরে আসতে হবে।
সুত্র
©somewhere in net ltd.