নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
রাষ্ট্র পরিচালনায় অথবা রাষ্ট্র সৃষ্টিতে ও গঠনে বিভিন্ন মতবাদ কাজ করে। যেমনÑ মুজিববাদ, মার্ক্সবাদ, লেলিনবাদ, স্তালিনবাদ, তত্রস্কিবাদ, মাওবাদ, থেচারবাদ যা ইংরেজিতে নামের শেষে ism (বাদ) যুক্ত হয়। যেমনÑ Marxism. বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই একমাত্র নেতা যার নামের সঙ্গে Mujibism (মুজিববাদ) যোগ হয়েছে। বিশ্ব ব্যবস্থায় মার্ক্সবাদ, লেনিনবাদ, স্তালিনবাদ ও মাওবাদ ব্যর্থ হওয়ার পর যে মতবাদটি বিশ্ব অর্থনীতিকে পরিবর্তন করেছিল তা হলো থেচারবাদ (Thacherism)। থেচারবাদ বিশ্বাস করত ফ্রি বাজার ব্যবস্থায় ও ব্যক্তিস্বাধীনতায়। বিশেষ করে ট্রেড ইউনিয়ন যখন স্বেচ্ছাচারিতা অর্থনীতি পঙ্গু তখন মার্গারেট থেচারের থেচারবাদ নীতি ইউকে ইউরোপের দুর্বল ব্যক্তি এই অপবাদ থেকে মুক্ত করেছিল। তাই মার্গারেট থেচারকে বলা হতো ঝShe is the only man in the British Parliament. অর্থাৎ ‘তিনিই একমাত্র পুরুষ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে’ যদিও তিনি ছিলেন একজন মহিলা। অতিসম্প্রতি নরেন্দ্র মোদি তার বক্তৃতায় শেখ হাসিনা সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন, তিনি (হাসিনা) একজন মহিলা হয়েও সন্ত্রাসবিরোধী যে ভূমিকা নিয়েছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে। অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন যা পুরুষে করতে পারেনি তিনি তা করতে পেরেছেন। কোনো নেতা তখনই নামের শেষে ‘ISM’ (বাদ) পায় যখন ওই নেতার একটি লক্ষ্য থাকে যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে দেখাতে পারছেন আর তাই বর্তমানে বাংলাদেশে যে আমূল পরিবর্তনের দিকে এগোচ্ছে সেই মতবাদকে হাসিনাবাদ (Hasinaism) বলা যেতে পারে। হাসিনাবাদের মূল লক্ষ্য হলো মুজিবাদের পূর্ণাঙ্গ রূপদান।
১৪ জুন ২০১৫ বিকাল তিনটায় গিয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখতে ও শুনতে লন্ডনের প্রাণকেন্দ্র পার্ক লেইনের শেরাটনে। কেবল আমন্ত্রিত প্রায় ৫০০ লোকের সমাগমের এই সভা ছিল আনন্দঘন। নেত্রী সভাস্থলে আসেন পুত্র জয়কে নিয়ে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ শাড়ি পরে। তিনি কথা শুরু করলেন ১৯৭৫ সলের ১৫ দিন পূর্বে জার্মানিতে স্বামীর সঙ্গে বাংলাদেশ ছেড়ে আসা থেকে, ঠিক পনেরো দিন পরই শোনেন জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদটি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবার নির্মম হত্যা। কিছুক্ষণ শোনালেন ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে কষ্ট ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার কাহিনি। তারপর ১৯৮০ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন থেকে আজ অবধি। নেত্রী দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে বললেন, আমার কিছু পাওয়ার নেই, জাতির পিতার কন্যা এটাই আমার কাছে বড় পাওয়া। এর অর্থ তিনি ব্যক্তিগত সম্পদের পাহাড়ের কথা বলেছেন, বাংলার মানুষের জন্য কিছু করে যাওয়া এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। শেখ হাসিনার জীবনের অধ্যায় নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট বিজয়ের মতো। মুজিববাদ ছিল স্বাধীনতার চেতনা আর হাসিনাবাদ হলো স্বাধীনতা রক্ষার চেতনা। আর শেখ হাসিনার ২য় শাসনকাল অনেকটা যুক্তরাজ্যের মার্গারেট থেচারের সময়কালের মতো। থেচারপূর্ব যুক্তরাজ্য পরিণত হয়েছিল ‘দি সিক ম্যান অব ইউরোপ’ হিসেবে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি বিদ্যুৎ উৎপাদন নেমে আসে ৩৫০০ মেগাওয়াট যা ১৬ কোটি মানুষের দেশের জন্য কিছুই না। প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় বর্তমান উৎপাদন ১৩৫০০ মেগাওয়াট কিন্তু লক্ষ্য ২৬০০০ মেগাওয়াট। কেননা তিনি মনে করেন জাতিকে অন্ধকারে রেখে উন্নয়ন করা যায় না। তাই স্বপ্ন দেখেছেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে উন্নত দেশের মর্যাদায় নিয়ে যাওয়ার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অসাবধানতায় মুদ্রাস্ফীতি পৌঁছে দাঁড়ায় ১৩.৫%। তার সরকার কমিয়ে নিয়ে এসেছে ৬%-এ। মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে একটা রোগ যা টাকাকে অবমূল্যায়িত করে অথবা অর্থনৈতিক উন্নয়নকে শূন্যে নিয়ে আসে। এটির মূল কারণ হচ্ছে অযোগ্যতা ও দুর্নীতি।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করেনÑ বিগত দিনের দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে গেছে। দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশকে পরিকল্পিতভাবে বনসাইয়ে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। এই বনসাই হচ্ছে এক জাতীয় উদ্ভিদ। সে উদ্ভিদের স্বাভাবিক বিকাশকে পরিকল্পিতভাবে বাধাগ্রস্ত করে ছোট উদ্ভিদে পরিণত করাকে বলা হয় বনসাই। দুর্নীতি হলো সমাজের বনসাই যা সমাজের বিকশিত ব্যক্তিদের বনসাই করে রাখে। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ সব সময় ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে হাটে। সমষ্টিগত দুর্নীতিবাজদের অপকর্মই হলো দুর্নীতি। ক্ষমতার দাপটে ভালো অভ্যাসকে ত্যাগ করে অর্থনৈতিকভাবে অর্থ কামানো এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অপকর্মকে বলে দুর্নীতি। দুর্নীতি হয় সংস্থার একাধিপত্যতায় এবং সেখানে মাইনাস থাকে স্বচ্ছতা। দুর্নীতি সাধারণত করা হয় নিজ স্বার্থে। দুর্নীতি একটি বদভ্যাস। দুর্নীতি বহু রকমের। যেমনÑ ১. ছোট দুর্নীতি : যেমন জনগণের কাজ সম্পন্ন করার জন্য ঘুষ নেওয়া, ২. বড় দুর্নীতি : যেমন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আইনকে প্রভাবিত করে কাজ সম্পাদন করা এবং ৩. পরিকল্পিত দুর্নীতি : যেমন সরকারের নীতি নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠান প্রভাবিত করে সরকারের কর্মপরিচালনা করা। তিনি হাওয়া ভবনকে বিগত দিনের দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে চিন্তিত করেন।
দুর্নীতি সম্পাদনের মাধ্যম হিসাবে সাধারণত বেছে নেওয়া হয় ঘুষ ও চুরি ইত্যাদি। দুর্নীতি পাবলিক, প্রাইভেট এবং রাজনৈতিক সব বিভাগেই হয়ে থাকে। শেখ হাসিনার সরকার বিশ্বাস করেন ভালো সরকার ব্যবস্থা ও কানেক্টিভিটির উন্নয়নের মাধ্যমে কমন শত্রু গরিব বিমোচন করা যাবে যার ফলে গরিবের সংখ্যা ২২.৭% থেকে নামিয়ে ৭% আনা সম্ভব হবে। শেখ হাসিনা ‘মুজিববাদ’ নিয়ে রাজনীতি শুরু করলেও সময়ের পরিক্রমায় থেচারবাদের ন্যায় ‘হাসিনাবাদ’ বাংলাদেশের ইতিহাসে যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। শেখ হাসিনার উত্থান না হলে মুজিবাদের যে অর্জন তা নির্মূল হয়ে যেত আর তাই মুজিববাদ ছিল স্বাধীনতার চেতনা আর হাসিনাবাদ হলো স্বাধীনতা রক্ষার চেতনা।
হাসিনাবাদের মূল লক্ষ্য দারিদ্র্য দূরীকরণ, মুদ্রাস্ফীতির নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উদারতাবাদ, আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি, ফ্রি মার্কেট, অর্থনৈতিক সুব্যবস্থা, পাবলিক ব্যয়ের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, ট্যাক্স কাট, জাতীয়তা ও ভারতের সঙ্গে আন্তরিক বন্ধুসুলভ সম্পর্ক। হাসিনাবাদ বিশ্বাস করে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব যেমনটি মার্গারেট থেচার করেছিলেন আমেরিকার সঙ্গে ‘বিশেষ সম্পর্ক Special Relation’ যা ইউকেকে করেছিল শক্তিশালী। হাসিনাবাদের নৈতিকতা ১৯৭১ সমাজ চেতনা। যে সমাজ হবে দুর্নীতিমুক্ত এবং অভাবমুক্ত জ্ঞানদীপ্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ। নেতার নির্দেশ হবে ‘চলে যাও তোমার ফুলের মতো মানুষের কাছে যেখান থেকে তুমি এসেছ, চুল ধুয়ে পরিষ্কার করো, পড়ে নাও তোমার প্রিয় কাপড়, কাজে যাও সময়মতো, ভুলে যাও সমস্ত বদভ্যাস’। একজন নেতার মূল উদ্দেশ্য হলো জাতিকে একটি স্বপ্ন দেখানো এবং তার লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া। শেখ হাসিনা তাই করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার সরকারের সৌন্দর্য তিনি সক্রিয়ভাবে সরকারের দৈনন্দিন কর্মকা-ে সম্পৃক্ত একজন জ্ঞানী, দক্ষ এবং সম্মানিত প্রশাসক। সর্বোপরি দি গ্রেট স্টেটসম্যান অব পোস্ট-বাংলাদেশ। লেখক : কলামনিস্ট
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:৫৮
সাদী ফেরদৌস বলেছেন: বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ , একটি দেহে দুইটি প্রান । বঙ্গবন্ধুর আয়তন ৫৬ হাজার মাইল ।
বঙ্গবন্ধু আমাদের শিকড় ? কেউ জানতে চাইবে , কেন শিকড় ?
এর উত্তর খুব সুন্দর ভাবে হুমায়ুন আজাদ বলেছেন -
"শেখ মুজিব দৈহিকভাবেই মহাকায় ছিলেন, সাধারণ বাঙালির থেকে অনেক উচুঁতে ছিলো তার মাথাটি, সহজেই চোখে পড়তো তার উচ্চতা। একাত্তরে বাংলাদেশকে তিনিই আলোড়িত-বিস্ফোরিত করে চলেছিলেন, আর তার পাশে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে যাচ্ছিল তার সমকালীন এবং প্রাক্তন সকল বঙ্গীয় রাজনীতিবিদ।
জনগণকে ভুল পথেও নিয়ে যাওয়া যায়; হিটলার মুসোলিনির মতো একনায়কেরাও জনগণকে দাবানলে, প্লাবনে, অগ্নিগিরিতে পরিণত করেছিলো, যার পরিণতি হয়েছিলো ভয়াবহ। তারা জনগণকে উন্মাদ আর মগজহীন প্রাণীতে পরিণত করেছিলো। একাত্তরের মার্চে শেখ মুজিব সৃষ্টি করেছিলো শুভ দাবানল, শুভ প্লাবন, শুভ আগ্নেয়গিরি, নতুনভাবে সৃষ্টি করেছিলেন বাঙালি মুসলমানকে, যার ফলে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম।"
বাংলা ও বাঙ্গালির জয় হোক ।
লেখককে ধন্যবাদ , ও অনিঃশেষ শুভকামনা ।