![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জাতীয় আশা আকাঙ্ক্ষা মোতাবেক অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক এবং শোষণমুক্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। লাখ লাখ ছাত্র, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত এবং বুদ্ধিজীবীদের আত্মোত্সর্গের ফলশ্রুতিতে সামপ্রদায়িক ও প্রতিক্রিয়াশীল ভাবাদর্শের কবর রচনা করে বাঙালি জাতির জন্য একটি দুর্লভ সম্মান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃতি লাভ করেছিল। বাংলাদেশে সৃষ্টির ভাবাদর্শ এবং নেতৃত্ব সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবে কোনদিনও নতুনভাবে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে তাহা সেদিন কারো কল্পনাতে আসেনি। বাংলাদেশ সৃষ্টির ৪৪ বছর পরও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় দর্শন এবং জাতির জনকের প্রশ্নে জাতি দ্বিধাবিভক্ত হবে তা কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর প্রথমে খন্দকার মোস্তাক, পরে জিয়াউর রহমান এবং এরশাদের নেতৃত্বে যে রাজনৈতিক শক্তি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার বিকাশ ঘটেছিল তাতে করে ১৯৭১ সালে অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত রাজনৈতিক সাফল্যগুলো অনেকটা ধূসর হয়ে পড়েছিল। বর্তমান বিরাজমান আর্থ-সামাজিক অবস্থাতে ১৯৭১ সালে অর্জিত সাফল্যগুলো আজ চরম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও সাহসিকতার সহিত সরকার পরিচালনা করেছেন। চূড়ান্ত বিশ্লেষণে গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সাফল্যসমূহকে সুরক্ষা করতে হলে বিশ্ব প্রেক্ষাপট এবং বাংলাদেশের বিরাজমান সমস্যাগুলোকে বিজ্ঞান সম্মতভাবে উপলব্ধি করা সময়ের জরুরি দাবি। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিকাশের ক্ষেত্রে মূল সমস্যাগুলোকে উপলব্ধি করে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারলে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অবস্থাতে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ও অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলো দেশকে দক্ষিণপন্থি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে সফল হবে।
জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে বিএনপি কিং পার্টি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই পার্টির মধ্যে ডান ও বাম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত হয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টির মূল চেতনার কথা বলে কালক্রমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের পুনর্বাসনের দল হিসাবে বিকাশ লাভ করে। এর চূড়ান্তরূপ লাভ করে ২০০১ সালে ১ অক্টোবর নির্বাচনের মাধ্যমে ৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল জামায়াতে ইসলামের দুই যুদ্ধাপরাধী নিজামী ও মুজাহিদকে ক্যাবিনেট মন্ত্রী করার মধ্য দিয়ে। ২০০১ সালের ৬ অক্টোবর হাওয়া ভবনে খালেদা জিয়ার সাথে আমাদের দলের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানোর সময় জাতীয় স্বার্থে জামায়াতকে মন্ত্রী পরিষদে অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য অনুরোধ জানানো হলেও খালেদা জিয়া জামায়াতের দুই আলবদর কমান্ডারকে মন্ত্রী পরিষদে অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে বিএনপিকে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী ও জঙ্গীবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত করার পথকে সুগম করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে ২০০৪ সালে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে জে.এম.বিসহ অন্যান্য সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তির বিকাশ ঘটতে থাকে। তাদের সহিংসতা এবং সন্ত্রাসী রূপ জনগণের নিকট উন্মোচিত হয়। মূলত ২০০১-২০০৬ সাল এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে আমাদের দেশে জামায়াত ইসলামের সামাজিক শক্তি কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন না হয়ে চূড়ান্তভাবে বিকশিত হতে থাকে। দেশে বিরাজমান সামাজিক অবস্থানে এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দক্ষিণপন্থি শক্তির বিকাশের ফলশ্রুতিতে চিরস্থায়ীভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে এক সুদুর প্রসারী ব্লুপ্রিন্ট নিয়ে অগ্রসর হয়। খন্দকার মোস্তাক, জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং জেনারেল এরশাদ, পরবর্তীতে খালেদা জিয়া ও ফখরুদ্দিনের আমলে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও স্বৈরতান্ত্রিক জঞ্জালের সাথে ধর্মীয় মৌলবাদের দর্শন গভীরভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে। ফলে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থান ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্যান ইসলামিক পুনরুত্থানবাদ সামাজিক শক্তি হিসাবে দ্রুত বিকশিত হবার সুযোগ পায়। এই অপশক্তি আন্তর্জাতিকভাবে ইসলামিক ব্রাদারহুড (যে সংগঠনটি বর্তমানে নিষিদ্ধ) এর সাথে আন্তর্জাতিকীকরণের মাধ্যমে অস্ত্র, পুঁজি, প্রযুক্তি তথ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। ফলে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দেশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আর এর পরিপূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করেছে, জামায়াতে ইসলাম। বর্তমানে আমাদের দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজ কাঠামোতে এদের অবস্থান পূর্বের যেকোন তুলনায় অধিক সুসংহত ও শক্তিশালী। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে গোয়েবলসীয় কায়দায় জনগণের মধ্যে ধর্মীয় রাজনীতির মিথ্যা ও অপব্যাখ্যাকে পুঁজি করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার অপকৌশলে এ অপশক্তি সিদ্ধহস্ত।
আমাদের দেশের জনগণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মূল ধারাতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিকে ক্ষমতার পালাবদলের দুই রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচনা করে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসার সময় যে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক অবস্থানে ছিল, ২০১৩ সালের শেষ প্রান্তে বিশেষ ভাবে গত ৫ জানুয়ারি পরবর্তী পর্যায়ে কথিত তত্ত্ববাধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের নামে অবরোধ ও হরতালে বিএনপির রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক দেউলিয়াপনা এবং অসহায়ত্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিকভাবেও বিএনপি জন্মলগ্ন থেকে যে রাজনৈতিক ধারা অনুশীলন করে আসছিল বর্তমানে সে অবস্থান থেকে অনেক যোজন দূরে অবস্থান করছে। বাস্তবতা হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে বিএনপি জামায়াতের নিকট আত্মসমর্পণ করেছে এবং সাংগঠনিকভাবে জামায়াতের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জামায়াতই মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। তাছাড়া খালেদা জিয়ার নিকট রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে লন্ডনে বসবাসরত তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। অন্যদিকে লন্ডনে তারেক জিয়া মৌলবাদী থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং তাদের অর্থ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ফলশ্রুতিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পর থেকে অবরোধ-হরতালের আন্দোলন সন্ত্রাস ও নাশকতার কানাগলিতে হারিয়ে গিয়েছে। বিএনপির চেয়ারপার্সনসহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এমনকি ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচি গ্রহণের ক্ষেত্রে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অথবা শরীক দলগুলোর নেতাদের কোনো ধরনের প্রভাব আছে বলে মনে হয় না। মূলত তারেক জিয়াকে প্রভাবিত করেই জামায়াত ইসলামই তাদের মূল এজেন্ডা যুদ্ধাপরাধীদেরকে রক্ষা করার লক্ষ্যে জনসম্পৃক্ততাহীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনে সন্ত্রাস, নাশকতা প্রভৃতির আমদানী করে দেশের জনগণকে জিম্মি করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটে নিতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া ক্ষমতায় যাবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন এই বিষয়টি মৌলবাদী ও ইসলামি জঙ্গী গোষ্ঠী ভালভাবেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। মাতা ও পুত্রের এই দুর্বলতা উপলব্ধি করে জামায়াতে ইসলাম এবং অন্যান্য মৌলবাদী সংগঠনগুলো তাদের মূল এজেন্ডা ইসলামি জঙ্গীবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার মূল লক্ষ্য নিয়ে অভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে যেনতেনভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করাই মূল এজেন্ডা ও উদ্দেশ্য। জামায়াত অন্যান্য অপরাজনীতির শক্তিগুলোকে নিয়ে আঁতাত করে ষড়যন্ত্র ও বিএনপি ও জামায়াত এবং অন্যান্য ইসলামি দলগুলোর আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ষড়যন্ত্রকে সফল করার লক্ষ্যে পরিপূরক হিসেবে চক্রান্তমূলক রাজনীতি নিয়েই অগ্রসর হয়েছে। ফলে বিএনপি গঠনের সময় গণতান্ত্রিক, জাতীয়তাবাদী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শ হলেও বর্তমানে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপি সে রাজনীতি থেকে অনেক যোজন দূরে সরে গিয়ে বিএনপি এবং জামায়াত একই মেরুতে অবস্থান করছে। অর্থাত্ জামায়াতে ইসলাম গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মূলধারার একটি রাজনৈতিক দলকে প্রভাবিত করে তাদের ছত্রছায়ায় নিয়ামক শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদলের বিষয়টি জটিল হয়ে পড়েছে। বর্তমান বিএনপি জামায়াত এমন অবস্থানে বিদ্যমান বিএনপি ইচ্ছা করলেও জামায়াত থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করা খুবই কঠিন। সঠিক অর্থে বিএনপিকে জামায়াত গ্রাস করে ফেলেছে বলে অত্যুক্তি হবে না।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে জনগণ তথা ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত ও বিভিন্ন পেশাজীবী সমপ্রদায়। কিন্তু বিগত জানুয়ারিতে বিএনপি জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হরতাল এবং অবরোধে জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল না। হরতাল এবং অবরোধকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বাস, ট্রাক, সিএনজি এর উপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করছে। সাধারণ জনগণকে হত্যা করে এবং ট্রেন লাইনের ফিসপ্লেট তুলে এক ধরনের ভয়ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে জনগণকে জিম্মি রেখে শুধু বিএনপি ক্ষমতায় যাবার উদ্দেশ্যে এই বছর ৫ জানুয়ারি থেকে ধ্বংসাত্মক কাজে মেতেছিল আর তাই অপরাজনীতির অংশ হিসাবে সন্ত্রাস, অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ধংসাত্মক কর্মকাণ্ড ও কথিত অবরোধের নামে দেশের মানুষকে জিম্মি করে অগণতান্ত্রিক পন্থায় অগ্রসর হয়েছিল জনগণের সচেতনতার ফলশ্রুতিতে অবরোধ আন্দোলন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এই কথিত আন্দোলন থেকে জামায়াতে ইসলামের মূল এজেন্ডা ছিল যুদ্ধাপরাধীদের রায় ও বিচারকার্য স্থগিত রাখা। মরহুম জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় জামায়াত প্রকাশ্যে আসার পর বিভিন্ন সময়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আড়ালে নিজেদের সাংগঠনিক রাজনৈতিক এবং আর্থিকভাবে সুসংগঠিত করার পর বিভিন্ন অপকৌশলে নিজেদেরকে সুরক্ষা করলেও এবারের মত অতীতে এইভাবে সরকারি চাপের মুখোমুখি হয়নি। অনেকে জামায়াতের শক্তি সম্পর্কে অনেক কাল্পনিক ধারণা থাকলেও এবার সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে এবং তাদের রাজনৈতিক ভণ্ডামি, মিথ্যা এবং সন্ত্রাস ও নাশকতামূলক কার্যকলাপ সর্বোপরী পেট্রোল বোমা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষকে হত্যা এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড জনগণের নিকট পরিষ্কার হয়েছে যা অতীতে কখনও এরকম হয়নি।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জামায়াত শিবিরের প্যান ইসলামিক রাজনীতিকে বিকশিত এবং তাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার লক্ষ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যা যার করা প্রয়োজন তা করতে সদাসর্বদা সচেষ্ট। কাজেই দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য সরকার পক্ষ থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সাথে আলোচনার জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করলে জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে হালাল করা হবে। ভবিষ্যতেও যেকোন রাজনীতির অবস্থাকে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে যাবার জন্য প্রয়োজনে এর থেকে সন্ত্রাসী এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। পাকিস্তানের পেশোয়ারে যেমন পাকিস্তানি তালেবান জঙ্গী গোষ্ঠীরা নিজের রাজনৈতিক স্বার্থকে হাসিল করার লক্ষ্যে প্রায় ১৩৯ জন ছাত্র ও শিক্ষক-কর্মচারীকে নির্বিচারে হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করেনি। বাংলাদেশ ও চলমান রাজনৈতিক সংকটকে তীব্রতর করতে এবং এর থেকে নিজেদের ফায়দা লুটার জন্য পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, নাশকতামূলক কাজ, ট্রেনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলাসহ অন্যান্য অন্তর্ঘাতমূলক কাজকর্ম পরিচালনা করবে। এভাবে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসার জন্য যেকোন অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করতে দ্বিধাবোধ করবে না। কাজেই নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে মারার কৌশল তাদের রাজনৈতিক সংগ্রামের অংশ। ভবিষ্যতে এর সুযোগ ফেলে আরও ভয়াবহ সঙ্কট সৃষ্টি করতে কার্পণ্য করবে না।
বাংলাদেশের বিরাজমান রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সামাজিক অবস্থানে খালেদা জিয়াকে কোন অদৃশ্য শক্তি ক্ষমতায় বসাবে না। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যেতে হবে। জনগণই সকল ক্ষমতার উত্স এবং জনগণের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর আস্থা রেখে জনগণের ও জাতীয় স্বার্থে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখলেই জনগণের রায় পাওয়া সম্ভব। কিন্তু উল্লেখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে জামায়াতে ইসলামসহ সামপ্রদায়িক অপশক্তির কালো ছায়া গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মুক্তচিন্তা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে গ্রাস করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অসামপ্রদায়িক ও আবহমান বাংলার মূলস্রোতকে গ্রাস করতে সহজ হবে খালেদা জিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে। আর এর ফলে গণতান্ত্রিক বিকাশের ধারা রুদ্ধ হবে। অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কথামত খালেদা জিয়া জামায়াতের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করলে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দীর্ঘদিনের জন্য তার বিকাশের পথ খুঁজে পাবে এবং দেশের জনগণ আস্থার সহিত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে। অবশ্যই ভবিষ্যত্ সময়ই এবং খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অনুসারীরাই নির্ধারণ করে দেবে খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের স্বার্থে জামায়াতের সাথে আঁতাত ছিন্ন করবেন অথবা জামায়াতের লেজুড়ে পরিণত হবেন। খালেদা জিয়ার অতীত কর্মকাণ্ড এবং সমপ্রতি জামায়াতের ইফতার পার্টিতে যোগদানে মনে হয় খালেদা জিয়ার পক্ষে জামায়াতের সম্পর্ক পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ছেদ করা সম্ভব নয়। ফলে আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সবসময় সংকটগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা থাকছে যা দেশ জাতি ও জনগণের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জাতীয় আশা আকাঙ্ক্ষা মোতাবেক অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক এবং শোষণমুক্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। লাখ লাখ ছাত্র, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত এবং বুদ্ধিজীবীদের আত্মোত্সর্গের ফলশ্রুতিতে সামপ্রদায়িক ও প্রতিক্রিয়াশীল ভাবাদর্শের কবর রচনা করে বাঙালি জাতির জন্য একটি দুর্লভ সম্মান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃতি লাভ করেছিল। বাংলাদেশে সৃষ্টির ভাবাদর্শ এবং নেতৃত্ব সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবে কোনদিনও নতুনভাবে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে তাহা সেদিন কারো কল্পনাতে আসেনি। বাংলাদেশ সৃষ্টির ৪৪ বছর পরও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় দর্শন এবং জাতির জনকের প্রশ্নে জাতি দ্বিধাবিভক্ত হবে তা কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর প্রথমে খন্দকার মোস্তাক, পরে জিয়াউর রহমান এবং এরশাদের নেতৃত্বে যে রাজনৈতিক শক্তি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার বিকাশ ঘটেছিল তাতে করে ১৯৭১ সালে অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত রাজনৈতিক সাফল্যগুলো অনেকটা ধূসর হয়ে পড়েছিল। বর্তমান বিরাজমান আর্থ-সামাজিক অবস্থাতে ১৯৭১ সালে অর্জিত সাফল্যগুলো আজ চরম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও সাহসিকতার সহিত সরকার পরিচালনা করেছেন। চূড়ান্ত বিশ্লেষণে গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সাফল্যসমূহকে সুরক্ষা করতে হলে বিশ্ব প্রেক্ষাপট এবং বাংলাদেশের বিরাজমান সমস্যাগুলোকে বিজ্ঞান সম্মতভাবে উপলব্ধি করা সময়ের জরুরি দাবি। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিকাশের ক্ষেত্রে মূল সমস্যাগুলোকে উপলব্ধি করে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারলে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অবস্থাতে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ও অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলো দেশকে দক্ষিণপন্থি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে সফল হবে।
জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে বিএনপি কিং পার্টি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই পার্টির মধ্যে ডান ও বাম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত হয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টির মূল চেতনার কথা বলে কালক্রমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের পুনর্বাসনের দল হিসাবে বিকাশ লাভ করে। এর চূড়ান্তরূপ লাভ করে ২০০১ সালে ১ অক্টোবর নির্বাচনের মাধ্যমে ৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল জামায়াতে ইসলামের দুই যুদ্ধাপরাধী নিজামী ও মুজাহিদকে ক্যাবিনেট মন্ত্রী করার মধ্য দিয়ে। ২০০১ সালের ৬ অক্টোবর হাওয়া ভবনে খালেদা জিয়ার সাথে আমাদের দলের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানোর সময় জাতীয় স্বার্থে জামায়াতকে মন্ত্রী পরিষদে অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য অনুরোধ জানানো হলেও খালেদা জিয়া জামায়াতের দুই আলবদর কমান্ডারকে মন্ত্রী পরিষদে অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে বিএনপিকে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী ও জঙ্গীবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত করার পথকে সুগম করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে ২০০৪ সালে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে জে.এম.বিসহ অন্যান্য সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তির বিকাশ ঘটতে থাকে। তাদের সহিংসতা এবং সন্ত্রাসী রূপ জনগণের নিকট উন্মোচিত হয়। মূলত ২০০১-২০০৬ সাল এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে আমাদের দেশে জামায়াত ইসলামের সামাজিক শক্তি কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন না হয়ে চূড়ান্তভাবে বিকশিত হতে থাকে। দেশে বিরাজমান সামাজিক অবস্থানে এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দক্ষিণপন্থি শক্তির বিকাশের ফলশ্রুতিতে চিরস্থায়ীভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে এক সুদুর প্রসারী ব্লুপ্রিন্ট নিয়ে অগ্রসর হয়। খন্দকার মোস্তাক, জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং জেনারেল এরশাদ, পরবর্তীতে খালেদা জিয়া ও ফখরুদ্দিনের আমলে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও স্বৈরতান্ত্রিক জঞ্জালের সাথে ধর্মীয় মৌলবাদের দর্শন গভীরভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে। ফলে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থান ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্যান ইসলামিক পুনরুত্থানবাদ সামাজিক শক্তি হিসাবে দ্রুত বিকশিত হবার সুযোগ পায়। এই অপশক্তি আন্তর্জাতিকভাবে ইসলামিক ব্রাদারহুড (যে সংগঠনটি বর্তমানে নিষিদ্ধ) এর সাথে আন্তর্জাতিকীকরণের মাধ্যমে অস্ত্র, পুঁজি, প্রযুক্তি তথ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। ফলে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দেশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আর এর পরিপূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করেছে, জামায়াতে ইসলাম। বর্তমানে আমাদের দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজ কাঠামোতে এদের অবস্থান পূর্বের যেকোন তুলনায় অধিক সুসংহত ও শক্তিশালী। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে গোয়েবলসীয় কায়দায় জনগণের মধ্যে ধর্মীয় রাজনীতির মিথ্যা ও অপব্যাখ্যাকে পুঁজি করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার অপকৌশলে এ অপশক্তি সিদ্ধহস্ত।
আমাদের দেশের জনগণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মূল ধারাতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিকে ক্ষমতার পালাবদলের দুই রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচনা করে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসার সময় যে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক অবস্থানে ছিল, ২০১৩ সালের শেষ প্রান্তে বিশেষ ভাবে গত ৫ জানুয়ারি পরবর্তী পর্যায়ে কথিত তত্ত্ববাধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের নামে অবরোধ ও হরতালে বিএনপির রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক দেউলিয়াপনা এবং অসহায়ত্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিকভাবেও বিএনপি জন্মলগ্ন থেকে যে রাজনৈতিক ধারা অনুশীলন করে আসছিল বর্তমানে সে অবস্থান থেকে অনেক যোজন দূরে অবস্থান করছে। বাস্তবতা হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে বিএনপি জামায়াতের নিকট আত্মসমর্পণ করেছে এবং সাংগঠনিকভাবে জামায়াতের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জামায়াতই মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। তাছাড়া খালেদা জিয়ার নিকট রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে লন্ডনে বসবাসরত তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। অন্যদিকে লন্ডনে তারেক জিয়া মৌলবাদী থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং তাদের অর্থ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ফলশ্রুতিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পর থেকে অবরোধ-হরতালের আন্দোলন সন্ত্রাস ও নাশকতার কানাগলিতে হারিয়ে গিয়েছে। বিএনপির চেয়ারপার্সনসহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এমনকি ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচি গ্রহণের ক্ষেত্রে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অথবা শরীক দলগুলোর নেতাদের কোনো ধরনের প্রভাব আছে বলে মনে হয় না। মূলত তারেক জিয়াকে প্রভাবিত করেই জামায়াত ইসলামই তাদের মূল এজেন্ডা যুদ্ধাপরাধীদেরকে রক্ষা করার লক্ষ্যে জনসম্পৃক্ততাহীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনে সন্ত্রাস, নাশকতা প্রভৃতির আমদানী করে দেশের জনগণকে জিম্মি করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটে নিতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া ক্ষমতায় যাবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন এই বিষয়টি মৌলবাদী ও ইসলামি জঙ্গী গোষ্ঠী ভালভাবেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। মাতা ও পুত্রের এই দুর্বলতা উপলব্ধি করে জামায়াতে ইসলাম এবং অন্যান্য মৌলবাদী সংগঠনগুলো তাদের মূল এজেন্ডা ইসলামি জঙ্গীবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার মূল লক্ষ্য নিয়ে অভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে যেনতেনভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করাই মূল এজেন্ডা ও উদ্দেশ্য। জামায়াত অন্যান্য অপরাজনীতির শক্তিগুলোকে নিয়ে আঁতাত করে ষড়যন্ত্র ও বিএনপি ও জামায়াত এবং অন্যান্য ইসলামি দলগুলোর আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ষড়যন্ত্রকে সফল করার লক্ষ্যে পরিপূরক হিসেবে চক্রান্তমূলক রাজনীতি নিয়েই অগ্রসর হয়েছে। ফলে বিএনপি গঠনের সময় গণতান্ত্রিক, জাতীয়তাবাদী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শ হলেও বর্তমানে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপি সে রাজনীতি থেকে অনেক যোজন দূরে সরে গিয়ে বিএনপি এবং জামায়াত একই মেরুতে অবস্থান করছে। অর্থাত্ জামায়াতে ইসলাম গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মূলধারার একটি রাজনৈতিক দলকে প্রভাবিত করে তাদের ছত্রছায়ায় নিয়ামক শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদলের বিষয়টি জটিল হয়ে পড়েছে। বর্তমান বিএনপি জামায়াত এমন অবস্থানে বিদ্যমান বিএনপি ইচ্ছা করলেও জামায়াত থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করা খুবই কঠিন। সঠিক অর্থে বিএনপিকে জামায়াত গ্রাস করে ফেলেছে বলে অত্যুক্তি হবে না।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে জনগণ তথা ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত ও বিভিন্ন পেশাজীবী সমপ্রদায়। কিন্তু বিগত জানুয়ারিতে বিএনপি জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হরতাল এবং অবরোধে জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল না। হরতাল এবং অবরোধকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বাস, ট্রাক, সিএনজি এর উপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করছে। সাধারণ জনগণকে হত্যা করে এবং ট্রেন লাইনের ফিসপ্লেট তুলে এক ধরনের ভয়ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে জনগণকে জিম্মি রেখে শুধু বিএনপি ক্ষমতায় যাবার উদ্দেশ্যে এই বছর ৫ জানুয়ারি থেকে ধ্বংসাত্মক কাজে মেতেছিল আর তাই অপরাজনীতির অংশ হিসাবে সন্ত্রাস, অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ধংসাত্মক কর্মকাণ্ড ও কথিত অবরোধের নামে দেশের মানুষকে জিম্মি করে অগণতান্ত্রিক পন্থায় অগ্রসর হয়েছিল জনগণের সচেতনতার ফলশ্রুতিতে অবরোধ আন্দোলন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এই কথিত আন্দোলন থেকে জামায়াতে ইসলামের মূল এজেন্ডা ছিল যুদ্ধাপরাধীদের রায় ও বিচারকার্য স্থগিত রাখা। মরহুম জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় জামায়াত প্রকাশ্যে আসার পর বিভিন্ন সময়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আড়ালে নিজেদের সাংগঠনিক রাজনৈতিক এবং আর্থিকভাবে সুসংগঠিত করার পর বিভিন্ন অপকৌশলে নিজেদেরকে সুরক্ষা করলেও এবারের মত অতীতে এইভাবে সরকারি চাপের মুখোমুখি হয়নি। অনেকে জামায়াতের শক্তি সম্পর্কে অনেক কাল্পনিক ধারণা থাকলেও এবার সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে এবং তাদের রাজনৈতিক ভণ্ডামি, মিথ্যা এবং সন্ত্রাস ও নাশকতামূলক কার্যকলাপ সর্বোপরী পেট্রোল বোমা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষকে হত্যা এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড জনগণের নিকট পরিষ্কার হয়েছে যা অতীতে কখনও এরকম হয়নি।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জামায়াত শিবিরের প্যান ইসলামিক রাজনীতিকে বিকশিত এবং তাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার লক্ষ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যা যার করা প্রয়োজন তা করতে সদাসর্বদা সচেষ্ট। কাজেই দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য সরকার পক্ষ থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সাথে আলোচনার জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করলে জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে হালাল করা হবে। ভবিষ্যতেও যেকোন রাজনীতির অবস্থাকে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে যাবার জন্য প্রয়োজনে এর থেকে সন্ত্রাসী এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। পাকিস্তানের পেশোয়ারে যেমন পাকিস্তানি তালেবান জঙ্গী গোষ্ঠীরা নিজের রাজনৈতিক স্বার্থকে হাসিল করার লক্ষ্যে প্রায় ১৩৯ জন ছাত্র ও শিক্ষক-কর্মচারীকে নির্বিচারে হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করেনি। বাংলাদেশ ও চলমান রাজনৈতিক সংকটকে তীব্রতর করতে এবং এর থেকে নিজেদের ফায়দা লুটার জন্য পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, নাশকতামূলক কাজ, ট্রেনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলাসহ অন্যান্য অন্তর্ঘাতমূলক কাজকর্ম পরিচালনা করবে। এভাবে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসার জন্য যেকোন অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করতে দ্বিধাবোধ করবে না। কাজেই নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে মারার কৌশল তাদের রাজনৈতিক সংগ্রামের অংশ। ভবিষ্যতে এর সুযোগ ফেলে আরও ভয়াবহ সঙ্কট সৃষ্টি করতে কার্পণ্য করবে না।
বাংলাদেশের বিরাজমান রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সামাজিক অবস্থানে খালেদা জিয়াকে কোন অদৃশ্য শক্তি ক্ষমতায় বসাবে না। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যেতে হবে। জনগণই সকল ক্ষমতার উত্স এবং জনগণের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর আস্থা রেখে জনগণের ও জাতীয় স্বার্থে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখলেই জনগণের রায় পাওয়া সম্ভব। কিন্তু উল্লেখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে জামায়াতে ইসলামসহ সামপ্রদায়িক অপশক্তির কালো ছায়া গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মুক্তচিন্তা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে গ্রাস করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অসামপ্রদায়িক ও আবহমান বাংলার মূলস্রোতকে গ্রাস করতে সহজ হবে খালেদা জিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে। আর এর ফলে গণতান্ত্রিক বিকাশের ধারা রুদ্ধ হবে। অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কথামত খালেদা জিয়া জামায়াতের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করলে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দীর্ঘদিনের জন্য তার বিকাশের পথ খুঁজে পাবে এবং দেশের জনগণ আস্থার সহিত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে। অবশ্যই ভবিষ্যত্ সময়ই এবং খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অনুসারীরাই নির্ধারণ করে দেবে খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের স্বার্থে জামায়াতের সাথে আঁতাত ছিন্ন করবেন অথবা জামায়াতের লেজুড়ে পরিণত হবেন। খালেদা জিয়ার অতীত কর্মকাণ্ড এবং সমপ্রতি জামায়াতের ইফতার পার্টিতে যোগদানে মনে হয় খালেদা জিয়ার পক্ষে জামায়াতের সম্পর্ক পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ছেদ করা সম্ভব নয়। ফলে আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সবসময় সংকটগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা থাকছে যা দেশ জাতি ও জনগণের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
সূত্র
©somewhere in net ltd.