নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
কয়েক দফা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে নতুন করে দল গোছানোর কাজ শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি। এরপর দলটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নামবে। ইতোমধ্যে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এমন ঘোষণাই দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করছেন না। তবে বিএনপি দল গোছানোর নামে নাশকতার ছক কষছে কি-না, এমন প্রশ্ন ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের।
আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, টানা তিন মাস হরতাল-অবরোধের নামে মানুষ পুড়িয়ে এখন আবার দল গোছানোর পর শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তাহলে কী এতদিন বিএনপি সংঘাতপূর্ণ আন্দোলন করেছে? না কি দল গোছানোর আড়ালে নতুন কোনো নাশকতার ছক কষছে? এমন প্রশ্ন এখন ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মুখে মুখে। তাঁরা বলেন, কোনো ষড়যন্ত্র করে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো যাবে না। বরং বিএনপির সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। গত নির্বাচনে না গিয়ে তারা যে ভুল করেছে, তার খেসারত জনগণ কেন দেবে? তাদের ক্ষমতায় যেতে না পারার যন্ত্রণা আছে। সেই যন্ত্রণার আগুনে সাধারণ জনগণ কেন দগ্ধ হয়ে মরবে? বিএনপির উচিত আন্দোলনের নামে মানুষ মারার রাজনীতি বন্ধ করে জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা ভোরের পাতাকে বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলনের নাম শুনলেই জনগণ এখন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ইতিপূর্বে দফায় দফায় আন্দোলনের নামে মানুষ মারা ছাড়া তাদের আর কোনো সফলতা নেই। এখন তারা আবার নতুন করে দল গোছানোর পর আন্দোলনে নামবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। আসলেই কী তারা দল গোছাবে, না কি নতুন কোনো নাশকতার ছক কষছে? কারণ তাদের কাছে আন্দোলন মানেই নাশকতা, মানুষ মারা।’ গত সোমবার দুপুরে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের মেঘনা নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনকালে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে জঙ্গিবাদী তৎপরতা চালাচ্ছেন। ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে তিনি ক্ষমতায় যেতে চান। খালেদা জিয়া ভুলে গেছেন এ দেশের মানুষ অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করে, যুদ্ধ করে পাকিস্তানিদের পরাজিত করেছে। তাঁর মানুষ হত্যার রাজনীতিও বাংলার মানুষ ব্যর্থ করে দেবে।’ এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি বিএনপি নেতাকর্মীরা অসন্তুষ্ট। তাঁরা বুঝতে পারছেন খালেদার নেতৃত্বে ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি জিততে পারবে না। তাঁদের নেতাকর্মীদের বক্তব্যে এ বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে।’
গত ৬ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী টানা ৯২ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এ কর্মসূচি চলাকালে বাসা ছেড়ে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করে খালেদা জিয়া দফায় দফায় হরতাল ঘোষণা করেন। হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমাসহ নাশকতামূলক কর্মকা-ের শিকার হয়ে শতাধিক লোকের প্রাণহানি ও সহস্রাধিক লোক মারাত্মক আহত হন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় অগণিত যানবাহনসহ অনেক স্থাপনা। সবকিছু মিলিয়ে দেশের ক্ষতি হয় প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, দেশকে অচল করে দেওয়ার জন্যই খালেদা জিয়া জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোকে নিয়ে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি পালন করেন। ফলে বিভিন্ন মহল থেকে খালেদা জিয়ার বিচার দাবি করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে টানা তিন মাসের আন্দোলনে নাশকতার দায়ে খালেদা জিয়ার বিচার ট্রাইব্যুনালে হবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে জানান।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদের এক প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পেট্রলবোমা হামলার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তাঁর সহযোগীসহ সব অপরাধীর নামে দায়েরকৃত মামলাগুলো দ্রুত বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীও একই কথা বলে আসছেন। যাঁরা আন্দোলনের নামে নাশকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে বিগত আন্দোলন কর্মসূচি ব্যর্থ হওয়ায় আবার নতুন করে দল গোছানোর পর শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গত শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে তিনি এ কথা বলেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাঁরা দল পুনর্গঠনের কাজ করছেন। পুনর্গঠন শেষে বিএনপি আবার আন্দোলনে যাবে। সে আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ। বিএনপি জ্বালাও-পোড়াওয়ে বিশ্বাস করে না। যারা জ্বালাও-পোড়াওয়ের সঙ্গে জড়িত, তাদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, সরকার বিভিন্ন এজেন্সি দিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রচার করছে যে, বিএনপি ভেঙে যাচ্ছে। আসলে তা ঠিক নয়।
এর আগে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলন ‘ব্যর্থ’ হওয়ার পর দল গুছিয়ে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু দল পুনর্গঠন শেষ না করেই চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। টানা অবরোধের তিন মাসের মাথায় সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে ওই কর্মসূচি থেকে কার্যত সরে আসে বিএনপি। এখন আবার দল পুনর্গঠন করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
দল গোছানোর এ প্রক্রিয়ায় যাঁরা ইতোমধ্যে বিএনপি ছেড়ে চলে গেছেন, কেউ কেউ নিজেরা নতুন দল গঠন করেছেন, তাঁদের সবাইকে আবারও দলে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া বিএনপিকে ঢেলে সাজাতে দলের চেয়ারপারসন ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ‘ঘরের ছেলে ঘরে’ ফিরিয়ে আনার নীতি হিসেবে অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং কর্নেল (অব.) অলি আহমদসহ নানা সময়ে দলছুট নেতাকর্মীদের বিএনপিতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন খালেদা জিয়া।
এ বিষয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, ‘বিভিন্ন সময় দলের যেসব নেতা বিএনপি ছেড়ে চলে গেছেন, তাঁদের সবাইকেই স্বাগত জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি প্রত্যেককে সব বিভেদ ভুলে আবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।’
সুত্র
©somewhere in net ltd.